somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপত্য

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা ফোন করেছেন সন্ধ্যাবেলা। দূরের গ্রাম থেকে। সন্ধ্যাবেলা এই গ্রামে তারা দেখা যেত। অযুত-নিযুত লক্ষ-কোটি তারা। শান বাঁধানো বেঞ্চে সটান হয়ে শুয়ে আমি আর মা তারা দেখতাম। মা বলতেন, উত্তরে দেখেন তারা খসে পড়ছে। আমি বরাবরই দিকভুলা। দক্ষিণের আম্মাদের ঘরের উল্টাপাশ হলো উত্তর- এই ভাবতে ভাবতে তারা খসে শেষ। তখন চোখমুখ টানটান করে উত্তরেই তাকিয়ে আছি। মা তাড়াহুড়ো করে- এবার কিন্তু পূবে, বলাতে শেষ পর্যন্ত দেখলাম। পূব দিক চেনা সোজা। ঘর থেকে বের হয়ে একদমে দৌড়োতে দৌড়োতে রাস্তায় গিয়ে পড়তে হলে যেইদিকে যেতে হবে সেটাই পূবদিক।

এই তারা দেখা অনুষ্ঠানের পর আবার কখনো কখনো আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। মা তখন রাগ করতো না। আদর করে বলতো- আমার ঘুমকাতুরে মেয়েরে!! ঘুমকাতুরে আমাকে মা সন্ধ্যাবেলা ফোন করলেন। মা কে আমি কক্ষনো হ্যালো বলিনা। এক ছটাক আদরের সাথে আধ কৌটা আহ্লাদ মিশিয়ে বলি- মা! মা বললেন- আপনি কি এখন ঘুমাচ্ছেন? দরাজ হাসি দিয়ে বলি- না তো। মা বললেন- ঘুমাচ্ছেন না কেন? এখন তো আপনার ঘুমানোর সময়! বোকা মা টা আমার। এখন ঘুমালে ফোন ধরবো কি করে! আমার হাসি পেল। আবার হিহি করে হেসে বললাম- আচ্ছা কালকে থেকে এই সময় ঘুমাবো। মা ও হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি।

আমার হাসি রোগ আছে। কোন একটা বই পড়ে আমি আধ-ঘন্টা খিলখিল করে হাসতে পারি। মা তখন কি যে বিরক্ত হন! “আমরা তো কেউ আপনার বই পড়ছিনা। আমাদেরকে হাসি শোনাবেন কেন? বই পড়ে হাসি পেলে মুচকি হাসি দিবেন।” আমি তখন তক্কে তক্কে থাকি। আমাকে পড়তে বসিয়ে মা পাশে বসে কোন একটা বই পড়ছেন। আমি একটু পরপর মার মুখের দিকে তাকাই। মাঝে মাঝে মুচকি হাসি দেখা যায়। আমার যে মার দিকে না তাকিয়ে কঠিন কঠিন শব্দার্থ মুখস্ত করার কথা এটা ভুলেই যাই। খুবই অস্থির হয়ে- কেন হাসো? কেন হাসো? বলতে বলতে মা কে ঝাঁকাই। পড়ালেখার সময় মা খুবই বিপদজনক। এমন রাগী চোখে তাকাবে যে আপনার ইচ্ছে হবে আজীবনের মত খাটের তলার বাসিন্দা হয়ে যাই।

আপাতত আমি সেই রাগী চক্ষুর আওতার বাইরে আছি তবে ছোটভাই নেই। একটু আগেই মা ছোটভাইকে পড়াচ্ছিলেন আর রাগী চক্ষু দেখে ছোটভাইয়ের অভিমান হয়েছে। মা তাই আমাকে ফোন করে বলেছেন- বাপ যাচ্ছে। বাপের কাছে ছোটভাইয়ের জন্য পিস্তল কিনে দিবেন। এই হচ্ছে মায়ের টেকনিক। কোনমতে বকাটা পার করতে পারলেই হলো। তারপর নতুন পেন্সিল, রাবার, পিস্তল আসিতেছে! আমি তো অবাক- পিস্তল দিয়ে কি হবে! মা হাসলেন। “সত্যিকারের না, খেলনা পিস্তল। পিস্তলে চাপ দিলে ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ আওয়াজ হয়। আপনি চিনেন না? আপনাকেও তো কিনে দিয়েছিলাম।”
তাই বলো!! লাল রঙের একটা পিস্তল ছিলো আমার। পিস্তলের গা টা গাঢ় লাল আর ট্যাঁ ট্যাঁ আওয়াজের সাথে পিস্তলের মুখে হালকা লাল আলো জ্বলতো। সেই পিস্তল দিয়ে কত কত যুদ্ধ জয় করেছি! মাকে বললাম- আচ্ছা কিনে দিব পিস্তল।

মা তখন ঘটনা বললেন। অভিমানী ছোটভাইকে এখন সেরিওজার মত দেখাচ্ছে। ‘পিতা ও পুত্র’- এর সেরিওজা। সেরিওজার একটা লাল সাইকেল ছিলো কিন্তু ছোটভাইয়ের সাইকেল তো সবুজ। মা মত বদলালেন। সেরিওজা না, “হোয়াইট ফ্যাং।” হোয়াইট ফ্যাং একটা সাহসী আদুরে কুকুর। যেদিন বইটা মা পড়লেন সেদিন কি উৎসাহ নিয়েই না ফোন করেছিলেন। আমিও পড়েছি কদিন আগে। আমাদের উত্তেজিত সাহিত্যালোচনা শুনে বাপ হিংসিত হয়েছিলেন। ফোন কানে নিয়ে বলেছেন- বাপ বল। আমি বললাম- বাপ। বাপ বললেন- আব্বু বল। আমি ভেংচি কেটে রেখে দিলাম।

যাই হোক, পিস্তলের কথা মাথায় নিয়ে দোকানে গেলাম কদিন পর। দেখি একটা সাদা কুকুর। সত্যি কুকুর না। স্নোয়ি আছেনা? টিনটিন এর বুদ্ধিমান কুকুরটা? একটা স্নোয়ি পুতুল। কি তুলতুলে রে বাবা! মনে হয় সারাক্ষণ নাক ডুবিয়ে আদর করি। প্রায়োরিটি ঠিক করে ছোটভাইয়ের জন্য স্নোয়ি কিনলাম। টিনটিনের এডভেঞ্চার তিনি দেখেছেন। স্নোয়ি যে ঠিকঠিক টিনটিনকে খুঁজে বের করে সবসময় এটা তার খুবই পছন্দ। মাঝে মাঝে বলেন তার একটা স্নোয়ি থাকলে খুব ভালো হত। কুকুর-বেড়াল পোষা মায়ের এক্কেবারে অপছন্দ। ঘর নোংরা হবে! তাই থাকুক একটা পুতুল স্নোয়ি। সবুজ সাইকেলের ক্যারিয়ারে সাদা স্নোয়ি নিয়ে ঘুরবে।



অফ টপিকঃ মাকে নিয়ে লেখা খুবই বিপদজনক। সমালোচনা করতে করতে ১২টা বাজিয়ে দিবেন। তাও লিখলাম। মুজতবা আলী বলেছেন- মা'র গল্প সব গল্পের মা। :)
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×