somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্ধি!!

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওরে মন... ও আমার মন...

গুনগুন করতে-করতে সিঁড়ি ভাঙে রুপক। আজ মনটা বেশ খুশিই আছে। পকেটে কিছু আমদানি হয়েছে। ফকটাই! চাকরি জীবনের শুরুতে ফকটাই শব্দটার কথা ভাবলেই পুরোনো স্মৃতি সব ভিড় করে। ধীমানদা পাশের ডেস্ক-এ বসত আর হেসে বলত রুপক একটা সময়ের পর বুঝবি সব গরুই গোয়ালের খাবার খায়। রাত্তিরের খাবারের সাথে গোবর একটু লাগবেই। গোবরটাই শুদ্ধি।
লাজুক হেসে এড়িয়ে গিয়েছে সেসময় ধীমানদার কথা। বাম রাজনীতির ফসল সে। কলেজ লাইফেই স্টুডেন্ট পলিটিক্স। তারই হাত ধরে অরুনিমার সাথে প্রেম। পরিনতি পলিটিক্স-এর দাদাদের হাত ধরে এই আবগারি দফতরে চাকরি। প্রায় উড়তে-উড়তে এসে অরুনিমার হাত ধরে বলেছিল - চাকরিটা হয়ে গেছে। এবার দুজনে সংসার! তখনও রুপক সংসারের কেঠো-মেঠো রুপটি নজর করেনি। নজর করেনি বাপির ঘাড় নুয়ে যাওয়া সংসারের জোয়াল বইতে-বইতে। বাপি প্রণাম করে বলতে শুকনো হেসে বলেছিল - আমি ভেবেছিলাম তুই ল-পাশ করে ওকালতি করবি। স্বাধীন হবি। একটু হাঁফ ছেড়ে বলে - যাক বিধাতার লিখন কে খন্ডায়।
চাকরির পর বিয়ে। বিয়ের পর ট্রান্সফার। এই জলপাইগুড়ি শহরে এসে বসা। সেখানেই ধীমানদার সাথে আলাপ। বেশ সদালাপী মানুষ ছিল। হঠাৎ অফিসে এসে বলল, " বুঝলি চাকরিটা ছেড়েই দিলাম।"
কি করবে?? কি করে চলবে ??
একলা মানুষ ঠিক চলে যাবে। এবার শুরু করব সমাজসেবা।
মানে!
পলিটিক্স। বুঝলি না। সুদিন দাদার হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কাউন্সিলার হতে হবে।
তাতে তোমার কি হবে?
দেখ, আমার তো একটা প্রাণ। বিশবছর সার্ভিস হয়ে গেছে। পেনশন পাব।
কিন্তু তুমি কি ঐ খিস্তি-খেউড়েদের মাঝে থাকতে পারবে?
তোকে বলেছি না রাত্তিরের গোবরটাই শুদ্ধি। মানুষের জন্য কাজ করব এটা কি বড় কথা নয়?
মানুষের জন্য কাজ কি আজ কোনোও নেতা করে?
করে রে বাবা করে। এই তো সুদিনদা কত মানুষের জন্য প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছে দিন-রাত।
রুপকের কাছে এর জবাব নেই। তবে পাল্টা চাল চেলে বলে - দাও না তোমার সুদিনদা কে বলে আমার ট্রান্স্ফারটা করিয়ে। বাড়ি ফিরে যায়। কতদিন কলকাতায় নন্দনে যায় নি, অ্যাকাদেমিতে থিয়েটার দেখিনি...
সুদিনদা দেখেছিল, ধীমানদাদা কেও দেখেছিল। সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় নি।
আজ প্রায় বছর পনেরো বাদে ধীমানদাদা কাউন্সিলার পদ ছাপিয়ে অনেক পথ এসেছেন। রাজ্যের রাজপাট-এর বদল হয়েছে। বাম-ডান সব বদলে ডান-বাম মিলমিশ খেয়ে গেছে। এখন ধীমানদাদা মন্ত্রী। রুপক তার বিভাগ বদল করে ধীমানদাদার আপ্ত-সহায়ক! কোথায় লেনিন-মার্কস বিলাপ করে তার ঠিক নেই তবে রুপকের কমিউনিজ্ম কাপড় পাল্টে কনজিমারিজ্ম-এর তত্তে বদলেছে। সময় রুপককে শিখিয়েছে ডান-বাম মিলেমিশে সবই ভাম!!!
অরুণিমা এখন শাড়ি ছেড়ে জিন্স-এ না এলেও রঙ-বেরঙা চকচকে রুপসজ্জার ভান্ডারে উপস্থিত হয় মেয়েকে সাথে নিয়ে। ছেলের বায়নাক্কার শেষ নেই। মোটরবাইক কোম্পানির ঝকঝকে বিজ্ঞাপনের দৌলতে রুপকের পকেটের ভাঁড়ারে টান পড়েছে। পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে এক-কামরার ফ্ল্যাট, সেখান থেকে এখন তিন-কামরা! সরকারি ভান্ডারের থেকে তিন-কামরার ফ্ল্যাট ভাবাটাই অন্যায় হলেও ধীমানদাদার কল্যানে সবই সম্ভব হচ্ছে।
প্রাণ হাঁসফাঁস করত শুরুতে এইসবের মাঝে। রাত্তিরের ঘুম উড়ুউড়ু প্রায়। অরুণিমা বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে রাত্তিরে সোহাগ করতে-করতে বলে - সবাই সুযোগ পায় না। তুমি পেয়েছ বাগিয়ে নাও। পাতলা ফিনফিনে নাইটির ফাঁক দিয়ে নরম শরীরে ডুব দেবার নেশায় ভুলে যায় কমিউনিজম-এর সব তত্ত। কোথায় হারিয়ে কে জানে!
লাইসেন্সরাজের কল্যানে অনেককিছুই হারিয়েছে, বিবেকটাও যাবে ভাবে নি। বিবেকবতী অরুণিমা'র মনের পরিবর্তন তাদের সংসারে সাচ্ছন্দ-সুখ সব এনেছে। আমদানী হয়েছে রুপকের নতুন নেশা - টাকার নেশা। ফকটাই টাকার নেশা!!!
থার্ড-ফ্লোরের এসে সিঁড়িতে দাড়ায় রুপক। কলিং বেল-এ হাত রাখে। দরজায় বেল বাজতেই আলোর রোশনাই দেখে মনে পড়ে মেয়ের জন্মদিন। সকালেই আবদার জুড়েছিল - বাপি প্লিজ তাড়াতাড়ি রিটার্ণ কোরো।
মেয়ের মাথায় তখন হাত রাখে, কিন্তু বলা আর হয় না - কি করে আসব ক্লায়েন্ট মিট বাড়ছে যে! রাত তো হবেই।
রাত গভীর হয়, মন গভীরতা খোঁজে শরীরের খাঁজে। অরুণিমা'র শরীরের হলকায় জ্বলতে-জ্বলতে মিলতে-মিলতে হারিয়ে যায় রুপকের বিবেক নরম মসৃণ শরীরে।
চিন্তার-চেতনার-চৈতন্যের গোবর শুদ্ধি!!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×