somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের ২০টি বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের জবাব (ডা: জাকির নায়েক এর লেকচার): পর্ব ৪

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৪.ইসলাম কি তলোয়ারের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছে ?
প্রশ্নঃ ইসলামকে কিভাবে শান্তির ধর্ম বলা যাবে যেখানে তা প্রচার ও প্রসার হয়েছে তলোয়ারের মাধ্যেমে?


জবাব
কিছু অমুসলিম এটা একটা সাধারণ অভিযোগ যে, সারা বিশ্ব জুড়ে ইসলাম এত কোটি কোটি অনুগামী পেতে পারতো না, যদি না তা- শক্তি প্রয়োগে প্রসারিত হতো। নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেবে, যা তলোয়ারের মাধ্যমে প্রসারের অভিযোগ থেকে অনেক দূরে। এটা ছিল সত্যের সহজাত শক্তি, সঙ্গত কারণ ও মানব প্রকৃতি সম্মত যৌক্তিকতা যা এক দ্রুত ইসলামের প্রচার ও প্রসারের বাহন হয়েছে।


ক. ইসলাম মানে শান্তি
ইসলাম এসেছে মূল শব্দ ‘সালাম’ থেকে। যার অর্থ শান্তি। এর আরো একটি অর্থ হলো নিজের সম্পূর্ণ ইচ্ছা-শক্তিকে আল্লাহর প্রতি সমর্পিত করা। এভাবে ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, যা অর্জন করা যায় সৃষ্টিকর্তা বিধাতা প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছাকে আন্তরিক নিষ্ঠার সাথে সমর্পিত করে দিলে।


খ. শান্তি বজায় রাখতে কখনো কখনো শক্তি প্রয়োগ করতে হয়
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুকুলে নয়। এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যারা তাদের নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এর বিগ্ন ঘটায়। এসব ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য শক্তি ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য দেশে অপরাধী ও সমাজ বিরোধদের দমন করার জন্য সুনর্দিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সুসজ্জিত বাহিনী আছে। যাদের আমরা ‘পুলিশ’ বলি। ইসলাম শান্তির প্রবর্তক। একই সাথে তার অনুগামীদের উদ্বুদ্ধ করে জুলুম, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। জালিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কোনো কোনো সময় শক্তির প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ইসলাম কেবল মাত্র মানুষের সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ভারসাম্যপূর্ণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দেয়।


গ. ঐতিহাসিক ডি ল্যাসি ওলেরীর মন্তব্য
বিশ্ববরণ্য ঐতিহাসিক ডি ল্যাসী ওলেরী’ লিখিত “ইসলাম আট দা ক্রস রোড” গ্রন্থের অষ্টম পৃষ্ঠায় যে মন্তব্য তিনি করেছেন তাতে “তরবারীর সাহায্যে ইসলাম প্রসারিত হয়েছে” এই ভ্রান্ত ধারণায় যারা নিমজ্জিত-তাদের জন্য দাঁত ভাঙ্গা জবাব।

“অবশেষে ইতিহাসই একথা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করল যে, ধর্মান্ধ মুসলমানদের কাহিনী হলো পৃথিবীর এক প্রান্ত পর্যন্ত তারা ঝেঁটিয়ে বেরিয়েছে আর বিজিত জাতিগুলোকে তরবারীর অগ্রভাগে রেখে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছে। এটা অনেক গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কল্পনা প্রসূত, উদ্ভট ও অবাস্তব কাহিনী-যা ঐতিহাসিকরা খুব বেশি পুনরাবৃত্তি করেছে”।


ঘ. মুসলমানরা আটশত বছর স্পেন শাসন করেছে
প্রায় আট’শ বছর স্পেন শাসন করেছে মুসলমানরা। সেখানে মানুষকে ‘তরবারীর শক্তি প্রয়োগ করে ধর্মান্তরিত করেছে’ -এমন কথা চরম শত্রুও বলতে লজ্জা পাবে। আর খ্রীস্টান ক্রুসেডাররা স্পেনে এসে সেই মুসলমানদেরকেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। অবশেষে এমন একজন মুসলমান স্পেনে ছিল না যে তার নামাযের জন্য প্রকাশ্যে আযান দিতে পারত।


ঙ. ১৪ মিলিয়ন আরব মিশরীয় খ্রীস্টান
সমগ্র আরব ভুখন্ডে এক হাজার চারশ বছর মুসলমানরাই ছিল মালিক, মনিক, শাসক। এর মধ্যে সামান্য কিছু বছর ব্রিটিশ এবং আর কিছু বছর ফরাসীরা দখলদারিত্ব করেছিল। সর্বোপরি মুসলমানরা যদি তরবারী ব্যবহার করত তাহলে একজন খ্রীস্টানও কি সেখানে এখন খুঁজে পাওয়ার কথা ?


চ. ভারতে ৮০% এর বেশি অমুসলিম
মুসলমানরা ভারত শাসন করেছে প্রায় আটশ বছর। যদি তারা চাইতো তাহলে তাদের সেই রাজ-শক্তি ও ক্ষমতার বল প্রয়োগ করে ভারতের প্রতিটি অমুসলিমকে ধর্মান্তরিত করে নিতে পারতো। অথচ শতকরা আশি ভাগেরও বেশি অমুসলিম আজো ভারতেই আছে। এদের প্রতিটি অমুসলিম আজ সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বহন করছে যে, “ইসলাম তরবারীর সাহায্যে প্রসারিত হয়নি।”


ছ. ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া
ইন্দোনেশিয়া একটি দেশ। পৃথিবীর সর্বোচ্চ-সংখ্যক মুসলমান সেখানে বাস করে। মালয়েশিয়ায় জনসংখ্যার অধিকাংশ মুসলমান। কেউ একজন প্রশ্ন করতে পারে, কোন মুসলিম সেনাবাহিনী ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল?


জ. আফ্রিকার পূর্বপ্রান্ত
একই ভাবে ইসলাম অত্যন্ত দ্রুততার সাথে আফ্রিকার পূর্বতীরে বিকাশ লাভ করে। কেউ একজন আবারো প্রশ্ন করতে পারে, ইসলাম যদি তরবারীর অগ্রভাগ দিয়েই প্রসারিত হয়ে থাকে তাহলে আফ্রিকার পূর্বতীরে কোন মুসলিম বাহিনী তরবারী নিয়ে গিয়েছিল?


ঝ. থমাছ কারলাইল
বিশ্ববরেণ্য ঐতিহাসিক থমাস কারলাইল তার রচনা ‘হিরোয এন্ড হিরো ওরশিপ’ গ্রন্থে ইসলামের বিকশিত হওয়া নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা সেই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-“তরবারী, কিন্তু কোথায় পাবে তুমি তোমার তরবারী? প্রত্যকটি নতুন ‘মত’ তার শুরুতে সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট হয়- এক জনের সংখ্যালঘুত্বে। মাত্র একজন মানুষের মাথায়। সেখানেই তা থাকে। সারা পৃথিবীর একজন মাত্র মানুষ তা বিশ্বাস করে, অর্থাৎ সকল মানুষের বিপক্ষে মাত্র একজন মানুষ। একখানা তরবারী সে নিল এবং তা দিয়ে তা (তার চিন্তা) প্রচার করতে চেষ্টা করল। তাতে তার কোনো কাজ হবে কি? তোমার তরবারী তোমাকেই খুঁজে নিতে হবে! মোট কথা একটি জিনিস নিজে নিজেই প্রচারিত হবে যেমনটা তার ক্ষমতা আছে।”


ঞ. দ্বীন নিয়ে কোন জবরদস্তী নেই।
কোন তরবারী দিয়ে ইসলাম বিকশিত হয়েছে? এমনকি সে তরবারী যদি মুসলমানদের হাতেও থাকতো তাহলেও তারা তা ইসলাম প্রচারের জন্য ব্যবহার করতে পারত না কারণ তাদের হৃদয় স্পন্দন আল কুরআন বলেছেঃ

(আরবী)----------------------

দ্বীন নিয়ে কোনো জবরদস্তি নেই। সকল ভ্রান্তি-বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা থেকে সরল-শুদ্ধ সত্য-পথ স্পষ্ট করে দেয়া আছে।


ট. জ্ঞান ও প্রজ্ঞার তরবারী
তা ছিল চেতনা ও জ্ঞানের তরবারী, যে তরবারী মানুষের হৃদয় ও মন অন্তরকে জয় করেছে। জ্যোতীর্ময় কুরআনের সূরা নাহলে বলা আছেঃ

আরবী-------------------

আহবান করো সকলকে তোমার বিধাতা প্রতিপালকের পথে- পান্ডিত্যপূর্ণ সুন্দরতম বাগ্মীতার সাথে। আর যুক্তি প্রমাণ দিয়ে আলোচনা করো তাদের সাথে এমনভাবে, যা সর্বোত্তম (এবং সে আহবান হতে হবে এমন হৃদ্যতাপূর্ণ যেন কোন পাষাণ হৃদয়ের কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হয়)। (১৬:১২৫)


ঠ. ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত পৃথিবীতে ধর্ম বর্ধিষ্ণুতার
১৯৮৬ সালের রীডার্স ডাইজেস্টের ‘এলমানাক’ সংখ্যার একটি তথ্য সমৃদ্ধ প্রবন্ধে- পূর্বের অর্ধ শতাব্দীতে প্রধান প্রধান ধর্মসমূহের বর্ধিষ্ণুতার হার সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। প্রবন্ধটি “প্লেইন ট্রুথ” মাগ্যাজিনেও প্রকাশিত হয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে ইসলাম-যা বেড়েছে ২৩৫% হারে। এখানে একজন প্রশ্ন করতে পারে, কোন যুদ্ধ অবস্থান নিয়েছিল এ শতাব্দীতে যা কোটি কোটি মানুষকে ধর্মান্তরীত করে মুসলমান বানিয়েছিল?


ঢ. আমেরিকা ও ইউরোপে ‘ইসলাম’ দ্রুততম বর্ধিষ্ণু ধর্ম
আজকের দিনে আমেরিকায় দ্রুততম বর্ধিষ্ণু ধর্ম ‘ইসলাম’। মুসলমানের সংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে ইউরোপেও। শক্তি ও বিকশিত সভ্যতার অহংকারে চীৎ হয়ে থাকা পাশ্চাত্য সভ্যতার এই সব সু-সভ্য মানুষকে এত বিরাট সংখ্যায় ইসলাম গ্রহণ করতে কোন তরবারী বাধ্য করছে?


ড. ডক্টর জোসেফ এডাম পিয়ারসন
ডক্টর জোসেফ এডাম পিয়ারসন যথার্থই বলেছেন, যারা আশঙ্কা করছে আনবিক বোমা কোনো একদিন আরবদের হাতে এসে পড়বে। তারা উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, ইসলামী বোমা ইতিমধ্যেই ফেলে দেয়া হয়েছে। এটা পড়েছে সেদিন যেদিন মুহাম্মদ (স) জন্ম নিয়েছিলেন।

পর্ব ৩

পর্ব ২

পর্ব ১
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×