অবসরে ঘুরে আসুন প্রিয় জায়গা থেকে । সেজন্য যেতে পারেন গজনী অবকাশে । সেখানে প্রাকৃতিক ছোয়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করবে আপনার। পাহাড়ের ঢালে, গায়ে অথবা পাহাড় চূড়ায় সারি সারি শাল, সেগুন, মহুয়া, গজারী, আকাশমনি, ইউকেলিপটাস, মিলজিয়ামসহ আরো নাম না জানা কত শত পাহাড়ি গাছ, বনফুল ও ছায়াঢাকা বিন্যাস যেন বিশাল ক্যানভাসে সুনিপুন শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়।
শিল্পীর এ আঁচড় খুব সহজেই প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যেতে পারে বলেই প্রতি বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী নারী-পুরুষ, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ সবাই ছুটে আসেন শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী গারো পাহাড়ের মন ছুঁয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে।
ঢাকা হতে ২২০ কিলামিটার উত্তরে শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে গারো পাহাড়ের পাদদেশে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত গজনীতে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন অবকাশ কেন্দ্র। ঢাকার সন্নিকটে এমন পর্যটন কেন্দ্র আর একটিও নেই যেখানে একই সাথে পাহাড়, হ্রদ, বন জঙ্গল ও হাজার পাখির কলতান পাওয়া যায়।
ভারতের মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে ও বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে অরণ্যরাজি আর গারো পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড়ি নদী ভোগাই, চেল্লাখালি, মৃগী, সোমেশ্বরী, মালিঝি, মহারশীর ঐশ্বরিক প্রাচুর্যস্নাত অববাহিকায় সমৃদ্ধ জনপদ শেরপুর। এ জেলার বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি। লাল মাটির উঁচু পাহাড়। গহীন জঙ্গল, টিলা, মাঝে সমতল। দু’পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে ছন্দ তুলে পাহাড়ী ঝর্ণার এগিয়ে চলা। পাহাড়, বনানী, ঝরণা, হ্রদ এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেও কৃত্রিম সৌন্দর্যের অনেক সংযোজনই রয়েছে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে।
এটি ঝিনাইগাতি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গজনীতে অবস্থিত। যাবার পথে রাংটিয়া ছেড়ে কিছু দূর এগোলে দুপাশে গজারি গাছের ছাউনিতে ঢাকা কালো পিচঢালা পথটি সবার মন কাড়বে। এ পথ গিয়ে শেষ হয়েছে একটি হ্রদের সামনে। লালমাটির উচু-নিচু,পাহাড়,টিলা, পাহাড়ী টিলার মাঝে সমতল ভূমি। দুই পাহাড়ের মাঝে পাহাড়ী ঝর্ণা একে বেঁকে এগিয়ে চলছে। ঝর্ণার পানি এসে ফুলে ফেপে উঠছে। সেখানে বাধ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। লেকের মাঝে কৃত্রিম পাহাড় এবং পাহাড়ের উপর “লেক ভিউপেন্টাগন”। সেখানে যাতায়াতের জন্য রয়েছে দোদ্দুল্যমান ব্রীজ। লেকে নৌ-ভ্রমণের জন্য আছে পা চালিত নৌকাসহ ময়ূরপঙ্খী নাও। এখানে দূর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড় চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।
পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠে দূরে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সীমানা চোখে পড়ে শেরপুর জেলায়। সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে যেদিকেই দৃষ্টি যাবে সবুজ আর সবুজ। দূরে পাহাড় চূড়ার সঙ্গে মেঘের মিতালী। এখানকার কৃত্রিম পাতালপথটির নাম পাতালপুরী।
পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক সুবিধাসহ আধুনিক “দুতলা রেষ্ট হাউজ”। যে রেষ্ট হাউজ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে নামার জন্য আঁকা-বাকা “পদ্মাসিড়ি” রয়েছে। অবকাশের পাদদেশে সান বাঁধানো বেদীসহ বট চত্বর।
নৈস্বর্গীক সৌন্দযের লীলা ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ গারো পাহাড়। এখানকার সবুজ প্রকৃতি আপন করে নেয় ভ্রমন পিপাসুদের। শ্যামল বৃক্ষরাজীর মাঝ দিয়ে আকাঁ-বাকাঁ পাকা সড়ক পথ যেন সবুজ সুড়ঙ্গের দিকে ঢুকে যাচ্ছে ক্রমশঃ
যেভাবে যেতে হবে:
ঢাকা থেকে শেরপুরগামী যেকোনো বাসে শেরপুর শহরে যাওয়া যায়। শেরপুর শহর থেকে গজনী যাওয়ার জন্য মাইক্রোবাস, টেম্পোসহ অন্যান্য ছোট যানবাহন রয়েছে।
ভাড়া:
ঢাকা থেকে শেরপুরের বাস ভাড়াঃ ২০০ টাকা
শেরপুর থেকে বাস ভাড়াঃ ৫০ টাকা।
শেরপুর থেকে সিএনজি ভাড়াঃ ২৫০ টাকা
আশা করি অনেক ভালো লাগবে.