somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্প: হা-হুতাশ

২৯ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পিনাক প্রায় আটাশ মিনিট থেকে বসে বসে নারী জাতির অত্যাচার সহ্য করছে। মানে মশকীর কামড় সহ্য করছে। জাপানিরা নাকি মশার হুলের উপর গবেষণা করে ব্যথামুক্ত ইনজেকশনের সূচ আবিষ্কার করেছে। আবার এই জাপানিরাই নাকি মশা মারতে কামান দাগায়। আজব।

রীতু বলেছিল পাঁচটায় আসবে। সেও তাই আধা ঘন্টা দেরি করেই বের হয়েছিল। জ্যামের কারণে আরো কুড়ি মিনিট বেশি লাগল। তারপরও দেখে রীতু আসে নাই। মেয়েরা মাত্রই লেট লতিফা।

মশকীদের প্রোটিন সরবরাহ করতে করতে প্রোটিন শুন্য হবার প্রাক্কালে সে রীতুর দেখা পেল। লেট লতিফা।

‘স্যরি, একটু দেরি করে ফেললাম। জামাইকে ফাঁকি দিয়ে আসতে দেরি হয়ে গেল।’

পিনাক একটা ঢোক গিলে হো হো করে হেসে বলল, 'মজা নেওয়ার কোন দরকার নাই।’

‘সত্যি! গত পরশু বিয়ে হয়েছে। তোমাকে তো অনেক বলেছি। কোন লাভ হবে না, তাই আর বলিনি। ঘরোয়াভাবে চুপচাপ করে ফেলেছি।’ বলেই সে তার মেহেদি রাঙা হাত দেখালো।

‘আর মজা করতে হবে না। জরুরী তলবের কারণ বলো।’

‘আমি মজা করছি না। আজ আমাদের আপাতত শেষ দেখা। তাই ডেকেছি। তোমাকে ভালবেসে আমার জীবনটাই হা হুতাশ করতে করতে গেল।’

‘এখন যে আমার বাকি জীবন হা হুতাশে যাবে। আমি তোমার জামাইকে আমি খুন করব।’

‘আর তো কিছু পারবা না... অথর্ব একটা।’

‘জামাইকে না পারি কিন্তু তোমাকে তো খুন করতে পারব।’

তার চোখজোড়া সন্ধ্যার আলো-আঁধারে হিংস্রতায় জ্বলে ওঠে। হাত দুটো এগিয়ে যায় রীতুর গলাকে লক্ষ্য করে। রীতুও ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতেই হোঁচট খেয়ে মাটিতে পিছলে পড়ে। সে ঝাঁপিয়ে পড়ে শ্বাপদের মতো। সর্বশক্তি দিয়ে কন্ঠনালী চেপে ধরে। রীতু গোঁ গোঁ করতে থাকে। নাক দিয়ে রক্ত গড়িয়ে তার হাতে পড়তে থাকে। সে অবাক হয়ে দেখে তার হাত কালচে লাল হয়ে যাচ্ছে।

কেউ তার মুখে টর্চের আলো ফেলে। সে এক হাত দিয়ে আলো থেকে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে।

লোকটি বলল, ‘ও, ভাইজান, আপনে। আবার আইছেন। প্রতিদিন এই কব্বরে কি করেন? নিজেই কব্বর দিলেন। প্রতিদিন নিজেই যত্ন নেন। পানি দেন। আবার একলা একলা বির বির করতে করতে মাটিতে ধস্তাধস্তি করেন। মানুষ তো মরবই। এত হা হুতাশ করলে হইবো?’

সে যেন সংবিৎ ফিরে পায়। টর্চের আলোয় দেখতে পায় তার হাত আসলে ভেজা কালচে মাটিতে ভরা। পিছনের সব ঘটনাই যেন ফিরে আসে। এই লোকটা এই গোরস্থানের গোরখোর। চার মাস আগে রীতুকে সে নিজ হাতে খুন করে এখানে কবর দেয়। কেউ জানতেও পারেনি। সবাই ভেবেছে তার সাথে পালিয়ে গিয়েছে। রক্ষণশীল পরিবার, সম্মান বাঁচাতে কেউ এখনো খোঁজও নেয়নি।

পিনাক মাথা নিচু করে ক্লান্ত পথিকের মতো ধীর পায়ে গোরস্থান ত্যাগ করে। গোরখোর জানে, কাল সে ভালোবাসার টানে ঠিকই আবার আসবে। চলে যাবার পর এদের সব ভালোবাসা উথলে ওঠে। দাঁত থাকলে দাতের মর্যাদা কোনদিনই বুঝবে না।

দৃষ্টিসীমা থেকে সে উধাও হতেই গোরখোর আঁধারে আস্তে আস্তে করে বলে, ‘কিরে, তুই প্রতিদিন ওনারে এত জ্বালাস কেন?’

অন্ধকার থেকে কেউ বলে ওঠে, ‘ওনারে জ্বালাইলে তুমি যে জ্বলো। তোমারে জ্বালাতে খুব মজা লাগে। হি হি হি।’

‘আর কখনো ওনার ভালোবাসার মানুষের রূপ ধইরা ভেজাল করবি না।’

‘মারার সময় ভালোবাসা কই গেছিল? প্রতিদিন তারে এভাবে শাস্তি দিমু। হি হি হি।’


গোরখোররূপী ভূত হা হুতাশ করতে করতে মনে মনে বলে, ‘এত পেত্নি থাকতে আব্বা এরেই যে কেন ছেলের বউ পছন্দ করল কে জানে? যৌতুক হিসেবে এই গোরস্থানের লোভ সামলাইতে পারে নাই হয়তো। লোভ থেকে ভূতেরাও বাদ পড়বে কেন?’



গভীর রাতে...

'কই, খাইতে আসেন।' হাঁক ছাড়ে পেত্নী।

খেতে খেতে ভূত গজ গজ করতে করতে বলে, 'না জানি কোন কবরের লাশ তুলল।'



খুব ভালোভাবে কান পাতলে গভীর রাতে গোরস্থান থেকে হাড় চিবুনের কট কট আওয়াজ কিন্তু কানে আসবে। তাই ওদিকে সাবধান।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×