somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদ – একজন বাজারি লেখকের অপূর্ণ রয়ে যাওয়া কিছু আশা , কিছু স্বপ্ন ।

২০ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ূন আহমেদ হচ্ছে একমাত্র লেখক , যার কপালে জুটেছিল বাজারি লেখকের তকমা । এই বাজারি লেখকই কিশোর কিশোরী ,তরুণ তরুণী সহ আরও অনেক প্রজন্মকে করেছিলেন বই মুখী ।
এই সস্তা বাজারি লেখকের ছিলকিছু আশা , কিছু স্বপ্ন । আসুন একটু চোখ বুলাই ।



হুমায়ূন আহমেদকে অনেক সমালোচনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে । তাকে অনেকেই বলতেন তিনি একজন বাজারি লেখক , সস্তা লেখক । নানা ভাবে কটাক্ষ ও করতেন।
হুমায়ূন আহমেদ এতে বিচলিত না হয়ে উল্টো এসব সমালোচকদের সূক্ষ্ম খোঁচা দিতেন । উদাহরণ দেই ।

‘’ আমাকে অনেকে বাজারি লেখক বলেন । দাঁড়ান , বাজারি লেখক ব্যাপারটা ক্লিয়ার করা দরকার । যাদের বই বাজারে পাওয়া যায় , তারা বাজারি লেখক । আর যাদের বই নিজেদের ঘর ভর্তি হয়ে থাকে তারা মহান লেখক , কালজয়ী লেখক । তাদের ধারণা তারা বাংলা সাহিত্যে বড় কোন বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন । প্রায় ই আমার সাথে এমন মহান লেখকদের দেখা কয় । কথাও হয় । কথাবার্তার নমুনা

- কেমন আছেন হুমায়ূন সাহেব
- জি ভালো । আপনি ভালো তো
- জি , তা ইদানীং কি নতুন কিছু লিখছেন
- একটা সস্তা প্রেমের উপন্যাস লেখার চেষ্টা করছি । তবে যতটা সস্তা হওয়া প্রয়োজন ততোটা হচ্ছে না । এ জন্য একটু শঙ্কিত । দুয়া করবেন যেন লিখতে পারি

কালজয়ী লেখক চুপ

- তা আপনি কি নতুন কালজয়ী কোন কিছু লিখছেন ?
- আপনার রসবোধ ভালো । পরে কথা হবে । ‘’

হুমায়ূন আহমেদ ই সেই সাহসী লেখক , যিনি সবার সামনে বলেছেন যে উনি টাকার জন্য লিখেন । লেখকরা হাওয়া খেয়ে বাঁচেন না । বাঁচার জন্য প্রোটিন , কার্বোহাইড্রেড দরকার হয় ।

আচ্ছা , আজ কই সে সব বিশুদ্ধ সাহিত্যিকরা , কোথায় সে সব সমালোচকরা যারা বারবার , প্রতিনিয়ত হুমায়ূন আহমেদকে সস্তা জনপ্রিয়তার অধিকারী , অপন্নাসিক বলে কটাক্ষ করতেন ।
তাদের বলি , হে মূর্খ , পারলে নন্দিত নরকে , শঙ্খনীল কারাগারের মতো একটি উপন্যাস লিখে দ্যাখাও । সৃষ্টি কর এমন একটি কাল্পনিক চরিত্র যার মৃত্যুতে পুরো দেশ রাস্তায় নেমে পড়ে । মিসির আলি , হিমুর মতো চরিত্র তৈরি করে দ্যাখাও হে মূর্খ মানব ।
এটা যদি সস্তা জনপ্রিয়তা হয় , তাহলে দামী টা কি ?






হুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছে ছিল তিনি প্রাণ ত্যাগ করবেন চান্নিপসর রাতে । জোছনা দেখে দেখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন । আর তারপর এসআই টুটুল গাইবেন একটি গান ।

হুমায়ূন আহমেদের কথাতেই এই ব্যাপারটি তুলে ধরি ।

‘’ আমার জোছনাপ্রীতির বিষয়টা এখন অনেকেই জানেন । কেনইবা জানবেন না । জয়ঢাক পিটিয়ে সবাইকে জানিয়েছি । গান লিখেছি --

‘ও কারিগর দয়ার সাগর ওগো দয়াময়
চান্নিপসর রাতে যেন আমার মরণ হয় । ‘

শিল্পী এসআই টুটুল এই গানটির সুরকার । সে নানান অনুষ্ঠানে গানটা করে এবং গলা কাঁপিয়ে আবেগে জর্জরিত হয়ে ভাষণ দেয় --

‘আমার স্যার , হুমায়ূন আহমেদ , একদিন ডেকে বললেন , টুটুল , চান্নিপরস রাতে আমার মৃত্যু হবে । তখন তুমি এই গানটি আমার মৃতদেহের পাশে বসে গাইবে । ‘



আমি যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে জানি মৃত মানুষ গান বাজনা শুনতে পারে না । সেখানে আমার শবদেহের পাশে টুটুলকে এই গান কেন করতে বলেছি বুঝতে পারছি না । সে পরিস্থিতে টুটুল যদি গিটার বাজিয়ে গানে টান দেয় , তার ফল শুভ হবে বলে মনেও হচ্ছে না । মৃত্যু শোকে কাতর শাওন অবশ্যই টুটুলের গলা চেপে ধরবে । ‘

হুমায়ূন সাহেব , কাল কি চান্নিপসর রাত ছিল ? কাল কি জোছনা ছিল নিউইয়র্ক এর আকাশে ? তবে কেন চলে গেলেন ? আপনি তো কথা রাখেন নি । এসআই টুটুল কি রাখবেন আপনার কথা ? উনি কি গাইবেন গান ?

হে চাঁদ , অনন্তকাল আফসোস করবি , অনন্তকাল ।



হুমায়ূন আহমেদকে একবার এক সাক্ষাৎকারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি মৃত্যুকে ভয় পান কি না ।
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন অনেকটা এমন ভাবে

‘ না । মৃত্যুনিয়ে আমার কোন ভয় নেই । তবে প্রবল বিদ্বেষ আছে । আমি কমপক্ষে এক হাজার বছর বাঁচতে চাই । ‘

‘ এক হাজার বছর বাঁচতে চান কেন ? ‘

‘ ওমা , একটা কচ্ছপ যদি হাজার হাজার বছর বাঁচতে পারে , তাহলে আমরা মানুষরা কেন ৫০/৬০ বছরে শেষ হয়ে যাবো ? আমি বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কার গুলো দেখে মরতে চাই । প্যান্ডোরার বক্স থেকে যা যা অশুভ জিনিস বের হয়েছিল বিজ্ঞান সব গুলোকে খেদিয়ে ভেতরে ঢুকাবে । পৃথিবীটা আবারো সুন্দর হয়ে উঠবে । ‘’

আপনি হাজার বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন , দেখতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কার , কিন্তু আপনি পারলেন না । মাত্র ৬৪ বছরেই প্রাণ ত্যাগ করলেন । কেন স্যার ? এতো তাড়াহুড়া কেন ? আপনি তো দেখতে যেতে পারলেন না আবিষ্কার গুলো । পৃথিবী তো এখনো সুন্দর হয়ে উঠেনি । অশুভ জিনিস গুলো তো এখনো আছে ।

আপনার আশাটা অপূর্ণ থেকে গেলো স্যার ।

আপনার এই অপূর্ণতা আমাদের তাড়িয়ে বেড়াবে সারাজীবন ।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চেয়েছিলেন একটি হাসপাতাল গড়তে । যাতে আর কারো বাবা , আর কারো সন্তান , আর কারো ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা না যান । চেয়েছিলেন হাজারো ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষকে সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে । আপনার এই আশাটাও পূরণ হয় নি । পারেননি জীবদ্দশায় হাসপাতাল গড়তে ।
আপনার অনুজরা কি পূরণ করবে আপনার এই আশা ?


হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর অনেকে উল্লাস করছেন , একজন নাস্তিক মারা গেছে । ভালো হয়েছে । তাদের বলি , শুনেন , অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী । যা জানেন না , তা নিয়ে লাফাবেন না ।
আর উনি আস্তিক হোক আর নাস্তিক । উনি সবার আগে একজন মানুষ । কোন ধর্ম নিশ্চয় কারো মৃত্যু নিয়ে উল্লাস করা শেখায় নি । ইসলাম ধর্মের নবী মুহাম্মদ সঃ ও তো আবু জেহেলের মৃত্যুতে উল্লাস করে নি । তাহলে তার উম্মতরা কেন করে ?

আর সবার আগে হুমায়ূন আহমেদের জীবনী পড়ুন , তাহলে সব স্পষ্ট হবে । আর পড়ার কষ্ট করতে না চাইলে আমাকে বলতে পারেন । উনার ‘আমি’ আমার মুখস্ত আছে । ২৫ বারের অধিকবার পড়েছি আমি । গরগর করে সব বলে যাবো ।

কষ্ট করে এতো বড় পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।


হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর এই পোস্টটি লিখেছিলাম ।

সময় হলে এটি পড়ে আসতে পারেন একজন হুমায়ূন আহমেদ , একজন পাঠক , কিছু অব্যক্ত কথা আর কিছু প্রশ্ন
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×