কালকে পহেলা বৈশাখ। পুস্পর জন্য একটা মাটির মালা আর দুল দেখে এসেছি। দোকানদার বলেছে সেটার দাম ৬০ টাকা। কিন্তু আমার কাছে আছে মাত্র ৩০ টাকা। সকাল থেকে সারাদিন বোতল আর প্যাকেট কুড়িয়ে পেয়েছি ৫০ টাকা। দুপুরে ২০ টাকা লেগে গেল খেতে। আমি মনে করেছিলাম ৩০ টাকায় মাটির মালা-দুল পাওয়া যাবে। আগে জানলে দুপুরের খাবার খেতাম না। কিন্তু এরপরেও আরও ১০ টাকা লাগতো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ভেবেছিলাম কাল সকালে পুস্পকে মালা-দুল দিব আর বলব আমি তাকে ভালোবাসি। এখন বাকি ৩০ টাকা কোথায় পাব। এখন তো আর বোতল কুড়ানোও যাবেনা। কোথায় পাওয়া যাবে ৩০ টাকা। আচ্ছা রাব্বির কাছে গেলে কেমন হয়। সে হয়তো আমাকে ৩০ টাকা দিতে পারবে।
কেমন আছিস রাব্বি?
ভাল নাইরে।
কেন?
আজকে সারাদিন তেমন কোন মাল খুজে পাইনি। মহাজন ৩০ টাকা দিয়েছিল। ৩০ টাকায় বোনকে নিয়ে কোন রকম খেয়ে আজকে কাটিয়ে দিলাম। তোর খবর বল?
আমার এই তো চলছে কোন রকম। থাকরে যায় এখন একটু কাজ আছে।
এখন রাতের বেলায় ৩০ টাকা পাব কোথায়? সকাল বেলা হলে না হয় গাড়ী ধুয়ে কিছু টাকা পাওয়া যেত। এই ছোড়া এই? আমি পেছন ফিরে দেখলাম এক লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পায়ের কাছে ৩ টা বস্তা পড়ে আছে।
স্যার আমাকে কিছু বলছেন?
হ্যা তোকেই বলছি।
বলেন স্যার।
এখানে ৩ টা বস্তা আছে। আমার বাসায় দিয়ে আসলে তোকে কিছু টাকা দিব। বস্তা প্রতি ১০ টাকা। ৩ টা বস্তা ৩০ টাকা পাবি। কি তুলে দিয়ে আসবি?
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন। হ্যা স্যার করব। বলেন স্যার আপনার বাড়ি কোথায়?
সামনের বাড়িটা। ৪ তলায়। দেখিস আবার ফেলে দিসনা।
স্যার আপনি নো টেনশনে থাকেন। আপনার বস্তার কোন ক্ষতি হবেনা। আমি পড়ে যাব তাও আপনার বস্তা পড়তে দিবনা।
মামা এই নাও ৬০ টাকা। এবার আমাকে মাটির মালা-দুল দাও।
কিরে মাটির মালা-দুল নিয়ে কি করবি?
যায় করি তাতে তোমার কাজ কি? তোমার মালা-দুল বেচার কাজ তুমি তাই কর। তোমার এত কথা জানার তো কিছু নেই।
বাব্বারি বাব্বা! পোলার তেজ দেখ। এই নে তোর মালা-দুল।
আজকের ভোর বেলাটা একটু অন্য রকম লাগছে। অন্যদিনের থেকে আজকে পাখিরা বেশি কিচির মিচির করছে। মনে হয় সবার মনেই পহেলা বৈশাখের আমেজ চলে এসেছে। পাখিরা মনে হচ্ছে আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। কে জানে হয়তো তারা আমার মনের কথা জানতে পেরেছে। আমি একটু পরে পুস্পকে আমার মনের কথা বলতে যাচ্ছি। পুস্পকি আমাকে ভালোবাসবে? আমি কি তাকে আপন করে পাব?
কি ব্যাপার ঐ দিকে এত ভিড় কেন? আজকে কি কোন নায়ক-নায়কা এসেছে নাকি। তাদের তো আবার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। যখন তখন শুটিং করতে পার্কে চলে আসে। পুস্প তো ঐ রোডের কোনায় ঘুমায় থাকে। বাহ পুস্পর ভাগ্য তো অনেক ভাল, তার ঘুমানোর জায়গায় নায়ক-নায়কা শুটিং করতে এসেছে। যায় গিয়ে দেখে আসি।
না এখানে তো কোন নায়ক-নায়কা নেই। এখানে এত রক্ত কেন? মনে হয় লাল রঙ। শুটিং কি তাহলে শেষ হয়ে গেছে। ঐ তো রাব্বি। এই রাব্বি এই দিকে আয়।
কারা শুটিং করতে এসেছিল রে?
কেউ শুটিং করতে আসেনি।
তাহলে এখানে এত লাল রঙ কেন?
এগুলো রঙ না রক্ত।
রক্ত! কিসের? কার?
দোস্ত ভোর রাতে এখানে এক্সিডেন্ট হয়েছে। রাস্তা থেকে একটা কার গাড়ী ফুটপাতে উঠে আসে। গাড়ীটা পুস্পদের গায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। পুস্প, পুস্পর মা এবং ভাই সাথে সাথে মারা গেছে। তাদের ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে।
বিশেষ দৃষ্টাব্যঃ অনেক ভাবলাম শেষ কিভাবে করা যায়। কিন্তু এর থেকে ভালো শেষ আমি আর করতে পারলাম না। খারাপ লাগলে নিজ গুনে মাফ করে দিবেন। আমি আমার নায়কের ভাষা শুদ্ধ করে বলার চেষ্টা করেছি। টোকায় হলেই যে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলবে তা আমি মানতে নারাজ।