অনেকদিন হল জানা আপার খবর জানিনা, ব্লগে কোন আপডেটও নেই বা হয়তো চোখে পড়েনি। তাঁর স্বাস্খ্য নিয়ে ব্লগে নিয়মিত আপডেট থাকা উচিত ছিল। এ ব্লগের প্রায় সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করেন/ ভালবাসেন/ স্নেহ করেন। তাই তার প্রতি সবার শুভ কামনা সব সময়ই আছে। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয় এই সম্মেলিত শুভ কামনার প্রতিদান দিবেন। অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ, সাহসিকতা এবং মমতায় এ ব্লগটাকে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। সে জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
প্রত্যেক ব্লগের কিছু বৈশিস্ট থাকে। সাধারণতঃ সে বৈশিষ্টগুলো ব্লগীয় নীতিমালা এবং মডারেটরদের পরিচর্যায় ফুটে উঠে। একটা ভাল ব্লগ সৃষ্টি করার প্রথম পদক্ষেপ হলো ভাল নীতিমালা গ্রহণ ও পালন করা, ভাল মডারেটর প্যানেল নিয়োগ এবং ভাল ব্লগার নির্বাচন।
তবে যেহেতু ব্লগের লিখা থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ তেমন কোন আর্থিক বেনিফিট পাওয়া যায়না তাই চইলেই উপরে উল্লেখিত সব কিছু পাওয়া যাবে না। তাছাড়া সামাজিক যোাগযোাগ মাধ্যমের ব্যাপকতা এবং সহজলভ্যতা সে পথ আরও সংকির্ণ করে দিয়েছে। আগে নিজের প্রতিভা নিজের মনের কথা প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে মানুষ ব্লগকে বেছে নিতো। তবে কখনোই কোন সাধারণ ব্লগে এমন লেখা কেউ লিখতেন না যার ভাল আর্থিক মূল্য আছে। সব সময়ই ব্লগে গড়পড়তা মানের লেখা আসতো আর এখন আসে মানহীন লেখা।
ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করা আজ প্রায় এক যুগ হয়ে গেছে। এই এক যুগে তেমন কোন ভাল লেখা লিখতে পারিনি। তবে যখন ব্লগে উপস্খিত থাকি প্রায় সব লেখা এবং মন্তব্য পড়ি। সে দিক থেকে নিজেকে একজন মনযোগী পাঠক হিসাবে দাবী করতে পারি। ব্লগের শুরু থেকে মডারেটরদের কথাগুলো একই রকম; মানসম্পন্ন লেখা দরকার, হাজারটা মানহীন মন্তব্যের চেয়ে একটা মানসম্পন্ন মন্তব্য অনেক ভাল, এমনকি দুষ্টু গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভাল। কিন্তু ব্লগের অবস্থা এখন হয়েছে ঠগ বাছতে গাঁও উজাড় এর মতো।
অনেকদিন আগের কথা, হঠাৎ শোরগোল উঠল এই ব্লগের লেখা চুরি হয়ে যাচ্ছে এ কারণে ভাল, ভাল লেখকরা আর লেখা দিতে সাহস করছেন না। যে কোন লেখা চুরি করাকে আমি ঘৃণা করি, এমনকি থিম চুরি কারকেও আমি ঘৃণা করি কিন্তু আমার লেখা কেউ যদি চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয় তবে আমার রাগ হয়না, হাঁসি পায় বা চোরের প্রতি করুণা হয়(যদিও আমার লেখা খুবই নিম্ন মানের)। আমার প্রশ্ন যারা লেখা চুরি নিয়ে এত শোরগোল তুলেছিলেন তারা নিশ্চয় পাইরেটেড উইনডোস ব্যাবহার করে এ সব লেখা লিখেননি। যাহোক মূল কথা হলো সেই সোরগোলের পর ব্লগ একরকম বন্ধ রেখে মডারেটর উঠে পড়ে লাগলেন লেখা চুরি বদ্ধ করার জন্য, অনেক প্রচেষ্টার পর সফল হলেন। তারপর থেকে কারও লেখা আর কপি করা গেল না। কিন্তু বিপত্তিটা বাধলো অন্য জাগায়, এ ঘটনার আগে আমরা অনেকে লেখা কোট করে করে চমৎকার সব মন্তব্য করতাম । লেখা কপি করার অপশন উঠে যাওয়ায় সে ধরণের মন্তব্য বন্ধ হয়ে গেল। ফলে মন্তব্যের সংখ্যা গেল কমে, ব্লগ মন্তব্য খরায় ভুগতে থাকলো। আর যারা লেখা চুরির ভয়ে লেখা দিতে পারছিলেন না । লেখা কপি হওয়া বন্ধ করলেই তারা ভাল ভাল লেখা দিয়ে ব্লগ সয়লাব করে দিবেন বলেছিলেন- কবিতার ভাষায় বলতে হয় তারা কেউ কথা রাখেনি।
সেই কার্যক্রমের পর ব্লগ বরং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারপরও নৈতকতার হয়তো জয় হয়েছে তাই বা কম কিসে। ক'দিন আগে জানলাম একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে এখনও লেখা কপি করা যায় অর্থাৎ যেই লাউ সেই কদুই রয়ে গেল।
একটা ব্লগে হরেক রকমের ব্লগার প্রয়োজন। যেমন মিরোরডল ব্লগে লেখেনা না, কিন্তু তিনি এসে ব্লগের প্রাণ চাঞ্চল্য বাড়ান, ভাল লেখাকে উৎসাহিত করেন, ব্লগকে ভাইব্রেন্ট করে তুলেন।
ব্লগার নতুন তার চমৎকার নিরপেক্ষ মন্তব্যের দ্বারা মন্তব্যে গতির সঞ্চার করেন।
সেরকম ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো কিছু ব্লগার আছেন ব্লগে, তাদেরও প্রয়োজন আছে। সে রকম ব্লগার হচ্ছেন চাঁদগাজী, কামাল-১৮, রাজীব নূর এবং মহাজাগতিক চিন্তা। ব্লগে তারা যে পরিমাণ সময় দেন/দিতেন সে রকম আর কেউই দেন না।
যদি সিনিয়র ব্লগার ধরি তাহলে আহমেদ জিএস, কামাল-১৮ এবং চাঁদগাজী। যদি ব্লগের প্রতি তাদের একনিষ্ঠা বা সিনিয়টির কথা ধরি তবে কি তারা তাদের যোগ্য সম্মান পেয়েছেন? মনে হয় না।
চাঁদাগাজীর কথায় আসি। কিছু বিষয়ে তিনি চমৎকার লেখা লেখেন আবার অনেক লেখাই তেমন ভাল না । তার অন্যতম অভ্যাস একে তাকে খোঁচা-খুঁচি করা এবং কাউকে কাউকে অবমাননা করা। কিন্ত স্ল্যং ভাষা ব্যাবহার করার নজির মনে হয় তার খুব কম। কিন্তু তার পরিবর্তে হেভিওয়েট এমনকি কচি কাঁচা ব্লগাররা পর্যন্ত তাকে যে ভাষায় আক্রমণ করেন তা দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। তার বিরুদ্ধে পরোক্ষভাবে যা ইচ্ছে তাই বলা যায় এটাই হয়ে গেছে ব্লগের কালচার। যদিও এ কারণে কিছু ফালতু নিক ব্যতিত কোন ভাল ব্লগার এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তেমন উদাহরণ নাই। এই দুদিন আগের একটি পোস্টে তার বিরুদ্ধে চরম অবমাননাকর ভাষা প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এটা করেছেন হেভিওয়েট দু'জন ব্লগার। এ রকম তারা করতেই থাকেন কিন্তু কখনও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয়না। সব ধরণের ব্যাবস্থা নেয়া হয় চাঁদগাজীর বিরুদ্ধে।
যাহোক তিনি থাকলে কেচাল বাড়ে আবার ব্লগে চাঞ্চল্যও বাড়ে। এখন তাকে ব্লগে রাখা হবে বা রাখা হবে না সে সিদ্ধান্ত মডারেটরদের। আর তাকে রাখতে হলে কিভাবে সঠিক পথে রাখা যায় তাও মনে হয় মডারেটরদের ঠিক করা উচিত। তবে যে পদ্ধতিতে মডারেটররা তাকে পরিচালিত করার চেষ্টা করছেন সেটা আমার মনে হয় কাজে দিচ্ছে না।
আরেকজন সিনিয়র ব্লগার কামাল-১৮ তিনি ব্লগে বহু মানসম্পন্ন মন্তব্য করে ব্লগকে সচল রাখেন। তার একমাত্র দোষ তিনি ধর্মের সমালোচনা করেন। সে কারণে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ব্লগার তাঁকে যে ভাষায় আক্রমণ করেন তা নিন্দনীয়। অথচ এর জন্য কোন ব্লগারকে শাস্তি পেতে হয়নি।
আমরা শক্তের ভক্ত নরমের যম, তাই নাহল তরকারী বানান ভুল করলে বেয়াদব বলে তাকে থাপড়াতে যাই আর হেভিওয়েটদের নিয়মিত বানান ভুল টাইপো হয়ে যায়।
মানসম্পন্ন পোস্ট বলে বলে আমরা চিল্লাতে থাকি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মোটমুটি নিরপেক্ষ মান সম্পন্ন পোস্ট প্রায়ই যার কাছে থেকে পাই তিনি শেরজা তপন তার লেখার মান, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং নিরপেক্ষতাও যথেস্ট ভাল লেভেলের এবং তিনি এই ব্লগে যথেষ্ট সমাদৃত।
আরেকজন ব্লগার আমাদের ড. এম আলী তার এক একটি পোস্টে যে পরিমাণ তথ্যের সন্নিবেশ ঘটান তা রীতিমত বিস্ময়কর। তার পোস্ট পড়লেই বোঝা যায় এক একটি পোস্ট বহু মেধা, পরিশ্রমের ফসল। কিন্তু তার পোস্টগুলোর সমাদর পোষ্টের মানের তুলনায় কম।
এর বাইরেও কোন কোন ব্লগার এর কাছ থেকে কিছু মান সম্পন্ন পোস্ট আসে তবে তারা নিয়মিত ব্লগার নন। যেমন মি: বিকেল মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন বিষয়ে ভাল লেখেন কিন্ত সিন্ডিকেট এর সদস্য না হওয়ায় তার পোস্টের সমাদর নাই।
মোটের উপর সচরাচর মান সম্পন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট লিখেন এ রকম ব্লগারের সংখ্যা হাতে গোনা।
এ ব্লগের ৮০% পোস্টই মনে হয় কলা বিষয়ক। কলা বিষয়ক পোস্টে অত্যন্ত পারদর্শী শায়মা আমি এটা পজিটিভলিই বলছি। তিনিও ব্লগকে সচল করে রাখেন। কিন্তু তিনি কি সাধারণ ব্লগার না মডারেটর সেটা বুঝা খুব কঠিন। তবে তিনি একজন হেভিওয়েট ব্লগার এটা সবাই নিশ্চিত।
ভ্রমণ বিষয়ে দুজন ব্লগার ভাল লিখেন একজন জুন আরেকজন খায়রুল আহসান। খায়রুল আহসান কবিতাও ভাল লিখেন। খুবই নম্র, ভদ্র, ভাল মানুষ । আমার ব্লগ জীবনের শুরু থেকে তিনি উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। কিন্তু নিত্যান্ত ভদ্র মানুষ বলে ঝুট ঝামেলা একেবারে এড়িয়ে চলেন। যদিও তিনি কোন সিন্ডিকেটের সদস্য নন কিন্তু তার ধার এবং ভারের কারণে তিনি সমাদৃত।
রোকসানা লেইস চমৎকার লেখেন। কিন্তু তাঁর লেখার মানের তুলনায় এ ব্লগে তিনি আন্ডাররেটেড বলা যায়।
আর কবিতা আমি তেমন বুঝিনা তাই কে ভাল লেখেন কে খারাপ লিখেন খুব একটা বুঝতে পারিনা। তাই এ নিয়ে আলোচনা না করাই ভাল।
এই ব্লগ থেকে তো জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি একবারে বিতাড়িত বলা যায়। আগেই বলেছি এটা মূলতঃ কলা ব্লগ। কলার ভিতরে যে সব পোস্ট এ ব্লগে প্রাণ সঞ্চার করে তা হলো সিন্ডিকেট মেম্বারদের আড্ডা, কেচাল, ভ্রমন এবং রোজনামচা। যার বেশিরভাগই থাকা উচিৎ নিজস্ব ফেসবুকে সীমাবদ্ধ। আর এখানে সামাদৃত মন্তব্য মানে একজন আরেকজনের পিঠ চাপড়ানো। এই যখন একটা ব্লগের কালচার হয়ে যায় তখন সেখানে ভাল কিছু আশা করা যায় কি করে!
কোন একটি ভাল লেখা মন্তব্যবিহীন পড়ে থাকার পরও যখন সেটা নির্বাচিত পাতায় দেখি তখন বুঝি মডারেটর এর ব্লগের উন্নতির জন্য চেষ্টা আছে। আবার মডারেটর এর কোন কোন আচরনে হতাশ হই। যদিও বুঝি তার সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও যখন নিদিষ্ট কিছু চিন্তা চেতনার লোকজন ব্লগে প্রমোটেড হন তখন একটু হতাশা আসে বৈকি।
দিনের পর দিন ব্লগ ঝিমাতে থাকে। যেন ম্যারাথন ঝিমানি প্রতিযোগীতায় নেমেছে ব্লগ। তারপর কেউ কেউ বিভিন্ন রকম সমালোচনা এবং নিদিষ্ট কিছু বিষয়ে ফোকাস করলে ব্লগ হঠাৎ একশ মিটার ম্পিন্টে দৌড়ানো শুরু করে । তখন সিন্ডিকেটের সদস্যদের ডোপ টেস্ট করতে ইচ্ছে করে। বুঝতে পারি এটা স্বাভাবিক দৌড় না এনার্জি বর্ধক ওষুধের ফল। এ দৌড়ে কাজ হবে না। ব্লগ টিকিয়ে রাখতে হলে সঠিক পরিচর্যা, পুষ্টিকর খাবার এবং সমতার ভিত্তিতে যত্ন নিতে হবে। না হলে ব্লগ ঝিমাতে ঝিমাতে ঢলে পড়বে।
এ ব্লগের প্রায় সকল ব্লগার ব্লগকে ভালবাসেন। সবাই চান ব্লগটা টিকে থাকুক। অভাব হলো ঐক্যের, সঠিক নীতিমালা প্রয়োগের এবং সকলকে পরিচর্যার। যতই কেচাল করিনা কেন আমি আশাবাদি দিন শেষে আমরা সবাই সামু পরিবারের সদস্যই হয়ে উঠবো এবং ব্লগকে সজীব রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
বিঃ দ্রঃ- নিজের মেমরি থেকে ব্লগারদের নাম লিখেছি। বানান ভুল থাকতে পারে সেজন্য আগেই দুখ প্রকাশ করছি। এখানে উল্লখিত ব্লগারদের বাইরে আরো অনেক ব্লগার এ ব্লগে অবদান রাখছেন, লেখার সময় তাদের নাম মনে না আসায় তাদের কথা উল্লেখ করতে পারিনি, সে জন্য দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



