হলের রুমটা বেশ ছোট। তারপরও রুমে মোট ৭টা টেবিল, ৪টা খাট, ২ টা আলমারি - মেলা আসবাব। কি করা যায়, কি করা যায় - অনেক দিন থেকেই ভাবছি। একজন বুদ্ধি দিল - "ফ্লোরিং কর। যায়গাও বাড়বে আবার অনেকজন মিলে বসা যাবে।" বুদ্ধি আমার ভালো লাগল। যেই ভাবা সেই কাজ। কাজ শুরু করে দিলাম। অনেক দিনের আবর্জনা জমেছে আমার টেবিলের উপর, খাটের নিচে। অতি মনযোগের সাথে সব ময়লা সাফ করলাম। ফ্লোরে কাগজ বিছালাম। এসব করতে করতে প্রায় ২ ঘন্টা গেল।
তারপর এল সেই মুহুর্ত। মেঝেতে বিছানা প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার সমাপ্তি হল। বন্ধুরা এসে বিছানায় বসল। সবাই আমার বুদ্ধির ব্যাপক প্রসংশা করল। রাতের বেলায় তাস খেলা হল আমার বিছানায়। আবার প্রশংসা শুনলাম। এর মধ্যে হল বিপত্তি। পাশের রুমের বড় ভাই এসে বললেন " কি মিয়া, নিউমোনিয়া বাধানোর শখ হয়েছে ? এই শীতের ভিতর ফ্লোরিং করার বুদ্ধি কে দিল? "
আমি মুখে কিছু বললাম না। কিন্তু কিভাবে জানি নিউমোনিয়া কথাটা আমার মাথার ভিতর ঢুকে গেল। কে যেন অনবরত মাথার ভিতর বলতে লাগল " নিউমোনিয়া, নিউমোনিয়া ..."
আমি পড়ে গেলাম মহা ধান্ধায়। হঠাৎ করেই বিছানাটা বড় বেশি ঠান্ডা মনে হল। কোনরকমে রাতটা পার করলাম। সকালে টিউশনি থেকে আসলাম। বিছানায় বসতে যাব অম্নি মাথার ভিতর সেই কন্ঠটা মনে হল দিগুন উৎসাহে চিৎকার শুরু করে দিল " নিউমোনিয়া, নিউমোনিয়া ..."
আমার চিন্তা আরও বেড়ে গেল। কিছুক্ষন বিছানায় শুই, মনে মনে ভাববার চেস্টা করি - বিছানাটা আসলে অনেক গরম, গরমে গা পুড়ে যাচ্ছে। কোন কাজ হল না। উলটো বিছানার সাথে সাথে আমার হাত, পাও ক্রমশ ঠান্ডা থেকে ঠান্ডাতর হয়ে গেল। এদিকে মাথার সেই ভদ্রলোকের চিৎকার ক্রমেই বাড়ছে। আমি উঠে পড়লাম।
একবার আমার পাশের বেড এ যাই, কিচ্ছুক্ষন বসে থাকি, বিছানাটা গরম না ঠান্ডা তা বোঝার আপ্রান চেস্টা করি। আবার ফিরে আসি আমার বিছানায়। নিজের বিছানার পর্যবেক্ষন চলে। পর্যবেক্ষনের পর্ব অনেক্ষন চলে।
এরপরের ঘটনা খুবই সংক্ষিপ্ত। ১০ মিনিটের ভিতর আমার বেড আমার রুমে। আর আমি আমার বেডে। কাজের কাজ কিছুই হলনা। মাঝখান দিয়া আমার অনেকটা সময় আর শ্রম চলে গেল।