একটা সময় ছিল যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদ্রাসার সাথে তুলনা করা হত এর অবশ্য অনেক কারন ছিল প্রধান কারন গুলোর একটি হচ্ছে অস্থির ও লেজুরভিক্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি ,এরপরে আসে স্থানীয়দের প্রভাব বিশেষ করে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাউজানের লোকদের প্রভাব , সত্যি বলতে কি স্টাডির কোন পরিবেশ ছিল না কারন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শুনলেই চোখে ভেসে আসতো লাশ আর রক্তপাত । আমাদের বিভাগের কথাই বলি , আমাদের প্রথম ব্যাচ বের হতে প্রায় ৯ বছর লেগে যায় , চিন্তা করা যায় ৫ বছরের কোর্স ৯ বছরে ,কি পরিমান সেশন জট ছিল ওই সময় , এর আসল কারন ছিলঃ প্রায় সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকতো শিবির-লীগ মারামারি করে এর ফল ভোগ করতে হল সাধারন ছাত্র ছাত্রীদের । শুধু ছাত্র রাজনীতিই নয় শিক্ষক রাজনীতিরও কম কিসে ? একই বিভাগের কোন শিক্ষক লীগের আবার কেউ শিবিরের , নিজেদের মধ্যে রেশারেশির কারনে পরীক্ষা সময়মত হত না , এরপর খাতা দেখা , রেজাল্ট দেয়া সবকিছু মিলিয়ে ১ বছরের কোচ শেষ করতে প্রায় ২ বছর লাগে যেত ।
শুরু থেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল শিবিরের দখলে , ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার আসার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্ত বুদ্ধি চর্চার সুযোগ ছিল না বললেই চলে, হত না কোন কালচারাল প্রোগ্রাম , সমাবর্তন কি জিনিস তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভুলেই গিয়েছিল । এ জন্য সরকারেরও অনেক গাফিলতি ছিল, আসলে শহর থেকে দূরে অবস্থিত হওয়ার কারনে সরকারের সুদৃষ্টি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো না্ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাজেটও ছিল খুব কম , স্পন্সর করার মত কেউ এগিয়ে আসতো না ।
সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছিল শিক্ষক নিয়োগে , ওই আমলে ২০০ জন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে ১৮০ জনই ছিল শিবিরের ।
গবেষণা বলতে নামে মাত্র গবেষনা ছিল । আরো ছোট বড় নানা কারনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরের লোকেরা এখানে ভর্তির জন্য আসতে চাইতো না ।
২০০৯ এ আওয়ামীলীগ সরকার আসার পর থেকেই দৃশ্যপট চেঞ্জ হতে শুরু করে । শিবিরের প্রভাব কমতে শুরু করে দিনের পর দিন । বিশ্ববিদ্যালয়র চেহারাও পরিবর্তন হতে থাকে । এখন অধিকাংশ বিভাগেই ৫ বছরের অনার্স মাস্টার্স ৫ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ,বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনার মান বাড়তে থাকে , প্রতি বছর আন্তর্জাতিক জার্নালে বহু পেপার জমা হয় এই বিশ্ববিদ্যলয় থেকে । এখন নিয়মিত সমাবর্তন হয় সেখানে । বিসিএস সহ কর্ম কমিশনের বিভিন্ন পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন মেধা তালিকায় সবার উপরে স্থান করে । দেশের বাইরেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুনামের সহিত কাজ করে যাচ্ছে । প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে । বিসিএস , পুলিশ , প্রশাসন , পররাষ্ট্র , বিচারবিভাগ ,গবেষনা সহ সকল সেক্টরে এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন দেশকে লিড দিচ্ছে । এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে স্পন্সর করার মত কোম্পানিরও অভাব নেই ।বর্তমানে ইউজিসি র্যাঙ্কিং অনুযায়ী এটি বাংলাদেশের র্যাকিং ১ বিশ্ববিদ্যালয় । আশা করি কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্ব র্যাঙ্কিংএ ও দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হবে ।
সংক্ষেপে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঃ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে চবি) চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি সরকারি বহু-অনুষদভিত্তিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় স্থাপিত হয়, এটি দেশের তৃতীয় এবং ক্যাম্পাস আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়।এখানে প্রায় ২২,০০০ শিক্ষার্থী এবং ৬৮৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ ও অধ্যাপনা করেছেন যার মধ্যে ১ জন নোবেল বিজয়ী এবং একাধিক একুশে পদক বিজয়ী অর্ন্তভূক্ত রয়েছেন।
বর্তমানে ইউজিসি র্যাঙ্কিং অনুযায়ী এটি বাংলাদেশের র্যাকিং ১ বিশ্ববিদ্যালয় ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭ টি অনুষদ , ৫২ টি বিভাগ , ৬ টি ইনস্টিটিউট , ৫ টি গবেষনা কেন্দ্র , ১২ টি আবাসিক হল এবং অধিভুক্ত ২১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।
বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরও এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই , এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে প্রানীবিদ্যা জাদুঘর, ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পাঠক্রমের সমর্থনে একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ যাদুঘরটি স্থাপিত হয়। এই জাদুঘরে প্রায় ৫৪০টি নমুনা সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে প্রাণীর সংখ্যা ৫৭টি এবং ফরমালিন (ভেজা সংরক্ষিত) নমুনার সংখ্যা ৪৮৫ টি ।
এছাড়া এখানে রয়েছে সমুদ্র সম্পদ জাদুঘর
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের একটি রুমে গড়ে তোলা হয়েছে এ যাদুঘর। এখানে ৫৫০টির মতো সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছে। হাঙ্গর থেকে শুরু করে বৈদ্যূতিক মাছ, আজব বাণাকেল, অক্টোপাস, শামুক, সাপ সহ রয়েছে অসংখ্য বিস্ময়কর জীব বৈচিত্র।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাস প্রাকৃতিক সৌর্ন্দের লীলাভূমি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন জুড়ে রয়েছে আঁকাবাঁকা পথ, পাহাড়ী পথ, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং বন্য প্রাণী। প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড়, বাণিজ্য অনুষদের পেছনে, ফরেস্ট্রি একালাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশে ছোট আকারের লালচে বাদামী পিঙ্গল রংয়ের মায়া হরিণ দেখা যায়। এইসব মায়া হরিণগুলো খর্বকায় ও লাজুক স্বভাবের। তবে এই হরিণের প্রকৃত সংখ্যা কত তা জানাে নেই। এছাড়াও কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের পেছনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি ঝরনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১০টি বগি বিশিষ্ট দুইটি শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। ট্রেনগুলো বটতলি রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন থেকে বটতলি রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী যাতায়াত করে।
১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একমাত্র বাহন হিসেবে শাটল ট্রেনের প্রথম যাত্রা শুরু হয়। প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে দুইটি ট্রেন দৈনিক সাতবার ক্যাম্পাস থেকে ষোলশহর এবং ষোলশহর থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত যাতায়াত করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস এবং মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:৪৭