somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই আলোচনা : নরওয়েজিয়ান উড

১২ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ একের অধিক প্রেমে পড়ে।

এই ছোট্ট জীবনে আপনি ,আমি, আমরা প্রত্যেকে বহুবার করে প্রেমে পড়েছি- কামনায় আটকে গেছি। বিকেলে পার্কে বসে প্রেমিকার হাত ধরে বলেছি ; তোমাকে ছাড়া আমার জীবন ঠিক জীবন নয়। আর রাতে হস্তমৈথুন করার সময় কল্পনা করেছি অন্য কাউকে।

মানুষের জীবনের চেয়ে এত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ আর নেই- যেকোনো সময় যেকোনো দুর্যোগে শেষ হয়ে যেতে পারে এদেশের পুরো অস্তিত্ব কিংবা শেষ হয়ে যেতে পারে বিশেষ কিছু অঞ্চলের অস্তিত্ব।

উপন্যাসের প্রধান চরিত্র তরুর জীবনের একটা বিশেষ অঞ্চল যে ঝড় ধ্বংস করে দিয়েছিলো সে ঝড় সৃষ্টি করেছিলো তারই একমাত্র বন্ধু কিজুকি- আত্মহত্যার মাধ্যমে।

আত্মহত্যা একটা চমৎকার ব্যাপার যদিনা আত্মহত্যাকারীকে ভালোবাসার মত কেউ পৃথিবীতে কেউ বেঁচে থাকে। আফসোস, কিজুকিকে ভালোবাসার মত অনেকেই ছিলো। উল্লেখযোগ্য, তার বন্ধু তরু আর প্রেমিকা নাওকো।

কিজুকির মৃত্যু নাওকোকে উপহার দেয় ক্ষণিকের এক প্রেমহীন জীবন আর সারাজীবনের জন্য একটুকরো অপূর্ণতা- তরুকে দেয় ভীষণ একাকীত্ব।

সময় বদলায়, সময়ের সাথে বদলায় মানুষ। তারই প্রেক্ষিতে, একসময় তরু আর নাওকো একে অপরের প্রেমে পড়ে যায়। এরপর মুরাকামির ইচ্ছায়, নাওকোর বিশ তম জন্মদিনে নাওকো আর তরু একে অপরের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। তরু আবিষ্কার করে এটাই নাওকোর প্রথম সঙ্গম অথচ সে কিজুকি আর তাকে নিয়ে কতকিছুই না ভেবেছিলো ! কৌতূহলী তরু সঙ্গম শেষে নাওকোকে জিজ্ঞেস করেছিলো, “কিজুকির সাথে তুমি কখনও সঙ্গম করোনি ক্যানো?”

পৃথিবীর সব প্রশ্নের উত্তর সবসময় দেয়া যায়না বিধায় তরুকে সেদিন এই প্রশ্নের উত্তর না পেয়েই ঘুমাতে হয়েছিলো আর জেগে উঠে মেনে নিতে হয়েছিলো, সবচেয়ে নির্মম বাস্তবতা। নাওকো তরুকে রেখে কোথাও চলে গেছে !

একদিন হুট করে নাটকের ইতিহাস ক্লাসের মেয়ে মিদোরির সাথে পরিচয় হয় তরুর।
আসল গল্পের শুরু এভাবেই। তরু না পারে নাওকোকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে, না পারে মিদোরির ভালোবাসাকে উপেক্ষা করতে।

মানুষের জীবনের সবথেকে কঠিন ব্যাপার হচ্ছে, দুজন প্রেমিক/প্রেমিকার মধ্য থেকে একজনকে বেঁছে নেয়া। তরু ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা সে কাকে চায়? মিদোরি নাকি নাওকো?
যেই প্রশ্নটা যন্ত্রণা দিয়ে মারছিলো তরুকে, একসময় সেই প্রশ্নটার উত্তর আশাতীতভাবে দিয়ে দিলো নাওকো !

শুনেছি, জাপানে এমন কেউ নেই যে এই বইটা পড়েনি ! সত্যিই যদি তাই হয় তাহলে অবাক হবার মত কিছুই নেই- অন্তত বইটা পড়ে তাই মনে হচ্ছে। চাইলেই হয়ত যে কেউ তরু, নাওকো, মিদোরি, কিজুকি, নাগাসাওয়া কিংবা রেইকো হয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু হারুকি মুরাকামির মত একজন চমৎকার স্রষ্ঠা হয়ে উঠতে পারবে না। কী নেই এই বইয়ে? কী নেই!?
প্রেম, বিষাদ, যৌনতা আর অপূর্ব দর্শনে হারুকি ‘নরওয়েজিয়ান উড’ নামে যে স্বর্গসূখ তৈরি করে রেখেছে গোটা পৃথিবীর পাঠকদের জন্য- তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার অনেক অনেক উর্ধ্বে।
ওহ হ্যাঁ, আরেকটা মানুষ আছে ; কৌশিক জামান- এই বইয়ের অনুবাদক। তাকে কেবল বলবো, “আপনার সাথে এককাপ চা খেতে খেতে গল্প করতে ইচ্ছা করছে”।

অনেকদিন আগে শাহবাগে রাজু ভাস্কর্যে বসে প্রথম কারো মুখে নাম শুনেছিলাম এই বইয়ের। এরপর বাসায় ফিরে করার মত তেমন কিছু না থাকায় গুগলে ঢুকলাম। সার্চ করলাম ‘নরওয়েজিয়ান উড’ লিখে। বেশ কয়েকটা রিভিউ পড়লাম- আকৃষ্ট হলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, বইটা পড়বো। এরপর দুর্ভাগ্যক্রমে উইকিকোয়াটের আরেকটা লিংকে ক্লিক করলাম। বইটার সেরা উক্তিগুলো পড়লাম। একটু আগের সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম। নতুন করে সিদ্ধান্ত নিলাম, মৃত্যুর আগে বইটা পড়বোই পড়বো।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে বইটা সংগ্রহ করলাম (উপহার পেয়েছি)- পড়লাম। রাত তখন প্রায় শেষ। ৫.৩৩ এ এম। আমি দরজা খুলে ছাদে গেলাম। খানিকটা সময় ভাবলাম। বইটার শেষ পাতায় লিখলাম, “জৈবিক চাহিদার মধ্যে ‘অশ্লীলতা’ বলতে কিছু নেই- থাকতে নেই”।

এবং, অনেকদিন বাদে আমি অন্য কোনো জীবনের কথা ভেবে পাওয়া দুঃখ নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।

বই আলোচনা
বইয়ের নাম : নরওয়েজিয়ান উড
লেখক : হারুকি মুরাকামি
অনুবাদক : কৌশিক জামান
মূল্য : ২২০
প্রকাশনী : বাতিঘর
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:১১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×