একজন তনু ।ধর্ষিত সেই সাথে নিহত । তাকে খুব জঘন্যভাবে নাকি খুন করা হয়েছে । এটা প্রচার করতে গিয়ে বহু পুরাতন একটা বিবস্ত্র ছবি শেয়ার করা হচ্ছে , যা তনুর ছবি না ।
সেটা নিয়ে আজ উত্তাল সারাদেশ । কিন্তু এই প্রতিবাদের শুরু ছিলো ভিন্ন রকম । সে একটা থিয়েটারের কর্মী ছিলো । মাথায় হিজাব পরা অনেক ছবি আছে । তার মৃত্যুর পর প্রথম সারির মিডিয়া তেমন একটা নিউজ করেনি। এটা শুরু করে ওর সহপাঠীরা । তারা ক্ষোভ জানায় কেন মিডিয়া নিশ্চুপ, কেন থিয়েটার থেকে কোন প্রতিবাদ জানানো হয়নি , প্রথম আলোর মত মিডিয়া কেন চুপ ?
এটা অনেক বড় প্রশ্ন কেন প্রথম আলো চুপ ? কেন নারীবাদী মহিলারা চুপ ? কেন মানবাধিকার কর্মীরা চুপ ?
যেখানে প্রথম আলোর কারনেই বলা যায় পূর্ণিমা ধর্ষণ ও হত্যা মামলা আলোচিত হয় । মানবাধিকার কর্মীদের কারনেই লিমনের মত অনেকে বিচার পায় , আর নারীবাদীদের কথা না হয় বাদই দিলাম ।
তবে হ্যাঁ ! প্রথম আলো এখন লিখেছে , বিক্ষোভ মিছিলের ছবি দিচ্ছে । অন্য সংগঠনগুলোও প্রতিবাদ করছে , কেউ বলতে চাচ্ছে হিজাব থাকার পরও যখন ধর্ষিত হয়েছে তখন হিজাব আর দরকার নাই । আর প্রথম আলো যে ছবি দিয়েছে তাতে দেশের স্বার্থবিরোধী এবং অন্য একটা দেশের চাটুকারিতায় লিপ্ত এমন তিনজনকে ব্যানারের সামনে নিয়ে সেই ছবি দিয়ে সংবাদ ছেপেছে।
একটা বিষয় খুব রহস্যময় । অতীতে অনেক কিছু নিয়েই আন্দোলন হয়েছে । মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে , ভ্যাট নিয়ে , সারের দাম বাড়ানো নিয়ে , চাপাইয়ে বিদ্যুতের জন্য ---- এমন অনেক কিছু নিয়ে আন্দোলন হয়েছে । সব কিছু ছাপিয়ে কেন ওরা দাবি তুলছে ,ক্রিকেটার নিষিদ্ধ হলে আন্দোলন হয় , কিন্তু ধর্ষণের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন হয় না।” অতীতে অনেক কয়জন নিষিদ্ধ হয়েছে , কিন্তু তাদের নিয়ে আন্দোলন হয়নি , এবার হয়েছে কারন এখানে ভারতের কারসাজি স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলে তনুর ধর্ষিতা হবার সাথে তাসকিন সানির নিষিদ্ধ হওয়া ও তা নিয়ে আন্দোলনের কোন সম্পর্ক নেই । তাহলে কেন দুইটা মিলানো হচ্ছে ???????
এটা সত্য যে ক্রিকেটের ঘটনায় বেশি নেতিবাচক অবস্থায় আছে ICC আর ইন্ডিয়া। যদি বলা হয় সেই ঘটনার সাথে এই হত্যাকাণ্ডের কোন যোগসূত্র থাকতে পারে তবে খুব বেশি অমুলক হবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত হাজার হাজার মেয়ে বা নারী ধর্ষিত হয়েছে , অনেকে বিচার পেয়েছে অনেকে পায়নি । অনেকের ঘটনায় আন্দোলন হয়েছে অনেকের ঘটনায় আন্দোলন হয়নি কিন্তু কোন সময়ই কোন ধর্ষণের ঘটনায় অন্য কোন ঘটনা সমান্তরালভাবে তুলে আনা হয়নি । কিন্তু এবার আনা হয়েছে কেন ? ক্রিকেট কে কেন ধর্ষণের মুখোমুখি দাড় করানো হলো ? কার স্বার্থ নিহিত এখানে ?
অতীতে যত যা হয়েছে তাতে একটার সাথে অন্যটার যোগসূত্র পাওয়া গেছে । কিন্তু এখানে মানুষ ক্রিকেট এর পর সবথেকে বেশি দোষ চাপাচ্ছে সেনাবাহিনীর উপর কারন ঘটনা ঘটেছে সেনানিবাসে । কিন্তু তার পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত বলেনি কোন সেনা সদস্যের সাথে তার এমন কোন সম্পর্ক ছিলো যার জন্য তাকে এমনভাবে কোন সেনাসদস্য খুন করতে পারে । তাহলে অযথা কেন সেনাসদস্য এই কাজ করবে ?
যদি একটু পিছনে ফিরে তাকাই , দেখতে পাবো কতিপয় বখাটে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে খুব নৃশংসভাবে খুন করে , কারন তার থেকে তারা টাকা চাঁদা চাচ্ছিলো অনেক দিন থেকে , কিন্তু মহিলা রাজি হচ্ছিলো না । তাই তাকে খুব নৃশংসভাবে খুন করে এবং তার টাকা ছিনিয়ে নেয় । ওই মহিলার উপর তাদের রাগ আর ক্ষোভ ছিলো বলেই এমন কাজ করেছে।
তেমনিভাবে তনুর ক্ষেত্রে দেখা যায় তার লাশ খুব মারাত্মকভাবে বিকৃত করা হয়েছে , অনেকটা পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাদের বেলায় যেটা করা হয়েছিলো। বিষয়টা এমন হতে পারে যে বা যারা এই খুন ও ধর্ষণ করেছে , তনু নামের এই মেয়েটির উপর তার বা তাদের অনেক ক্ষোভ ছিলো । এটা নিছক কোন ধর্ষণ এর ঘটনা না ।
কিছুদিন আগে সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের একটা প্রস্তাব আসলে সেটা তিন বাহিনী প্রধানের অসম্মতির কারনে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি । সেনানিবাসের ভীতরে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটিয়ে কি সেই নিয়ন্ত্রন প্রস্তাব পাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে , প্রশ্ন থেকে যায় ।
তনু হত্যার পর প্রায় প্রতিদিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে , সেগুলো নিয়ে কোন আলোচনা নেই , কোন প্রতিবাদ নেই , কোন বিচারের দাবি নেই , কিন্ত কেন?
তনু হত্যার বিচার আমিও চাই । কিন্তু তনু যেন কোন বলির পাঁঠা না হয় সেটা সবথেকে বেশি খেয়াল রাখা দরকার। উপজাতি ইস্যুতে বামদলগুলো যেভাবে আন্দোলন করে , তনুর ঘটনায় তাই দেখা যাচ্ছে , কিন্তু কেন ?
ধর্ষণের বিচার দরকার কিন্তু যদি কোন উপলক্ষ্য তৈরির জন্য এই ধর্ষণ ঘটানো হয় তাহলে সেটারও বিচার করা দরকার ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪৭