somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন প্রবাসী দক্ষ শ্রমিকের মৃত্যু-১

০৯ ই জুলাই, ২০০৭ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন টুটুল নামের ২০/২১ বছর বয়সী এক তরুন প্রবাসী বাংলাদেশী তার কর্মস্থলে কর্মরত অবস্থায় দূর্ঘটনার শিকার হন ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে। সৌদি আরবের দাম্মামের একটি সরকারী হসপিটালে তাকে ভর্তি করা হয় । খবর পেয়ে তার নিকটাত্নীয়রা রিয়াদ থেকে দাম্মাম ছুটে যান তাকে দেখতে। দেখে এসে সবাই বলল তার বাঁচার কোন সম্ভাবনা নাই। দোঁতলার দেওয়ালে কাজ করার সময় পা পসকে নীচে পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে গেছে ,হসপিটালের ডাক্তাররা মাথা সেলাই করে বেন্ডিজ বেধেঁ রেখেছে, আর সে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছে হসপিটালের বিছানায়। আর সে অবস্থায়ই তাকে হসপিটালে পেলে রেখে পরের দিন সবাইকে চলে আসতে হল রিয়াদে কারন সবাই তো কর্মজীবি, কাজে অনুপস্থিত থাকলে কোম্পানী বেতন দিবে না এবং শাস্তিমূলক আরও কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহন করবে। রিয়াদে ফিরে সে করুন কাহিনীর বর্ণনা দিতে গিয়ে তার নিকটাত্নীয়রা বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন আর আমরা তাদের কে শান্তনার বানী শুনিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম।
খবরটা দেশে তার আত্নীয় স্বজনদের জানানো হয়েছে ২/৩ দিন পর, খবার জানার পর প্রতিদিন তারা টেলিফোনে এখানে অবস্থানরত আত্নীয় স্বজনদের কাছ থেকে খবর নিতে লাগল, তার মমতাময়ী মা ছোট ছেলের দূর্ঘটনার কথা শুনে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক বার অজ্ঞান হয়ে পড়ত। এখান থেকে আমরা তাদের কে আসস্ত করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তার মায়ের অন্তরে বোধহয় জানা হয়ে গিয়েছিল যে তার বুকের ধন আর তার কোলে ফিরবে না, তাইতো উনার নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল আর পরিনাম শাররিক অসুস্থতা ।
একসপ্তাহ পর ৪ ঠা নভেম্বর ২০০৩ তারিখে হসপিটালে অজ্ঞান থাকা অবস্থায় টুটুল পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিল। আর সেই সাথে শেষ হয়ে গেল তার মায়ের ছোট ছেলের বউ দেখার শখ, সদ্যবিবাহিত ছোট বোনের ভাইয়া বলে ডাকা, আর একটি পরিবারের আয় রোজগারের সকল ব্যাবস্থা।
তার মামা,মামাতো ভাই, বড় ভগ্নিপতি এবং আমরা কয়েকজন মিলে সিন্ধান্ত নিলাম যে তার মৃত্যু সংবাদটা এখন দেশে জানাব না কারন তার শয্যাশায়ী মা এই খবর সহ্ন্য করতে পারবেন না। এই সিন্ধান্ত নিয়ে তার মামা,মামাতো ভাই এবং ভগ্নিপতি তার কোম্পানী,সউদি পুলিশ এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করতে লাগল, কি ভাভে লাশ দ্রুত দেশে পাঠানো যায়।
এরই মধ্যে মৃত টুটুলে এক প্রতিবেশী যে টুটুলের কাছাকাছি জায়গায় থাকত, সে দেশে ফোন করে তার ভাইকে টুটুলের মৃত্যু সংবাদ দিল । তার ভাই কালক্ষেপন না করে সে সংবাদ পৌঁছে দিল টুটুলদের বাড়ীতে, মুহুর্তের মধ্যে সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল আর সন্তান বিয়োগের খবর পাওয়ার পর তার মা ২ দিন বিছানায় পড়ে ছিলেন। এরপর শুরু হল তাদের অপেক্ষার পালা ,লাশ কবে দেশে আসবে?
মৃত ব্যাক্তির লাশ এখান থেকে দেশে পাঠানো যে কত কষ্টকর তা যারা এর পিছনে দৌড়েছেন তারাই বলতে পারবেন। দেশের থেকে বিভিন্ন কাগজপত্র সংগ্রহ করা এবং তা যথাযথ সৌদি কৃর্তপক্ষের কাছে পৌঁছানো, দূতাবাস কৃর্তক সে সব কাগজ পত্র সত্যায়িত করনো এবং আরও অনেক কার্যাদি সম্পূর্ন করতে হয় ।
দীর্ঘ আড়াই মাস বাংলাদেশ দুতাবাসের উল্লেখ যোগ্য কোন সহযোগিতা ছাড়াই, তিনজন লোকের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর টুটুলের মৃতদেহ দেশে পৌঁছে এবং তাকে তার পারবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

বিঃদ্রঃ আগামী পোষ্টে লিখব মুত্যুর পর কোম্পানীর কাছে টুটুলের পাপ্য এবং তা আদায়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের অসহযোগিতার কথা যে জন্য টুটুলের পরিবার এখনও পেল না প্রায় ৪০ হাজার রিয়াল।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×