
দিনাজপুরে লিচুতে দেয়া কীটনাশকের বিষক্রিয়াই ১৪টি শিশু মারা গেছে। ঢাকার মহাখালীতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতি-ষ্ঠানে (আইইডিসিআর) মৃত শিশুদের রক্ত পরীক্ষায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, বিষক্রিয়ায় ১৪ শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। গতকাল পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার বিষক্রিয়ায় ১৪ জন শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কীটনাশক দেয়া লিচু খেয়ে ও কীটনাশক স্প্রে করার পর বাগানে খেলাধুলা করার পর বিষক্রিয়ায় ১৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দিনাজপুরের চার উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিশুদের অকাল মৃত্যুর ঘটনায় সমগ্র জেলায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মাইনুল ইসলাম গতকাল রাতে ইত্তেফাককে বলেন, আইজিপির নির্দেশে ১৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিবির ইন্সপেক্টর এবং অপরটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষক্রিয়ায় ১৪ জন শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহলের চরম উদাসীনতা এবং দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। লিচুর মত সুস্বাদু ফল বিষাক্ত কেমিক্যাল প্রয়োগ করে উত্পাদন ও বাজারজাত এবং ফল পাকানো ও পচন রোধে হাইপাওয়ার কেমিক্যাল ব্যবহার করায় অনেকের প্রাণহানি ঘটছে। কিডনি, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে তারা অকালে ঝরে পড়ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, ফলমূলের মাধ্যমে বিষ খাইয়ে নীরবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থার মাথা ব্যথা নেই। সন্ত্রাসীরা ক্রসফায়ারে পড়লে তোলপাড় করে ফেলে মানবাধিকার কর্মী, সুশীল সমাজ, আইনবিদ ও টকশো বিশেষজ্ঞরা। বিষাক্ত কেমিক্যাল ফলমূল ও খাদ্যসামগ্রীতে ব্যবহার করে নীরবে বহু লোককে হত্যা করে যাচ্ছে। মুনাফালোভী এসব ব্যবসায়ীরা সন্ত্রাসীদের চেয়েও ভয়ংকর। তারা জাতিকে ধ্বংস করে যাচ্ছে। দুর্বল খাদ্য আইনে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। এর আগে বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে কয়েকশ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় হয়েছিল।
এবার বাঙালিদের প্রিয় ফল লিচু খেয়ে ১৪ শিশুর করুণ মৃত্যু হল। ১ থেকে ২০ জুনের মধ্যে দিনাজপুর সদর, চিরিরবন্দর, বিরল, পীরগঞ্জ ও ফুলবাড়ি উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। স্বজনহারা লোকজন বলেন, লিচু খেয়ে মুহূর্তে আদরের ধনের মৃত্যু হল। কোন কথা বলার সুযোগ পাননি। চোখের সামনে কলিজার টুকরার করুণ মৃত্যুর দৃশ্য দেখে কয়েকজন পিতামাতা বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। সদর উপজেলার নয়ন (২), বিরলের মহেশপুরের নিভা (সাড়ে ৪), রামপুরের সায়লা (৪), বোরহান (২), নূর কিবরিয়া (৪), সাগর (৪), সদর উপজেলার সুন্দর বন গ্রামের নার্গিস (৬), পীরগঞ্জ উপজেলার বরচুনা গ্রামের তাপসী (আড়াই), চিরিরবন্দর উপজেলার কিষ্ণপুর গ্রামের তাজমির (১০), সদর উপজেলার আকবরপুর গ্রামের ধনঞ্জয় (৬) ও বড়ইল গ্রামের সুবর্ণা (৫) এবং সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মারা যায় চিরিরবন্দর উপজেলার ফরহাদ (২.৫)। দুই শিশুর নাম জানা যায়নি।
আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির সমন্বয়ে চার সদস্যের তদন্ত দল সপ্তাহব্যাপী তদন্ত করে দেখতে পায়, কীটনাশকযুক্ত লিচু খেয়ে এবং বাগানে কীটনাশক স্প্রে করার পর খেলার সময় শিশুরা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের জ্বর ও খিচুনি দেখা দেয়। এরপর আক্রান্ত শিশুরা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে। দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞরা জানান, হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিত্সক ও অভিভাবকরা কিছু বুঝে ওঠার আগে শিশুরা দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
খবর: দৈনিক ইত্তেফাক Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




