প্রথমেই জানাই ফিলিস্তিনীদের প্রতি গভীর সমবেদনা।
গত ৭ই অক্টোবর যখন হামাস ইসরাইলে হামলা করেছিল আমাদের অনেককেই বিজয় উল্লাস করতে দেখেছি। তখন কাউকে ইসরাইলের কোন নিরীহ মানুষ হতাহত হলো কিনা তা নিয়ে আশংকা প্রকাশ করতে দেখিনি বা কাউকে এর পরিণাম নিয়ে আতংকিত হতেও শুনিনি। এই হলো আমাদের বিবেক আর এটাই হল আমাদের দূরদর্শিতা। তখন একবারও কাউকে বলতে শুনিনি যে হামাস এসব করছে ইসরাইলের পরিকল্পনায়। সমন্ত কৃতিত্বই তখন হামাসের।
এখন ইসরাইল যেই নারকীয় হামলা শুরু করেছে এবার তাদের উল্লাস কান্নায় পর্যবসিত হয়েছে। সাথে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার। ইসরাইলীরা হামাসকে ট্রেনিং দিয়ে তারপর ইসরাইলে হামলা করিয়েছে। ২০১৪ সালেই হামাস ইসরাইলে সকল ট্যানেল নষ্ট করে দিয়েছে, এখন টানেল আসবে কোত্থেকে ব্লা, ব্লা। এরা সব কিছুতেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খোজেন। নিজেদের কোন দোষ দেখেন না আর অপরের কোন গুন খোজেন না। কেউ ইসরাইলের বোতল খেয়ে ইসরাইলের গুণ গান, আবার কেউ হামাসের নেশায় মাতাল। সুস্থ চিন্তা এদের মাথায় আসে না। এমনকি নিজের ভাইয়ের মাথায় বাশের বাড়ি দিয়ে ফাটিয়ে অপরের দোষ দেন। কারণ ইহুদি নাসারারা বলেছে ভাইয়ের মাথা ফাটাতে তাই দোষ ইহদি নাসারাদের। আমার কোন দোষ নাই। সব ষড়যন্ত্র।
তাহলে কি ইসরাইল বা আমেরিকা ষড়যন্ত্র করে না, অবশ্যই করে। ভয়ঙ্কর ভযঙ্কর ষড়যন্ত্র করে। তবে তারা আর যা করুক নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করেনা। নিজের দেশের নিরীহ নাগরিক মেরে অন্যের দেশে হামলার অজুহাত তৈরী করে না। কারণ অন্য দেশের নাগরিক বিশেষ করে তাদের কাছে মুসলমানদের এক পয়সা দাম না থাকলেও নিজের দেশের খাটি নাগরিকদের মূল্য তাদের কাছে আপরিসীম। একটি উদাহরণ দিলে বুঝা যাবে: অনেক বছর আগে মার্কিনী এক মহিলা বাংলাদেশে আটক হয়েছিল মাদক পাচারের দায়ে। তার জন্য সে দেশের একাধিক সিনেটর তিনবার বাংলদেশে এসে দেন দরবার করে তাকে মুক্ত করে নিয়ে গেছে। আর একজন ইহুদির কাছে তো তাদের আরেক স্বজাতির জীবন সীমাহীন মূল্যবান। অজুহাত তৈরী করতে চাইলে তাদের হাজার রকম তত্ত্ব জানা, নিজেদের নাক কাটার দরকার নাই।
কাজেই যারা ভাবেন হামাসকে দিয়ে ইসরাইল তার অভ্যন্তরে হামলা করে তাদের নিজেদের হাজার হাজার নাগরিককে হত্যা করে ইসরাইল বা মধ্যপ্রাচ্য হামলার প্রেক্ষাপট তৈরী করেছে তারা কতটা বোকার স্বর্গে বাস করেন তা আমি বুঝে পাইনা। ইসরাইল যখন বলেছিল হমাস গাজার অভ্যন্তরে তৈরী টানেল থেকে এসে হামলা করেছে তখন একদল এ কথা উড়িয়ে দিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করেছেন। এখন একে একে জিম্মি মুক্ত হয়ে যখন টানেল এর বর্ণনা দিচ্ছে তখন তারা কিছুটা চুপ মেরেছেন।
আমার এ লেখার উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনিদের মর্মান্তিক মৃত্যুকে ছোট করা বা ইসরাইলের পৈশাচিক হামলাকে জাস্টিফাই করা নয় উদ্দেশ্য আমাদের অজ্ঞতা, একপেশে মানসিকতার দিকগুলোতে আলোকপাত করা। আমরা জটিল জটিল হিসাব করে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করি কিন্তু বেসিক কনসেপ্ট গুলোকে রেখে দেই হিসাব নিকাশের বাইরে। কোন হুজুরকে যদি প্রশ্ন করা হয় মুসলমানদের এমন দুর্দশার কারণ কী? তবে তাদের সহজ উত্তর "কোরান, হাদীস থেকে দুরে সরে যাওয়া আর ইহুদি, নাসারাদের ষড়যন্ত্র।" সব জাতি এক হয়ে মুসলমানদের পিছনে লাগে কেন? কারণ সবাই মিথ্যা আর আমরা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা আছি এই এক ঘোরের মধ্যে। আমাদের সমস্যার বাস্তবতাটাই এখনো আমরা বুঝতে পারিনি, সমাধান তো দূর কি বাত।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:৫১