somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। বাঙালির বাসর রাত - প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ।। :`> :``>>

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উঠতি যৌবন যখন বাঁধভাঙিবার উপক্রম করিলো , তখনই আবুলের পিতা কাল বিলম্ব না করিয়া আবুলকে বিয়ের পিড়িতে বসাইয়া দিলেন । বাল্য কাল , কিশোর কাল ইত্যাদি সময়কালে এমন রাত্রি খুব কম ই গিয়াছে যে রাত্তিরে আবুল বাসর রাতের স্বপ্ন দেখে নাই । নির্ঘুম রাত্রি কাটিছে একে একে তাহার ইয়াত্তা নাই । নারী সঙ্গ হইতে সর্বদা দূরে থাকা আবুল নারীদের প্রতি তেব্র আকর্ষণ বোধ করিত । হেতু তাহার পিতা গ্রামের মান্যগণ্য একজন , সেহেতু সে তাহার আকর্ষণ অনেকটাই লুকাছুপা করিয়া রাখিত । নানান সময় নানান ভাবে নানান জনের প্রেমে পড়িয়াছে আবুল । প্রথম প্রেমের ব্যথ উপাখ্যান রচিত হয় তাহার কিশোর বয়সে । লতা’র চোরা চাহনিতে বিমোহিত আবুল তাহার নামের সার্থকতা প্রমাণ করিয়া ড্যাব ড্যাব করিয়া চাইয়া রহিত । এভাবেই সে চাইয়া চাইয়া লতা’র বিবাহ দেখিয়া ফেলিলো ।

কাহিনী এখানেই থামিয়া থাকে নি । বাস , ট্রেন আর মেয়ে একখান যায় , আরেকখান আসে । এই থিউরি প্রমাণ করিয়া আবুলের জীবনে আরও একখান মেয়ের আগমন ঘটিলো । গ্রামের মুদির দোকানীর লড়কি রুপবান । মুদির দোকান হইতে পণ্য খরিদ করিবার জন্য যাইতে যাইতে রুপবানের প্রেমে পড়িয়া যায় আবুল । কিন্তু লজ্জা শরমের কাথা বালিশ মোড়া আবুল তাহার ভালোবাসার কথা রুপবানরে কইতে পারে নাই । সময় স্রোত আর নারী , কাহারো জন্য অপেক্ষা করে না । রূপবানও এই সুত্রানুসারে আবুলের লজ্জা শরমের কাথা বালিশ খোলার অপেক্ষা না করিয়া বিবাহ করিয়া চলিয়া গেলো আবুলের ই বন্ধু ছদরুলের সহিত ।

আবুলের গণহারে ছ্যাক খাওয়ার কথা তাহার পিতার অজানা ছিল না । পুত্রের এই পরিণতি জটিল হইতে জটিলতর হওয়ার পূর্বেই তাহার পিতা আবুলকে বিবাহ বন্ধনে আইন্ধার গিট্টু বাইন্ধ্যা দিলেন । পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক রূপবতী কইন্যা আঙ্গুরলতা । বাসর রাত লইয়া বরাবরের মতোই উৎসুক আবুল বন্ধুদের সহিত পরামর্শ করিতে লাগিলো । বাসর রাতে কি কি করিতে হয় বন্ধুদের সহিত সে আলাপচারিতায় অবাকিত হইয়া আবুল লক্ষ্য করিল সে কিছুই জানে না । বন্ধুদের রসালো আলাপে আবুলের কান ভোঁ ভোঁ করিত লাগিল ।

রাত্তিরে যথা সময়ে দরজা ঠেলিয়া আবুল তাহার কক্ষে প্রবেশ করিলো । টুকটুকে লাল শাড়িতে বিছানায় বসা আঙ্গুর লতা’কে দেখিয়া আবুলের কলিজা ধক করিয়া উঠিলো । চোখ টিপ মারিয়া আঙ্গুর লতা আবুলকে আমন্ত্রণ জানাইলো । আবুল এক পা আগাইয়া তিন পা পিছাইয়া গেলো । তাহার কানে কানাঘাত করিতে লাগিলো ছদরুলের একখান বাক্য ।
‘’ বন্ধু বাসর রাইতে মনে করিয়া মারিও বিলাই
নইলে সারাজীবন থাকিতে হইবে স্ত্রীর পায়েরও তলায় ‘’

আঙ্গুর লতার তীব্র আকর্ষণ হইতে নিজেকে বিরত করিয়া দরজা খুলিয়া আবুল বাইরে ছুটিয়া গেলো । আবুলের দৌড়ের ‘আবুলিয় গতি’তে আঙ্গুর লতা আবুল হইয়া গেলো । আবুলের ফিরিয়া আসার অপেক্ষায় আঙ্গুরলতা প্রহর গুণিতে লাগিলো । দশ মিনিট যায় , আধা ঘণ্টা যায় , এক ঘণ্টা যায় , দুই ঘণ্টা যায় । আবুল ফিরিয়া আসে না । এদিকে ভোর হইতে লাগিল । আবুলের দেখা নাই । পাঁচ ঘণ্টা উনত্রিশ মিনিট ছাপ্পান্ন সেকেন্ড বাদে আবুল কক্ষে ফিরিয়া আসিলো । আঙ্গুর লতা আবুলকে দেখিয়া বিভীষিকায় কাপিয়া উঠিলো । ইহাকি আবুল ? তাহার আবুল ? নাকি ভূত ? সফেদ রঙা পাঞ্জাবী ধুলোয় মাখামাখি । এদিকে সেদিকে ছেড়া । কালিতে মুখ পোড়া আবুলের মতো অবস্থা । চোখ পাকিয়ে আঙ্গুর লতা কইলো , ‘ ওহে আবুল , কি করিয়া আসিছ ? ‘ আবুল তাহার পেছন থেকে দুই হাত সামনে আনিয়া কহিল , ওহ লতা, বিড়াল ধইরা আনিছি । বাসর রাতে বিড়াল মারিতে হয় । খাটের নিচ হইতে দা বাহির করিয়া মাটিতে বিড়ালের কল্লা রাখিয়া ‘ ইয়াআআআ আল্লল্লি ‘ চিৎকার করিয়া আবুল বিড়ালের কল্লা নামাই ফেলিলো ।


পরবর্তী ঘটনা খুবি সংক্ষিপ্ত । আঙ্গুর লতা আবুলকে ছাড়িয়া চলিয়া যায় । বিড়াল মারিতে যাইয়া সে তাহার বাসর রাতের স্বপ্ন মারিয়া ফেলে ।

উপরের ঘটনা বিড়াল মারিবার কাহিনী নিয়া বহুত প্রচলিত একখান চুটকি । ইহাকে নিজের মতো ঘুরিয়া ফিরিয়া লেখিয়া একটু মজাক দানের কোশিস করিলাম । এছাড়াও এই পুরাতণ কাহিনিকে উপস্থাপন করিবার আরও একখান হেতু আছে । বাঙালির বাসর রাতের কাহিনী দিনকে দিন পরিবর্তন হইয়াছে । আবুলের মত আবলামি এখন আর কেহ করে না । বিড়াল মারা’র আসল কাহিনী ধরতে না পারিয়া অনেকেই বেলাইনে উড়াউড়ি করেন ।

নিন্দুকেরা কহেন ,

' বাঙালি পুরুষের রোম্যান্টিকতা কবিতার মাঝেই সীমাবদ্ধ '

বাক্যখানা যে কতোখানি খাঁটি , তাহা বোঝা যায় আজকালকার প্রজন্ম দেখিয়া । আনাচে কানাচে , অলিতে গলিতে নানান নামে নানান কবিদের সমারোহ । তাহারা তাদের রচিত 'কবিতার' মাধ্যমে তাহাদের রোম্যান্টিকতা , তথা মনের উথাল পাথাল ভাবনার মূলোৎপাটন করিয়া থাকেন ।

শুধু আজকালকার প্রজন্ম নহে , আমাদের আগের প্রজন্ম ও বাসর রাতে তাহার সঙ্গীদের কবিতা শুনাইতেন । কক্ষে ঢুকবার পূর্বে তাহারা কয়েকখান কবিতা মুখস্ত করিয়া যাইতেন , এবং সময় মতো উদ্গিরন করিতেন ।

বর্তমান প্রজন্ম ফেসবুক প্রজন্ম । তাহারা সারাক্ষণ ফেসবুকে গুতান এবং কবতে লিখেন । নিন্দুকদের কথার সার্থক করেন । বিষয়টা এমন ই দাঁড়ায় যে প্রেমিকার বিয়ে হইয়া যাইতেছে আর এদিকে প্রেমিক কবিতা লেখিয়া তাহার মনের ভাব উজার করিতেছেন ।

আরে থাকুক অপ্রাসঙ্গিক কথা । এসব কথা বলিয়া আপনাদের বিরক্ত করিবার কোন হেতু নাই ।
যাহা কইতেছিলেম । বাসর রাতের প্রজন্ম ।

বর্তমান প্রেমিক প্রেমিকারা বরই লুম্যান্টিক । তাহারা নিত্তনতুন বাসরের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করিয়া থাকেন । ব্যাপারটা এমন , সখিনা লাল রঙে স্টোন পাথরের জামা কিনিয়াছে , সুতরাং জরিনা সবুজ রঙের জামা কিনিবে । সেম টু সেম হওয়া চলিবে না । স্বকীয়তা দরকার ।

আজকালকার প্রেমিক প্রেমিকারা তাহাদের বাসর রাতের পরিকল্পনা করিবার ক্ষেত্রে বরই স্পর্শকাতর ।

কাহিনী শুনি একখান ,

ঘাসের মাটিতে , ঝাড়ের চিপায় বসিয়া আছে দুই কইতর কইতরি । কইতর কইতেছে ,
ওই কইতরি , আমারা আমাদের বাসর রাতে কি করিবো ? ‘
কইতরি কহিল , আমরা চিঠি আদান প্রদান করিব । বাসর রাতে তুমি এক গাদা চিঠি নিয়া আসিবে । ‘’ কইতরির এহেন কথা শুনিয়া কইতর কহিত , ‘ ইহা কি কও কইতরি , এইডা ক্যামনে ? ‘’
কইতরি বিরক্ত হইয়া কহিল , ‘’ এটা ইউনিক ইস্তাইল , সবাই যাহা করে তাহা আমরা করিব না ‘’
কইতর লোলুপ দৃষ্টিতে কহিল , ‘ সবাই কি করে ? ‘

কইতরি মুখ ঝামটা দিয়া কহিল , কইতে পারুম না । ‘’
কইতর কইল , ‘ ও কইতরি , চিঠি চালাচালি করলে আমগো গেদা ক্যামনে পয়দা হইব ? ‘
কইতরি লাজুক স্বরে কইলো ‘’ পয়দা হওয়ার সময় হইবে । ভাবিও না ‘’

কইতর কহিল ‘ কিন্তু চিঠি চালাচালি করিলে চিঠির ই একে একে গেদা হইবে । আমাদের গেদা আর হইবে না ‘’
কইতরি ‘ চুপ যা বদমাশ ‘


আধুনিকায়নের এই যুগে প্রেমিক প্রেমিকারা তাহাদের বাসর রাত শুধু চিঠি চালাচালির মধ্যেই নহে , আরও নানান ভাবে পালন করিবার চিন্তা ভাবনা করিয়া থাকেন । আমার এক বন্ধু প্রতিম একবার দুঃখের সহিত কহিল যে তাহার প্রেমিকা তাহারে কইছেন যে ত্যানারা বাসর রাতের সময় ফোনালাপ করিবেন । দুই জন দুই রুম থেকে সারারাত ফোনে আলাপ করিবেন । এভাবেই তাহারা পালন করিবেন বাসর ।
আমি কইলাম , প্রথমে না আড্ডা দিয়া পালন করিতে চাইছিলি ? দোস্ত কইল , এই আইডিয়া নাকি তাহার বান্ধবী ঠিক করিয়াছে । তাই উহা বাতিল ।

বাসর রাত নিয়া জল্পনা কল্পনা চলিতে থাকিবে । যুগে যুগে , প্রজন্ম হইতে প্রজন্ম বাসর রাত নিয়া নানান রচনা রচিত হইবে , নতুন নতুন পরিকল্পনা হইবে ।

ক্ষুদ্র পরিকল্পনায় ইহা লেখিলাম । ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার যোগ্য । আগামীবার ‘বাসর রাতের সাতকাহন’ পড়িবার আমন্ত্রণ রইলো ।

সবাইকে ধন্যবাদ ।

পোস্টের অনুলিপি ।। বাঙালির বাসর রাত – প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ।। শিরোনামে আমার নিজস্ব ব্লগে জমা রাখা হইলো ।

ঘুরে আসতে পারেন ।। ” গর্ভনিরোধক খাপ” এবং আমেরিকান খাপের রেডিয়াম প্রযুক্তিতে বাঙালির সর্বনাশ ।।
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×