somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিক্রেট জিওমেট্রি

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাস্ত চৌমাথা। পরপর বেশ কয়েকটা বাস পেরিয়ে যাবার পর ভিড় পাতলা হল। ঋক-এর কয়েক পা দূরে এক তরুনী দাড়িয়ে। বিরাট সুন্দরী না হলেও আলগা এক চটক রয়েছে যা সহজেই অন্যকে দাড় করিয়ে রাখে। ব্লু-জিন্স, স্কাই কালারের স্লিভলেস টপ, ছোট্ট ইউ-শেপ্ড চুল, হাতের লেদার ব্যান্ড-এর স্লিক ঘড়ি ও বড় লেদার ব্যাগ অন্য মাত্রা দিয়েছে, প্রগতীশীল নারী! টিভিতে অ্যাড দেখায় না "আজ কি নারী" সেই রকম আর কি। বার দুয়েক চোরা চাহনি দিতে গিয়ে চোখাচোখি হয়েছে। দৃষ্টিকটু ভেবে চোখ সরিয়ে নেয়। অথচ মেয়েটির মুখে আলতো হাসি লেগেই ছিল।

মিনিবাসের কন্ডাক্টরের ডাকে ঘোর কাটে। মেয়েটির দিকে তাকাতে গিয়ে দেখে সেও বাসেই উঠছে। পিছুপিছু পাদানিতে পা রাখে ঋক। ওরা উঠতেই দুজন নেমে গেল। সিনেমার দৃশ্যের মতই বাসেও দুটি সিট খালি। ব্যাস আর কি! দুজনেই বসল, চাপা এক অস্বস্তি ঘিরে রইল ঋককে। এখনোও সচ্ছন্দ হয় নি ছেলে-মেয়ের তফাৎ বোধে। মিনিবাসের সিটগুলোও ছোটো। দুজনে পাশাপাশি বসা মানেই শরীরি স্পর্ষ; হাতে-হাত পায়ে-পা লাগবেই। তরুনী নিরুত্তাপ, কিন্তু ঋক-এর শরীর গরম হয়, নিশ্বাস ঘন-গাঢ় হয়ে আসে। এই অবস্থা শুধু নিজে নয় যে পাশে বসেও টের পাওয়া যায়। সমস্যাটা সেখানেই। মেয়েটির মুখের মিটিমিটি হাসি ঋকের আঁতে ঘা দিচ্ছে। নিজের সম্মান রক্ষার তাগিদেই ইউনিভার্সিটির আগের স্ট্পেই নেমে পড়ে। কেউ স্বীকার করে কেউ করে না কিন্তু ঋক এখনোও সেই মান্ধাতার আমলেই আছে। ছেলে-মেয়ে বোধ শুধু সায়ন্তনীর ক্ষেত্রেই যা খাটেনা। ও যে ছেলে ছেলে টাইপের।

ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছে ঋক হারিয়ে যায় নানা কাজের ভিড়ে। প্রজেক্ট পেপার সাবমিট করতে হবে নেক্স্ট মান্থ, তাই চাপ বেশি। আজ আবার প্রফেসর চৌধুরীর সাথে সিটিং রয়েছে। তাই সে বেশিই সাবধানী। কিন্তু নানা কাজের ফাঁকেই বাসের স্মৃতি ভেসে ওঠে। ঋক যতবার মন থেকে তাড়াতে গেছে ততবারই আলগা চটক আরোও চেপে ধরেছে তার মনকে। মাথার পিছনে একটা চাঁটি পড়তেই ঘুরে তাকায়। সায়ন্তনী। কাজের দফারফা হল আজ! আর লাইব্রেরিতে বসা যাবে না। পা বাড়ায় ক্যান্টিনের দিকে। যেতে যেতে সায়ন্তনী বলে, "কিরে কথা বলছিস না যে বড়। প্রজেক্ট কবে সাবমিট করবি?"

না রে ক্যান্টিনে যাব না। প্রফেসর চৌধুরীর কাছে যেতে হবে। আমি যাই।

সায়ন্তনী অবাক চোখে তাকায় ঋক-এর দিকে। এ তার অচেনা চেহারা। সে আবার রিপিট করে, "তুই ক্যান্টিনে যাবি না!"

না রে আজ থাক।

বেশ কয়েকবার রিকোয়েস্ট করে সায়ন্তনী। ঋক অনড়। অগ্যতা- দুজনে দুদিকে।

স্যারের রুমে পৌঁছে বিমূখ হয় ঋক। প্রফেসর চৌধুরী আসেননি এখনোও। ঋক সোজা ইউ-টার্ন নিয়ে আবার লাইব্রেরি। তার একলা থাকার জায়গা। হারিয়ে যাওয়ার জায়গা। নিজেকে খোঁজার জায়গা।

স্যাক্রেড জিওমেট্রির বই টেনে বসে। তার এই সময়ের প্রিয় বিষয়। মানবদেহ ও বিশ্বদেহ। সব সিঙ্ক-এ আছে। হোয়াট এবাউট নারীদেহ! সব সিঙ্ককে আউট সিঙ্ক করা মোহিনী শক্তি। ঋক বলে সিক্রেট জিওমেট্রি! গোল্ডেন রেশিও পড়েছিল, কিন্তু আলগা চটকের রেশিওটা কি কে বলবে! সকাল থেকে আজ পড়েছে মোহিনী শক্তির ফাঁদে।

তার মেন্টর প্রফেসর চৌধুরী হাসতে হাসতে একবার বলেছিলেন-- লালন ফকিরের গান শুনেছ? লালন! মনের মানিষ! সব ঔ মনের মানিষের লগে। হগলের জবাব ওরই মাঝে গিয়া। আমরা যা কিছু করনের চেষ্টা করি সবই তার লগে! পরে বুঝবা।

স্যার উত্তেজিত হলে ভুল বাঙাল ভাষায় কথা বলেন। ক্যারিয়ার ছেড়ে বিয়ে করেছিলেন নিজের মামাতো বোনকে। পালিয়ে বিয়ে। দেখে বোঝাই যাবে না। আজ আর পড়া হবে না। লাইব্রেরির পাট চুকিয়ে পাশের মলে যাওয়া মনস্থ করে সে। নানা চকমকে-ঝকমকে জিনিসের মাঝে মনটা ভাল হয়ে যায়। ভাল না বলে ভুলে যায় বলাই ঠিক। ক্যান্টিনে গিয়ে সায়ন্তনীকে পিক আপ করবে ভাবে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে হার্দিকের সাথে দেখা। ব্যাস শুরু হল। স্টুডেন্ট ফেডারেশান, বিপ্লব!। দেশ বদলানো! ঋক বলতে পারে না শালা আগে নিজে বদলা! দেশতো তোকে-আমাকে নিয়েই!

মাঝপথে বাঁচায় রুনি। বরাবরের বাচাল। ঋকের উদ্দেশ্যে বলে- চল চল গুরু ক্যান্টিনে। আড্ডা জমেছে। মধুর আমদানী হয়েছে গুরু!

সুযোগ বুঝে পা বাড়ায় ঋক। যেতে যেতে স্বগক্তি করে- বাঁচলাম আজ। শালা সবসময় বিপ্লব! পরে সরকারি পয়সায় গাড়িতে চেপে ভাষণ দেবে।

উত্তর না দিয়ে রুনি হনহন করে হাঁটা দেয়। ক্যান্টিনের জটলায় হাজির হতেই চক্ষু ছানাবড়া! সেই আলগা চটক! রুনির মধু। বাস স্ট্যান্ড-মিনিবাস-ক্যান্টিন সব এক হয়ে গেছে। মুখে মিটিমিটি হাসি নিয়ে সকলের মাঝেও আলগা চটক তার দিকেই তাকিয়ে। ঠোঁটের লিপগ্লস তখন মিস করেছিল। ভাল করে তাই দেখে নেয় চকচকে ঠোঁটের রহস্যটা কি!

-কি রে ড্যাবড্যাব করে কি দেখছিস! মেয়ে দেখিস নি কখনোও। প্রেম করবি?

হাত ধরে টেনে বসায় সায়ন্তনী। আমার বন্ধু যামিনী। মেডিকেলের স্টুডেন্ট। তোকে তখন ডাকছিলাম এরই জন্য। তোর প্রজেক্ট ওর প্রিয় বিষয়। স্যাক্রেড জিওমেট্রি। শুধু তোর সাথে দেখা করার জন্যই এসেছিল।

হালকা হেসে ইশারায় হ্যালো বলে সে। কিইবা বলবে! বেআব্রু তো মিনিবাসেই হয়েছে। তার ভাল মানুষের চেহারাটার আড়ালে পশুটাকে যে জানার সে তো জেনেইছে! সিক্রেট জিওমেট্রি!!!

লজ্জা পায় সায়ন্তনীর কথায়। একঝাঁক হাসি ঘিরে ধরে ঋককে। প্রফেসর চৌধুরীর কথা ভাসে বাতাসে….

মনের মানিষ! সিক্রেট জিওমেট্রি, না আলগা চটক! ধাঁধা বোধ হয়। সব ধাঁধাঁ!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×