ঠিক যেদিন চকবাজারের আগুন লাগলো সেদিন হতে কোনমতেই যেন স্থির হতে পারছিনা। ঢাকা মেডিকেল এর সামনে দিয়ে গেলে মনে একটা ভীতি কাজ করে। কোনমতেই শান্ত হতে পারছিনা। চোখ বন্ধ হলেই আগুন যেন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে।
যেই রাসায়নিক দ্রব্যাদির জন্যে এতবড়ো অগ্নিকান্ড সেই রাসায়নিক দ্রব্যের মজুদের পেছনে দায়ী কারা? কারা দায়ী আবাসিক এলাকায় কারখানা বানিয়ে সেখানে দাহ্য পদার্থের মজুদ রাখার জন্যে? আজকে আমি ও আপনি সবাই বলছি রাসায়নিক দ্রব্যের কথা, আমরা সবাই বলছি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথা। কিন্তু কেউতো বললোনা এসব মজুদদার দের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনা হোক। অথবা কঠোরভাবে সচেতন করে দেয়া হোক সে এলাকার মানুষকে যাতে নিজেদের শুধরে নেয়ার সু্যোগ পায়। ব্যবসায় কিছু বাড়তি আয় হলেই যে আপনি লাভবান হবেন তা কিন্তু নয়, কোন না কোন সময় আপনি সতর্ক হলেও অনেকভাবে লাভবান হতে পারেন।
সরকারি হিসেব যদি পর্যবেক্ষন করা হয় তাহলে একটা জিনিস সবার সামনে চলে আসবে অনায়াসে। হিসেবে দেখা যাবে চকবাজারে গোডাউন নেই বললেই চলে, কিন্তু ওখানে প্রতিটি বাড়ীর নিচে রয়েছে একেকটি মরণফাদ। আবাসিক এলাকার বাড়িগুলোর নকশাই যেন করা হয়েছে ঠিক সেভাবে। উপরের ফ্ল্যাট গুলোতে বাসা ভাড়া হবে নিচের দিকে হবে গোডাউন ভাড়া, এই নীতিতেই যেন এগিয়ে যাচ্ছিল সেখানকার মানুষরা। হয়তো অল্প কিছু টাকার সাথে তারা তাদের বিবেককেও বিকিয়ে দিচ্ছে। ফলাফল? চকবাজারের শোকবাজারে রুপান্তর। ৬৭টি প্রানের পরিসমাপ্তি, শুধু কি ৬৭জন? এদের সাথে এদের পরিবারের স্বপ্নও যেন নিমিষে ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে।
কথা প্রসঙ্গে আপনি বলতে পারেন এখানে আগুন লেগেছে রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে, আমাদের হাত তো নেই৷ আমি বলবো অবশ্যই পরোক্ষভাবে আমাদের হাত রয়েছে। আমাদের জন্যেই এত বড় ক্ষতি৷ আজকে ওয়াহিদ ম্যানশন এর নিচতলায় এতবড় গোডাউন রয়েছে জানার পরেও আমরা সেখানে ভাড়া নিয়ে অনায়াসে বাস করছি৷ আমরা ব্যাস বাড়িওয়ালা আর সরকারের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে চুপ করে বসে আছি৷ অথচ আমাদের নিরাপদ রাখার স্বার্থে সরকার সর্বদা চেষ্টায় রত। কিন্তু দরকার ছিল আমাদের সাবধান হওয়া, ওয়াহিদ ম্যানশন এর বাড়ির মালিককে সতর্ক করা। রাসায়নিক পদার্থের দাহ্যতা সম্পর্কে হুশিয়ার করা। গ্যাস সিলিন্ডারের সঠিক এবং নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
এইতো বেশ কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ট্রাফিক পুলিশ মোটরবাইকারদের হেলমেট সম্বন্ধে সচেতন করে দিল৷ এখন রাস্তাঘাটে হেলমেট ছাড়া চালক দেখা যায়না বললেই চলে। সকলে সচেতনতার সাথে এখন নিয়মটি পালন করছে। ঠিক এমন একটি ক্যাম্পেইন দরকার পুরান ঢাকায় ও৷ সেখানে থাকবে নিরাপদ আবাসন সম্পর্কিত সকল কিছু৷ রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের হুশিয়ার করা থেকে শুরু করে নিরাপদ আবাসন সংক্রান্ত যত কিছু আছে সকল কিছুর সুন্দর একটি ক্যাম্পেইন হবে। এতে করে সচেতন হবে সেখানের বাসিন্দারা, সচেতন হবে ব্যবসায়ীরা।
ক্যাম্পেইনটি অতি শীঘ্রই করা দরকার। অন্যথায় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের "নিরাপদ সড়ক চাই" আন্দোললের ন্যায় পুরান ঢাকাবাসীর আন্দোলনে স্লোগানের বিষয় হবে "নিরাপদ আবাসন চাই"
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৩৩