somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলেবেলে গদ্যঃ আঁধারনামা

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কী নিকষ কালো আর মদির অনন্ত রাত! আমাদের এবং আমাদের পুর্বজদের স্মৃতির জন্মেরও অনেক আগে এই রাতের শুরু। ফলে আমরা কখনো দেখিনি কাউকে, কেউ দেখেনি আমাদের। আমরা শুনি। দুরাগত যেকোন শব্দের তরজমা জমা হয় আমাদের মগজে। আমরা শুনতে পাই বিবিধ কৃষ্ঞকনার অনুরনন, কালোত্তের অর্কেস্ট্রা। আমরা গন্ধ পাই। পাথুরে মাটির অনেক গভিরে ঘুমন্ত বা সাঁতাররত বিবিধ জীবকনা, ভবিষ্যতে পচে উঠবে এমন যাবতিয় মেদ-মাংশ সবকিছুর গন্ধ বহুদিন জমে থাকে আমাদের নাকে। এই দীর্ঘস্থায়ি ঘ্রান আমাদের প্রায়শই বিভ্রান্তিতে ছুঁড়ে দেয়। যেমন, অনেক কাল আগে, আমাদের হাতে খুন হয়ে যাওয়া আমাদেরই জন্মদাতা বা জন্মদাত্রির একান্ত ঘ্রান এখনো সমান জাগ্রত। অথবা কিছুকাল আগে ধর্সন পরবর্তি মৃত মেয়েটির গলিত স্তন কিংবা জংঘার ঘ্রান ফিকে হতে হতে আবার হামলে পড়লে, ঘ্রানতাড়িত আমাদের আরেকটি শিকার অবশ্যাম্ভাবি হয়ে পড়ে। অনিশ্বেষ অন্ধকারে অভিযোজিত আমরা বুকে হাঁটার কৌশল রপ্ত করে ফেলেছি কয়েক জন্ম আগেই, ফলে মাটির কাছাকাছি প্রানীগুলোর সাথে আমাদের সরিসৃপতা জমে উঠেছে বেশ। যে প্রানীরা তাদের প্রস্বাব ছিটিয়ে অধিকারে রাখতো এলাকার নির্দিস্টতা, তাদের শিকার করে শেষ করে ফেলেছি অনেক আগেই এবং তাদের সেই দখলিস্বত্তের কৌশলটিকেও ভালো রপ্ত করেছি। বলে রাখা ভালো, এই সুমিস্ট অন্ধকার আমাদের শিখিয়েছে গোস্ঠিবদ্ধতা, আরেক গোস্ঠির কাছ থেকে অধিকতর অন্ধকার জায়গাগুলো ছিনিয়ে নেয়ার কৌশল। আমরা একসাথে থাকি, কালোঝড়, কালোবৃস্টি বা কালোবরফের কালে। দুর্যোগের রোমন্চকর সময়গুলোতে আমরা পরস্পরের ভিতরে প্রোথিত হতে থাকি আরো বেশি। আমাদেরর মাংশানুতে পরস্পরের ঢুকে পড়া, দলগত রমনপ্রক্রিয়া আমাদের যুথবদ্ধতাকে বহুমাত্রিকতা দিয়েছে।

আমাদের মাঝে সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ণ ও বয়সীজন, স্বীয় বর্জ্য-বিস্ঠার নান্দনিক ঘ্রান নিয়ে আমাদের ঘনিস্ট হয় এবং আমাদের এক শংকার কথা জানায়। প্রথাগতভাবে আমরা বেশি বয়সীদের কালোবরফপাতের সময়টাতে গোস্ঠির চর্বির চাহিদার কথা ভেবে হত্যা করি ও পুঁতে রাখি গুহার অনেক গভিরে। তবে এই বয়সীজন আমাদের শিখিয়েছে অন্ধকারের নিঃশর্ত আনুগত্য মেনে কীভাবে নতজানু হতে হয়, সবার উপর কালো সত্য তার উপর কেউ নায়-এই আপ্ত বাক্যটি তার কাছেই শিখেছি ও মেনেছি আমরা। কালোত্তের একত্ববাদের বিপরিত চিন্তার কথা কারো মাথায় আসলে সেই মাথা কেটে ফেলার পন্থাও সে শিখিয়েছে আমাদের। সে আমাদের আরো শিখিয়েছে কীভাবে সদ্য ভুমিস্ট দুর্বল মেয়ে বাচ্চাদের বলি দি্তে হয় অন্ধকার ফিকে হয়ে আসার সম্ভাবনা দেখা দিলে, অন্য গোস্ঠির গুহা বা মেয়ে বা বুড়ো শিকার কীভাবে করতে হয়। ফলে প্রতি কালোবরফপাতের কালে এই বয়সীজন তার সমসাময়িক অন্যান্য বয়সীদের মেদ-মাংশে ফুলে ফেঁপে ওঠার সুজোগ পেয়ে যাচ্ছে। সে আমাদের জানালো, এক ব্যাখাতীত গন্ধ পেয়েছে সে। আমরা কী পেয়েছি এমন কোন ঘ্রান? আমরা নাসারন্ধ ছড়িয়ে দীর্ঘ শ্বাষ নিই। গোস্ঠির প্রতিটি মৃত বা জীবিত জনের আলাদা-আলাদা গন্ধ, প্রতিযোগী গোস্ঠি প্রধানের তিব্র প্রস্বাবের গন্ধ, কয়েক প্রজাতির সরিসৃপ ও মাকড়ের গন্ধ ছাড়াও আমরা অনিশ্চিৎ কালো ভবিষ্যতের কিছুটা ঘ্রান পাই। বয়সীজন সেসব নাকচ করে দিয়ে আমাদের অজ্ঞতায় কর্কশ হাসে।

"শোন তবে। বহুকাল আগে চীরঅন্ধকার যুগের সময়; কোন এক ভ্রস্ট পবিত্র অন্ধকারকে অস্বিকার করে আগুন জ্বালানোর কৌশল শিখেছিল। আগুন কী বুঝলে না তো? আগুন হচ্ছে সেই অমোচনিয় পাপ, যে পাপে পবিত্র অন্ধকার কুলষিত হয়, অন্ধকারের কোল থেকে তার অমৃতের সন্তানদের কেড়ে নিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। সেই ভ্রস্ট আদীমানুষের জ্বালানো আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিল অনেক পাপিস্ঠ মানুষ। তারপরের ইতিহাস খুব বেদনার। আমাদের মাংশের স্বাদ গেল কমে, কারন সবাই শিখলো আগুনে ঝলসে খাওয়ার নিয়ম, ফলে দাঁতের ধার গেল কমে, ভোঁতা হয়ে গেল নখ, দুর্বল হয়ে গেলাম আমরা, কমে গেল শিকার দক্ষতা। আমিষ ছেড়ে ঘাস-লতা-পাতা-শাক-সব্জি-ফলমুল খাওয়ার শুরু হয়ে গেল। আরো ভয়ংকর ব্যাপার হলো, ঐ অপবিত্র আগুনের ঔজ্বলে সবাই সবার উত্থিত-নির্জিব শিশ্ন, ভেজা-শুকনো যোনী, উন্নত-অনুন্নত স্তন দেখে লজ্জায় পড়ে গেল, ছাল-চামড়া দিয়ে ঢেকে ফেললো নিজেদের। না, না; এটিই শেষ নয়। এর চাইতেও ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছিল। তারা সেই অপবিত্র আগুনের উপাসনা শুরে করেছিল, যুগপৎ ভয়ে ও শ্রদ্ধায়।"

এই ইতিহাসের কিছু-কিছু আমাদের জানা। বয়সীজন আমাদের আরো জানায় এই অপবিত্র আগুন সভ্যতা নামের যে মেকি মুক্তির আশা দেখিয়েছিল, তা আদতে ছিল; এই মহান অন্ধকার থেকে সবাইকে দুরে রাখার অভিসন্ধি। আগুনের সভ্যতা সাময়িক জিতে গেলেও, মহান অন্ধকার ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসেছিলেন। কারন তিনি জানতেন, আগুনের বিপরিতেই তাঁর অবস্থান এবং তিনি আরো জানতেন, কোন আগুনই অনন্তকাল জ্বলে থাকতে পারে না, তাকে হাওয়া দিয়ে, কাঠের শুস্কতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। একসময় এই হাওয়া আর কাঠের যোগানদার ক্লান্ত ও বিষন্ন হয়ে পড়বে, প্রবল ঘৃনায় ঝাঁপিয়ে পড়বে একে অন্যের উপর। এবং ঠিক তখনই মহান অন্ধকার গিলে ফেলবেন নিভু নিভু আগুনের শেষটুকুও।

তো, সেই বয়সীজন আমাদের জানায়; ঐ অপ্রাকৃত গন্ধ যা সে পেয়েছে, তা ঐ অভিশপ্ত আগুনের উপজাত, যাকে বলে ধোঁয়া!!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×