somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিয়মিত(এককালের সাপ্তাহিক) খাবারপত্র, সংখ্যা-৭

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফালুদা ক্রনিকেলস

বিশিষ্ট খাদক বন্ধু আর আমার তুমুল ঝগড়া চলিতেছিলো। ঝগড়ার বিষয় ‘ফালুদা’ খাবার হিসাবে কিরূপ। আমি বলিলাম, ‘ফালুদা’ খাবার হিসেবে অদ্ভুত। মিষ্টি একটা জিনিসে নুডলস দেয়ার বুদ্ধি যার মাথায় প্রথম আসিয়াছিলো তাহাকে আমার কেমন কেমন যেন মনে হইতেছে। তাছাড়া ‘ফালুদা’ শুনিলেই আমার ফেলুদা ফেলুদা মনে হয়। এইরূপ জ্ঞানী একজন ব্যক্তিকে ডেজার্ট হিসেবে খাইয়া ফেলার মত যোগ্যতা এখনো অর্জন করিনাই। যেদিন করিবো সেদিন অবশ্যই সানন্দে বাটির পর বাটি ফালুদা চালান করিয়া দিবো। এই পর্যায়ে বন্ধু কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া গেল (খাদক তো, সারাদিন খাওয়ার উপরেই আছে)। চোখ ছোট ছোট করিয়া বলিলো, তুই কখনো ফালুদা খাসনাই?

আমি রক্তচক্ষুর আড়াল খুঁজিতে খুঁজিতে মিনমিন করিয়া হ্যাঁ, না, ইয়ে, মানে ধরনের কিছু একটা বলিলাম। বন্ধু হতাশ হইয়া ঝগড়া থামাইয়া তদ্দন্ডেই আমাকে ফালুদা খাওয়াইতে নিয়া চলিলো। বলিলাম- পড়েছি মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে। বন্ধু চোখ রাঙ্গাইলো তাই কথা থামাইয়া গুনগুন করিয়া গান ধরিলাম। বন্ধু বলিলো- চুপ থাক। আমি চুপ করিলাম এবং ব্যাপক ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে ফালুদা খাইতে উপস্থিত হইলাম। ফালুদার অর্ডার দিয়া বন্ধু আশেপাশের সৌন্দর্য অবলোকন করিতে থাকিলো। অবস্থা বেগতিক দেখিয়া বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করিলাম, তা ফালুদাতে আসলে কি কি উপকরণ থাকে বল তো? এতক্ষণে সহজ হইয়া বন্ধু সাড়ম্বরে বর্ণনা শুরু করিলো, বুঝলি ফালুদার বাটির বেস হবে নুডলস এর উপরে। তার মধ্যে দুধ, দই, সাগু, বরফ এবং বিভিন্ন ফল দিয়ে স্বাদ বর্ধন করা হবে। আমাদের বাসার ফালুদা তো খাসনাই। আমি আর ভাইয়া মিলে যেই ফালুদা বানাই তা একবার খাইলে ভুলতে পারবি না। এইসব বলিতে বলিতে বন্ধু কেমন স্বপ্নের জগতে হারাইয়া গেলো। টেবিলের উপর ফালুদার বাটি রাখার ঘট-ঘটাং শব্দে তার ঘোর ভাঙ্গিলো।

ফালুদা খাওয়ার প্রথম পাঠ- ফালুদার বাটি সামনে পাইয়া চামচ দিয়া দিবি ঘুঁটা! সুন্দর একটা লাল-সাদা জিনিস ঘুঁটা দিয়া অফ-হোয়াইট বানাইয়া ফেলিবার পর বন্ধু খাইবার পাস দিলো। এক চামচ মুখে নিয়া কি কি আছে চিন্তা করিতে থাকিলাম। বন্ধুকে বলিলাম, এইটা কি চেরী? বন্ধু কহিলো- চীনাবাদাম। তারপর আর বন্ধুর খোঁজ নাই। কি আরাম করেই না সে ফালুদা খাইলো! আমি তাকাইয়া তাকাইয়া দেখিলাম আর এক চামচ দুই চামচ গিলিতে থাকিলাম। খাওয়া শেষ করিয়া সশব্দে তৃপ্তি প্রকাশ করিয়া তাহার আমার কথা খেয়াল হইলো। কিরে কেমন খাইলি? আমি বলিলাম, হুমমম ভালো। এই কথা শুনিয়া তাহার কিঞ্চিৎ মন খারাপ হইলো। আজকে ফালুদাখানায় আপেল দেয়া হয়নাই রে, শুধু কলাওয়ালা ফালুদা খাইতে বেশি মজা নাই। আমি সজোরে মাথা নাড়াইয়া সায় দিলাম এবং সেদিনকার মত খাওয়ায় ক্ষান্ত দিয়া ঘরে ফিরিলাম। দুঃখজনক এই যে, বন্ধু কিন্তু এইখানেই ক্ষান্ত দিলোনা।

আমি যে ফালুদা খাইয়া শুধু ভালো বলিয়াছি এই দুঃখ তার মাথায় চিরস্থায়ী হইয়া গেলো। কিছুদিন পর আবার বলিলো, চল ফালুদা খাইতে যাই। আশা করিতেছি এইবার আগেরবারের চাইতে ভালো ফালুদা হবে। আহা। কি খাইলাম! প্রত্যেক চামচে নতুন নতুন গবেষণার বস্তু পাওয়া গেলো। দই, কলা, আপেল, সাগু, মোরব্বা, কিসমিস...লিস্ট বানাইতে বানাইতে আমি আর বন্ধু হাঁপাইয়া গেলাম। তারপর আবার কচমচ করিয়া বরফ চিবাইয়া, শান্তি! কিছুক্ষণ পর আবার বলিলাম, চীনাবাদাম! বন্ধু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিলো। এতদিনে ফালুদা খাইবারর সঠিক অনুভূতি দেখাইতে পারলাম বোধহয়। ফালুদার প্রতি বন্ধুর এহেন ভালোবাসা দেখিয়া আমি তাহাকে ‘ফালুদা সৈনিক’ নাম দিলাম এবং ঘোষণা করিলাম যে অচিরেই তাহার ফালুদার প্রতি ভালোবাসা নিয়া একখানা খাবার পত্র লিখিবো। বন্ধু আমাকে নানারূপ হুমকি ধামকি দিয়া পরাস্ত করিয়া রাখিলো।

এই সবই এক বছর আগের কথা। সেই দ্বিতীয়বার ফালুদা খাওয়ার পর থেকে আমার মধ্যে কি যেন হইয়া গেলো। আমি আর বন্ধু এতবার ফালুদা খাইতে গেলাম, এতবার ফালুদা খাইতে গেলাম যে ইহা আমাদের একখানা ট্র্যাডিশনে পরিণত হইলো। কিছু হইলেই আমরা ফালুদা খাইতে দৌড় দিলাম এবং অন্য বন্ধুবান্ধবেরা আমাদের এই ফালুদাপ্রীতি দেখিয়া হাসাহাসি করিতে থাকিলো। এই ফালুদা সৈনিক আগামীকাল দূরের শহরে দীর্ঘকালের জন্য চলিয়া যাইবে তাই তাহাকে বলিলাম, আমাকে ফালুদা খাওয়াইয়া যা। বন্ধু বলিলো, ফালুদা কেন? আমি তো তোকে কাচ্চি খাওয়াবো ভাবছিলাম। আহা! মধু, মধু! চলো বাবাজী ভোজনালয়ে।

তা ভোজনালয়ে গিয়া দুইখানা কাচ্চি আর একখানা বোরহানীর অর্ডার দিয়া বসিলাম(আমি আবার বোরহানী বেশি খাইনা, এইটা বন্ধুর জন্য)। খাবার আসিলে বন্ধু বলিলো, বোরহানী খাবিনা শিউর? যদি ফালুদার মত হয়? আমি তড়িঘড়ি করিয়া তাহার গ্লাস হইতে দুই চুমুক বোরহানী খাইয়া দেখিলাম। নাহ, আগের মতই স্বাদ লাগিতেছে। পাগল হইয়া যাইবার মত না। বন্ধু তাহার বোরহানী উদ্ধার করিয়া আমাকে কাচ্চিতে মনযোগ দিবার উপদেশ দিলো। কাচ্চিতে মনযোগ দিয়া দেখিলাম আজকের কাচ্চিখানা আসলেই অন্যরকম হইয়াছে। এই সপ্তাখানেক আগেও তো কাচ্চি খাইয়া গেছিলাম। তখন এত সুস্বাদু লাগেনাই। কাবাবের প্রতি আমার বরাবরই ব্যাপক দুর্বলতা। আজকের কাবাব খাইয়া আমি মুগ্ধ ভাই হইয়া গেলাম। তখনই দেখি সামনে একজন লাল গেঞ্জি ভদ্রলোক দাঁড়াইয়াআছেন। লাল গেঞ্জির বিশেষত্ব হইতেছে সেখানে একজন বিশ্বখ্যাত গায়কের ছবি যার নিচে লেখা, Bob Marlin. লাল আমার প্রিয় রঙ আর তাহার উপরে বব মার্লিন লেখা! আমি তাহা থেকে চোখ সরাইতে পারলাম না। পেছন থেকে তাহাকে জনৈক রাশেদ ভাই এবং পাশ থেকে তাহাকে জনৈক মুগ্ধ ভাই এর মত দেখাইতেছিলো। একই অঙ্গে এত প্রতিভা দেখে আমার অবাক বিস্ময় বন্ধুকে হিংসিত করিলো। সে মনস্থির করিলো, আজকেই নিউ মার্কেট থেকে একখানা লাল বব মার্লিন গেঞ্জি কিনিবে। দরকার হইলে লাল গেঞ্জির নিচে নিজে ছবি আঁকিয়া বব মার্লিন লিখিয়া দিবে। সে আবার বিরাট আর্টিশ কিনা! আমি তাহাকে ঠান্ডা করার জন্য দুইখানা ফালুদার অর্ডার দিয়া দিলাম।

এইসময় বন্ধু দোটানায় পড়িয়া গেলো। যেইহারে কাচ্চি শেষের দিকে যাইতেছে তাতে পেট ভরিবার কোন সম্ভাবনাই নাই। আজকের কাচ্চির যে স্বাদ তাতে আরেকখানা কাচ্চি নিতেই হয়। কিন্তু তাহা হইলে আবার ফালুদা খাইবার মত জায়গা অবশিষ্ট থাকিবে না। আমি নিশ্চিন্তে বসিয়া বন্ধুর এই নৈতিক সংঘর্ষ দেখিলাম। আহা খাদক হওয়া কি কোন সহজ কথা!! আমি অবশ্য এতদিনে ভালোরকম কনভার্টেড হইয়াছি। ফালুদার স্বপ্নে বিভোর হইয়া বন্ধুকে অতিরিক্ত কাচ্চি খাওয়া হইতে বিরত রাখিলাম। ফালুদা আসিলে আমরা নিত্যকার মতো আজকের ফালুদার স্বাদ এবং উপকরণ নিয়া লম্বা-মোটা হাতি-ঘোড়া ঝাড়িলাম। খাওয়া শেষে দেখি নড়তেই পারিতেছিনা। আমি আর বন্ধু দুজনেই হা-হুতাশ করিলাম। আগে কত বেশি খাইয়া দিন কাটাইতাম!! হাঁসফাঁস ভাব কমাইবার উদ্দেশ্যে আমরা লম্বা হাঁটা দিলাম। সৈনিক এবং আমাকে তখন যুদ্ধফেরত দেখাইতেছিলো!

অ।ট।- ফালুদা সৈনিককে নিয়ে লেখালেখি তার একেবারেই না-পছন্দ। যেহেতু সে কালকে আমাদের অগ্রাহ্য করে দূরে যাবে তাই দায়িত্ব সহকারে তাহাকে ক্ষ্যাপাইয়া দিলাম। দেখি কতদূর কি হয় :D
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৪৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×