মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গত বছর থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা অপরাধের অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়। আর এরপর থেকেই তিনি নিজেও অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে নানা কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকেন। এমনকি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সঙ্গে সঙ্গে ২০১০ সালেই তিনি সহযোগিতা, স্বার্থরক্ষার অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেন। তাতে ব্যয় করেন ২৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
কে এই মীর কাসেম আলী?
নানামুখী ব্যবসা-বাণিজ্যে তিনি গড়ে তোলেন বিত্তের পাহাড়। কাসেমের সাত-পাঁচ খবর নিয়ে পাওয়া গেছে নানা তথ্য। মীর কাসেম আলী বর্তমানে দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া তিনি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক, ইবনে সিনা ট্রাস্টের সদস্য (প্রশাসন) এবং কেয়ারি হাউজিং ও ইডেন শিপিং লাইন্সের চেয়ারম্যান। তিনি রাবেতা আলম আল ইসলামীর এদেশীয় পরিচালক। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানার চালা গ্রামের বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডব্লিউডি) কর্মচারী তৈয়ব আলীর চার ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় মীর কাসেম আলী। ডাক নাম পিয়ারু, এলাকায় সবাই চেনে মিন্টু নামে।
স্বাধীনতার পর মীর কাসেম পালিয়ে ঢাকা চলে আসেন। মিন্টু নামে সেসময় নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন তিনি। এমনকি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলেও দাবি করতেন। কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়ার পর আরেক ঘাতক মঈনুদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে চলে যান লন্ডন। সেখান থেকে সৌদি আরব। সেখানে স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠিত করতে থাকেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে ফিরে আসেন মীর কাসেম। তার বিরুদ্ধে আনা প্রাথমিক অভিযোগে জানা যায়, মীর কাসেম আলী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আলবদর বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে যান।
চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকার সময় থেকেই তিনি মওদুদীর মৌলবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের দায়িত্ব পান স্বাধীনতার আগে। স্বাধীনতাবিরোধী তত্পরতার সময় ছাত্রসংঘের নতুন প্রাদেশিক পরিষদ গঠন হয়। মীর কাসেম হন তার সাধারণ সম্পাদক। সেসময় সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। এরপর ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির করা হলে মীর কাসেম হন প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি। এরপর রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের নামে রাবেতা আল ইসলামী গড়ে তোলেন। ধীরে ধীরে তৈরি করেন ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস।
গতকাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ারা জারির আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। সেখানে তারা দাবি করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের নানা দেশ সফর করে নিজে ও পারিবারিকভাবে ট্রাইব্যুনালের পরিচালিত বিচারপদ্ধতি নিয়ে মিথ্যাচার করে আসছেন তিনি। এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাও ইতোমধ্যে করেছেন। তার মতো প্রভাবশালী অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাগারের বাইরে থাকলে সুষ্ঠু তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে বলেও দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
অভিযোগ থেকে বাঁচতে ২শ’ কোটি টাকা অভিযোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মীর কাশেম আলী যুক্তরাষ্ট্রের এক লবিস্ট গ্রুপকে ২শ’ কোটি টাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ২০১০ সালের মে মাসে সহযোগিতা, স্বার্থরক্ষার অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেন তিনি। তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম ঠেকাতেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ায় এ চুক্তিপত্রকে ধরেই প্রথম পর্যায়ে বিচারের সম্ভাব্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন মীর কাশেম আলী। মীর কাশেম আলী ও লবিস্ট ফার্মের পক্ষে জেনারেল কাউন্সেল এন্ড্রু জে ক্যামেরুজ স্বাক্ষরিত চুক্তিতে উল্লেখ আছে, লবিস্ট নিয়োগের জন্য খরচ করতে হয়েছে ২৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও গ্রেফতার এড়াতে তিনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহলে অঢেল টাকা ঢেলেছেন বলে আলোচনা রয়েছে।
সংগৃহিত