somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের রেলগাড়ি থেমে গেছে

১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ দেশের শ্রমিক আন্দোলেনের পুরোধা, আজীবন বিপ্লবী, মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামে নিজের জীবনকে যিনি উৎসর্গ করেছেন, তেমনই একজন ব্যক্তিত্ব কমরেড জসীমউদ্দীন মণ্ডল। শ্রমিক শ্রেণীর রাজনীতি করতে এসে যিনি দীর্ঘ ১৯ বছর কারা-নির্যাতন ভোগ করেছেন। শ্রমিক শ্রেণীর যে পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি এতে প্রকৃতপক্ষে যারা শ্রমিক হিসেবে নিজেদের জীবন শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হতে পেরেছিলেন তিনি তাদের মধ্যেও তিনি অন্যতম। যে কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমির শ্রেণীর পার্টির নেতৃত্ব দেন সে পার্টিতে খাস শ্রমিক হয়ে তিনি লড়েছেন অন্যার, অবিচার আর সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে। পরবর্তীতে পার্টি তাঁকে যথার্থ মূল্যায়ন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। গত ২ অক্টোবর প্রায় ৯৫ বছর বয়সে এই মহান বিপ্লবী ঢাকার হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। নিজের কাছেই তার সঠিক জন্ম তারিখ জানা নেই। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘মা বলতেন, সেই যে দুনিয়া জুড়ে যুদ্ধ শুরু হলো, তার ঠিক দশ বছর পর তোর জন্ম। তার থেকেই আন্দাজ করতে পারি, ১৯১৪ সাল থেকে দশ বছর পর অর্থাৎ ১৯২৪ সালে এই পৃথিবীর আলোর মুখ আমি দেখি।’ প্রায় ৯৫ বছর বয়সী আজীবন এ বিপ্লবী কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার হৃদয়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর এক ছেলে পাঁচ মেয়ে। ছেলেটি গত বছরই মারা গেছেন। এক বিধবা মেয়ে তাঁর সাথেই থাকেন। দৌলতপুরে বাপ-দাদার ভিটে থাকলেও তিনি পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতেই রেলের জায়গায় লিজ নেয়া জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেছেন। সেখান থেকেই তিনি রেল শ্রমিকদের সংগঠিত করেছেন; গড়ে তুলেছেন কমিউনিস্ট পার্টির সাচ্চা কর্মী বাহিনী। আমৃত্যু তিনি বিশ্বাস করতেন, এদেশে একদিন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে। আর মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির পতাকা সেই লালঝাণ্ডা পত পত করে উড়বেই উড়বে। বিপ্লবীদের মৃত্যু নেই। বিপ্লব চিরঞ্জিব।
এই কিংবদন্তী চির বিপ্লবীর সংগ্রাম মুখর জীবনে নানা ধরনের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে জীবনের কঠিন থেকে কঠিনতরো সময় অতিক্রম করতে হয়েছে। জেল জীবনে তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন নেমে এসেছে। তার পরেও পার্টির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। আজীবন বিপ্লবী এ শ্রমিক নেতা শ্রমিকদের তার শ্রেণির পেশা, তার জীবনের লক্ষ্য এমন কি রাজনৈতিক দীক্ষা দিয়েছেন বাস্তবতার নিরীখে। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া করার সুযোগ হয়েছিল এ বিপ্লবীর। কিন্তু তিনি মার্কস-এঙ্গেলসের রাজনৈতিক দর্শন, শ্রেণিসংগ্রাম এবং মুক্তির অলঙ্ঘনীয় পথ সমাজতন্ত্রের মূলমন্ত্র ঠিকই রপ্ত করতে পেরেছিলেন। পেরেছিলেন আত্মস্থ করতে। আর তার ফলেই তিনি শ্রমিক জনসভাগুলোতে যখনই বক্তৃতা করতেন। জীবন থেকে কুড়িয়ে পাওয়া অভিজ্ঞতার নিরিখে বক্তব্য রাখতেন। সহজভাবে মার্কসের ব্যাখ্যা দিতেন স্বল্প শিক্ষিত শ্রমিকদের মাঝে। সবসময় তিনি বলেন,‘এ অংক আপনাকে বুঝিতেই হইবে’। এ শ্রেণী সংগ্রামের অংক, সমাজ পরিবর্তনের অংক, সমাজতন্ত্রেই কেবল মেহনতি মানুষের মুক্তির যে অলঙ্ঘনীয় পথ রয়েছে তা তিনি তার ভাষায় ব্যাখ্যা করতেন। আর শ্রমিকরা মুহুর্মুহু সেøাগানে গগন বিদারী আওয়াজ তুলতেন। এ বিপ্লবীর কর্মমুখর জীবনের নানা দিক নিয়ে খুব কমই লেখা হয়েছে। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল, তাঁকে নিয়ে তাঁর জীবনের প্রথম সাক্ষাৎকার নেয়ার। তখন আমি সে সাক্ষাৎকারটি অধূনালুপ্ত ‘দৈনিক মাতৃভূমি’ জন্য পাঠালে তা ২৯ মে ১৯৯৯ তারিখে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। তখন পর্যন্ত সেই সাক্ষাৎকারটিই ছিল কমরেড জসীমউদ্দীন মণ্ডলের প্রথম কোন সাক্ষাৎকার। সেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তিনি তার সংগ্রামমুখর জীবনের নানা দিক নিয়ে যে কাজ করেছেন তারই কিঞ্চিৎ এ নিবন্ধে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
‘প্রতিদিন মিছিল দেখে দেখে আর স্লোগান শুনে শুনে তার মনে হতো এই ডাল ভাত কাপড় আর থাকার জায়গা হলে আর চাই কি! এরাই খাঁটি লোক, এরাই তাদের কথা বলে। তাকে এদের সাথেই থাকতে হবে। মনে মনে উৎসাহ বোধ করতেন মিছিলে যাবার জন্য। মাঝে মাঝে মিছিলের লোকজনও তাদেরকে ডাকতো,“এই খোকারা চলে এসো আমাদের মিছিলে”। আর কী অবাক ব্যপার, একদিন সত্যি সত্যি সন্মোহিতের মতো তিনি দল বেঁধে যোগ দিলেন লাল ঝাণ্ডার মিছিলে। প্লাকার্ড তুলে নিলেন দৃঢ় দুই হাতে। উঁচিয়ে ধরলেন লাল ঝাণ্ডা । তারপর থেকে শুরু হলো নিয়মিত মিছিলে যোগ দেয়ার পালা। মনে মনে নিজেকে কল্পনা করতে লাগলেন, লাল ঝাণ্ডার একজন বলিষ্ঠ সৈনিক হিসেবে। মিছিল ছুটতো ধর্মতলা আর বউবাজার ঘুরে মনুমেন্টের দিকে। মাঝে মাঝে থেমে চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে অনলবর্ষী বক্তৃতা দিতেন শ্রমিক নেতারা। সেসব বক্তৃতার কী তেজ! বুকের গভীরে ঢুকে রক্তে মাতম লাগিয়ে দিতো। প্রতিদিন মিছিলে যোগ দেয়ার পেছনে অবশ্য অন্য একটা কারণও ছিলো। ইংরেজ বিরোধী মনোভাব তার মধ্যে জেগেছিলো সেই ছোটবেলা থেকে, সেই ইংরেজদের প্রতি তার ক্ষোভ মেটাতেই তখন তিনি মিছিলে যেতেন। ভাবতেন, মিছিলে দাঁড়িয়ে অন্তত কিছু সময়ের জন্য অনায়াসে ইংরেজকে গাল দেয়া যায়। সমস্ত ভয়, সমস্ত সঙ্কোচ ধুয়ে মুছে যায় এই মিছিলে দাঁড়ালে। এই তো জীবন! এইতো তার আজীবনের প্রত্যাশা। ‘সংগ্রামী স্মৃতিকথা, ‘জীবনের রেলগাড়ি’ বইতে তিনি এভাবেই নিজের জবানীতে বয়ান দিয়েছেন। যা আবুল কালাম আজাদ এর অনুলিখনে ছাপা হয়েছে। (জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী সংস্করণ, ফেব্রুয়ারি ২০১২)।
কমরেড জসীমউদ্দীন ম-ল এর বাবা মৃত হাউসউদ্দীন ম-লের কলকাতা রেলে চাকরি করতেন। সেই ১৯৩৭ সালের কথা তার চোখের সামনে রাজনীতিবিদদের স্বদেশী আন্দোলন করতে দেখেছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করতে দেখেছেন। মিছিল মিটিং শুনতেন, কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য শুনতেন। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে, ব্রিটিশ গেলে অভাব দূর হবে। এভাবেই তিনি ১৯৪০ সালে শিয়ালদহ নারিকেলডাঙ্গাতে খালাসী পদে রেলের লোকোসেডে যোগদান করেন। তখন রেলে শমিকদের সংগঠনের নাম ছিল ‘রেল রোড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’। এর সভাপতি ছিলেন বীরেন দাশগুপ্ত আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পশ্চিশবঙ্গের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। রেল রোড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে যোগদানের কিছুকাল পরেই তিঁনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। সে সময় কমরেড মুজাফফর আহমেদ (কাকা বাবু), পিসি যোশি, এসএ ডাঙ্গ, নামবুদ্রিপাদ, বিটি রণদিভে প্রমুখ নেতার সাথে তাঁর কাজ করবার সুযোগ হয়েছিল। এসব নেতাদের সাহচর্যে এসে সহজেই তিনি নিজেকে বিপ্লবীর কাতারে মানিয়ে নিতে পেরেছেন। কারণ, শ্রেণী সংগ্রামের দীক্ষা যে তখনই তাঁদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। যা তিনি আজ অবধি সেই লাল ঝাণ্ডা আর মুক্তির পতাকা ধারণ করছেন বুকের গহীনে। অনেক নেতা তার চোখের সামনেই দল বদল করে চলে গেছে। তিনি দেখেছেন, কিন্তু নিজে অবিচল থেকেছেন মার্কসীয় দর্শনে, কমিউনিস্ট আন্দোলনে, শ্রেণিসংগ্রামের রাজনীতিতে।
কমরেড জসীমউদ্দীন মণ্ডল যৌবনের শুরু থেকেই তেজোদীপ্ত সাহসী যুবক ছিলেন। সেই ১৯৪২ সালে বিশ্বযুদ্ধ চলছে। সেসময় তিঁনি রেলে পদোন্নতি পেয়ে স্টিম ইঞ্জিনের ফারায়ম্যান হয়েছেন। ভারতের চিতপুর ইয়ার্ড থেকে সব ট্রেন উত্তরাঞ্চলে যেতো। তখন তারা চিন্তা করলো, এতোদিন বিট্রিশবিরোধী আন্দোলন করেছি। ব্রিটিশ খেদানোর জন্য বলেছি। আর এখন ব্রিটিশদের অস্ত্রের গাড়ি আর টানবো না। তাহলে জাপান বার্মা দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়বে। আমাদের দেশ স্বাধীন হবে, ব্রিটিশ পালাবে। সেদিন তাকে কে এফ স্পেশাল ট্রেনে ডিউটি দেয়া হয়েছিল। ৬০ খানা গাড়ির বগি নিয়ে আসে বোম্বে, মাদ্রাজ থেকে চিতপুর ইয়ার্ডে। এখানে ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হলো। ফলে সারা ভারতে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। সাত ঘন্টা ট্রেন ডিটেনশন হলো। সারা ভারতে হৈচৈ পড়ে গেল। এ খবর শুনে কমরেড মুজাফফর আহমেদ ছুটে এলেন। তিনি বোঝালেন তাদের এ আন্দোলন কমিউনিস্ট হয়ে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে হচ্ছে। ব্রিটিশ-রাশিয়া হেরে গেলে কমিউনিস্টরা হেরে যাবে। পরে কমরেড মোজাফফর আহমেদ বোঝানোর পর ট্রেন ছেড়ে দেয়া হলো।
তিঁনি তার জীবনের স্মরণীয় ঘটনাগুলোর মধ্যে হিন্দু-মুসলমানের রায়টকে কখনো ভুলতে পারেন না। হিন্দুরা ‘বন্দে মাতরম’ আর মুসলমানরা ‘নারায়ে তকবির’ করে একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট বেলা ১০টা হবে নিজের চোখের সামনে তিনি এসব দেখেছেন। সেদিন শিয়ালদহ থেকে সোজা রানাঘাট রেলগাড়ি নিয়ে আসার সময় কত জায়গায় যে রায়ট দেখেছেন তার হদিস নেই। দমদমে ও ব্যারাকপুরে গাড়িতে বোমা মারা হয়েছিলো। রেলের নির্দেশ ছিলো শিয়ালদহ থেকে রানাঘাটের মধ্যে কোথাও ট্রেন থামানো যাবে না। পথে হিন্দুরা গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো থামানোর জন্য। ওদের উপর দিয়ে ট্রেন চলে আসলো, আবার মুসলমানরা বুক পেতে দিলো গাড়ির সামনে থামানোর জন্য। ওদের উপর দিয়ে ট্রেন চালিয়ে নিয়ে আসলেন। এভাবেই হাজার হাজার লোককে আমরা ট্রেনে করে নিয়ে এসে বাঁচালেন। দেশ বিভক্ত হওয়ার পর অপশন দিলেন, ভারতে থাকার জন্য। কিন্তু তার দরখাস্ত শটিং করার সময় মুসলমান হিসেবে পাকিস্তানের দিকে রেখে দেয়। সেই থেকে তিনি তার প্রিয় দেশ এই বাংলাদেশে।
রেলে শ্রমিক ইউনিয়ন করতে যেয়ে তিনি অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মুখোমুখি হয়েছেন। অনেক বড় বড় আন্দোলনের নেতৃত্বের পুরোধায় ছিলেন এ আজীবন বিপ্লবী। ১৯৪৮ সালে রেলে তাদের রেশন চালের পরিবর্তে খুদ দেয়া হতো। আর এসব খুদ আনা হতো বার্মা থেকে। এ সময় তারা খুদের পরিবর্তে চালের জন্য লড়াই করেছেন। এ লড়াইয়ে তিনি ও দেলোয়ারসহ (১৯৫০ সালে রাজশাহী জেলখানার খাপড়া ওয়ার্ডে পুলিশের গুলিতে মারা যান) ছয়জন সিদ্ধান্ত নেন যে, এ খুদের পরিবর্তে চালের দাবিতে ট্রেন বন্ধ করে দিতে হবে। ব্যাস, যে কথা সে কাজ। আসাম থেকে মেইল ট্রেন চালিয়ে ঈশ্বরদীতে এনে বন্ধ করে দেয়া হলো। খবর ছড়িয়ে পড়লে রেল থেকে নির্দেশ দেয়া হলো, খুদের পরিবর্তে চাল দেয়ার। সেই থেকে রেশনে খুদের পরিবর্তে চাল দেয়া শুরু হলো, আর সেই অপরাধে তাঁকে ও দেলোয়ারকে ২১ সেপ্টেম্বর পুলিশ বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেল। তাঁদের উভয়ের জেল হলো এক বছরের। চাকরি গেলো। সাজা শেষে জেল গেট থেকে বের হতেই রাজবন্দী হিসেবে আবার গ্রেপ্তার করা হলো। একটানা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত জেলে কাটাতে হয়। সেই থেকে তাঁর জেলজীবন শুরু। শ্রমিক শ্রেণীর রাজনৈতিক দর্শন কায়েম করতে যেয়ে দীর্ঘ ১৯ বছর জেলজীবন কাটাতে হয়েছে এ আজন্ম বিপ্লবীকে।
কমিউনিস্ট পার্টিতে ৫ম কংগ্রেসের পর দল ভেঙে গেলে মধ্যবর্তী কংগ্রেসে জসীমউদ্দীন ম-ল ও সহিদুল্লাহ চৌধুরী পার্টির সভাপতি পদে প্রার্থী হন। দু’জনেই সমান সংখ্যক ভোট পান। জসীমউদ্দিন মণ্ডল ঢাকার বাইরে ঈশ্বরদীতে থাকেন বলে স্বেচ্ছায় তিনি এ পদ ছেড়ে দেন। তাঁকে সে সময় সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের ভাঙনে তিনি মোটেই বিচলিত হননি শুরু থেকেই। হতাশ হননি তিঁনি। বলেছেন, যারা মনে প্রাণে কমিউনিস্ট তারাই টিকে থাকবে। কারণ, সমাজতান্ত্রিক দেশে কমিউনিস্টদের ভেতর আবার জাগরণ দেখা দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছেন, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ট্রো শত বাধা বিপত্তির মুখেও পরাজয় মানেননি। বরং উল্টো সাম্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় সাময়িক।
রেলে চাকরী জীবন শুরু করে তিনি শ্রমিকদের বিপ্লবী চেনতায় গড়ে তুলেছেন। সংগঠিত করেছেন রেল শ্রমিক ইউনিয়ন। গড়ে তুলেছেন বিশাল কর্মীবাহিনী। এখনো রেল শ্রমিক ইউনিয়ন দাঁড়িয়ে আছে আন্দোলন সংগ্রামে। যা তাঁর নিজের হাতে গড়া সংগঠন। এখান থেকেই অনেক বিপ্লবীর জন্ম হয়েছে। সমুন্নত রেখেছেন শ্রমিক জাগরণের পতাকা, লাল ঝা-ার পতাকা। আজীবন এ বিল্পবী এখনো স্বপ্ন দেখেন একদিন এদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে। মেহনতি মানুষের পার্টি, শ্রমিক শ্রেণির পার্টি কমিউনিস্ট পার্টির পাতাকা পত পত করে উড়বেই। এ জন্য তরুণ সমাজকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আজন্ম এ বিপ্লবীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। এক সময় এ বিপ্লবীর সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হয়েছিল ভেবে আজও আনন্দ অনুভব করি। জসীমউদ্দিন ম-ল আপনি চিরঞ্জিব হয়ে থাকবেন। আপনার চিরদিনের লালিত্য স্বপ্ন স্বার্থক হোক। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের তুর্কি তরুণদের কাছে আপনি অনুপ্রেরণা উৎস ছিলেন। বিপ্লবীর মৃত্যু নেই। কমরেড লাল সালাম।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:২২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×