somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিয়ম রক্ষা হলো, গণতন্ত্র হলো কি? (বাংলানিউজে প্রকাশিত লেখা)

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
এর আগে কোন নির্বাচনের দিন ১৯ টি মানুষকে লাশ হতে হয়নি। অভিনন্দন বাংলাদেশ। তুমি নতুন রেকর্ড গড়েছ।

এর আগে কোন নির্বাচনে ১৫৩ টি আসনে প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ ভোটারকে ভোট বঞ্চিত থাকতে হয়নি। অভিনন্দন বাংলাদেশ। তুমি নতুন রেকর্ড গড়েছ।

এর আগে কোনসময় ভোটের আগুনে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়নি। অভিনন্দন বাংলাদেশ। তুমি নতুন রেকর্ড গড়েছ।

২.
ভোটের ঝামেলা শেষ। এখন সময় অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসার। আসুন, ভাসি।

আওয়ামী লীগ সম-মনাদের ভাষায় এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। মুখ রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু নিয়ম কি রক্ষা হলো! মুখ কি রক্ষা হলো!!

এক দিক থেকে অবশ্য নিয়ম রক্ষা হয়েছে। এর আগে জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়া একতরফা নির্বাচন করেছেন। সে নিয়মের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে। এবার শেখ হাসিনাও করেছেন।

৯৬’র ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে ৩ বার (কারো কারো ভাষায় সোয়া ২ বার) প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বেগম জিয়া। এবার শেখ হাসিনাও তা হতে যাচ্ছেন। নিয়মটা রক্ষা হচ্ছে বৈকি।

কিন্তুু এ নিয়মগুলো রক্ষা করতে গিয়ে আমরা হারিয়েছি বহু কিছু। সেটা যে দীর্ঘমেয়াদে এ দেশটির গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কলঙ্কিত করেছে, তার দাঁয়টা কে নেবেন?

নবম জাতীয় সংসদ, কিংবা ৫ সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে উদহারণ তৈরী হয়েছিলো- তাকে কি কলঙ্কিত করা হয়নি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে? কি দেখলাম আমরা এদিন? জাল ভোট ও দলীয়করণের এক নগ্ন উদহারণ হয়ে এসেছে আমাদের সামনে এদিন।

৩.
সাধারণ ভোটাররা সাড়া দেননি এমন নির্বাচনে, এটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। ১৮ হাজারেরও বেশি কেন্দ্রে মিডিয়া মনিটরিং হয়তো সম্ভব হয়নি। তবে যেটুকু হয়েছে, তা থেকে এটা সহজে অনুমেয়- জাল ভোট হয়েছে ব্যাপক। ঢাকা -১৮ আসনের ৩টি কেন্দ্রে শেষ ঘন্টায় মিনিটে ১৮ ভোট পড়ার খবর মিডিয়ায় যেমন এসেছে, তেমনি বগুড়া-৪ আসনের একটি কেন্দ্রে ঘন্টায় পড়েছে মাত্র ১৮ ভোট। সারাদেশের ৩৯টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। ভোটকেন্দ্র স্থগিত করতে হয়েছে ৫৩৯টি।

সরকারের মন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগ নেতারা তারপরও বলছেন, ভোটার উপস্থিতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু আমরা যারা আম-আদমি, তারা সন্তুষ্ট হতে পারি নি। ১৫৩ আসনে যাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হলো, তারা সন্তুষ্ট হতে পারি নি। ১৪৭ আসনে যারা ভোট দিতে যান নি, তারাও সন্তুষ্ট হতে পারে নি।

৪.
শুধু কি নির্বাচন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনকেও কি খাদের কিনারে ঠেলে দেয়া হলো না? অনেক বিতর্কের যে নির্বাচন হয়েছে, তাতে নিজেদের মেরুদন্ডহীনতা বারবার প্রকাশ করেছে ইসি। বর্তমান কমিশনের অধীনে প্রসংশনীয় ৫সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছিলো। এবার হলো না, কারণ সরকার চায়নি। আর সে চাওয়াকে এড়িয়ে সঠিক কাজটা করার মতো সৎ সাহস দেখাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এমনকি সারাদেশে কত শতাংশ ভোট পড়েছে, সে তথ্যটুকু জানাতেও ভোটের দিন ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই ইসির অধীনে কি একাদশ নির্বাচন সম্ভব?

এবারের পুরো সঙ্কটটি তৈরী সে বিষয়টি নিয়ে, সেখানেও ব্যর্থ সরকার। কেয়ারটেকার পদ্ধতি বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব- দাবিটি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলো। তা কি শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেলো না? এটাই কি সরকারের সব’চে বড়ো পরাজয় নয়?

এই নির্বাচনটিকে পিছিয়ে দেয়ার স্পষ্ট সাংবিধানিক সুযোগ ছিলো। সে পথে হাটেনি সরকার। তারা নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে সব নিয়মকেই বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছেন। বিরোধী দল নির্বাচন প্রতিহত করার কথা বলছিলো। কিন্তু জনগণ তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে, একথা বলার সুযোগ নেই। যে ৫৩৯টি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলো হয়তো তাদের সহিংসতার ক্রেডিট। কিন্তু এ কথা সত্য, অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থকও এ নির্বাচনে ভোট দেয়নি। জনগণ যায় নি আসলে বিবেকের তাড়নায়। কিছুটা সহিংসতার আশঙ্কায়ও।

নিয়মতো রক্ষা হলো। এবার বিরোধী দলের দুর্বল আন্দোলনের মুখে টিকেও যেতে পারেন। টিকে গেলে থাকবেন কি? দয়া করে এই ভুলটা করবেন না। দেশকে অনিবার্য পতনের হাত থেকে বাঁচাতে ঘোষণা করুন ঠিক কোন সময়ের মধ্যে আপনারা প্রতিশ্রুত একাদশ সংসদ নির্বাচন দেবেন। এমনকি এই ঘোষণার জন্য ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করারও প্রয়োজন নেই। না হয় ধ্বংসের শেষটুকু দেখার অপেক্ষায় হয়তো থাকতে হবে আমাদের।

এই লেখার লিঙ্ক বাংলানিউজ২৪ এ
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:০৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×