somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পরিচিতিঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবালের "আমি তপু"

১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একজন মানুষ কিংবা যেকোন প্রাণীর সবচেয়ে কাছের জন কে? কে সেই জন যে তাকে আগলে রাখে মায়া মমতায়? অবশ্যই মা। কিন্তু এই মা-ই যখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে যায় তখন তার চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে?

“আমি তপু” মুহাম্মদ জাফর ইকবালের এক অনন্য কিশোর উপন্যাস। এই উপন্যাসে লেখক মানুষের এমন বয়সের এমন এক পরিস্থিতির করেছেন যেই বয়সে যেই পরিস্থিতিতে আমরা কেউ পড়লে কি ঘটবে আমাদের জীবনে তা এই বই পড়লে সহজেই উপলব্ধি করা যায়।

খুব কাঠখোট্টা শব্দ বা বাক্য বা ঘটনা নেই, খুবই সাদাসিধে কাহিনী,নেই সেই রকম নীতিবাক্য, নেই মাথা এলোমেলো করে দেওয়া বাক্যরীতি, তাই পড়তে গিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।

১৩ বছর বয়সের এক কিশোর তপু। পুরো নাম আরিফুল ইসলাম তপু। বি.কে. সরকারি হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। তিন বছর আগে যখন তপু এক রোড এক্সিডেন্টে তার বাবাকে হারায় ঠিক তখন থেকে দুই ভাই এক বোনের সুখী সংসারটা তছনছ হয়ে। তাকে নিয়ে তার জন্য ব্যাট কিনতে যেয়ে মারা যাওয়ায় তপুর মার একটা বদ্ধমূল ধারণা হয় যে তপুর জন্যই তপুর বাবা মারা গিয়েছেন। মায়ের দুর্ব্যবহার আর ভাইবোনের অসহায়তার কারণে তার জীবন অসহ্য হয়ে উঠে। সবচেয়ে আদরের ছোট ছেলেটির স্থান হয় স্টোর রুমে। যার সাথী একটি ইঁদুর, যার নাম সে দেয় মিচকি। তাকে খেতে হয় কাজের বুয়া দুলির সাথে মোটা ভাত, ভর্তা। একমাত্র দুলি খালার ভালোবাসা ছাড়া বাকি সবার ভালোবাসা থেকে সে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। লেখকের ভাষায়, “যার চোখের পানির কোন মূল্য নেই এই পৃথিবীতে তার থেকে হতভাগা আর কেউ নেই।” এতসব দুঃখ কষ্ট সইতে না পেরে সবচেয়ে ভালো ছাত্রটি আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে সবার চক্ষুশূল হয়ে গেল। তার কোন বন্ধু নেই, কোন শুভাকাঙ্ক্ষী নেই, কি করে কি নিয়ে বাঁচবে এই পৃথিবীতে? এমনি সময় যখন সে বাড়ি থেকে চিরকালের জন্য চলে যাবার জন্য যখন মনস্থির করে ফেলল ঠিক তখন তার ক্লাশে আসা নতুন এক মেয়ে যার নাম প্রিয়াংকা, তার সাথে ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। প্রিয়াংকা মেয়েটা স্পষ্টভাষী, খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারে,খুবই মিশুক আর পরোপকারী। ওদিকে পালিয়ে যাবার জন্য ধীরে ধীরে জমানো টাকাসহ মায়ের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় সবার কাছে সে চোর হয়ে যায়। এদিকে সে হঠাৎ বুঝতে পারে গণিতের প্রতি তার একটা আলাদা ভালোবাসা আছে। খুব সহজেই সে জটিল জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রিয়াংকার উৎসাহে সে এই ভালোবাসাকে বাড়াতে থাকে। সময় গড়িয়ে যায়। প্রিয়াংকা একসময় জানতে পারে তপুর জমানো কষ্টগুলোকে। চেষ্টা করে এগিয়ে নিয়ে যেতে। প্রিয়াংকা কি পারবে তপুকে বেঁচে থাকার সাহস জোগাতে, তপু কি পারবে এমনি এক বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকতে? কি আছে তার সামনে? তার মা কি আর কখনো তাকে সহজভাবে নেবে না? এমনি হাজার প্রশ্নে গড়া এই সুন্দর কিশোর উপন্যাসটি। “আমার বন্ধু রাশেদ” উপন্যাসটি যাদের পড়ার অভিজ্ঞতা আছে তারা বুঝতে পারবেন এর সৌন্দর্যটি। শেষ লাইন পর্যন্ত কোন না কোন লাইনে নিজের অজান্তেই চোখের কোনা গড়িয়ে জল পরবেই। এক গভীর মমতা জন্মাবে নিঃসঙ্গ তপুর উপর।

জাফর ইকবালের সেরা কিশোর উপন্যাসের মধ্যে এই উপন্যাস নিঃসন্দেহে অন্যতম। একজন মানুষ সে বড় হোক কিংবা ছোট, তার জন্য একটা পরিবার যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা এই গল্প পড়লে অনুধাবন করা যায়। সেই সাথে বোঝা যায়, প্রতিভার বীজ লুকিয়ে থাকে সবার মাঝে, প্রয়োজন অঙ্কুরোদ্গমের পরিবেশ।আর প্রত্যেক খারাপ মানুষের জীবনে থাকে এক ভয়ংকর খারাপ ইতিহাস। কেউ খারাপ হয়ে জন্মায় না।

পড়া না থাকলে পড়ার নিমন্ত্রন রইল। :)

লেখক পরিচিতিঃ উইকিপিডিয়া লিঙ্ক

প্রথম প্রকাশঃ একুশে বইমেলা ২০০৫
প্রচ্ছদঃ ধ্রুব এষ
পৃষ্ঠাঃ ১২৩
ফ্রন্টঃ ১২
ISBN 984 495139 9

প্রকাশনাঃ পার্ল পাবলিকেশন্স
৩৮/২ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।

কভার মূল্যঃ ১৫০ টাকা
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪/৫

পিডিএফ লিঙ্কঃ মিডিয়াফায়ার লিঙ্ক
সাইজঃ ৯.৩৬ মেগা

প্রাপ্তিস্থানঃ যেকোন লাইব্রেরীতে পেয়ে যাবেন।
অথবা রকমারি থেকে কিনতে পারেনঃ রকমারি লিঙ্ক
{ব্লগে প্রথম বই পরিচিতি বা Book Review. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি এবং সেই সাথে ধরিয়েও দেবেন। }
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×