somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিখ্যাত লেখকের গল্প চুরি করা সত্বেও, মুরাদ পারভেজ পেলেন শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাংলাদেশী হিসেবে ১৬ কোটি জনতা পেল লজ্জা।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'বৃহন্নলা' চলচ্চিত্র, সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের 'গাছটা বলেছিল' এবং মুরাদ পারভেজের চুরি বিদ্যা।
-
প্রচলিত প্রবাদ আছে- "চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ে ধরা"। কিন্তু চোরকে ডেকে নিয়ে চুরি কর্মের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করার মত ঘটনা আগে কখনো শুনেছি বলে ঠিক মনে করতে পারি না। কিন্তু সেটাই হতে চলেছে। বেশ কিছুদিন আগেই আমি আপনাদের জানিয়েছিলাম যে, বৃহন্নলা সিনেমার গল্পটি সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের 'গাছটি বলেছিল' ছোট গল্প থেকে সচেতন ভাবে চুরি করা। আসুন এবার তথ্য প্রমান সহ তার সত্যতা বিচার করি।
আজ একটি সংবাদের মাধ্যমের বরাতে জানতে পারি বৃহন্নলা চলচিত্রটি একাধারে সংলাপ, কাহিনী এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র তিনটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য একটি শ্রেষ্ঠ সংবাদ। কেননা আমি এই চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালকদের একজন। কিন্তু একটি চুরি কর্মের সাথে যুক্ত ছিলাম ভাবলেই আজ লজ্জা হচ্ছে। যে কাহিনীর জন্য সো-কল্ড শিল্পী মুরাদ পারভেজ Murad Parvez আজ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন সেটা লেখার মত যোগ্যতা বা দার্শনিক গভীরতা তার আছে কি না সেটা ক্ষতিয়ে দেখার দাবী রাখে।
গেল বছর ভারতের জয়পুর চলচ্চিত্র উত্সবে বৃহন্নলা পুরস্কৃত হলে ঘটনাটা সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের পরিবারের দৃষ্টিগোচর হয়। সেই সময় সৈয়দ মুস্তফা ফিরাজের কনিষ্ঠ পুত্র সাংবাদিক Amitabha Siraj অমিতাভ সিরাজ The times of India তে "Bangla director lifted father's story: Mustafa Siraj's son" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লিখেন। এর পরেই পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রের প্রাণকেন্দ্র টালিগঞ্জে পাড়ায় বিতর্কের ঝড় ওঠে। যেসময় দুই বাংলার সিনেমাকে একই সুতোয় বাধার জন্য আপ্রাণ চেস্টা চালানো হচ্ছে সেই সময় বাংলাদেশের কোন পরিচালকের এই নির্লজ্জ কাজকে বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে দেখছে সেটা জানার জন্য তারা খুব উত্সুক হয়ে ওঠে। ভারতে প্রকাশিত সেই The times of India এর কয়েক কপি বাংলাদেশেও উড়ে গিয়েছিল কিন্তু বৃহন্নলা সিনেমার নায়িকা, মুরাদ পারভেজের সহধর্মিনী Sohana Saba সোহানা সবার হস্তক্ষেপে তা মিডিয়ায় ধামাচাপা দেওয়া হয়। ফলে মুরাদের এই চুরির তথ্য থেকে যায় সকলের অগোচরে।
মুরাদের প্রথম সিনেমা 'চন্দ্র গ্রহণ' ও প্রয়াত লেখক সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের গল্প অবলম্বনে করা হয়। কিন্তু চন্দ্র গ্রহণ টিমের অনেকের মুখেই শুনেছি যে লেখককে প্রাপ্ত সম্মানী থেকে পরিচালক বঞ্চিত করেছেন। গতকাল সকালে বেক্তিগত উদ্যোগেই গিয়েছিলাম লেখকের পার্ক সার্কাসের বাড়িতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি আরো অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনা। সৈয়দ মুস্তফা সিরাজের কন্যা নাইনা সিরাজের @Nina Siraj বক্তব্য অনুসাতে, লেখক বেচে থাকতে কখনোই বাংলাদেশ তার বাবাকে মূল্যায়ন করেনি। আজ অব্ধি কেউ কখনো তার বাবার কোন বই ঢাকা বইমেলায় নিয়ে যায়নি। কিন্তু বাবা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ছিলেন প্রচন্ড দুর্বল। তাই মুরাদ যখন এসে বাবার হাতে পায়ে ধরে তখন বাবা তাকে চন্দ্র গ্রহণ সিনেমা করার অনুমতি দেয়। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরে (২০১২) সে আর কখনোই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। বাবার গল্প চুরি করে কেন সে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার মত সাহস দেখালো সেটা ভাবলে আমি অবাক হই।
অনেকটা অভিমানের সরেই লেখক কন্যা বলেন- "কিছু মনে কর না ভাই। বাংলাদেশ বা বাংলাদেশী টপিকে কথা বলার মত রুচী আমাদের আর নেই। নেহাতই তুমি দূরদেশ থেকে এসেছ তাই তোমার সাথে আলাপ করছি। অন্যথায় বাংলাদেশী হিসেবে তোমার সাথে আমার আলাপ করার কোন ইচ্ছা নাই।"
পশ্চিম বঙ্গের পাঠক অঞ্জলি দাস বলেন- " এখন তাহলে শুধু সাহিত্য সৃষ্টি করেই লেখকের দায় ফুরোবার নয়, নিজের সৃষ্টিকে পাহারা দিয়ে রাখতে হবে ! !" অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা বোর্ডের ফর্মার সেক্রেটারি সুদিন চক্রবর্তী অমিতাভ সিরাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন- "ছেড়ে দেবেন না। বৌদ্ধিক সৃষ্টির দুনিয়ায় রাহাজানির ক্ষমা নেই।"
-
একটি বিষয় ভেবে আমি খুব অবাক হয়েছি। যারা সিনেমা দেখে, সিনেমার অনুদান দেয়, সিনেমার সেন্সর করে, সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার দেয় তারা কি বাংলা সাহিত্য পড়ে না?? নাকি প্রটোকলের খাম আর ফাইলের তলায় বিবেক আজ হারিয়ে যেতে বসেছে??
যারা মুস্তফা সিরাজের 'গাছটি বলেছিল' গল্পটি পড়েছেন তাদের কাছে অন্তত পরিস্কার যে সিনেমার নামকরণ (বৃহন্নলা) করাও হয়েছে গল্পের ভেতর থেকেই। শুধু মাত্র সিনেমার শেষে একটু পরিবর্তন দেখা যায়। তাও সেটা শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহের Uttam Guha পরামর্শে। গল্পের শেষে দেখা যায় হিন্দু মুসলিম উভয়ে গাছটাকে কেন্দ্র করে দাঙ্গায় জড়িয়ে যায়। আমি যখন প্রথম স্ক্রিপ্ট হাতে পেয়েছিলাম সেখানেও এই একই দৃশ্য ছিল। কিন্তু শুটিং শুরু হওয়ার কয়েকদিন পরে উত্তম গুহ, পরিচালকে পরামর্শ দেন যে, "তুমি যদি শেষ দৃশ্যে দাঙ্গা দেখাও তা হলে সেন্সরে আটকে যাবে সিনেমাটা। কেননা শেষ পর্যন্ত সিনেমাটা ধর্মীয় দাঙ্গাকে প্রমোট করছে। তুমি বরং এখানে সম্প্রীতি দেখাও"। উত্তম গুহের পরামর্শে শেষ দৃশ্যটি মূল গল্প থেকে ভিন্ন হয়। এবং এই শেষ দৃশ্যর কারণেই বাংলাদেশী অনেক সমালোক ও দর্শক সিনেমাটির শেষ দৃশ্যকে এনজিও বাজি বলে আক্ষা দিয়েছেন। এছাড়া মূল গল্পের সাথে সিনেমার গল্পের কোন পার্থক্য নাই (প্রথম কমেন্ট বক্সে মূল গল্পের লিংক দেওয়া হল).
এতোকিছুর পরেও যদি কাহিনীকার হিসেবে একজন চোরকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয় তা হলে আজকের পর থেকে এই পুরস্কারের আর কোন মূল্য থাকবে না। শুটিং চলা কালীন সময় আমার অভিজ্ঞতা ভয়ংকর। সেগুলো বলতে গেলে লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই শুধু এতটুকু বলি যে, মুরাদের ভাষ্য মতে- "সারাজীবন সিনেমা বানিয়ে তারেক মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলামরা যে কয়টা জাতীয় পুরস্কার পায়নি, সেরখানে সে মাত্র দুটো সিনেমা বানিয়েই বাংলাদেশের সিনেমার ভাগ্য বিধাতা হয়ে গেছে"। আবার তারেক মাসুদের মাটির ময়না ফ্রান্সের মানুষরা এসে বানিয়ে দিয়ে গেছে, তানভীরের সিনেমা কোন সিনেমা হয় না, রাইসুল ইসলাম আসাদ অভিনয়ের 'অ' জানে না বলে তাকে বাদ দিয়ে আরজ আলী চরিত্রের জন্য পাভেল ভাইকে নেওয়া হয়েছে বলেও বিবৃতি দিতে আমি নিজ কানে শুনেছি। বাকিটা জানতে হলে বৃহন্নলা টিমের অন্যদের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
লেখাটা কিছু সংখ্যক সম্মানিত মানুষকে ট্যাগ করে বিরক্ত করার জন্য দুঃক্ষিত। কিন্তু আমি মনে করি একজন নষ্ট পরিচালকের কুকর্ম সম্পর্কে সকলে অবগত করা আমার দায়িত্বের মাঝেই পরে। আশা করি বিরক্ত করার জন্য সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০৭
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×