(আমি প্রেমের গল্প লিখি না । ভুলে-ভালে দুই একটা লিখেছিলাম হয়ত কোন এক কালে । হঠাত করে প্রেমের গল্প লিখতে ইচ্ছা করায় লিখেছি এইটা । আমি পারিনা প্রেমের গল্প লিখতে । জানি এইটাও কিছুই হয় নাই । তারপরও মতামত চাই । ভালো বা খারাপ, যাই হোক না কেন, যেটা সত্যি সেটা জানতে চাই । আমার জন্যই উপকারে হবে সেটা ।)
নুর ইসলাম সাহেবকে আজ একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে । অন্যরকম বলতে কি রকম সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না । তবে হ্যাঁ, সবসময়ের মত লাগছে না । তাই বোঝা যাচ্ছে তাঁকে অন্যরকম দেখাচ্ছে । কিছুট অবাক, কিছুটা রাগ আর কিছুটা চিন্তিত এর মিশ্রণ বলা যায় হয়ত ।
এই সময়টায় তাঁকে স্বাভাবিকভাবে বেশ রাগান্বিত থাকার কথা । চিত্কার-চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলার কথা । তাঁর পুলিশ ভাতিজাকে নিয়ে 'খোঁজ-দ্য সার্চ' মিশনে যাওয়ার কথা । এই মিশন রিচিকে খোঁজার জন্য । রিচি, তাঁর মেয়ে । তাঁর মেয়ে চলে গেছে । মানে পালিয়ে গেছে কোন একটা ছেলের সাথে । তাঁর সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেছে মেয়ে । অথচ তিনি বুঝতেই পারেননি ।
এই মারাত্মক ডেঞ্জারাস কাজটা ঘটে গেছে আজ সকালে । রিটায়ারের পর থেকে তিনি সারাদিনই বাসায় থাকে । কোন জরুরী কাজ ছাড়া বেরোন না বাইরে । আজ তেমনি একটা সময় । অনেক জরুরী বাইরে বেরোনো । কিন্তু তিনি সেটা করছেন না । কেন করছেন না সেটা তাঁর নিজের কাছেও পরিষ্কার না । তারপরও তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা শার্ট পড়া ছেলেটাকে তিনি 'না' বলতে পারছেন না । বলতে পারছেন না যে, তার গল্প শোনার সময় এখন উনার নেই । উনার আদরের মেয়ে সব আদর নিয়ে পালিয়ে গেছে । তাকে খুঁজে বের করতে হবে । এত সহজে আদরগুলো হারিয়ে যেতে দিতে চান না তিনি ।
সাদা শার্টে ছেলেটাকে মানিয়েছে ভালো । ছেলেটা কি জানে সেটা? না জানলে জানিয়ে দেওয়া উচিত ।
ধুর । এসব কি ভাবছেন উনি । উনার সময় নষ্ট হচ্ছে অনেক । এমনিতেও অনেক দেরী হয়ে গেছে । মেয়ে গেছে সকালে । সেটা বুঝে উঠতে উঠতেই দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেছে ।
ছেলেটা কি গল্প বলতে চায় কে জানে । বলেছে একটা গল্প বলবে আর দুয়েকটা কথা বলবে । আর সেগুলোও বলবে একা একা । অর্থাত্ অন্য কেউ থাকতে পারবে না ।
ছেলেটা দেখতে শুনতে খারাপ না । ভদ্রতাও আছে । একটু বেশিই আছে । সেই কখন থেকে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে । চোখ তুলে দেখছেও না একবার । ছেলেটা কি বলতে চায় তাড়াতাড়ি শুনে ফেলা দরকার ।
-নাম কি তোমার ?
-জ্বী অভ্র ।
-হুম । কর কি ? তুমি জান আমার এখন মোটেই খোশগল্প করার সময় বা ইচ্ছা কোনটাই নাই ?
-জ্বী আংকেল জানি । আর সেজন্য আমি অনেক দুঃখিত । তবে আপনাকে কথাগুলো জানানো দরকার ।
-কি বলবে তাড়াতাড়ি বলে বিদায় হও ।
-আংকেল, আমি রিচির খুব ভালো বন্ধু । আমি জানি ও আজ সকালে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে । আপনারা ওর পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন না বলে । আর আপনাকে ও অনেক ভয় পায় । যার কারণে আপনার মুখের উপর নিজের পছন্দের কথা বলতে পারেনি ।
নুর ইসলাম সাহেবের কৌতুহল হচ্ছে এবার । একটু বেশিই কৌতুহল হচ্ছে । ছেলেটা এসব বলছে কেন ? কি বলতে চায় ও ? যদিও তিনি তাঁর মনের অবস্থা মুখে প্রকাশ করলেন না ।
-তুমি কি ওর পক্ষ থেকে দালালি করতে এসেছো ?
-না আংকেল । প্লিজ ভুল বুঝবেন না । আমি দালালি করছি নাকি কি করছি জানি না । শুধু জানি এগুলো আপনার শোনা দরকার ।
-বল ।
-আংকেল, আমি আপনাকে একটা ছোট্ট গল্প বলব ।
-গল্প-কবিতা যেটা ইচ্ছা বলে বিদায় হও ।
ছেলেটা একটু চুপ থেকে বলা শুরু করল । নুর ইসলাম সাহেবের তেমন পাত্তা দিতে ইচ্ছা করছে না । শুধু ছেলেটা বলতে চাইছে বলে শুনছেন । আগের কৌতুহলটা কমে এসেছে । ছেলেটাকে কষ্ট দিতে ইচ্ছা করছে না । তিনি উপরে যতই রাগ দেখান না কেন, তাঁর মনটা বেশ নরম ।
-গল্পের প্রধান চরিত্র তিনটা । দুইটা ছেলে, একটা মেয়ে । সময়টা ওদের এইচ.এস.সি তে পড়া অবস্থার । ছেলে দুটোর একটা মুসলমান আরেকটা হিন্দু । আর মেয়েটা মুসলমান । মেয়েটা অনেক ভালো একটা মেয়ে ছিল । হিন্দু ছেলেটাও তেমনি ভালো ছিল । শুধু মুসলমান ছেলেটা খারাপ ছিল অনেক । ভালো হওয়ার কারণেই হয়ত সেই হিন্দু ছেলেটা আর মেয়েটার মাঝে অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয় । একে অন্যের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল ওরা । আর সেই মুসলমান ছেলেটার সাথে ওদের দুজনের ভালো বন্ধুত্ব ছিল । এটা সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য , যে কোন কিছু বলা যায় । যদিও সেই বেস্ট ফ্রেন্ড দুজনকে দেখে সবাই বলতে যে ওদের মাঝে ফ্রেন্ডশীপের চেয়েও বেশি কিছু আছে । কিন্তু মেয়েটা সবসময় অস্বীকার করত । ওর কাছে ফ্রেন্ডশীপটাই সব । মেয়েটা সবসময় সবার আগে তার ফ্যামিলির কথা ভাবত । ভাবত কোনটাতে তার ফ্যামিলি খুশি হবে আর কোনটাতে কষ্ট পাবে ।
-এইসব ফালতু কথা বলতেছ কেন ? শুধু শুধু সময় নষ্ট হচ্ছে । আমার মনে হয় না তেমন শোনার মত কিছু আছে ।
নুর ইসলাম সাহেব উঠতে চাইলেন । তখন ছেলেটা অনুরোধ করল আবার । খুব তাড়াতাড়ি যা বলার বলে ফেলবে বলল । নুর ইসলাম সাহেব অনিচ্ছাসত্ত্বেও বসলেন । তবে এর আগে নিজের বড় ছেলেকে একটা ফোন দিলেন । রিচির কোন খোঁজ পাওয়া গেছে কিনা জানতে । কিন্তু না । হতাশ হতে হয়েছে তাঁকে । ছেলেটাকে আবার শুরু করতে বললেন তিনি । সেই সাথে তাড়াতাড়ি শেষ করার কথাটাও মনে করিয়ে দিলেন ।
-সেই মুসলিম ছেলেটা ওই মেয়েটাকে ভালোবাসতো । কিন্তু কখনো বলেনি । কারণ এসব কিছু মেয়েটার পছন্দ না । মেয়েটা কষ্ট পাবে বলে ছেলেটা সবসময় ওর বন্ধু হিসেবে থেকেছে । কখনো ভালোবাসার কথা বলেনি । কিন্তু এরপরও মেয়েটা কষ্ট পেয়ে যায় কোন একটা কারণে । আরও অনেক কিছুই ঘটে । ওগুলো বলতে চাচ্ছি না । সময়ও নেই, দরকারও নেই ।
-হুম তাড়াতাড়ি শেষ কর ।
-মেয়েটা সবসময় ফ্রেন্ডশীপের কথা বললেও একসময় ঠিকই ছেলেটার প্রেমে পড়ে যায় । মানে হিন্দু ছেলেটার । ওদের প্রেমটা খুব ভালো চলে । অনেকদিন পার হয়ে যায় এরপর । মেয়েটার পরিবার থেকে বিয়ের আয়োজন শুরু হয় , তখন মেয়েটা হিন্দু ছেলেটার কথা সবাইকে বলে । হিন্দু ছেলেটা অনেক বেশি ভালোবাসতো মেয়েটাকে । সে নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে ফেলেছিল । শুধু মেয়েটাকে পাবার আশায় ।
নুর ইসলাম সাহেব নড়েচড়ে বসলেন । ধর্ম পরিবর্তনের ব্যাপারটা তিনি আশা করেননি ।
-বল কি ? ধর্ম চেঞ্জ করে ফেলেছে ?
-জ্বী আংকেল । কিন্তু সেটা মেয়েটা তার পরিবারকে জানায়নি কোন কারণে । পরে মেয়েটার অমতেই মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায় তার ফ্যামিলির পছন্দের ছেলের সাথে । মেয়েটা ফ্যামিলির কথা চিন্তা করেছে । তাদের কষ্ট দিতে চায়নি । কিন্তু নিজে ঠিকই কষ্ট পেয়েছে । অবর্ণনীয় কষ্ট ।।
-এটা ঠিক করেনি ও । ফ্যামিলিকে ছেলেটার ধর্ম চেঞ্জের কথা বলতে পারত । তারা রাজি হলেও হতে পারত ।
-কিন্তু আংকেল , মেয়েটা তার বাবাকে অনেক বেশি ভয় পেত । তাই কখনও সাহস করে বলতে পারেনি কিছু ।
-হুম । তারপরও সাহস করার দরকার ছিল । তাহলে অমন হত না ।
-আংকেল আমার গল্পটা এখানেই শেষ ।
-আচ্ছা, ছেলে আরেকটা ছিল যে ওটার কি হল ?
-ওই ছেলেটা ? ওটা সবসময় মেযেটাকে ভালোবেসে এসেছে । যখন মেয়েটার প্রেম চলছিল তখনও, আবার যখন বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল তখনও । একতরফা ভালোবেসেছে শুধু । আসলে আংকেল ওই চরিত্রটার কথা তেমন বলার কিছু নাই । ওটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন চরিত্র না ।
-হুম । ছেলেটা ভালোবাসতে পারে বটে ।
-আংকেল, এখন আপনাকে কয়েকটা কথা বলব ।
-বল ।
-আমার গল্পের যে মেয়েটা ছিল, ওটা ছিল রিচি, আর যে হিন্দু ছেলেটাকে ও ভালোবাসতো ওটা ছিলি রিচি যার সাথে চলে গেছে আজকে সকালে, সেই ছেলেটা । গল্পটা হুবহু বাস্তব । এটা আসলে কোন বানানো গল্প না । আমি গল্প বানাতে পারি না । শুধু শেষের অংশটুকু বাদে । গল্পে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায় , আর বাস্তবে হয়নি । তবে হ্যাঁ, হিন্দু ছেলেটা আসলেই ধর্ম পরিবর্তন করেছে । আমি আপনাকে একটা ঠিকানা লিখে দিচ্ছি । ওরা ওখানে আছে । আপনি জানেন আপনার কি করা দরকার ।
নুর ইসলাম সাহেব একটা মোটামুটি বড় ধাক্কা খেলেন । ছেলেটা একটা কাগজের টুকরায় ঠিকানা লিখে তাঁকে দিল । তাঁর হঠাত্ একটা ব্যাপার মনে পড়ল ।
-আচ্ছা সেই আরেকটা ছেলেটা কে ? নাম কি ওর ? এখন কই ?
-আংকেল, ওই খারাপ ছেলেটা আমি ।
নুর ইসলাম সাহেব এবার ইচ্ছা করেই কোন ধাক্কা খেলেন না । তিনি কিছুটা আন্দাজ করে নিয়েছিলেন উত্তরটা ।
-আংকেল, একটা রিকোয়েস্ট করব ।
-কি ?
-আমার সাথে যে আপনার কথা হইছে , আর কি কথা হইছে এসব কিছু যেন রিচি কখনোই না জানে । প্লিজ আংকেল ।
-তুমি রিচিকে ভালোবাসো না ? সত্যি কথা বলবা । আমি এখন অনেক টেনশনে...
-রিচি সবসময় আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল , এখনও আছে , সামনেও থাকবে । আমার ভালোবাসাটা আপাতত তেমন কিছু না আংকেল ।
নুর ইসলাম সাহেব কিছু বললেন না আর । ছেলেটা চলে গেছে । তিনি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখেছেন , ছেলেটা যখন গেট দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে , তখন হাত দিয়ে চোখ মুছছে । তিনি জানেন না কেন চোখ মুছছিলো ছেলেটা ।
রিচি আর তার প্রেমিককে আনা হয়েছে । ওদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে । মেয়েটা অনেক খুশি হয়েছে । মেয়েটা মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে, এটা চিন্তা করেও তাঁর কেমন জানি লাগে ।
বিয়ের দিন রিচি আর তার জামাইয়ের অনেক বন্ধু-বান্ধব এসেছিল । কিন্তু অভ্র ছেলেটা আসেনি । ওকে কোথাও দেখতে পাননি তিনি । একবার রিচিকেও জিজ্ঞেস করেছিলেন , অভ্রকে আসতে বলা হয়েছে কিনা ?
রিচি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল , তিনি কিভাবে অভ্রকে চিনেন ? নুর ইসলাম সাহেব খুব কৌশলে কথা ঘুরিয়ে ফেলেছেন ।
তিনি জানেন না কেন , তবে হঠাত করেই তাঁর অভ্র ছেলেটার জন্য খারাপ লাগছে । এতটা ভালোবাসা ঠিক না । তাহলে এত কষ্ট পেতে হত না ।
কিন্তু নুর ইসলাম সাহেব হয়ত জানেন না, অভ্ররা এমনই হয়...।
##The enD##

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




