somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রাফিনময় আগামী বিশ্বের অপেক্ষা (বিজ্ঞানীয় পোষ্ট) :)

১২ ই জুন, ২০১২ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নতুন কোনো পদার্থ নয়, গ্রাফিন। অনেক আগে থেকেই মানুষ এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানে। গ্রাফাইট হচ্ছে কার্বণের একটা রূপভেদ। ষড়ভূজ আকৃতির পারমাণবিক বন্ধন যুক্ত গ্রাফাইটের গঠন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা রয়েছে। আমরা যে পেনসিল দিয়ে লিখি সে পেনসিলের শিসটি গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। পেনসিলের লেখাগুলো গ্রাফাইটের অনেকগুলো আস্তরণের সমষ্টি। আর গ্রাফাইটের এই আস্তরণগুলোর প্রতিটি একেকটা গ্রাফিন। গ্রাফিনের প্রতিটি আস্তরণ এতটাই পাতলা যে, এর পুরুত্ব একটি মাত্র পরমাণুর ব্যাসের সমান। অন্যভাবে বলা যায়, দশ পাতা কাগজের পুরুত্ব যদি হয় এক মিলিমিটার তাহলে দশ লাখ গ্রাফিনের আস্তরণের পুরুত্ব হবে এক পাতা কাগজের পুরুত্বের সমান। গ্রাফিনের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অবগত থাকলেও একে তারা আলাদা করতে পারছিলেন না। ফলে এর অনেক ধর্মও পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব হচ্ছিলো না। নানারকম পরীক্ষা দিয়ে আন্দ্রে গেইম ও কনস্টান্টিন নভোসেলভ শুরু করলেন তাদের গবেষণা। কিন্তু তারা সফলতার মুখ দেখছিলেন না। সিনিয়র গবেষকদের একজন গ্রাফিনের পুরু আস্তরণ তৈরি করেন আর সবাই মিলে চেষ্টা করতে থাকেন কিভাবে গ্রাফিনের একটা স্তরকে তা থেকে আলাদা করা যায়। যে গ্রাফিনগুলো টেবিলে লেগে থাকতো তা পরিষ্কার করার জন্য স্কচটেপ ব্যবহার করা হতো। গ্রাফিনের ওপর টেপ লাগিয়ে পরে টান দিয়ে টেপটা তুলে ফেললে টেপের সাথে গ্রাফিনও উঠে আসে। ওই ব্যবহূত টেপগুলো স্বাভাবিকভাবেই ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়। এ রকমই একটা টেপ ডাস্টবিন থেকে তুলে নিলেন নভোসেলভ। কনফোকাল মাইক্রোস্কোপের নিচে টেপটাকে রেখে দেখলেন তাতে যে গ্রাফিন লেগে আছে তার পুরুত্ব অত্যন্ত কম। আর এ থেকেই পেয়ে যান ক্লু। এভাবেই আলাদা হয়ে গেলো সবচেয়ে কম পুরুত্বের পদার্থ গ্রাফিন। এর পুরুত্ব এক মিলিমিটারের এক কোটি ভাগের এক ভাগ। তাই গ্রাফিনকে বলা হয় দ্বিমাত্রিক পদার্থ। গ্রাফিনের একটা ষড়ভূজ আকৃতির কোষে দুটো কার্বণ পরমাণু থাকে যার ক্ষেত্রফল মাত্র ০.০৫২ বর্গ ন্যানোমিটার এবং ঘনত্ব ০.৭৭ মিলিগ্রাম বর্গমিটার। সহজ ভাষায়, এক মিটার বাই এক মিটার আকৃতির একখণ্ড গ্রাফিনের ভর হবে এক মিলিমিটারেরও কম। গ্রাফিন এতো পাতলা যে এটি মাত্র ২.৩% আলো শোষণ করতে পারে। অর্থাৎ এর মধ্যদিয়ে প্রায় বিনা বাধায় আলো চলাচল করতে পারে। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে গ্রাফিন এত পাতলা ও স্বচ্ছ হওয়া সত্ত্বেও এটি ইস্পাতের চেয়ে একগুণ বেশি শক্ত। ইস্পাতের ভর সইবার ক্ষমতার যেখানে মাত্র ০.৪০ নিউটন/মিটার সেখানে গ্রাফিনের হচ্ছে ৪২ নিউটন/মিটার। এক মিটার দৈর্ঘ্য ও এক মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট একখণ্ড গ্রাফিন দুটো খুঁটির মধ্যে বেঁধে দিলে তার ওপর ৪ কিলোগ্রাম ভার রাখলেও গ্রাফিন খণ্ডটি ছিঁড়ে যাবে না। গ্রাফিন এতটাই পাতলা যে খালি চোখে একে দেখা যাবে না। এর ওপর একটি বিড়াল শুয়ে থাকলে মনে হবে বিড়ালটি শূন্যে ভাসছে। গ্রাফিন অত্যন্ত বিদু্যৎ সুপরিবাহী। এর বিদু্যৎ পরিবাহিতা তামার চেয়েও বেশি। এর তাপ পরিবাহিতা তামার চেয়ে দশগুণ বেশি। গ্রাফিনের এসব বৈশিষ্ট্য সম্বলিত তথ্য সায়েন্স জার্নালে প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০৪ সালে। গবেষকরা হচ্ছেন- আন্দ্রে গাইম ও নভোসেলভ। বৈজ্ঞানিক মহলে দ্রুত এ তথ্য ছড়িয়ে যায়। হইচই শুরু হয়ে যায় বিশ্বয়কর পদার্থ গ্রাফিনকে নিয়ে। গ্রাফিনের ভবিষ্যৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেলেছেন। আগামীর প্রযুক্তিকে বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে এই গ্রাফিন। এর বিভিন্ন ধরনের গুণাবলী যেমন কম ভর, স্বচ্ছতা, বিদু্যৎ সুপরিবাহিতার কারণে কম্পিউটার টিপস, টাচ স্ক্রিন ইত্যাদি ক্ষেত্রে গ্রাফিন অচিরেই সিলিকনের জায়গাটি দখল করে নেবে। সোলার সেল, মোবাইল ফোন, গাড়ির পার্টস, ইলেক্ট্রনিক্স, আকাশ যানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে এমনকি স্যাটেলাইটেও জায়গা করে নেবে গ্রাফিন। অবশ্য ইতিমধ্যে আইবিএম-এর প্রকৌশলীরা সিলিকন ট্রানজিস্টর বাদ দিয়ে গ্রাফিন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। জীববিজ্ঞানীরাও গ্রাফিন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। গ্রাফিন অক্সাইড ইতিমধ্যে এন্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই চীনে খাবার সংরক্ষণে গ্রাফিন অক্সাইড ব্যবহূত হচ্ছে। আর গ্রাফিন অনেক হালকা হওয়ায় গ্রাফিন দিয়ে তৈরিকৃত যান চালাতে জ্বালানি খরচ কমে আসবে। শুধু তাই নয়; অত্যধিক শক্তিশালী গ্রাফিন ভবিষ্যৎ-এ গাড়ি, উড়োজাহাজ এমনকি সোলার সেলেও ব্যবহূত হবে। প্রযুক্তির আগামী বিশ্ব হবে গ্রাফিন বিশ্ব। তাই গ্রাফিন জগৎকে স্বাগতম।:):):):)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×