শোভাযাত্রা, জন্মদিন পালন করা, বাজী ফুটানো এসব বেদাতি কাজ নবীজী নিজে তার উম্মতদের করতে মানা করেছেন। অথচ ধর্ম ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে শোভাযাত্রা ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। আমরা আধুনিক নামকা ওয়াস্তে মুসলিমরা জন্মদিন পালন করা নিষেধ জেনেও তা পালন করি। সেই ধারাবাহিকতায় এখন এই সব ধান্ধাবাজ দাঁড়ি টুপি ওয়ালাও দুই পয়সা রোজগারের ধান্ধায় এই নিষিদ্ধ কাজটা করছে। নবীজী তাঁর উম্মতদের বেশি বেশি করে নফল নামায আদায় করতে, দরূদ পড়তে এবং আল্লাহর কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে পানাহ্ চাইতে বলেছেন, অথচ সুন্নতি লেবাস পড়ে শোভাযাত্রা করে ঈদে মিলাদুন্নাবি পালন করে এই সব টুপিওয়ালারা নবীর সুন্নতি লেবাসের অমর্যাদা করছে, দাঁড়ি টুপির অমর্যাদা করছে। এই লেবাসি ভন্ডগুলোর জন্যেই আজ সুন্নতি পোশাকধারীদের দিকে মানুষ আঙ্গুল তোলার দুঃসাাহস দেখায়।
কি বিচিত্র এই দেশ... যেই দেশে একজন আলেমও নাই যে এই সব কর্মকান্ড ও সংবাদের প্রতিবাদ করতে পারে!! এই দেশের হুজুররা সানি লিওন আসবে বলে বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের করে ধর্ম রক্ষা করে, আবার এই হুজুররাই আল্লাহর নির্দেশ এবং তার প্রিয় রাসূলের কথাকে অমান্য করে বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে বর্ষবরণ বা বিজয়া দশমী মতো শোভাযাত্রা করে ইসলাম ধর্মের শুদ্ধতা নষ্ট করছেন।
মুসলিমদের দূর্দশার জন্য ইহুদি বা খ্রিস্টানরা নয়, প্রকৃত দায়ী আমরা আর আমাদের ঈমানের দূর্বলতা। নামে মুসলিম, টাইটেলে মুসলিম অথচ কাজে কর্মে জীবন যাপনে কোথাও ইসলামের ছিটাফোঁটা চর্চাও নাই।
মদ চাই, আবার মরে গেলে জানাযাও চাই, এই হলো আমাদের অবস্থা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন নামের একটা ফাউন্ডেশন আছে এদেশে, যাদের চাঁদ দেখা আর ফিতরা নির্ধারণ করা ছাড়া সারা বছর করার মতো আর কোন কাজ থাকেনা, তারাও ধর্মের নামে যে অধর্মের চর্চা এদেশে হয় তা নিয়ে কখনো মুখ খুলবেনা। এ দেশে বেশ্যাবৃত্তিও 'সুপারস্টার' তকমা লাগিয়ে প্রকাশ্যে করা যায়, অথচ এদেশে সুশীলদের ভয়ে প্রকৃত দ্বীনের দুইটা কথা সাহস করে বলার মতো একজন হুজুর বা আলেম নেই যিনি শোভাযাত্রা নামের এইসব বেদাতি কাজ যে ইসলামে হারাম বলা হয়েছে একথা আওয়াজ তুলে বলতে পারেন!" বেদাতি কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দিয়ে ধর্মের মূল স্তম্ভগুলো থেকে সরে এসে ইসলাম ধর্মের অবমাননা ও অসম্মানের জন্য এইসব দাঁড়ি টুপিপড়া লেবাসধারী ব্যবসায়ী হুজুরগুলোই প্রকৃত দোষী
ধর্মের নামে এমন অধর্ম চর্চায় আমাদের ভূমিকাও যথেষ্ট। আমাদের অজ্ঞতা এই অধর্মকে প্রশ্রয় দেয়। বাড়তে দেয়। আমরা প্রতিনিয়ত বই পড়ে, টিভি দেখে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকে জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করি। পৃথিবীর তাবত বিষয়ে জানার ইচ্ছা থাকলেও ইসলামের বিষয়ে জানার আগ্রহ আমদের নেই বললেই চলে। আর সেই সুযোগের সদ্ব ব্যবহার করে ধর্ম ব্যবসায়ীরা। আমরা নিজেরা মা-বাবার জন্য দোয়া করি না, দরূদ পড় বখশে দেই না। কারণ আমাদের সময়ের বড় অভাব। সেটা না করে আমরা হুজুর ডেকে আনি। তাকে দিয়ে অনুষ্ঠান করে লোক দেখায়ে মিলাদ পড়াই। অথচ পৃথিবীতে কোন মুসলিম রাষ্ট্রে মিলাদ পড়ানোর এই প্রচলন নেই। মিলাদ আমাদের সৃষ্টি। অথচ আল্লাহ্ নিজে বলেছেন, মৃত্যুর পর কেবলমাত্র সন্তানের দোয়া আর সদকায়ে জারিয়া হিসাবে দায় খয়রাতের সোয়াব কেবলমাত্র মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছায়, অন্য কিছু নয়। আমরা সারা বছর নামায পড়ি না। অথচ অধিকাংশ ঘরে খুঁজলে কোন না কোন পীরের মুরিদ পাওয়া যায়। আমরা ইসলামের হুকুম মানি না, অথচ আমরা মাজারে যেয়ে মানত করি। মৃত ব্যক্তির কাছে গিয়ে মানত করি, মনের চাওয়া পূরণ করে দিতে মাজারে গিয়ে কেঁদে ভাসাই। কতটা অন্ধকারে আমাদের বসবাস। যেখানে আল্লাহ কোরআন শরিফের বহু জায়গায় দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হিসাবে বান্দাকে নিজে চাইতে হবে বলে দিয়েছেন। অথচ আমরা গিয়ে চাই পীরের কাছে যিনি কেবল মানুষ বৈ অন্য কিছু নন। দেয়ার একমাত্র মালিক কেবল আল্লাহ্। তবুও আমরা আল্লাহর হুকুম অস্বীকার করে পীরের কাছে চাই। জেনে শুনে শিরক করি। পীর সাহেব সব টের পান। মনে মনে হাসেন। উনার ব্যবসা ঠিকমত চললেই হলো। আল্লাহ স্বয়ং নবীজীকে মৃত্যুর পর বান্দার জন্য কিছু করার ক্ষমতা দেন নি। সেখানে অন্যরা কোন ছার। অথচ পোশাকে আশাকে আমরা তথাকথিত শিক্ষিত মানুষেরা মাজারে মাজারে গিয়ে মৃত ব্যক্তির কাছে গিয়ে চাই। মানত করে আসি। আমরা শিরক করি। শিরক কবীরা গোনাহ্। শিরক কারীকে আল্লাহ কখনো ক্ষমা করেন না।
সাহিত্য, উপন্যাস, প্রবন্ধ, বিজ্ঞান জানাটাই সব না। ধর্মের অস্তিত্ব কে অস্বীকার করে সভ্যতা কে এগিয়ে নেয়া যায় না, যাবেও না। তাই ধর্ম সম্পর্কেও আমাদের জানতে হবে। তাহলেই আর ধর্মের নামে অধর্মের চর্চা, জঙ্গীবাদ বা ধর্মীয় বিদ্বেস ছড়ানোর সুযোগ সুযোগসন্ধানীরা পাবে না।