somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বউ কথা কও

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রনির সমস্যার শেষ নেই। এই মুহুর্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বন্ধুদের পরোপোকারের মন, তা রনি মনে করে অযাচিত সাহায্য। অন্য কেউ হলে হয়ত বেশ আনন্দ পেত এই সাহায্যে, কিন্তু রনিতো পাগল তাই তার কথা আলাদা। সব কিছুই সে নিজে করতে চায়। এমনকি কখনও কখনও সে খুব কাছের বন্ধুকেও বলেছে এই বিষয়ে নাক না গলালে চলবে। খুবই রুঢ় কিন্তু রনির কাছে তাই স্বাভাবিক। তার মা বলে কবে ছেলে বুঝবে সমাজে থাকতে হলে তার কিছু নীতি রয়েছে তা ইচ্ছে না থাকলেও পালন করতে হয়।

রনি পাল্টা জবাব দেয়, " কেন ? আমি কি বাচ্চা ছেলে যে সকলের জ্ঞান শুনে কাটাতে হবে। শুধু তাই নয় সকলেই সিম্প্যাথি জানাতে ব্যাস্ত, যেন কত দরদ!"

মা শান্ত স্বরে বলেন, " তুই চুপ থাকলেই তো পারিস।"

রনির প্রতীবাদী মন ততোধিক উঁচু পর্দায় জানান দেয়, " আমার যাদের দরকার তারা আমার সাথেই আছে। " এরপর সোফায় বসে মা'র দিকে তাকিয়ে চুপ করে। আবার নিচু স্বরে বলে, " স্যরি।"

মা রুটিতে বাটার লাগাতে গিয়ে থামে, এ কোন রনি! স্যরি!! ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ভাল করে বোঝার চেষ্টা করে ব্যাপারটা। তার ছেলে তো স্যরি বলার পাত্র নয়। সেই ছেলেবেলা থেকে দেখছে কোনোওদিন কাউকে স্যরি বলেনি, এমনকি দোষ করলেও নয়। তার কথা - যেদিন কোনোও কাজের জন্য স্যরি বলতে হবে সেদিন জানবে আমি আর আমি নেই। তাহলে কি?!!!

নখ খুঁটতে খুঁটতে রনি বলে, " কাল দুপুরে রিমির সাথে দেখা হয়েছিল হঠাৎই। উই হ্যাড আওয়ার লাঞ্চ টুগেদার। "

কোন রিমি?

মা, মনে আছে সেই আমাদের আবাসনের শেষ বিল্ডিং-এ থাকত। আমার সাথে একসাথে দীপুদার গাড়িতে স্কুলে যেত।

হ্যাঁ হ্যাঁ বল। সেই সুইট মেয়েটা। তুই শুধু মারতিস আর ও বলত রনি আর না, আর না। আমারতো মনে হয় একসাথে থাকলে তোরা প্রেম করে বসতিস।

উফ্ মা'র তুমি না! এই রোগ তোমার, সব বিষয়েয় প্রেম ডেকে আনো।

মা আবার বলে, " ও এখন কি করে? ওর বাপির তো ট্রান্স্ফারেবল জব ছিল। কোথায় যেন একটা চাকরি করত। ওর মা কেমন আছে? তুই আসতে বলেছিস? "

এবার রনি চুপ থাকে খানিক। ওর বাপি নেই, ছেড়ে গেছে অনেকদিন। মা'র সাথে ডিভোর্স।

মা'র হাতের রুটি হাতে থাকে। রনি আবার বলে - ওরা দিদিমার বাড়িতে থাকে। সেখানেই পড়াশুনো। এখন সফ্টওয়ার ফার্মে চাকরি নিয়ে একটু স্টেবল।

তোকে চিনতে পারল না তুই ওকে? কে প্রথম কথা বলল?

না মা.. অনেকক্ষন ধরে দেখি একটি মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ কয়েকবার চোখাচোখিও হলো। শেষে আমি স্মাইলি দিতে আমার টেবিলে এসে বসে। তারপর ...

তা কতক্ষন তোদের লাঞ্চ হলো তোদের?

কাল আমি আর রিমি দুজনেই সেকেন্ড হাফ স্কিপ করেছি। আমারতো প্রব্লেম নেই মার্কেটিং, তবে ও সামহাউ ম্যানেজ করল। কি সব বলছিল কলিগকে - আই ডি লগ ইন রাখিস, আমি ফিরে সব বলছি।

তোর কথা কি বললি?

কি আর বলব। সবই বললাম। মেঘলার সাথে প্রেম-সেপারেশন। এখন বোহেমিয়ান লাইফ। আর সো কলড বন্ধুদের অযাচিত অ্যাডভাইস।

বাপি ডাইনিং-এ বসে ছিল, জ্বালা ধরানো কথা ছাড়া উনি কিছুই বলেন না। আজও যথারীতি স্যান্ডউইচ-এর টুকরো মুখে নিয়ে বললেন - রনি তুই এক কাজ কর কিছুদিন সব কিছু থেকে ব্রেক নে। আই মিন আউট অফ এভরিথিং। দ্য গার্ল ওয়াজ নট পারফেক্ট ফর ইউ। তোকে তো আগেই আমরা সাবধান করেছিলাম। তুই কারোও কথা শুনলে তো।

ঠিক এই কথাগুলোয় জ্বালা ধরিয়ে দেয়। আচ্ছা এরা সবাই কি মনে কর কে জানে। মেঘলা তো তার প্রেম। না হয় এখন সেপারেটেড। তা বলে এভাবে বলতে হবে। সব বন্ধুরাও একই কথা বলে চলেছে - মেঘলা তোর জন্য ছিল না। সি ওয়াজ নট পারফেক্ট ফর ইউ.... ব্লা ব্লা ব্লা। অথচ রিমি কি সুন্দর বলল - দেখ না কি হয়। হতেও তো পারে তোরা আবার এক হয়ে গেলি। তুই শান্ত হয়ে থাক। সব ঠিক হয়ে যাবে। শেষে যাবার আগে হাতে আলতো এক চাপ দিয়েছিল রিমি, ভরসা জাগানো।

মুহুর্তে বাড়ি চুপ। দূরে বাস যাবার আওয়াজ, লোকের কোলাহল, তারই মাঝে পাশের বকুল গাছ থেকে ডাক আসে বউ কথা কও। রনি দৌড়ে ব্যালকনির কাছে এসে দাড়ায়। ইতিউতি দেখে, খোঁজার চেষ্টা করে বউ কথা কও-এর উৎস।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×