somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রান্নাঘর

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছিপ খান তিন দাঁড়, তিন জন মাল্লা চৌপর দিনভর দেয় দূর পাল্লা .... কোথায় পড়া লাইনগুলি মনে করার চেষ্টা করে সু অনেকক্ষন ধরে। পারে না। আজকাল এই এক হয়েছে অনেক কিছুই ভুলে যায়। ঠিক বোঝে না কারনটা কি? তবে ছবিটা ভেসে আসে সুদুর সমুদ্দের মাঝে ঝড়-জল, তারই মাঝে মাঝি। মানেটা ঠিক বোঝে না।

প্রেগনেন্সির পর শরীরে চেঞ্জ হবেই তা ডঃ লেখি আগেই বলেছিল। কিন্তু মেমরি ফেইল করে জানা ছিল না। এইতো সকালে দীপ-এর ওপর চোটপাট করে সে। ব্যাপারটা কিছুই না, ঘুম থেকে উঠেই সামনে রাখা বাবার ফটোর দিকে তাকানো তার স্বভাব। বিয়ের ঠিক আগেই বাবাকে হারিয়েছে সে। তাই সেন্টিমেন্টটা অন্য রকমের। আসলে বাবার ফটো দেখা উদ্দেশ্য নয়, কোথাও পড়েছিল যার ছবি এই সময় দেখবে তারই মত মুখের আদল পাবে সন্তান। সেই ফটো না দেখতে পেয়ে কত কিই না বলেছে আজ দীপকে। বেচারি! সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে। পরে নিজেরই মনে পড়ে বাবার ছবির ফ্রেমটা পরিস্কার করতে গিয়ে পড়ে যায়। ফল পঞ্চুদার হাত দিয়ে দোকানে পাঠানো ঠিক করার জন্য। কাল ঘটনাটা ঘটার পর মনে বেশ চাপ তৈরি হয়েছিল অথচ সব ভুলে মেরে দিয়ে দীপকে মেজাজ হারিয়ে বলে বসল উল্টোপাল্টা।

দিদিমনি ও দিদিমনি, কি এত ভাবছুনি? বলিছিতো ছেলেই হবে।

হাসে সু। হারিয়ে গেছিল অতীত দুনিয়ায়। এখন প্রায়ই এই অবস্থা হয়। হারিয়ে যায় নিজের দুনিয়ায়। ডঃ লেখি বলেন হরমোনাল চেঞ্জ। এটা চেঞ্জ না ইমব্যালেন্স ঠিক বোঝে না। এটা নাকি খুবই স্বাভাবিক।

পাল্টা জবাব দেয় সু, তুই বলছিস যখন হবেই।

দিদিমনি, তুমি কি চাও?

আমার ইচ্ছে একটা ফুটফুটে মেয়ে। মনের মত করে সাজাবো। নানান রং-বেরং-এর ফ্রক পরাব। বেশ খেলা করা যাবে পুতুলপুতুল।

কিন্তু দিদিমনি দাদাবাবুর কি ইচ্ছে? আমাদের বাড়ির সবাইতো ছেলে না হলেই মাথা খারাপ করে। কপাল ভাল আমার প্রথম বেটা হয়েছিল। শাশুড়িতো আমার ভীষণ খুশি হইছিল। সারা পাড়া মিষ্টি বিলাই ছিল।

কিন্তু তোর কি ইচ্ছে ছিল? সু প্রশ্ন করে।

আমাদের গরীবের ঘর। মেয়েদের কোনোও মতই কি আমাদের থোড়াই চলে। এমন কি আল্লাহও শোনে না। বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোহাগি। আবার বলে, আসলে দিদিমনি ছেলে হলে কাজের সুবিধা হয়। যদিও এখুন মাইয়া মানিষেও দেখে। কাজতো সেও করে। কি বল দিদিমনি?

হাসে সু। মনে পড়ে শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে কথপোকথন। ওদের সংসারে উনারা বেড়াতে এসেছেন। বেড়াতেই বলব কারন এটা একান্তই সু'র সংসার। সু তখনও ল'ফার্মে কাজ করে। সকালেই বেরোতে হয়। কাজের চাপ অনুযায়ী ফেরা। সেদিন কি একটা কাজে দীপ আগেই বেরিয়েছে। সু'র ছুটি বা কিছু একটা হবে ঠিক মনে নেই। বৌমা ডাক পাড়েন শাশুড়ি।

সু মিষ্টি সুরে জবাব দেয়, হ্যাঁ মা।

একবার এঘরে এস।

সু তাড়াহুড়ো করেই ভেতরে যায়। কে জানে কি হলো? তারওপর আবার শ্বশুরমশাই রয়েছেন।

দেখ তোমার বাবা কি বলছেন?

কি বাবা? বেশ নিচু স্বরেই কথা বলে সু।

একটু সময় নিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বাবা বললেন, তোমার কাজ করাটা কি খুব জরুরি?

মানে?

মানে, দীপের রোজগারেতো সংসার বেশ ভালই চলতে পারে।

তা ঠিক বাবা, কিন্তু আমারওতো একটা প্রফেশনাল লাইফ আছে। তাছাড়া ল' পাশ করা মেয়ের কি বাড়িতে বসে থাকা শোভা পায়।

তা ঠিক, তবে আমাদেরওতো কিছু ইচ্ছে আছে।

এবার মা শুরু করেন, বিয়ের তিন বছর হয়ে গেল। আর কবে নাতির মুখ দেখব। তাছাড়া তোমার বয়স তিরিশ পেরোল। এবার কম্প্লিকেশান বাড়বে। এবারতো কিছু একটা ... বলে থেমে যান উনি।

মা আমি প্রফেশনাল। আগে ক্যারিয়ার। ওকে আগেই বলেছি আমি এখন বাচ্চা চাই না। বেশ জোরেই সু ঘোষণা করে।

বাড়ির পরিবেশ মুহূর্তে থমথমে। রাত্তিরে সু ফিরেছে কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে কথা হয় নি। পরদিন সু বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে সকালেই। গতকাল রাত্তিরে এইসব নিয়ে দুজনের একচোট হয়েছে। দীপ নিরুত্তর। ক্রিয়েটিভ প্রফেশানের লোকেরা বোধহয় এরকমই হয়।

পরদিন রাত্তিরে আমার গায়ে-গা লাগিয়ে ঝগড়া করার মানসিকতা জাগে। শুয়েই প্রশ্ন করে বসি, বাপি-মা কি এখানেই থাকবে?

মানে!!

না। সেদিন দুজনে আমাকে বললেন নাতি চাই। এখন তুমিও চুপ। সবাই কেমন উল্টো ব্যাবহার করছ, ইভন্ ইউ।

দীপ মুচকি হেসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

আমি রেগেই বলি তোমার কি কোনোও কান্ডজ্ঞান নেই! আমি আমার ক্যারিয়ার এস্টাবলিস্ না করেই বাচ্চা!

দীপ নিরুত্তর।

সু ত্বকচচর্া চালু রেখেই জোর দেয় তুমি মাকে জানিয়ে দিও আমার পক্ষে এখন ওসব বাচ্চা সামলানো সম্ভব নয়।

ঠিক আছে, বলে পাশ ফিরে শোয় দীপ। কিছুক্ষনের মধ্যেই নাক ডাকার আওয়াজ পায় সু।

সু'র বাপের বাড়ির কেউ নেই। একমাত্র মেয়ে বাপ-মা'র। বাপি মারা গেছেন বিয়ের আগে ও মা'র কথা ঠিক খেয়ালও নেই। বাপির হাতেই মানুষ সু, শুধু ছিল বলতে এক দূর সম্পর্কের পিসি। এখনও সে বাপির বাড়িতেই থাকে। দীপের মা-বাপিই তার মা-বাপি এটা ঠিক, তবে নিজের তো নিজেরই হয়। ব্যালকনিতে দাড়িয়ে শান্ত হবার চেষ্টা করে সু। একটা কেস কয়েকদিন ধরেই তাকে ভাবাচ্ছে। ছোট্ট বাচ্চার বর্তমানে বাপ-মা'র ঝগড়া ও তা গড়িয়ে বিচ্ছেদ। বাচ্চাটির কথা সু'র মনে প্রথম আসে। স্বাভাবিক। ঠিক বুঝতে পারে না সেটাই তার মাত্রাছাড়া আবেগ ও রাগের কারণ কিনা। তার ছেলেবেলাটাও তো প্রায় একই। মেয়েটির সাথে কেস ফাইল করার আগে কথাও বলেছিল কারণ সুধন্যদা এই কেসটা তার হাতেই দিয়েছে। তার প্রথম কেস।

মহিলার সপাট উত্তর, ওরকম বাবা থাকার থেকে না থাকা ভাল।

সু শান্ত স্বরে জবাব দেয় বাচ্চাটার মত ডিফারেন্ট হতেও তো পারে। একটু জোর দিয়েই বলে সু - আপনি বলছেন আমি কেস লড়ব, বাচ্চার কাস্টডিও হয়ত আপনার ফেবারে যাবে। তবে ইউ কান্ট এ্যাভয়েড ফাদার, যোগাযোগ বাবার সাথে থাকবেই।

মহিলা মাথা নিচু করে বেরিয়ে যান। সু ভাবে তার প্রথম কেস হাতছাড়া হলো। আজ রাত্তিরে অফিসে উনার ফোন এসেছিল, তিনি চান কোর্টে বাচ্চা তার নিজের মত জানাবে। স্বামী-স্ত্রী দুজনের কেউই ম্যানিপুলেট করতে চাই না বাচ্চার মত।

সাতপাক চিন্তায় আচ্ছন্ন না থেকে শুয়ে পড়ে সু। দীপের মুখ দেখে বাচ্চা ছেলের শোয়া মনে পড়ে যায়। হাত ছড়িয়ে পা ছড়িয়ে মুখ খোলা রেখে নাক ডেকে চলেছে। সেদিন এক আর্টিকল পড়ছিল নাক ডাকা শরীরের গন্ডগোলের কারন। ভাবে একবার ডক্টর দেখাতে হবে। এসির ফ্যানের স্পিড কমিয়ে চাদরটা টেনে শুয়ে পড়ে। ভোররাতে সু ভুলে যায় রাত্তিরের গোঁসা। সাড়া দেয় দীপের শরীরি ডাকে। মত্ত হয় শরীরি আদান-প্রদানের প্রেমের খেলায় - আদিম আবিষ্কার হতাশা কাটানোর।

মাসখানেক সু ভীষণ ব্যস্ত ছিল ডিভোর্স কেসের ব্যাপারে। শেষ পর্যন্ত কোর্ট ও বাচ্চার উৎসাহে পিছিয়ে যায় দুজনের ডিভোর্স চিন্তা।

কোর্ট থেকে বেরোনোর আগে মহিলা হাসি মুখে বলেছিল, তোমার কথায় থাকল। বাচ্চার মতটায় দুজনে মানলাম। তার হাত ধরে আলতো স্বরে বলেছিল, ইউ নো ইন দি এন্ড ইয়োর ওন ফ্লেস-ব্লাড ম্যাটার্স। সন্তান ঈশ্বরের দান।

আধুনিক নারী সু কিন্তু কাজের চাপে ভুলেই গেছিল শারীরিক হিসেবের কথা। কোর্টে কেস উঠেছে, সু ব্যাস্ত হয়েছে, বেড়েছে কাজের চাপ ওদিকে বেড়েছে দুজনের সম্মিলিত শক্তির নিশিক্ত ভ্রুণ। ফল....

পিরিয়ড বন্ধ। ইউরিন টেস্ট। রেজাল্ট পজিটিভ। বাকিতো মেয়েরা সকলেই জানেনই - শরীরে শরীর ধারনের জ্বালা, প্রেম ও আনন্দ। এযেন মাঝি মাঝ সমুদ্দুর হতে প্রাণ বয়ে আনে ও মেছুনির দেহরান্নাঘরে প্রাণ আকুলি-বিকুলি পাকিয়ে বেড়ে চলে। সম্পৃক্ত হলে প্রাণের প্রকাশ জগৎ মাঝে। যত ভাল রান্নাঘর তত ভাল প্রাণ ও তার প্রকাশ! মাঝি নিমিত্ত হলেও প্রাণের বাহক। প্রাণ-এর কি আর ছেলে-মেয়ে আছে!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×