হযরত জাফর তাইয়ার ছিলন ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)এর ভাই ও মহানবী (স.)এর চাচা আবু তালিবের সন্তান । যে সকলব্যক্তি সর্বপ্রথম মহানবীর প্রতি ঈমান এনেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন।
মহানবী (স.) হযরত জাফর তাইয়ারকে অত্যন্ত ভালবাসতেন । হযরত জাফর তাইয়ার সম্পর্কে মহানবী থেকে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যার মধ্যে মাত্র কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো :
মহান প্রতিপালক চারজন শহীদকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন যার মধ্যে আছেন বীর হামজা ও জাফর তাইয়্যার।
রসুলুল্লাহ (স.) বলেন : কেয়ামতের দিন যারা মহানবী (স.)কে দর্শন করতে সক্ষম হবেন তাদের মধ্যে বীর হামজা ও জাফর তাইয়ার আছেন।
ইমাম বাকের (আ.) বলেন : মহানবী (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন আমি চারটি বৈশিষ্ট্যের জন্য জাফর তাইয়ারকে ভালবাসি। রাসুল্লাহ (স.) জাফর তাইয়ারকে ডেকে ঘটনাটি বললেন তখন জাফর তাইয়ার বলেন: আমি কখনোই আমার এই বিষয়গুলো কাউকে বলতে চাইনি।
অতপর মহনবী (স.) বললেন : জাফর তাইয়ার আজ পর্যন্ত কখনো মিথ্যা কথা বলেননি, এবং কোন মূর্তিপূজাও করেন নি .....। বিহারুল আনোয়ার ২২তম খন্ড ২৭৬ পৃ.।
নবুয়াত লাভের পঞ্চম বছরে যখন মক্কায় কাফেরদের চাপ বেড়ে যায় তখন মহানবীর (স.) অনুমতিক্রমে কিছু ব্যক্তি হাবাসিয়াতে হিজরত করেন হাবাসিয়ার বাদশা ছিলেন খৃষ্টান । তবে তিনি খুবই ভাল মানুষ ছিলেন। আর এই হিজরতকারীদের দ্বিতীয় দলের দলনেতা ছিলেন জনাব জাফর তাইয়ার।
নবুয়াত লাভের সপ্তম বছরে হযরত জাফর তাইয়ার হাবাসিয়ার বাদশাকে মুসলমান করে মদীনাতে ফিরে আসেন। তিনি এমন এক সময় ফিরে আসেন যখন খায়বারের যুদ্ধের বিজয় সংঘটিত হয়েছিল।
মহানবী (স.) জাফর তাইয়ারকে দূর থেকে আসতে দেখে তাকে স্বাগত জানাতে বেশ কিছুদূর এগিয়ে গেয়েছিলেন এবং তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন: হে জাফর তোমাকে পেয়ে খুশী হব ! না খাইবারের যুদ্ধে বিজয় লাভে খুশী হব !এরপর তিনি বললেন তুমি কি চাও , আমি তোমাকে কিছু দান করি ? তুমি কি চাও তোমাকে কিছু উপহার দেব ? তুমি কি চাও তোমাকে মহামুল্যবান কিছু দেব ?
তখন জাফর তাইয়ার বললেন: হে রাসুল্লাহ অবশ্যই , অবশ্যই ।
সবাই ভাবলেন খায়বারের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে কিছু গনিমত তিনি হযরত জাফর তাইয়ারকে কিছু দিবেন।
তখন মহানবী (স.) বললেন : আমি তোমাকে এমন কিছু দান করবো সেটা যদি প্রতিদিন আঞ্জাম দাও তাহলে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ এবং পৃথিবীতে যাকিছু আছে তার চেয়েও বেশী মুল্যাবান কাজ হবে। এমন কি তুমি যদি যুদ্ধ থেকে পালায়ন করে থাক আর তার যে পাপ, বা পৃথিবীতে ভুপৃষ্ঠে যতমাটি আছে সে সমানও হয় ; তবুও মহান প্রতিপালক তাঁর বরকতে সব গোনা ক্ষমা করে দিবেন।
অতপর মহানবী নিম্নের নামাজটি বর্ণনা করলেন:
[মান লা ইয়াদারুল ফাকীহ্ , ১ খন্ড, ৫৫৩ পৃ.। ]
এ নামাজটি “সালাতে জাফর তাইয়্যার” নামে প্রশিদ্ধ
নামাজটি পড়ার পদ্ধতি [নামাজটি মোট চার রাকআত দুই রাকআত করে পড়তে হবে]
প্রথমে নিয়াত করতে হবে [ আমি জাফর তাইয়ারের দুই রাকআত নামায পড়ছি কুরবাতান ইলাল্লাহ ]
1. দাঁড়িয়ে সুরা হামদ+ সুরা জ্বিলজাল + ১৫ বার [ سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ] পড়তে হবে। এরপর রুকুতে যাবেন
2. রুকুতে গিয়ে নিজেস্ব জিকীর পড়ার পর + ১০ বার [ سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ] পড়তে হবে। এরপর রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ১০ বার [ سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ]
বলতে হবে ।
3. তারপর সিজদাতে গিয়ে নিজেস্ব জিকীর শেষে ১০ বার বলতে হবে [سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ] তারপর সিজদা থেকে উঠে বসে নিজেস্ব জিকীর শেষে ১০ বার বলতে হবে [سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ]
4. পুণরায় সিজদাতে গিয়ে নিজেস্ব জিকীর শেষে ১০ বার বলতে হবে [ سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ] তারপর বসে ১০ বার বলতে হবে [ سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ]
5. অতপর সিজদা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সুরা হামদ + সুরা আল আদিয়াত পাঠ করে + ১৫ বার পড়তে হবে [سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ] এরপর রুকুতে গিয়ে নিজেস্ব জিকীর শেষে ১০ বার বলতে হবে [سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ]
6. এরপর রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেস্ব জিকীর শেষে ১০ বার বলতে হবে [سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ] অতএর সিজদাতে গিয়ে নিজেস্ব জিকীর শেষ করে ১০ বার বলতে হবে [سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ]
7. সিজদা থেকে উঠে বসে নিজেস্ব জিকীর শেষ করে ১০ বার বলতে হবে [سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ] পুণরায় সিজদাতে গিয়ে নিজেস্ব জিকীর শেষ করে ১০ বার বলতে হবে [ سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ] তারপর সিজদা থেকে উঠে বসে নিজেস্ব জিকীর শেষ করে ১০ বার বলতে হবে [سُبْحَانَ اللَّهِ وَ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَ اللَّهُ أَکْبَرُ]
অতপর তাশাহুদ ও সালাম দিয়ে প্রথম দুই রাকআত নামাজ শেষ হবে।
ঠিক একই ভাবে প্রথম রকআতের ন্যায় দ্বিতীয় দুই রাকআত নামাজ পড়তে হবে । তবে দ্বিতীয় দুই রাকআতের প্রথম রাকআতে সুরা হামদ পাঠের পর + সুরা নাসর পড়তে হবে আর দ্বিতীয় রাকআতে সুরা হামদ পাঠের পর সুরা ইখলাস পড়তে হবে।
এরপর আপনি আপনার প্রার্থনা করবেন। ইনশাল্লাহ মহান আল্লাহর রুব্বুল আলামীন কবুল করবেন।