আমার হলের এক জুনিয়রের সাথে কথা হচ্ছিল।
আমিঃ কি খবর, কেমন আছ?
জুনিয়রঃ জ্বী ভাইয়া, ভাল।
আমিঃ দিনকাল কেমন কাটছে?
জুনিয়রঃ ভালো। ভাইয়া, কয়েক ঘন্টায় সাত হাজার টাকা ইনকাম হয়ে গেল তো।
আমিঃ তাই নাকি? কিভাবে?
জুনিয়রঃ একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আসলাম। চান্স পাইলে সাত হাজার টাকা দিবে।
আমিঃ ও, ভালতো। পাশাপাশি সিট ঠিক করে?
জুনিয়রঃ না ভাইয়া। এডমিট কার্ড চেঞ্জ করে। নাম ধাম সব ঠিক ছিল, শুধু ছবির জায়গায় আমার ছবি লাগায়ে দিছে।
আমিঃ তাই নাকি? চেক করেনা?
জুনিয়রঃ করবে না কেন? করে। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন, আমি তো তাও এক ছেলের নাম দিয়ে পরীক্ষা দিলাম, আমার রুমমেট তো এক মেয়ের এডমিট কার্ডে পরীক্ষা দিয়ে আসলো। পরীক্ষার খাতা সাইন করার সময় স্যার নাম দেখল, ছবি দেখল কিন্তু কিছু বলল না।
আমিঃ বলো কি! তোমার রুমমেট ও গেছিলো?
জুনিয়রঃ শুধু রুমমেট না। রশীদ হল থেকে দুই মাইক্রোবাস নিয়ে প্রায় ৩০ জনের মত গেছিলো। আমাদের হল থেকে আমরা ১১ জন গেছিলাম। অন্যান্য হল থেকেও অনেক ছেলে গেছে। ঢাবি, ঢামেকের অনেক ছেলে ছিল। যারা পরীক্ষা দিল, বেশীর ভাগই ভুয়া।
আমিঃ তুমি খোজঁ পেলে কিভাবে?
জুনিয়রঃ আমার রুমমেটের কাছ থেকে। বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠান আছে যারা এই কাজ করে। অরিজিনাল ক্যান্ডিডেটের সাথে চান্স পেলে টাকা এই শর্তে চুক্তি হয়। তারপর তার এডমিট কার্ড নিয়ে ছবি পাল্টিয়ে বুয়েট, ঢাবি, ঢামেক, জাবি, এসএসএমসি বা ঢাকার বাইরের ভাল স্টুডেন্টদের সাথে চুক্তি করে। চান্স পেলে যে পরীক্ষা দিল তাকে দেয় সাত হাজার আর অরিজিনাল পাব্লিকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে বাকিটা লাভ। স্বল্প পুজিঁতে ভাল ব্যবসা। যেই সব স্যার পরীক্ষার হলে গার্ড দেবে তাদেরও একটা ভাগ দেয় যাতে ঝামেলা না হয়।
আমিঃ তুমি নিজের পরীক্ষার মধ্যে এই সব করতে গেলে কেন? ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য পড়ার সময় পেলে কখন?
জুনিয়রঃ কি যে বলেন ভাইয়া। যেই প্রশ্ন তাতে কোন পড়াশুনা লাগে না। কয়েকটা প্রশ্ন হল - বাংলাদেশের জাতীয় পাখির নাম কি, নিচের কোন সংখ্যাটি ০.২ এর চেয়ে বড়, আমাজন বন কোন মহাদেশে অবস্থিত। আমি বুঝলাম না, এই প্রশ্নের পরীক্ষা দেয়ার জন্য কেন টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করা লাগবে? যে কেউ তো পারবে।
আমি আর কিছু বললাম না। আমার বড় বোন ঢাবি থেকে বিবিএ, এমবিএ পাশ। তার কাছ থেকে শুনেছিলাম চাকরি ক্ষেত্রে তাদের উপরে আছে আইবিএ। এনএসইউ এর বিবিএ তাদের সমান গুরুত্ব পায় বা কখনো কখনো অনেক কোম্পানিতে এনএসইউ তাদের চেয়ে বেশী গুরুত্ব পায়। সেই থেকে এনএসইউকে আমি অন্য চোখে দেখি। কিন্তু জুনিয়রের মুখে এই ঘটনা শুনে আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। এনএসইউ কি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছে না?