somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্প্যাম ইমেইল

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন ধরেই স্প্যাম ইমেইল পাচ্ছি না। ব্যাপারটা আমার জন্য অতিশয় হতাশাজনক।
প্রথম যখন ইমেইল আর ইন্টারনেট এর সাথে পরিচিত হই, তখনও আমার বন্ধুদের মাঝে ইমেইলের অত বেশি কদর ছিল না। তখন বন্ধুরা খালি মোবাইলে নেট কিনে mig33 তে চ্যাটে প্রেম করার ধান্দায় থাকত। ইমেইল করার ইচ্ছা কারও ছিল না। থাকবে কোত্তেকে ? ইন্টারনেটের প্রচার-প্রসারে তো আমাদের দেশের তেমন নামডাক নাই। ইন্টারনেট না থাকলে ইমেইল করবে কে, পড়বেইবা কেমনে?
যাহোক, আমাদের কম্পিউটার ল্যাব এ গিয়ে ইয়াহুতে একটা ইমেইল একাউন্ট খুললাম। পরে ওই ইমেইল দিয়ে ফেসবুকের আইডি খুললাম। প্রতিদিন ইমেইল চেক করি, কিন্তু ফেসবুকের একটা দুইটা ইমেইল ছাড়া আর কোন মেইল আসে না। আফসোস। ভাবলাম আরেকটা ইমেইল একাউন্ট খুলে নিজেকে নিজে ইমেইল পাঠাব, তারপর ইনবক্স খালি রাখব না। শেষমেশ তাই করলাম। আমার এখন দুইটা ইমেইল একাউন্ট, একটা থেকে আরেকটাতে মেইল পাঠায়ে জিজ্ঞেস করি কেমন আছি, ভাত খাইছি কিনা।
হঠাৎ একদিন দেখলাম আমি আমেরিকার ভিসা পাইছি। আমি তো খুশিতে নাচতে শুরু করলাম। পরে মনে হইল আবেদনই তো করলাম না, ভিসা কেমনে পাইলাম। ভাল করে পড়ে দেখলাম, লেখা আছে লটারিতে আমার নাম উঠছে, এখন ২০,০০০ টাকা দিলে ওরা প্রসেসিং শুরু করবে। আমার কাছে তখন ২০০ টাকাও ছিল না, ২০,০০০ টাকা দেয়ার কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে হাল ছেড়ে দিলাম। পরে শুনেছিলাম, আমাদের হলেও আরও কয়েকজনের নামও লটারিতে উঠছিল, তারাও কেউ যায় নাই। তখনও বুঝি নাই এইসব ইমেইল মাহাত্ম্য কি।
সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন যায়গায় ইমেইল আইডি দেয়া লাগছে, সেখান থেকেই হোক অথবা অন্য কোন উপায়ে হোক, একসময় দেখই আফ্রিকান রাজা-রানী- রাজকুমার-রাজকুমারীদের মধ্যে আমার ভালই জনপ্রিয়তা চলে আসল। প্রতি সপ্তাহেই আমি তাদের কাছ থেকে একটা দুইটা ইমেইল পেতে শুরু করলাম। যেটুকু বুঝলাম, ওদের অনেক টাকা, তারা তাদের সব টাকা দিয়ে দিতে চায়। ওদের টাকা আমার একাউন্টে আসার পর সেখান থেকে তাদের চা-পানি খাওয়ার জন্য কিছু বখশিশ দিলেই তাদের হয়ে যাবে।
প্রথম দিকে তাদের কথা ওভাবে বিশ্বাস হয়নি, মনে হইছে পাগলে পাইছে নাকি তাদের! এমনে এমনে কি আর কেউ কাউরে টাকা দেয়? আর আমার চেহারা যে তেমন সুন্দর তাও তো না, তার উপর ছেলেরা চেহারা দেখিয়ে তো কোন সুবিধা পায় না। তাহলে কেন আমাকে ফ্রীতে টাকা দেবে। দিয়ে আবার নিয়ে নেবেই বা কেন? তাদের যেটুক বখশিশ রাখা দরকার সেটুক রেখে বাকিটা আমাকে দিলেই তো পারে। এসব দোদুল্যমনা অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে এসব ইমেইল পড়া বাদ দিয়ে দিলাম। বাদ দিলেও বেশিদিন থাকতে পারিনি। যারা এত কষ্ট করে চিঠিগুলো লিখে তাদের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা থেকেই আবার পড়া শুরু করলাম। শুধু পড়তাম তা না, সময় নিয়ে ওদেরকে রিপ্লাই দিতাম। বলতাম টাকা পয়সার লোভে না, মানবিকতার খাতিরেই কথা বলা।
একবার চিঠি পাঠালো মুয়াম্মার গাদ্দাফির মেয়ে। অনেক মায়া লাগলো। আরেকবার চিঠি পেলাম নাইজেরিয়ান প্রিন্সের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট থেকে। তার চিঠিটা খুব আদর দিয়ে লেখা। তো আমিও আদর দিয়ে রিপ্লাই দিলাম, "এই মূহুর্তে আমার একাউন্টে ৫০০ মিলিয়ন ডলার গ্রহন করা সম্ভব না, কদিন আগেই গাদ্দাফির মেয়ের কাছে যে টাকা নিয়েছি, তাতে এফবিআই আমার একাউন্টের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে। ১০০ মিলিয়ন ডলার করে ৫ কিস্তিতে পাঠাতে পারলে আমার জন্য ভাল হয়।" মনে হয় আমার উত্তর তার মনে ধরে নাই, রিপ্লাইও দেয় নাই।
দিন কেটে যাচ্ছিল এসব করেই। ভালই যাচ্ছিল। তবে হঠাৎ করে কি হল জানি না, আমার স্পাম ফোল্ডারে ইমেইল আসা একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। প্রায় দুসপ্তাহ কেটে গেল, কেউ কোন খোঁজখবর নিচ্ছে না। সারাদিন চাকরির ইমেইলের রিপ্লাই দিতে দিতে একঘেয়েমি চলে আসে। কাজের ফাঁকে প্রিন্স-প্রিন্সেসদের সাথে যোগাযোগ করতে ভালই লাগত। সেই ভাল লাগাও উপরওয়ালার সইল না। দিনকাল আর ভাল লাগে না।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৬:৫৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×