নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিছুদিন আগেই আমাদের স্কুলের ছেলেরা দেশ কাঁপিয়ে দিয়েছিল যানবাহন চলাচলে এসেছিল শৃংখলা আবার যা কার তাই তারপরও আমদের সন্তান তুল্য ছাত্রদের ধন্যবাদ যে তারা সমাজের অনেক অসংগতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আধমরাদের ঘা মেরে বাঁচাতে পারেনি, তবে নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য করেছে সড়কের নিরাপত্তাহীনতার কারণ হিসাবে ফিটনেস বিহীন যানবাহন, লাইসেন্স বিহীন চালক, ট্রাফিক আইন অমান্য, বেপরোয়া ড্রাইভিং, পথচারিদের অসাবধানতা কে দায়ী করা হয়। সেই সাথে দুর্ঘটনা উত্তর সংস্কৃতিও আমার মনে হয় সড়কের নিরাপত্তাহীনতার জন্য অনেকখানি দায়ী। নিচে এ নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করলাম-
যে কোন একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে তিন শ্রেণীর মানুষের সমাবেশ ঘটে-
১) সেবক শ্রেণীঃ এ শ্রেনীর ব্যাক্তিরা দুর্ঘটনা কবলিত ব্যাক্তিদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করার চেষ্টা করেন এদের সংস্কৃতি শ্রদ্ধা করার মতো এবং অনুসরণযোগ্য
২) শোষক শ্রেণীঃ এদের কাজ হলো দুর্ঘটনা কবলিত ব্যাক্তিবর্গের মানিব্যাগ, মোবাইলসহ দামী জিনিষপত্র গায়েব করা এরা এতটাই জঘন্য যে এদের নিয়ে আলোচনা করতেও রুচিতে বাধে।
৩) শাসক শ্রেণীঃ এরা নিজ হাতে দুর্ঘটনার বিচার এবং শাস্তির ব্যাবস্থা করে প্রথমেই এদের কাজ হলো সড়ক দুর্ঘটনায় যে যানাবাহন দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হলো সেই যানবাহন ভাঙচুর করা, ক্ষেত্র বিশেষে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া এবং এর হেলপার, ড্রাইভারকে পিটিয়ে আহত বা নিহত করা এ শ্রেনীর ব্যাক্তিদের সড়ক দুর্ঘটনার দায় নির্ণয় করার প্রক্রিয়াটাও একেবারে সোজা- ট্রাকের তলায় মটর সাইকেল পড়েছে অতএব দায় ট্রাকের, বাসের তলায় পথচারি পড়েছে অতএব দায় বাসের এর অন্যথা যে হতে পারে, তারা কখনো এটা ভেবেও দেখে না হয়তো এ ক্ষেত্রে ট্রাক ড্রাইভার বা বাস ড্রাইভারের কোন দোষই ছিলনা, সেটা ভাবার বা বুঝার মতো মন মানসিকতা শুধু তাদের কেন আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের গড়ে উঠেনি নদীর স্রোত যেদিকে আমরা সেদিকে। এ কারনে শুধু যে অবিচার হচ্ছে তাই না, প্রায় প্রত্যেক ড্রাইভারের দুর্ঘটনার পর প্রথম টার্গেট হয় পালিয়ে যাওয়া এবং এ কাজ করতে গিয়ে তারা আরও মারাত্মক কিছু দুর্ঘটনা ঘটায়
তাই যত আইনই করি না কেন এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে আমরা যতদিন না বের হতে পারবো ততদিন নিরাপদ সড়ক পাবো না।
এবার আমার প্রত্যক্ষ করা বাস্তব দুটো সড়ক দুর্ঘটনার বর্ননা করছি যেখানে সেবক শ্রেণী ও শাসক শ্রেণীর উপস্থিতি লক্ষণীয়-
১) অনেক বছর আগে ১লা বৈশাখে রমনার বটমুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে উঠেছি বাংলামটর এর কাছে বাস আসার পর দেখলাম আমাদের বাসের বেশ কিছুটা সামনে এক দম্পতি তাদের ৪-৫ বছরের এক শিশুকে নিয়ে, শাহবাগের দিকে যাচ্ছেন হঠাৎ শিশুটির মাথার ক্যাপটি উড়ে এসে আমাদের বাসের বেশ কিছুটা সামনে পড়লো সাথে সাথে মটর সাইকেল থামিয়ে লোকটি দৌড় দিলেন ক্যাপটি কুড়াতে, আমাদের বাসটি তখন মাত্র ৫-৬ ফুট দুরে, বাসটি ব্রেক করলো কিন্তু থামতে থামতে লোকটি বাসের নিচে চলে গেল সাথে সাথে ড্রাইভার জানালা দিয়ে পালালো। উত্তেজিত জনতা ড্রাইভারকে না পেয়ে হেলাপরকে নামিয়ে বেধড়ক পেটানো শুরু করলো, এক সময় মার খেয়ে হেলপরটি ফুটপাতে পড়ে গেল, সেই অবস্থায় এক জানোয়ার একটা আধলা ইট দিয়ে হেলপারের মাথায় আঘাত করা শুরু করলো ওদিকে কিছু ব্যাক্তি বাসের তলে পড়া লোকটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেল ক‘দিন পরে পত্রিকা থেকে জানলাম বাসের হেলপার এবং মটর সাইকেল চালক উভয়েই মারা গেছে
২) গাড়ি চালাচ্ছেন আমার কাজিন, আমি তার পাশে বসা কাজিনটি যথেষ্ট সাবধানে গাড়ি চালান তারপরও কোথায় থেকে এক আধা পাগল এসে পড়লো তার গাড়ির সামনে হার্ড ব্রেক করেও দুর্ঘটনা এড়াতে পারলেন না গাড়ির বাড়ি খেয়ে পাগল ছিটকে পড়লো রাস্তার পাশে শরিরের বিভিন্ন জায়গা ছিলে যাওয়ায় পাগলটি কাতরানো শুরু করলো কিছু মানুষ পাগলটির কাছে উপস্থিত হয়ে সেবা শুশ্রুসার চেষ্টা করা শুরু করলো।আমার কাজিন পাগলটিকে সাহায্য করার জন্য গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করলেন। কিন্তু ততক্ষণে চারিদিক থেকে চিৎকার শুরু হয়ে গেছে “ধর ধর” সাথে সাথে তিনি পকেট থেকে হাজার দুয়েক টাকা পাগলটার দিকে ছুড়ে দিয়ে, গাড়ি নিয়ে দিলেন ছুট জান বাচানোর জন্য তিনি যেভাবে গাড়ি টান দিলেন তাতে আরেকটি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনর ঘটার সম্ভাবনা ছিল। কিছুদুর আসার পর পিছনে তাকিয়ে দেখলাম যন্ত্রনা ভুলে পাগলটা টাকা গুলো কুড়াচ্ছে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম যাক পাগল (ভবের পাগল!) টি বেশি আহত হয়নি।