somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলায় বৌদ্ধধর্মের হারিয়ে যাওয়া এবং বাঙালী মুসলমানের শিক্ষা

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
- Nurunnabi



একসময় বাংলার মেজরিটি মানুষ ছিল বৌদ্ধ ধর্মালম্বী, বিশেষত পূর্ব বাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশ ছিল বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের শেষ আশ্রয়স্থল।উত্তর ভারতের তুলনায় বৌদ্ধরা ব্রাহ্মণদেরকে অনেক বেশি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ অঞ্চলে।বাংলাদেশটা ছিল শেষ প্রতিরোধস্থল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বৌদ্ধরাও হারিয়ে যায়।সংক্ষেপে বলতে গেলে বৌদ্ধ বাংলার এক অংশ (পশ্চিমবঙ্গ) হিন্দু মেজরিটি হয়ে উঠে আর আরেক অংশ (বাংলাদেশ) মুসলমান মেজরিটি হয়ে উঠে।অর্থাৎ বৌদ্ধ বাংলা হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়-উভয় বাংলাতেই বৌদ্ধরা হারিয়ে যায়।বৌদ্ধরা কিভাবে বাংলা থেকে হারিয়ে গেছে এবং সেখান থেকে বর্তমান বাংলাদেশের কি শিক্ষণীয় আছে সেই বিষয়ে আলোচনার আগে বৌদ্ধ ধর্ম কবে শুরু হয়েছে সে বিষয়ে খানিকটা তুলে ধরতে চাই।


বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে প্রচলিত মিথ্যা
ইসলাম ধর্মে যেমন বিশ্বাস করা হয় যুগে যুগে নবী-রাসুলরা এসেছিলো ঠিক তেমনি বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যুগে যুগে বুদ্ধারা এসেছিলো আর গৌতম বুদ্ধ হচ্ছে সেরকমই একজন বুদ্ধা, অর্থাৎ গৌতম বুদ্ধ এই ধর্মটির প্রতিষ্ঠাতা নন, শেষ প্রবক্তা মাত্র।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে গৌতম বুদ্ধ হচ্ছেন ২৪ তম বুদ্ধ।তিনি আরোও বলেন;

‘পশ্চিমাঞ্চলে যখন আর্যগণ যাজযজ্ঞ লইয়া ব্যস্ত, দেশ দখল করিতে ব্যস্ত, শ্রৌতসূত্র রচনায় ব্যস্ত, শূদ্রগণকে আয়ত্ত করিয়া তাহাদিগকে দাস করিয়া রাখার বন্দোবস্ত লইয়া ব্যস্ত, তখন পূর্বাঞ্চলে বঙ্গ-বগধ-চেরগণ পরকাল লইয়া ব্যস্ত, কিসে জন্মজরামরণের হাত এড়ানো যায় তাহাই লইয়া ব্যস্ত।পশ্চিমাঞ্চলে যেমন ঋষির পর ঋষি শ্রৌতসূত্র রচনা করিতেছিল; পূর্ব অঞ্চলে তেমনি তীর্থঙ্করের পর তীর্থঙ্কর, বুদ্ধের পর বুদ্ধ পরকালে কিসে সুখে থাকা যায় তাহারই উপায় দেখিতেছিলেন’ (হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বৌদ্ধধর্ম, পৃষ্ঠা ৩৭)।
গৌতম বুদ্ধের আরেকটা নাম হচ্ছে শাক্যসিংহ / শাক্যমনি। এই গৌতম বুদ্ধ বা শাক্যসিংহকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বানানোর কাজটা করেছেন হিন্দু ঐতিহাসিকরা ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে। তারা দেখাতে চেয়েছেন বৌদ্ধ ধর্ম হিন্দু ধর্মের তুলনায় নতুন। আবার একসময় হিন্দুরা গৌতম বুদ্ধকে নাস্তিক বলে গালি দিলেও উপনিবেশিক শাসনামলে গৌতম বুদ্ধকে হিন্দু ধর্মের অবতার হিসেবে দেখানো হয়েছে (বিস্তারিত দেখুনঃ গৌতম বুদ্ধের উপনিবেশিক নির্মাণ)।

‘শাক্যমুনি শেষ বুদ্ধ, জৈন ধর্মের মহাবীর শেষ তীর্থঙ্কর দু’জনেই এক সময়ের লোক। দু’জনেই খ্রিস্ট পূর্ব ছয় শতের লোক। সুতরাং দীপঙ্কর প্রভৃতি ২৪ জন বুদ্ধ আর ঋভষদেবাদি ২৪ জন তীর্থঙ্কর তাহাদের অনেক পূর্বে আবির্ভূত হইয়াছিলেন। অনেকে বলেন যে শাক্যসিংহের পূর্বে যে ২৩ জন বুদ্ধ হইয়াছিলেন, তাহারা মানুষ নন-বৌদ্ধরা আপনাদের ধর্মটা পুরানো, তাই দেখাইবার জন্যই ২৪ টা নাম করিয়া রাখিয়াছে। কিন্তু শাক্যসিংহের পূর্ববর্তী কনকমুনির খাম্বা পাওয়া গিয়াছে, যেখানে তাহার নির্বাণ লাভ তাহা স্থির হইয়াছে; তাহাকে মানুষ নয় বলা এখন কঠিন হইয়া দাঁড়াইয়াছে’ (হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বৌদ্ধধর্ম, পৃষ্ঠা ৩৭)।

ড. দীনেশ চন্দ্র সেন কনকমুনির জন্মের সময়কালকে খ্রিস্টপূর্ব ২০৯৯ বলে উল্লেখ করেছেন এবং কনকমুনি এবং গৌতম বুদ্ধের মধ্যখানে আরেকজন বুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন যিনি হচ্ছেন কাশ্যপ এবং সময়কাল হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ১০১৪ (ড. দীনেশ চন্দ্র সেন, বৃহৎ বঙ্গ, পৃষ্ঠা ৯১)। অন্যদিকে উত্তর পূর্ব ভারতের গঙ্গারাইড নামক প্রাচীন রাষ্ট্রে আর্য জাতির আগমন ঘটে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সনে (M. Abdul Mu’min Chowdhury, The Rise and Fall of Buddhism in South Asia, London, 2008, পৃষ্ঠা ৮৭)।

আর এই আর্য জাতির হাত ধরেই ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মের গোড়াপত্তন ঘটে। আমরা যদি গৌতম বুদ্ধের পূর্ববর্তী ২৩ জন বুদ্ধের কথা বাদ দিয়ে শুধু কনকমুনির কথাও ধরি তাহলেও দেখা যাচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশে বৌদ্ধ ধর্ম হিন্দু ধর্মের অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। অর্থাৎ, বৌদ্ধ ধর্মই হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম।

নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে আর্য জাতির আগমনের অনেক আগে থেকেই দ্রাবিড় জাতি এবং মঙ্গোলিয়ান জাতিগোষ্ঠীর আগমন ঘটে এই অঞ্চলে। আর্য-সেন্ট্রিক ঐতিহাসিকদের দাবি অনুযায়ী গৌতম বুদ্ধ নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে আর্য, কিন্তু তাদের এই দাবিটা পাথরে খোদাই করা গৌতম বুদ্ধের মঙ্গোলিয়ান অরিজিন ইমেজগুলির সাথে বৈপরীত্যের সৃষ্টি করে (M. Abdul Mu’min Chowdhury, পৃষ্ঠা ৬) ।

বৌদ্ধ ধর্ম হিন্দু ধর্মের পরে জন্ম হয়েছে, গৌতম বুদ্ধ নৃতাত্ত্বিক দিক থেকে আর্য, গৌতম বুদ্ধ হিন্দু ধর্মের অবতার ছিল- এই বয়ানগুলি নিয়ে আসা হয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আর্য-ব্রাহ্মণদের ‘অখণ্ড ভারত’ তত্ত্বের মাধ্যমে আধিপত্য ও দখলদারিত্বকে বৈধতা দেয়ার জন্য। মূলত ইরান এবং মধ্য এশিয়ার নানা অঞ্চল থেকে ভারতে হিন্দু ধর্মের প্রতিষ্ঠাকারী আর্য-জাতির আগমনের মাধ্যমে আগে থেকে বসবাসকারী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দ্বন্ধ-সংঘাত শুরু হয়।

পরের পর্বগুলোতে আমরা বাংলাদেশ এবং নিকটবর্তী অঞ্চলকে ফোকাস করে বৌদ্ধ-ব্রাহ্মণ্যবাদের ঐতিহাসিক দ্বন্ধ-সংঘাতের পর্যালোচনা পর্যবেক্ষণ করব এবং সেখান থেকে বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষণীয় বিষয়গুলোও বুঝতে চেষ্টা করব।

(চলবে)
সংগৃহীতঃমূলধারা বাংলাদেশ
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×