somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ অপরুপ নিক্রপোলিস, এ দারুন হননকাল!

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিদিনের সকাল; রংহীন, বিবর্ন অথবা ধুসর। আততায়ি বৃস্টির খবর নিয়ে খুব নিচু দিয়ে ভেসে যাচ্ছে মেঘ। জানালা খুলতেই পোড়া গন্ধ ধাক্কা দেয়। মাংশ পুড়ছে কোথাও; সাথে চর্বি, কাপড়, টায়ার আরো অনেক কিছুই। হাই ওঠে। ইন্সোমনিয়া আক্রান্ত চোখ ফেসবুকের নিউজফিডে। ঝরে পড়ছে এনএসইউ এর পায়েল; ব্রিজ থেকে, হোমস্ক্রিনে ক্রমশ নেমে যাচ্ছে স্ক্রলের সাথে, মীনরাজ্যে কিন্চিৎ চান্চল্য জাগিয়ে দুদিন বাদে ভেসে উঠবে নদীতে। ছোট্ট পাহাড়ি ফুল কৃত্তিকা। রেপড এন্ড মার্ডারড; পাহাড়ে এসব হর-হামেশাই ঘটে তায় সেও দ্রুত নেমে গেল নিচে। দুই মেয়ে, এক ছেলে। ৯, ৭ ও ৩ বছর। শুয়ে আছে সারিবেধে, মা ঝুলছে সিলিংয়ে। তারাও নেমে গেল বুড়ো আংগুলের ওঠা-নামায়। কাওরানবাজারে দুটো বাসের রেস। ফলে একটা ছেঁড়া হাতকে থাম্বস-আপ দেখিয়ে নেমে যেতে হয় দ্রুত। হাতহীন ছেলেটা নিভে গেল। এই সব নিভন্ত মানুষের গাথায় একে একে যোগ হয় ছেড়া পা বা বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন অংগের আখ্যান। অনেক অনেক আগের নিখোঁজ মানুষেরা হঠাৎ গল্প বলবে বলে দৃশ্যমান হয়। তারা এক অলৌকিক বন্দুকযুদ্ধের গল্প বলে। আকরামের মেয়েদের চিৎকার নাকি তাদের ঘুমাতে দেয় না। "হ্যালো আব্বু, তুমি কোথায়?" এবং লিকড অডিও টেপের অন্যান্য বাক্যগুলো তাদের তাড়া করে। প্রার্থনা থাকে যে; যেন তাদের সন্তানরা বধির হয়ে যায়, যেন গানশট এর তিব্রতা তাদের মগজে পৌছানোর আগেই মিলিয়ে যায়। তাদের সাথে দেখা হয় বাসে ধর্ষিত ও মৃত যুবতীদের অথবা নিবিড় নিরাপত্তা বেস্টনির ভেতর তনুর হিযাবের ছেড়া অংশ খুঁজে পায় তারা আর ভাবে মাটির অণু-পরমাণুর ভেতরে ঘুমিয়ে আছে ওরা, থাকুক; ঘাসের গাঢ় সবুজে অথবা সুর্য্যমুখির উদ্যত মুখে জেগে উঠবে কোনদিন। একসময় এই সব নিখোঁজ মানুষেরাও অদৃশ্য হয়, নতুন নিখোঁজদের তালিকায় ভরে ওঠে হোমপেজ।

অফিস যাওয়ার তাড়া। খিদে পায়। পোড়া মাংশের গন্ধ টোস্টে, বাটারে। মনে পড়ে বিহারি কলোনীর সারি সারি কবাব ঘর আর হতভাগ্য মুরগির বুক-উরু খুব ঝাল মশলা মেখে অপেক্ষায়; ফুটন্ত তেলে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে। কয়লার অল্প আঁচে মৃদু পুড়ছে লাল মাংশ। এইসব লোভনীয় স্মৃতি উস্কে দেয় গাড়ি ভর্তি মানুষের পুড়তে থাকা অবয়বের বাঁকা-চোরা ভংগি। সেলফোনের অস্থায়ি স্মৃতি কোস্ঠ ভরে ওঠে সবার। ভবিষ্যতে বিহারি কলোনীর কাবাব ফুরিয়ে গেলে তারা এই মুচমুচে ভিডিওটা দেখবে বারবার। একটা পাগল অথবা মিসফিট লোক আঁজলা ভর্তি ধুলো জ্বলন্ত গাড়িতে ছুঁড়ে দিয়ে আগুন নেভাতে চাইলে সমবেত কয়েকজন তাকেই ছুঁড়ে ফেলে আগুনে। ফলে সবাই আবার তাদের সেলফোনের ক্যামেরা চালু করতে বাধ্য হয়।

পুড়তে থাকা মানুষ ভর্তি বাস পেরিয়ে অফিস ভেহিকলের নাগাল পাওয়া যায়। একটি প্রাইভেট কারের পশ্চৎদ্দেশে পাহাড়ের বিশালতা নিয়ে তেড়ে ফুড়ে উঠে আছে একটি লরি। কেউ কেউ সংগম-উদ্যত ষাঁড় এর সাথে সাজুয্যতা খুঁজে পেয়ে হাসে। সংক্রামক হাসি বিস্তৃত হয়, যখন রুটি চোর এক বালককে ক্রশিফাই করার তোড়জোড় করে বেকারি মালিক ও উৎসুক জনতা। অফিস ভেহিকলের ভেতরে বাইরের শব্দ খুব কমই আসতে পারে, ফলে তারা বালকটির চিৎকার বা বেকারি মালিকের খিস্তি কিছুই শুনতে পায় না। সবার হাসি পায় এই দেখে যে; বালকটি মৃত্য নিশ্চৎ জেনেও প্রানপনে চেস্টা করে চুরির রুটিটার কিছুটা অন্ততঃ উপোষী পেটে চালান করতে, যেন তার মৃত্যটা মহিমান্বিত হতে পারে। ট্রাফিক সিগনালের পোস্টে রুটি মুখে বালকটি কতক্ষন ঝুলে থাকে। অফিস ভেহিকলে কেউ কেউ আফসোস করে। বাড়ির বউ বা গনিকালয়ের বেশ্যারা ঠান্ডা মাংশ হয়ে গেলে এক-আধটা রুটি দিয়ে এই সব রাস্তার ছেলে-ছোকরাদের সহজেই পেডোফাইল সাইটে আপলোড কোরে দেয়া যেত। রিয়ার-ভিউ মিররে বালকটির ঝুলন্ত দেহ ক্ষিনতর হতে হতে মিলিয়ে গেলে তারা আফসোস ভুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। তারা বলে;

"আমি ঐ সিরিয়াল কিলারের অভাব বোধ করি এখানে খুব। ঐ যে; লন্ডনের রাস্তায় বেশ্যা আর ছিন্নমুল মানুষদের খুন করতো; নামটা ভুলে গেছি! ল্যাংড়া লুলা ফকির মিসকিন আর ফুলের মালা হাতে ছোটাছুটি করা কালো শিশুগুলো দারুন টার্গেট হতে পারতো তার!"

"১২ হাযার মানুষ নাকি মারা যায় ফি বছর রোড একসিডেন্ট এ? জন্ম হারের সাথে তুলনা করলে সংখ্যাটা লজ্জাজনক।"

"আমাদের মহল্লায় গেল সপ্তায় ৩ টা খুন, ৪ টা ধর্ষন, ২ টা আত্মহত্যা এবং কী আশ্চর্য্য ১ টা সাভাবিক মৃত্যও ছিল!"

"আমার উপরের ফ্ল্যাটে বৌ-ছেলে খুন করে আত্মঘাতি হয়েছে একজন। গেল সপ্তায়। ও হ্যা, একটা কাজের মেয়ে ছাদ থেক লাফিয়ে পড়েছে, একটুর জন্য নতুন একটা গাড়ি বেঁচে গেছে ওর পতন থেকে!"

"ক্রিয়েটিভিটি বাড়ছে মানুষের! গেল সপ্তায় ছুটিতে ঢাকার বাইরে একটা গিয়ে দারুন একটা ব্যাপার দেখলাম ওয়ার্কশপে গাড়ির চাকায় হাওয়া দেয়ার সময়। ওয়ার্কশপের মালিক এক কিশোর ছেলের পায়ুপথে ব্লোয়ার ঢুকিয়ে বাতাস ছেড়ে হত্যা করছে।"

"আমার এলাকায় শিশু হত্যা বেড়েছে। বাড়বেই বা না কেন? ওরা তো লোভি; চকলেট দিলেই চলে আসে আর সবাইকে বিশ্বাষ করে আর ওদের খুন করাও খুব সহজ। প্রায় প্রতিদিনই একটা-দুটো হারায়ে যায়, লাশ পাওয়া যায় পরিচিত কারো বাড়ির সেফটি ট্যাংকে বা ড্রেনের ভেতর।"

"মেয়েরা খুব সস্তা আর দুর্বল। যেখানে সেখানে রেপ কোরে খুন কোরে ফেলে রাখা যায়। চাইলে টুকরো টুকরো কোরে ব্যাগে ভরে কোন সিএনজি তে ভাড়া না দিয়ে ফেলে রেখে চলে যাওয়া যায়।"

"সৌদিতে যৌনদাসী কোরে পাঠানোও যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে শেখদের অবদান ভুলে গেলে চলবে?"

"শুনেছেন, ঐ পবিত্র ভুমিতে থেকে উৎক্ষিপ্ত ক্ষেপনাস্ত্র ইয়েমেনের এক বাসে লক্ষ্যভেদ কোরেছে? শিশু ভর্তি বাস। ওটাই ওদের নিয়তি।"


একঘেয়ে অফিস। কার্যকর ও সফল মানুষের ৭ টি অভ্যাসের অনুপস্থিতিজনিত কারনে তাদের অবসাদ বাড়ে। " The Subtle Art of Not Giving a Fuck" এর কয়েক পাতা পড়ে কেউ কেউ। ফলে তাদের মধ্যমা বাকি সব আংগুল ছাপিয়ে উর্ধমুখি হয় এবং শহরের পানশালাগুলো উপচে পড়ে বৃহ্ঃস্পতির সন্ধ্যায়। রাত ঘন হতে থাকলে পান-পরবর্তি হ্যাংওভারের আগেই একটি ইউটোপিয়া আবিস্কৃত হয়। দেশে এমন এক জায়গা আছে; যেখানে এখনও কোন অস্বাভাবিক মৃত্যর ঘটনা ঘটেনি। মাতাল হলেও কেউ এটা বিশ্বাষ করে না। এটা আগেও শোনা গেছে কিন্ত খুঁজে পায়নি কেউ। বৃস্টিস্নাত ফুটপাথে প্রেমিক প্রেমিকার চকিত কিন্ত প্রকাশ্য চুম্বনের স্থির চিত্র, একদল শিশু-কিশোরের হাস্যজ্জল মুখে রাস্তার আবর্জনা পরিস্কারের ভাইরাল ভিডিও ক্লিপ, রাস্তার ঘেও কুকুরের চিকিৎসার জন্য টিউশনের পুরো টাকা খরচ কোরে ফেলা ঝাকড়া চুলের এক ছেলে, কবিতার বই হাতে উচ্ছল যুবক বা ফুলের মুকুট মাথায় তরুনী; এসব অবিশ্বাষ্য ও অলৌকিক খবর তাদের বিভ্রান্তিতে ছুঁড়ে ফেলে, সবেগে। ফলে সবাই অবদমন ও অপরাগতা চেপে রেখে এই বিভ্রান্তি নিরসনে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। আরেকটি রংহীন, বিবর্ন অথবা ধুসর সকালের আগেই ঐ ইউটোপিয়াটা খুঁঝে পেতে হবে, ঘটাতে হবে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যর ঘটনা। হতে পারে চুম্বনরত প্রেমিক-প্রেমিকার ঠোঁট পেরেক বিদ্ধ কোরে প্রকাশ্যে নগ্ন কোরে পাথর ছুঁড়ে মৃত্য নিশ্চিৎ করা। হতে পারে হাস্যজ্জল শিশু-কিশোরদের উপর দ্রুতগামি বাস তুলে পিস্ট করে দেয়া। হতে পারে কুকুর প্রেমি ঝাকড়া চুলের ছেলেটির পকেটে মারিজুয়ানার ছোট্ট পুরিয়া দিয়ে বন্দুকযুদ্ধের কুশীলব করা। হতে পারে কবিতা প্রেমি যুবককে বেঁধে ফুলের মুকুট পরিহিত তরুনীকে ধর্ষন করা এবং তাকে দেখতে বাধ্য করা এবং না দেখতে চাইলে ওর চোখ দুটো তুলে ছুঁড়ে ফেলা।




ছোট কাগজ "রাঢ় বংগ"- এ প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৫
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×