তাকে বিশেষ মহলের আশীর্বাদপুষ্ট সাংবাদিক হিসাবে এখন সবাই চেনেন। কিন্তু বিশেষ মহলটি কি তাকে চেনে? শুনলাম আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকরা তাকে নাকি নিজেদের একজন উজ্জল নক্ষত্র মনে করেন। সেখানে নাঈমুল ইসলাম খানের নতুনধারার সাংবাদিকতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সবক দেওয়া হয়! ঢাবির শিক্ষকরা যখন তাকে চেনেন না তাহলে বিশেষ মহল তাকে চিনবে কি করে?
এই লোকটাকে আমি কিছুটা চিনি। তাই তার সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিতে এই পোস্টের শরণাপন্ন হলাম। মহান নাঈমুল ইসলাম খানের কিছু কীর্তির বর্ণনা এখানে পাবেন।
১) আজকের কাগজে তিনি ছিলেন সম্পাদক। ওই পত্রিকা থেকে টাকা মারায় পত্রিকাটির মালিক কাজী শাহেদ তাকে '৯২ সালে ওই পত্রিকা থেকে বের করে দিয়েছিলেন। কিন্তু নাঈম তার সাংবাদিক বন্ধুদের বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলেন যে কাজী শাহেদ ও তার পার্টনাররা তাদের সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ করছেন। তাদের সত্য প্রকাশে বাঁধা দিচ্ছেন। তাই অধিকাংশ সাংবাদিক আজকের কাগজ ছেড়ে ভোরের কাগজে যোগ দেন।
২) ভোরের কাগজের উদ্যোক্তা ছিলেন মতিউর রহমান। কিন্তু জন্মের পর থেকেই ভোরের কাগজের টাকা মেরেছেন নাঈমুল ইসলাম খান ও তার বন্ধু তৃতীয় মাত্রা খ্যাত জিল্লুর রহমান। মতিউর রহমান নিজেদের বংশালের জমি বিক্রি, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ভোরের কাগজ বের করেছিলেন। একদিকে দৈনিক পত্রিকা বের করার জন্য প্রচুর অর্থ না থাকা, অন্যদিকে নাঈম গংদের লুটপাটে অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন মতিউর রহমান। নিজে আর চালাতে পারবেন না বুঝতে পেরে জন্মের ৮ মাস পর পত্রিকাটি মতিউর রহমান বিক্রি করেন সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছে। আগের লুটপাটের সঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছ থেকে নাঈমুল ইসলাম খান ও জিল্লুর রহমান সম্ভবত ২২ লাখ টাকা আয় করেছিলেন। ওই টাকা নিয়ে কাগজপত্রে সই করে আবার মাস্তান দিয়ে মতিউর রহমানকে শাহবাগে ভোরের কাগজ অফিসে সাংবাদিকদের সামনে আটকে রেখেছিলেন নাঈম। কিন্তু ভোরের কাগজের অধিকাংশ সাংবাদিক এবার নাঈমের সঙ্গে থাকতে অস্বীকৃতি জানান। সে কাহিনী ভোরের কাগজের তখনকার যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারবেন। আমি ওই ঘটনাপ্রবাহের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম।
৩) এরপর বেশ কিছুদিন চুপচাপ থাকার পর এনজিও বিসিজেডিসি পর্ব এবং বিদেশী ফান্ড। মার্কিন, ইউরোপীয় কোনো ফান্ডের অভাব তার ছিল না। এক পর্যায়ে বিদেশীরাও নাঈমের ধান্ধাবাজি ধরতে পারে এবং ফান্ড সরবরাহ কমিয়ে দেয়।
৪) নতুনধারা নামে একটি পত্রিকা করার নামে কয়েক কোটি টাকা লোপাট করেন নাঈম। এর প্রবাসী উদ্যোক্তা শেষ পর্যন্ত পালিয়ে বাঁচেন। পত্রিকাটি আলোর মুখ দেখেনি।
৫) স্ট্যামফোর্ড ও হান্নান কাহিনী। হান্নানও শেষ পর্যন্ত নাঈমকে তাড়িয়ে দেন। ইদানিংকালের এই ঘটনা অনেকে জানেন। তাই বিস্তারিত বলছি না।
৬) আমাদের সময়। এই কাহিনী এখন লোকজনের মুখে মুখে। প্রতিদিন পাঠক নাঈমের তেলেসমাতি দেখছে।
এই নাঈম নাকি ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের গর্ভ ?? একথা সত্য হলে তো ওই বিভাগ, এর শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের লজ্জার কথা। নাঈম আশির দশকে এই বিভাগের ছাত্র ছিল এটা কোনো গর্বের বিষয় হতে পারেনা। বরং আমি এই বিভাগের অনেক ভালো ছেলে-মেয়েকে এখন দাপটের সঙ্গে সাংবাদিকতা করতে দেখছি। তাদের জন্য আমার গর্ব হয়। নাঈমের জন্য আমার অবশ্য লজ্জা হবে না। কারণ ওই বিভাগে আমি পড়িনি বা তার কোনো দুনম্বরি কাজে কখনো যুক্ত ছিলাম না। কিন্তু ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষকদের জন্য আমার করুণা হয়। এতো দৈণ্য তাদের?
আর নতুন ধারার সাংবাদিকতা? সেটা যখন আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ নিয়ে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে তখন আমার হাসি পায়। এই পত্রিকাগুলো এক সময় নতুন পত্রিকা ছিল। নাঈমের সময়ে এগুলোতে রাজনৈতিক গালগপ্প লেখা হতো। যেটা এখন আমাদের সময়ে হয়। বরং মতিউর রহমান এবং তার টিম ভোরের কাগজকে ওই ধারা থেকে সরিয়ে একটি বস্তুনিষ্ঠ, দলনিরপেক্ষ পত্রিকা করেছিলেন। পরে সাবের হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে পত্রিকার ওই নীতি রক্ষা করতে চাননি। এ কারণে মতিউর রহমান ও তার বন্ধুরা ১৯৯৮ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভোরের কাগজ ছেড়ে যান।
[নাঈমুল ইসলাম খান সম্পর্কে এই পোস্টটি ব্লগার সুতরাং-এর পোস্ট পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছি। 'সুতরাং'-এর পোস্ট]