অনেকদিন ধরেই স্প্যাম ইমেইল পাচ্ছি না। ব্যাপারটা আমার জন্য অতিশয় হতাশাজনক।
প্রথম যখন ইমেইল আর ইন্টারনেট এর সাথে পরিচিত হই, তখনও আমার বন্ধুদের মাঝে ইমেইলের অত বেশি কদর ছিল না। তখন বন্ধুরা খালি মোবাইলে নেট কিনে mig33 তে চ্যাটে প্রেম করার ধান্দায় থাকত। ইমেইল করার ইচ্ছা কারও ছিল না। থাকবে কোত্তেকে ? ইন্টারনেটের প্রচার-প্রসারে তো আমাদের দেশের তেমন নামডাক নাই। ইন্টারনেট না থাকলে ইমেইল করবে কে, পড়বেইবা কেমনে?
যাহোক, আমাদের কম্পিউটার ল্যাব এ গিয়ে ইয়াহুতে একটা ইমেইল একাউন্ট খুললাম। পরে ওই ইমেইল দিয়ে ফেসবুকের আইডি খুললাম। প্রতিদিন ইমেইল চেক করি, কিন্তু ফেসবুকের একটা দুইটা ইমেইল ছাড়া আর কোন মেইল আসে না। আফসোস। ভাবলাম আরেকটা ইমেইল একাউন্ট খুলে নিজেকে নিজে ইমেইল পাঠাব, তারপর ইনবক্স খালি রাখব না। শেষমেশ তাই করলাম। আমার এখন দুইটা ইমেইল একাউন্ট, একটা থেকে আরেকটাতে মেইল পাঠায়ে জিজ্ঞেস করি কেমন আছি, ভাত খাইছি কিনা।
হঠাৎ একদিন দেখলাম আমি আমেরিকার ভিসা পাইছি। আমি তো খুশিতে নাচতে শুরু করলাম। পরে মনে হইল আবেদনই তো করলাম না, ভিসা কেমনে পাইলাম। ভাল করে পড়ে দেখলাম, লেখা আছে লটারিতে আমার নাম উঠছে, এখন ২০,০০০ টাকা দিলে ওরা প্রসেসিং শুরু করবে। আমার কাছে তখন ২০০ টাকাও ছিল না, ২০,০০০ টাকা দেয়ার কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে হাল ছেড়ে দিলাম। পরে শুনেছিলাম, আমাদের হলেও আরও কয়েকজনের নামও লটারিতে উঠছিল, তারাও কেউ যায় নাই। তখনও বুঝি নাই এইসব ইমেইল মাহাত্ম্য কি।
সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন যায়গায় ইমেইল আইডি দেয়া লাগছে, সেখান থেকেই হোক অথবা অন্য কোন উপায়ে হোক, একসময় দেখই আফ্রিকান রাজা-রানী- রাজকুমার-রাজকুমারীদের মধ্যে আমার ভালই জনপ্রিয়তা চলে আসল। প্রতি সপ্তাহেই আমি তাদের কাছ থেকে একটা দুইটা ইমেইল পেতে শুরু করলাম। যেটুকু বুঝলাম, ওদের অনেক টাকা, তারা তাদের সব টাকা দিয়ে দিতে চায়। ওদের টাকা আমার একাউন্টে আসার পর সেখান থেকে তাদের চা-পানি খাওয়ার জন্য কিছু বখশিশ দিলেই তাদের হয়ে যাবে।
প্রথম দিকে তাদের কথা ওভাবে বিশ্বাস হয়নি, মনে হইছে পাগলে পাইছে নাকি তাদের! এমনে এমনে কি আর কেউ কাউরে টাকা দেয়? আর আমার চেহারা যে তেমন সুন্দর তাও তো না, তার উপর ছেলেরা চেহারা দেখিয়ে তো কোন সুবিধা পায় না। তাহলে কেন আমাকে ফ্রীতে টাকা দেবে। দিয়ে আবার নিয়ে নেবেই বা কেন? তাদের যেটুক বখশিশ রাখা দরকার সেটুক রেখে বাকিটা আমাকে দিলেই তো পারে। এসব দোদুল্যমনা অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে এসব ইমেইল পড়া বাদ দিয়ে দিলাম। বাদ দিলেও বেশিদিন থাকতে পারিনি। যারা এত কষ্ট করে চিঠিগুলো লিখে তাদের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা থেকেই আবার পড়া শুরু করলাম। শুধু পড়তাম তা না, সময় নিয়ে ওদেরকে রিপ্লাই দিতাম। বলতাম টাকা পয়সার লোভে না, মানবিকতার খাতিরেই কথা বলা।
একবার চিঠি পাঠালো মুয়াম্মার গাদ্দাফির মেয়ে। অনেক মায়া লাগলো। আরেকবার চিঠি পেলাম নাইজেরিয়ান প্রিন্সের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট থেকে। তার চিঠিটা খুব আদর দিয়ে লেখা। তো আমিও আদর দিয়ে রিপ্লাই দিলাম, "এই মূহুর্তে আমার একাউন্টে ৫০০ মিলিয়ন ডলার গ্রহন করা সম্ভব না, কদিন আগেই গাদ্দাফির মেয়ের কাছে যে টাকা নিয়েছি, তাতে এফবিআই আমার একাউন্টের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে। ১০০ মিলিয়ন ডলার করে ৫ কিস্তিতে পাঠাতে পারলে আমার জন্য ভাল হয়।" মনে হয় আমার উত্তর তার মনে ধরে নাই, রিপ্লাইও দেয় নাই।
দিন কেটে যাচ্ছিল এসব করেই। ভালই যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ করে কি হল জানি না, আমার স্পাম ফোল্ডারে ইমেইল আসা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। প্রায় দুসপ্তাহ কেটে গেল, কেউ কোন খোঁজখবর নিচ্ছে না। সারাদিন চাকরির ইমেইলের রিপ্লাই দিতে দিতে একঘেয়েমি চলে আসে। কাজের ফাঁকে প্রিন্স-প্রিন্সেসদের সাথে যোগাযোগ করতে ভালই লাগত। সেই ভাল লাগাও উপরওয়ালার সইল না। দিনকাল আর ভাল লাগে না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৬:৫৮