somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ দ্বৈত সত্ত্বা

০৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেয়ের মাথার কাছে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছেন মা, রাহেলা বেগম। মুখ বিবর্ণ, ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

মা তুমি কি জান আমার অসুখের কারণ কি?
গভীর আবেগ নিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। কন্ঠ যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললেন, তুই না বললে জানব কি করে রে মা?
মা, আমার মনে হয় তুমি জান। কিন্তু মিথ্যে বলছ। কেউ মিথ্যে বললে তাকে আমার দেখতে ইচ্ছে করে না। তোমাকেও দেখতে ইচ্ছে করছে না। তুমি একটু বাহির থেকে ঘুরে এস। আমার মন শান্ত হলে তারপর আসবে। আর যাওয়ার সময় হিমেল ভাইকে একটু ডেকে দিবে।

হিমেল আবার কখন এল?
আবার তুমি একই কাজ করছ মা। হিমেল ভাই এসেছে এটা তুমি দেখেছ, কিন্তু ইচ্ছে করে তাকে বাইরে দাঁড়িয়ে রেখেছ। কারণ তাকে অপমান করতে তোমার ভাল লাগে।
তুই এসব কি বলছিস?
আমি ঠিক ই বলছি, কথা না বাড়িয়ে যাও।

হাত ভর্তি বকুল ফুল নিয়ে হিমেল প্রবেশ করল। মুখে উচ্ছ্বাস, যেন রাজ্য জয় করে ফিরেছে। আর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে না, রোগী দেখতে এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে কাউকে সংবর্ধনা দিতে এসেছে যেন। এই অদ্ভুত, পাগলাটে মানুষটাকে মায়ার কেন যে এত ভাল লাগে!!
মানুষ রোগী দেখতে গোলাপ কিংবা রজনীগন্ধা নিয়ে আসে। আর আপনি নিয়ে এসেছেন বকুল ফুল!!
অন্য কারও জন্য হলে তাই আনতাম। তুমি আমাকে দেখলেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠ, তাই বকুল ফুল আনলাম। বকুল ফুল হাতে রেগে থাকা কষ্টকর।
অদ্ভুত যুক্তি শুনে হেসে উঠল মায়া।
অস্ফুট কন্ঠে বলল, কি জন্য জ্বলে উঠি তা কি কখনও বোঝার চেষ্টা করেছেন?
কিছু বললে?
না।

শরীরের কি অবস্থা?
ঠাশ-ঠুশ মরে যেতে পারি।
ঠাশ-ঠুশ করে মানুষ মরে নাকি?
আমি মরে যেতে পারি। মরে গেলে অভিধান থেকে সুন্দর শব্দ চয়ন করে আমাকে নিয়ে গল্প লিখবেন। আপনার কোন গল্পে তো আমার স্থান নেই। এটা পারবেন তো? নাকি তাও পারবেন না?
পারব। পারব বলে অবাক চোখে তাকিয়ে হিমেল। আজকের মায়ার সাথে অন্যদিনের মায়ার কোন মিল খুঁজে পাচ্ছে না।
মায়া হাসছে। এই হাসি হিমেলকে বিভ্রান্ত করতে পারার। মাঝে মাঝে এই কাজ করে এক ধরণের আনন্দ পায় মায়া।

আপনার লেখালেখির কি খবর?
চলছে
শুধুই চলছে?
হুম
কোন প্রকাশক বই-টই বের করতে রাজি হচ্ছে না?
তুমি সবসময় আমাকে ইনসাল্ট করে মজা পাও তাই না?
এতে তো আপনার কষ্ট পেলে চলবে না। আপনার বড় হতে হবে অনেক বড়, মহৎ।

আপনাকে একটা তথ্য দেই, একজন লেখক কখন স্থবির হয়ে যায় জানেন?
জানিনা, কখন?
যখন লেখক একজন নির্দিষ্ট নারীর চরণ তলে তার সব স্বপ্ন লুটিয়ে দেয়। কিন্তু স্বপ্ন ব্যক্ত করতে পারে না, বাস্তবায়নও করতে পারে না।
এ কথা তোমাকে কে বলেছে? আর এসব আমাকে বলছ কেন?
এমনি, কোন কারণ নেই।

জানালা দিয়ে বাইরে একবার চোখ বুলিয়ে নিল হিমেল। রাত ঘনিয়ে আসছে।
আমার যেতে হবে।
এখনই যাবেন, আরেকটু থাকুন। কিছুক্ষণ ভেবে বলল, আচ্ছা যান। মায়ার বাঁধনে আটকা পড়তে পারেন। আপনার তো আবার আত্ন-সম্মান বোধ প্রবল। আটকা পড়লে চলবে না। আবহাওয়া খারাপ, ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। তবে তাতে আপনার কোন অসুবিধা হবে না। এই আবহাওয়ায় সোদা মাটির গন্ধ পাওয়া যায়।
যাই

শুনুন। দেখি আমার দিকে একটু তাকান
শান্তি নিকেতনী ঝোলাটা ভাল হয়েছে, দাড়ি আর চুল একটু বড় করলেই হবে। টাকাও বাঁচবে, ভাবও বাড়বে। আর...আর একটা জিনিস লাগবে।
কি?
সেটা হল কবিতা কিংবা গল্প লেখার সুন্দর একটা ডায়েরি। যেটা ঝোলা থেকে উঁকি দিয়ে আপনার পরিচয় দেবে। আপনি একজন সাহিত্যিক। আমি দিলে আপনি নিবেন তো? আর নিলেও ব্যবহার করবেন তো?
আমি কি কখনও না করেছি তোমাকে?
নাহ, ভেবেছিলাম আপনি খুব সুন্দর কোন উত্তর দিবেন। যেটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে যাব, কিছুক্ষণ ভাবব। গভীর আবেগে চোখে পানি চলে আসবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হল না। আপনি সস্তাদরের কিছু একটা।
এটা তো আমি জানি, বারবার মনে করিয়ে দেয়ার দরকার নেই।
মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে মায়া বলল, আচ্ছা যান। আমার মাথা ধরেছে, কখন কি বলি ঠিক নেই। কিছু মনে করবেন না। ও ভাল কথা, যাওয়ার সময় চাঁদের আলো খেতে খেতে যাবেন। সাহিত্য প্রতিভা বৃদ্ধি পাবে। অবশ্য এই আবহাওয়ায় চাঁদের আলো পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। আর একটা কথা, যদি কোনদিন সুবুদ্ধি হয় তাহলে এসব ছেড়ে চাকরির চেষ্টা করবেন।

মায়ার মনটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে যায়। রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইল। মুখে বিষণ্ণতার ছাপ। সেই বিষণ্ণতার মাঝে কেমন যেন একটা অমার্জিত ক্লান্তির ছোঁয়া। কি বলতে গিয়ে কি বলল!! এই মানুষটাকে দেখলেই তার কথা এলোমেলো হয়ে যায়। ভেবেছিল আজ অন্তত কোন কটু কথা বলবে না। সুন্দর সুন্দর কথা বলবে। সে ভেবে রাখে এক আর হয় আরেক। কি কারণে হিমেলের প্রতি তার এত ক্ষোভ কে জানে!!

পিচঢালা পথে পা বাড়ায় হিমেল। গভীর রাত যে কোন গল্পের প্লট তৈরির জন্য খুবই ভাল। কিন্তু এই রাতকে ভয় পায় হিমেল। এ সময় তার মন বিচলিত হয়ে পড়ে, সব কিছু চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে থাকে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে স্বত্বা। এক সত্ত্বা চায় স্বপ্নগুলো মায়ার চরণ তলে লুটিয়ে দিয়ে নাগরিক জীবনের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে। পরক্ষনেই আরেক সত্ত্বা হুংকার ছাড়ে। এই জীবনকেই গল্পের নতুন প্লট হিসেবে জোগান দেয়। পোড়া ইটের ন্যায় পুড়ে পুড়ে, খাঁটি হয়ে সত্ত্বাকে পূর্ণ রূপ দেয়ার আহ্বান জানায়। হায়, মধ্যবিত্ত মন!! কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে উপরে উঠতে সাহস পায় না, কিন্তু সবসময় নিচে তলিয়ে যাওয়ার চিন্তা তাড়া করে ফেড়ে।



সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০২
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×