somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Pacific Rim এর দানবরা কি সম্ভব?

০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজকাল অনেক নতুন নতুন ইংরেজি সাইন্স ফিকশন টাইপ মুভি বের হচ্ছে। মুভিগুলা দেখতে ভালই লাগে, কিন্তু হাল্কা পাতলা সাইন্স জানা মানুষ হিসেবে মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়। Transformers, Pacific Rim, Godjila, Iron man, Oblivion ইত্যাদি সবগুলাতেই ব্যাপক কনফ্লিক্ট তৈরি হয় আমার মধ্যে!

যাই হোক, আজকে আমি আলোচনা করব Pacific Rim ার Godjilla নিয়া। বিশাল বিশাল দানবের যুদ্ধ দেখতে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু এত অতিকায় আকার কোনকিছুর (প্রানি বা মেসিন) হউয়া সম্ভব্?


বিভিন্ন লিমিট পয়েন্ট আছে, আমি শুধু মেকানিক্যাল লিমিট নিয়ে বলব।

মেকানিক্যাল লিমিটঃ

প্রথমেই একটা উদাহরন,
কিছু পোকা তাদের দেহের ওজনের ১০০গুন ওজনের জিনিস তুলতে পারে, কিছু পোকা তাদের দেহের উচ্চতার ১৪০ গুন উচুতে লাফাতে পারে,
কিন্তু বাঘ ভাল্লুক সিংহ দেহের ১০ ভাগের ১ ভাগ ওজনের বেশি জিনিস তুলতে পারেনা, আর হাতি তো লাফাতেই পারে না! এটা কেন?

কারন মেকানিক্যাল লিমিট।

প্রানি নিয়াই বলি,
সরল চিন্তায় মনে হতে পারে, প্রানি যত বড় হবে, তার হার পেশি, সবই তো সেই অনুপাতে বড় হবে, তাই এইটা কুন ব্যাপার না।

কিন্তু আসলে বিষয়টা এমন না।

মূল বিষয়টা হল, Square-cube law!
মানে, কোন কিছুর সাইজএর সাথে তার ভর ঘন (cubic) হারে বারে, আর দেহের ক্ষেত্রফল Square হারে বারে!

এই কারনে, পেশি শক্তি তার cross sectional areaএর উপর নিরভর করে। কিন্তু আকার বারলে ক্ষেত্রফলের তুলনায় পেশির ভর বেরে যায়। তাই পেশি সক্তি ব্যাপক ভাবে কমে আসে।

আবার হাড়ের উপর চাপও অনেক বেরে যায়।

বিষয়টা কেমন তা বুঝার জন্য নিচের ছবি দেখি।



১ম বিল্ডিং এর নিচের পিলার গুলার উপর চাপ পরে,
Stress= বিল্ডিঙের ওজন/ক্ষেত্রফল
২য় ছবিতে বিল্ডিঙের সাইজ (দৈর্ঘ্য,প্রস্থ, উচ্চতা) দিগুন করা হল, মানে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা সব দিগুন করা হল।
তাহলে চাপ বেরে দারাল,
Stress= (১ম বিল্ডিংএর ওজনx ৮)/ (১ম বিল্ডিংএর ক্ষেত্রফলx৪)= ১ম বিল্ডিংএর দিগুন!

মানে সাইজ বারালে Stress দিগুন বেরে যাচ্ছে!


এইটা শুধু চাপ (compression) এর জন্য, কোন প্রানি যদি শুধু ঠায় দারিয়ে থাকে, একটা বিল্ডিংএর মতন, কুন নড়াচড়া করে না তবে কলাম টাইপ পা হলে (হাতির মত) তার হাঁটুতে ধরা যায় শুধু চাপই পরবে।

আর নড়াচড়া করলে তো অবশই, এমনকি দারিয়ে থাক্লেও অন্যান্য অর্গানে চাপ ছারাও Impact force (ঘাত বল, জার মান অনেক অনেক অনেক বেশি) Shear, Bending (বাঁকানো), Torsion( মোচড়ানো) ইত্যাদি পরবে। আর Bending, Torsion ২ টাও অনেক অনেক বেশি হবে চাপের তুলনায়।

এখন বিবেচনা করা যাক!
হারঃ
এখন প্রাণিজগতের ভার বহনকারী প্রধান জিনিস হল, হাড়!
হাড়ের এই চাপ সহ্য করার ক্ষমতা একটা ধ্রুবক।
মান= ১৪০ MPa
সাইজ বারাতে বারাতে একটা পর্যায়ে গিয়ে চাপএর মান যদি ১৪০ MPa ক্রস করে, তবে হাড় পারবে না ভার রাখতে। ভেঙ্গে যাবে।
কারটিলেজঃ
কারটিলেজও হাড়ের মতই!
পেশিঃ
পেশি বড় হতে হতে তার cross sectional area square হারে বারবে আর ভর cubic হারে বারবে, একটা পর্যায়ে গিয়ে পেশি নিজের ভার রাখতে পারবে না, তখন পেশি কোন কাজে আসবে না!

এখন প্রশ্ন হল, প্রানি কত বড় হতে পারবে?
Impact, bending ইত্যাদি এসব নির্ণয় করা আপেক্ষিক, জটিল আর অনেক তথ্য দরকার, Biomechanics খুবই জটিল, যা করা আমার পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব। তবে আমরা ইতিহাস দেখতে পারি।

ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্থলজ প্রানি ছিল Souropods। ওরা ছিল overloaded! তারা প্রায় ৮০ টন ওজন হত, তাদের ওজন সাম্লাতে ৪ পাই লাগত। আর তাদের পা গুলো ছিল কলাম টাইপ, মানে বল যাতে যতটা সম্ভব Compressive হয়। আর ছিল খুবই স্লো!



তাই আমরা ধরতে পারি হাড়ের এইরকম গঠনে ১০০টনের বেশি চলনশীল প্রানি তৈরি হউয়া বেমানান! নইলে হাড় দেহের ভার রাখতে পারবে না।

মুভিতে কাইজু দানবদের ওজন ছিল ২৫০০টনের মত! তাই আমরা নিরধিদায় বলতে পারি,
ইহা অসম্ভব”।

এত ওজন হলে হাড় তো ভাঙবেই! কারটিলেজও যাবে, প্রানির পেশিগুলোও হবে অতিকায়, ফলে তাদের কার্যক্ষমটা অনেক অনেক কমে আসবে।
হিসেব করিনাই, কিন্তু হয়ত নিজের হাতও উপরে উঠাতে হিমশিম খাবে বা পারবেইনা!
পাশাপাশি টেন্ডন আর লিগামেন্ট গুলোর ও ভর বেরে জাউয়ায় কার্যক্ষমটা কমে যাবে। তাই সহজেই, বিশেষ কোন টান পরলে অগুলো ছিঁড়ে যাবে, আমাদের মতন পা মচকাতে হবে না।


আর গডজিলার ওজন তো ছিল, ১ লাখ টনের উপরে! লল!


আর মেসিন গুলার বাপারে বলতে চাচ্ছিনা, ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র হিসেবে হাজারটা কথা বলা যায়, হিসেব করা যায়, আপাতত যা সম্ভব না।

শুধু এতটুকু বলব, Pacific Rim এর অই মেসিন গুলা বানানও সম্ভব না, এমন কোন উপাদানও নাই এত ওজন ধরার জন্য, এত শক্তিশালী ইঞ্জিনও নাই বিশাল হাত পা গুলো এত সহজে নাড়ানোর জন্য।



তাই কিছু কিছু জিনিস সম্ভব, শুধু মুভিতে! :p


সমাধানঃ

যদি আমরা এমন দানব স্বীকার করতেই চাই, তবে এ নিয়ে একটা সমাধান বার করা যায়।

প্রানিগুলা ছিল, Genetically Engineered। তাই আমরা ধরে নিতে পারি তাদের সবকিছুই engineered।

তাহলে আমরা ধরতে পারি, তাদের হাড়গুলো হয়ত কোন unknown material এর unknown combination এ তৈরি, বা তাদের দেহে কোন আনবিক levelএর খুবই sophisticated suspension system আছে!
তাদের পেশি গুলো হয়ত cybernetic বা অন্য কোন উপাদানে তৈরি।
আর তাদের পেশিকোষ গুলো হয়ত radioactive। মানে তারা প্রচলিত chemical reaction ব্যাবহার করে কোষে শক্তি উৎপন্ন করে না, এর চেয়ে কোষীও পর্যায়ে পারমানবিক বিক্রিয়া ঘটায়।

তাদের লিগামেন্ট টেন্ডন কারটিলেজ গুলাও হয়ত ওরকমই।

এসব ব্যাপার ধরলে হয়ত mechanically সম্ভব দানবরা!

তবে!
এমন engineering করা মানে দেহের DNA গুলকে, প্রতিটা কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করা। আমার জানামতে মানব জাতির এইটা engineering এর সবচে sophisticated version, সবচেয়ে জটিলতম engineering! হয়ত এ জন্নে আমাদের প্রচলিত গনিতকে ঢালাও করে সাজাতে হতে পারে!

তাই জাদের হাতে এমনটা করার ক্ষমতা থাকবে তারা মানব জাতি থেকে নেক অনেক অনেক বেশি advanced হবে। তাদের মানব জাতি শেষ করে দেবার জন্য অবশই এমন দানব পাঠাতে হবে না। শুধু একটা জিবানু engineered করে পাঠিয়ে দেবে।

ব্যাস, সব শেষ...

কাজেই এই হিসেবেও, কিছু কিছু জিনিস সম্ভব, শুধু মুভিতে! :p
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৪৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×