somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্যান্টাসি গল্প: ভূত লেখক

২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুর দিকের শুরুর কথা

“আমি কখনো বাবা হতে পারবো না”- এটা আমাকে আর ভাবায় না। কাঁধে হাত রেখে ডাক্তারের সেই সান্ত্বনাটা যদিও কোন সুখকর স্মৃতি নয়, তবুও তা কদাচিৎ মনে পড়ে। হালকা-পাতলা গড়নের এই আমি, না বিবাহিত, না আমার কোন প্রেমিকা রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা-মা মারা যেয়ে অনাথও করেছেন সেই কবে। আমাকে সম্পর্কের আঁস্তাকুড়ের এক মানুষ বলা চলে। তাই কারো মুখে হাসি ফোটানোর কোন দায়বোধও নেই। কিন্তু ডাক্তারের আবহাওয়া পরিবর্তনের পরামর্শে যে জায়গায় গেলাম সেই জায়গাই বদলে দিল আমার জীবনের গতিপথ। বদলে দিল চিত্রপট।


ঘটনা শুরুর আগের কথা

হোটেলের বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে যখন ভাবি, আমি কাউকে, আপন কাউকে, নিজের এক অস্তিত্বকে রেখে যেতে পারবো না তখন কেমন এক অসহায়ত্ব বুকের মাঝে শূন্যতা সৃষ্টি করে। সবকিছু ভেঙ্গে চুড়ে ছুড়ে দিতে ইচ্ছে করে।

হোটেলটায় কেউ আসে না বলেই হয়তো রুমগুলো কেমন স্যাঁতস্যাঁতে, গুমোট ধরনের আর বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। মালিক জানালেন, তার দাদা দেশভাগের সময় ইংরেজদের কাছে থেকে জলের দরে কিনেছিলেন। এই বাড়ির অনেক ঘরই নাকি কৃষকদের নীল চাষে বাধ্য করার জন্য পাশবিক নির্যাতন করা হত।

ফরাসী নীলকুঠিয়াল লুই বর্মো ১৭৭৭ সাথে সর্বপ্রথম বাংলায় নীলকুঠি স্থাপন করেছিল। তার ঠিক একবছর পরে ১৭৭৮ সালে ইংরেজদের মধ্যে ক্যারেল বুম সর্বপ্রথম বাংলার নদীয়া জেলায় নীল চাষের উদ্যোগ নেন আর নীলকুঠি স্থাপন করেন। প্রতি বিঘা থেকে মাত্র ৩ কেজির মতো নীল পাওয়া যেত। যাতে খরচ পড়তো ১০-১২ টাকা। কিন্ত বিক্রি করে পেত মাত্র ৭-১০ টাকা। প্রতিবাদ জানালেই গুম হয়ে যেত অথবা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতো। আমার রুমটাও বোধহয় রকমই একটা রুম। তবে রুমটা বদলাতাম, যদি না সেই ঘটনাটা ঘটতো। জীবন পাল্টে দেওয়া ঘটনা।


ঘটনা শুরুর ঠিক আগের কথা

সম্পর্কে জড়ানোর কোন ইচ্ছা ছিল না। সত্যটা জানার পর তো যেটুকু ইচ্ছা ছিল সেটুকুও মেরে ফেলেছিলাম। কিন্তু কি করে জানব, এই ইচ্ছা ছিল ফিনিক্স পাখির মতো, যে তার ভস্ম থেকে আবার জীবিত হয়!

মেয়েটাকে অন্য মেয়ে থেকে আলাদা করার মতো উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। হাস্যকর শোনালেও সত্য, আমার ভালো লেগেছিল তার চলার ছন্দ দেখে।

তাকে দেখার পর অস্থিরতা বহুগুণ বেড়ে গেল। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। যাকেই বিয়ে করি না কেন তাকে তো আর “মা” ডাক শোনাতে পারবো না। এই বিষয়টা আমাকে আরো বেশি কুড়ে কুড়ে খেতে লাগলো। তবে ঘটনার শুরু এখানে নয়।

ঘটনা শুরুর কথা

কখন ঘুমিয়েছি তা মনে নেই। কিন্তু এটা মনে আছে টের পেয়েছিলাম ঠিক রাত দুটোয়। কারণ সেসময় কাছের কোন চার্চে দুটা ঘন্টা বেজেছিল। রুমের আধো আলো আধো অন্ধকারে একটা অবয়ব দেখতে পেলাম। ঠিক ছায়া নয়, গাঢ় ছায়ার মতো, তবে আকার বোঝা যাচ্ছে। দৃষ্টিভ্রম ভেবে যেই না চোখের পাতা বন্ধ করতে যাব অমনি কণ্ঠস্বরটা কানে এল, 'আমাকে নিবি?'

আমি চোখ মেলে চাইলাম, জিনিসটা কি বা কে সে জিজ্ঞাসায় না যেয়ে ভীত স্বরে বললাম, 'না।'

কণ্ঠস্বরটা আবারো কানে এল। মনে হচ্ছে কেউ যেন নাক চেপে কথা বলছে। সেই কণ্ঠস্বরটা বলল, 'তোর একটা ইচ্ছা পূরণ করে দেব, না দুইটা, দুইটা ইচ্ছা পূরণ করে দেব। যা চাস তাই। তবু আমাকে নে।'

আমি ভাবছি, চেরাগের দৈত্য কি সত্যি? গল্পে তো তিনটা ইচ্ছা পূরণ করে, এ তো দুটা! আমি বললাম, 'কে তুই মানে আপনি?'

-আমি কে বা কি সেটা আপাতত জানার প্রয়োজন নেই। শুধু বল, আমাকে নিবি কিনা?

-কিভাবে নেব?

-শুধু তোর শরীরে একটু জায়গা দিবি। অনেক প্লট জমা পড়েছে, অনেক গল্প লিখতে হবে। অনেক গল্প।

-মানে?

লেখকের ভূত নাকি ভূতের লেখক

-আমাকে বলতে পারিস ভূত লেখক, Ghost Writer। তবে আমি কোন লেখকের ভূত না যে মরে গিয়ে ভূত হয়েছি। আমরা আলাদা একটা জাতি, অনেকটা মানবজাতির মতো। আমি লিখতে ভালোবাসি। আমাদের জগতে এসব কিছু করার উপায় নাই তো, তাই যখন অনেক প্লট জমা হয় তখন তোদের কারো উপর ভর করে লিখি।

-ও

-এখন বল আমাকে কি নিবি? তাহলে তোর দুইটা ইচ্ছা পূরণ করে দেব।

-সত্যি?

-সত্যি নয়তো কি মিথ্যা!

আমি ভাবছি কি নেওয়া যায়? টাকা নাকি বাড়ি, নাকি দুটোই। না, না। আমি পেয়েছি,আমি পেয়েছি আমার কি প্রয়োজন। আর আমি জানি এই দুটোই এখন আমার একান্ত প্রয়োজন। একান্ত প্রয়োজন।

পুনশ্চ এক

ইংরেজিতে Ghost Writer বলে একটা কথা আছে। Ghostwriter বলা হয় তাকে যে অন্য কারো হয়ে গল্প, উপন্যাস বা এরকম কিছু লেখে। বাংলায় এর প্রকৃত মানে হতে পারে ভাড়াটে লেখক। অনেক বিখ্যাত লেখকই Ghostwriter দিয়ে লিখে নিয়ে নিজের নামে চালিয়েছেন এরকম বহু নজির আছে। কালীপ্রসন্ন সিংহ এর লেখা “হুতুম পেঁচার নকশা” দুজন ভূত লেখক লিখেছিল বলে জনশ্রুতি আছে।

প্রচলিত আছে, আলেকজান্ডার দ্যুমা ভাড়াটে লেখকদের লেখা বইগুলো নিজে একবার পর্যন্ত না পড়েই প্রকাশকদের দিয়ে নিজের নামে ছাপিয়ে দিতেন।

এরকম একটি কাহিনি হচ্ছে,

একবার আলেকজান্ডার দ্যুমা তার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি আমার নতুন বইখানা পড়েছ?

পুত্র উত্তরে বলল, না পড়িনি। তুমি নিজে পড়েছ?

যদিও এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

ঘটনা শুরুর আগের ঘটনা

আমি আমার ইচ্ছা দুটো বলার আগেই চেয়ে দেখি কিছুই নেই। পরের দুদিন ভূত লেখকের কোন খবরই নেই। একেবারে লাপাত্তা। এবার বুঝলাম সবই বুজরুকি। কেউ আমার সাথে মজা করেছে। সত্যটা উদঘাটন করে যতটা না মেজাজ খারাপ হলো তারচেয়ে বেশি মন খারাপ হয়ে গেল।

তৃতীয় রাত্রে কি কারণে জানি না, আপনা আপনি রাত দুটায় যেসময় চার্চে দুটা ঘন্টা বাজে তখন ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। আর চোখ মেলে দেখলাম সেই ভূত লেখককে। পেলাম সেই নাকি কন্ঠস্বর, 'কি রে নিবি না আমাকে?'

আমি উত্তর না দিয়ে প্রশ্ন করলাম, 'এ দুদিন কোথায় ছিলেন?'

-জিনিস পত্তর আনতে গিয়েছিলাম। তোর সাথে যেতে হবে যে।

-কি করে জানলেন আমি আপনাকে নিব?

-আমি মন পড়তে পারি রে, মন পড়তে পারি। তোর ইচ্ছা দুটো শুনেই চলে গিয়েছিলাম, সব কিছু ঠিক করে এলাম।

আমি ভিরমি খেয়ে বললাম, আমি তো আপনাকে ইচ্ছা দুটো বলিনি।

সেই নাকি স্বর বলতে লাগলো, 'আমি মন পড়তে পারি রে, মন পড়তে পারি।'

ঘটনা শুরুর ঠিক আগের ঘটনা

গিয়েছিলাম একা। ফিরলাম তিনজনা। একজন দৃশ্যমান, অন্যজন অদৃশ্যমান।

ইচ্ছা দুটো খুবই সহজ। প্রথম ইচ্ছা ছিল সেই চলন সুন্দর মেয়েটাকে বিয়ে আর দ্বিতীয় ইচ্ছা, না থাক সেটা সময়ই বলে দেবে। আর ভূত লেখক বলে দিয়েছেন, ইচ্ছাপূরণের পূর্বে তিনি আমার ঘাড়ে চড়বেন না। তাই ইচ্ছাপূরণের ব্যাপারে বেশ নিশ্চিত আর নিশ্চিন্ত।

হুট করে বিয়ে করাতে কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। তাই বাড়ি ফিরে প্রথম কাজ ছিল একটা অনুষ্ঠান করা। সব বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সেই ডাক্তারকেও দাওয়াত দিলাম। দাওয়াতে এসে ডাক্তার আগেরবারের মতোই আমার এক কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, কাজটা কি ঠিক হলো?

কথাটা শুনে বুকের ভেতর কেমন একটা অস্থিরতা টের পেলাম। একেই বুঝি বলে বুকে ঝড় বয়ে যাওয়া। কিন্তু এক বছর পর যখন সেই ডাক্তারই অপারেশন থিয়েটার থেকে বেড়িয়ে এসে বললেন, আমি বাবা হয়েছি, তখন আমার চেয়েও তিনি বেশি অবাক হয়েছিলেন।

অবশেষে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার দুটো ইচ্ছাই পূরণ হলো। হ্যাঁ, আমার দ্বিতীয় ইচ্ছা ছিল, বাবা হওয়া। এবার সময় হলো, ভূতকে ঘাড়ে বসতে দেওয়া। না জানি কি হবে?

ঘটনা হলো শুরু

বাবা হবার এক সপ্তাহ দুই দিন পরে মাঝ রাত্রে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে বলে দিতে পারবো এখন বাজে রাত দুটো। আমি উঠে এসে চেয়ার টেনে বসলাম, খাতা কলম তৈরি। ভূত লেখক তার জায়গা করে নিয়েছে আমার তর্জনী আর বুড়ো আঙ্গুলে। পাতায় কলমের নিব স্পর্শ করাতেই বুঝলাম হাতটা আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, আপনা আপনি লিখে চলেছে তো চলেছেই। কানে আজানের আওয়াজ আসতেই টের পেলাম আমার নখ ব্যথা করছে, সেই সাথে হাত যেন অবশ হয়ে আছে। আর বুঝলাম আমার হাত আমার নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পরের দুদিন তীব্র হাত ব্যথায় ভুগলাম। আগে কখনো এত লিখিনি বলেই হয়তো এমন হলো।

বহু কাঠখড় পুড়িয়ে প্রথম বই প্রকাশ করলাম, তাও ছদ্মনামে। সেই নামটাও ভূত লেখকেরই দেওয়া। আগে যাদের উপর ভর করেছিল তারাও নাকি ছদ্মনামেই লিখতো। কারন, এটাই ছিল ভূত লেখকের একমাত্র শর্ত। আজব শর্ত, নয় কি?

পুনশ্চ দুই

ইংরেজিতে ছদ্মনামের ইংরেজি হলো “Pen name, Pseudonym.” সাহিত্যিকরা নিজেদের পিতৃদত্ত প্রকৃত নামের বাইরে যে নামে লেখালেখি করেন সেটাই 'পেন নেম'। যেমন, বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় “বনফুল” নামে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন । “যাযাবর”-কে বিনয় মুখোপাধ্যায় বলে কেউ চিনবে কিনা সন্দেহ। অদ্ভুত হলেও সত্যি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রীতিমতো “অনিলা দেবী” নামে লিখেছেন। রহস্য উপন্যাসের রানী হিসেবে বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন লেখক আগাথা ছয়টি রোমান্টিক উপন্যাসও লিখেছেন! কিন্তু অধিকাংশ লোকেরই এটা জানা নেই। কারণ, এ উপন্যাসগুলো তিনি লিখেছেন “ম্যারি ওয়েস্টম্যাকট” ছদ্মনামে। “আমেরিকান সাহিত্যের জনক” মার্ক টোয়েনই হচ্ছেন স্যামুয়েল ল্যাঙ্গহর্ন ক্লিমেন্স। জর্জ এলিয়ট নামে যে কবিকে পুরুষ হিসেবে সবাই জানে তিনি আসলে একজন নারী, নাম ম্যারি ইভান্স । জাপানি সাহিত্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ লেখক ইয়োকো মিশিমা (Yukio Mishima) এর প্রকৃত নাম হিরায়োকা কিমিতেক (Hiraoka Kimitake)।

উপসংহারের আখ্যানভাগ

কখনোই লেখক ছিলাম না। কখনো দু লাইন কবিতাও লিখেছিলাম কিনা সন্দেহ। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আমি নামীদামী প্রথম শ্রেণীর লেখক। ভূত লেখকের হয়ে আমি লিখে যাচ্ছি। অবিশ্বাস্য! এতটা উঁচুতে উঠে নিজেকে অনেক বড় মনে হচ্ছে,অনেক বড়।

যেখানেই যাই পাঠকরা ঘিরে ধরে। অটোগ্রাফ,ফটোগ্রাফ, ফ্ল্যাশ লাইটের ঝলকানি,উপচে পড়া ভীড় যেন নিত্যসঙ্গী। সবার এত প্রত্যাশা আমার লেখা নিয়ে দেখলেই গর্বে বুকটা ফুলে উঠে।

কিন্তু আমি যদি জানতাম ভবিষ্যতে কি আছে তাহলে কখনোই সেই দুটো ইচ্ছা পূরণ করতে চাইতাম না, দিতামও না অধিকার সেই ভূত লেখককে। এ আমার কি হল!

উপসংহারের মধ্যভাগ

বসে ছিলাম সেই চেয়ারে, যে চেয়ারে বসে ১৭ বছর ধরে লিখছি। ১৩টা উপন্যাসের অগ্রিম টাকা নেওয়া আছে। হাতে সময়ও খুব কম। ঘড়ির দিকে তাকালাম। দুটো বাজলো। কলম হাতে তৈরি। কিন্তু ভূত লেখক কিছু লিখলো না। তবে তার নাকি কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, সে বলছে, 'আমি আজকে একেবারে চলে যাবো। আমার মাথায় আর কোন প্লট নেই। আমি কিছু লিখতে পারব না।'

আমি অবাক হয়ে বললাম, 'মানে?'

-মানে কিছুই না। আমার মাথায় আর কোন প্লট নেই যে কোন কিছু লিখবো। তাই চলে যাব।

-কবে ফিরবেন?

-অন্য কোন শতকে।

-তাহলে আমি কি করব? আমি তো লেখক নই।

-তো আমি কি করবো?

-আপনাকে থাকতে হবে... তুই... তুই...

এরপর আমি তার আর কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। মাথার চুল টেনে ধরে মাথা টেবিলে ঠেকালাম। এখন কি হবে আমার? আমি তো শেষ হয়ে যাবো।

উপসংহারের শেষভাগ

ভূত লেখক চলে যাবার দুই বছর হয়ে গেল। ভেঙ্গে না পড়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু ফলাফল কিছু বস্তাপচা অখাদ্য লেখা। যা লিখেছি তাতে সম্মান কমেছে বহুগুণে । প্রকাশকরা আগের বইগুলো রিপ্রিন্ট করে কাজ চালাচ্ছে। কিন্তু আমি কি করব? এভাবে আর চলে না। ভক্তদের অজস্র অভিযোগ, লেখা নিয়ে হতাশা আর ভালো লাগে না। যারাই গতকাল মাথায় তুলে রাখতো, আজ তারাই মাটিতে ফেলে দিচ্ছে। আগামীকাল যে মাটিতে পিষে ফেলবে না তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই এ জীবন রেখে আর লাভ নেই। এ জীবন এখন বড় তুচ্ছ!

রাত দুটা বাজে। এই সময়টাই আমাকে নতুন জীবন দিয়েছিল। আর আজ এই সময়টাই আমার জীবন শেষ করে দিচ্ছে। বাসার ছাদে উঠলাম। আজ বুঝি অমাবস্যা, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আন্দাজ করে ছাদের কিনারায় দাঁড়ালাম। লাফ দেবার আগে পিছন ফিরে চাইলাম। শুধু ঘোর অমানিশা বিনা আর কিছুই নজরে এল না। এবার সামনে তাকালাম। সেই একই ঘোর অমানিশা। আমার চারদিকে এখন শুধু ঘোর অমানিশা। আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি।

ছাদ থেকে ঠিক যখনি লাফ দিলাম ঠিক তখনি সেই নাকি কণ্ঠস্বরটা আবার শুনতে পেলাম। শুনতে পেলাম সে বলছে, 'তোকে ধন্যবাদ। তোর আত্মা এখন আমি নিয়ে নিব। তোর আত্মার বিনিময়ে আমার বন্ধুর কাছে থেকে অনেক প্লট নিব। আমি আবার কারো উপর ভর করে লিখতে পারবো। হা হা হা।'

সবকিছু চিরদিনের মতো অন্ধকার হয়ে যাবার আগে আমি কেবল দুটো শব্দই উচ্চারণ করতে পারলাম, 'চাক্রিক চক্রান্ত।'

পুনশ্চ তিন

রাইটার্স ব্লকে পড়ে লেখকদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা কেন যেন বেশ প্রবল।

ভ্লাদিমির মায়াকোভস্কি ১৪ এপ্রিল ১৯৩০ সালের এক সন্ধ্যায় পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেন।

ল্যাটিন আমেরিকার সর্বকালের সেরা ছোট গল্পকার হোরেশিও কুইরোগা (Horacio Quiroga) ১৯৩৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বুয়েনস এইরেসের এক ক্লিনিকে সায়ানাইড পানে আত্মহত্যা করেন।

ভার্জিনিয়া উলফ ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ তিনি একটি ওভারকোট গায়ে চাপিয়ে তাঁর মধ্যে ভারী ভারী পাথর খণ্ড ঢুকিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নোবেল বিজয়ী আমেরিকান ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বন্দুকের নল মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করেন।

জোসেফ লেবিনকফকে ১৯৯১ সালের ৩ মে তাঁর স্ত্রী বাথটবে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করেন। তাঁর মুখে একটি প্লাস্টিক ব্যাগ জড়ানো ছিল। মৃত্যুর আগে তিনি লিখে রেখে গিয়েছিলেন : 'I am going to put myself to sleep now for a bit longer than usual, call it Eternity.'

সূচনা

জেমস থমাস খুব খুশি। আজ তার দুইটা ইচ্ছা পূরণ হবে। বিনিময় মূল্য খুবই অল্প। শুধু লেখার জন্য একটু জায়গা করে দেওয়া। যে ইচ্ছা পূরণ করে দেবে সে নিজেকে যে নামে পরিচয় দিয়েছে তা হল, ভূত লেখক।

জেমস থমাসের অজান্তেই কেউ যেন নাক দিয়ে হাসছে আর বলছে, এবার আরেকটি আত্মা।
কন্ঠস্বরটা অনেকটা নাকি।

ঢং ঢং। এখন বাজে রাত দুটো।

সমাপ্ত

[এটা গত বইমেলায় শুধুই গল্প সংকলন-২​ এ প্রকাশিত।]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×