somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতিঃ স্বদেশে ভাড়াটে মানসিকতা

২০ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। ছেলেটির বয়স বারো কি তেরো, গ্রামের রাস্তায় সিএনজির সামনের সিটে বসা ছিল। একই গ্রামের, পিছনে বসা এক প্রৌড় লোক জানতে চাইলেন,- কই গেছিলিরে নুরুদ্দিনের পুলা?
ছেলে- নানার বাড়ি
প্রৌড়- কি দিয়া দিল তোর নানার বাড়ি থাইকা?
ছেলে- কাপড়, সেমাই, দুধ, ২ কেজি তেল।
কিন্তু বিধি বাম। ছেলেটির সাথে থাকা তার ছোট বোনটি বলে ফেলে, তেল আধা কেজি ভাই। তবে চতুর ছেলেটি সম্মান বাচাতে তৎপর। বলল- নানি আরেকটা বোতলে তেল দিছে পরে।
ছেলেটির চতুরতা তার সম্মান বাচাল। কিন্তু সরকারের এমন চতুর বক্তব্য দিয়ে কি দেশ বাচানো যাবে?
নিরাপদ করা যাবেকি দেশের নিরাপত্তা? আদায় হবে নাগরিক আধিকার? হবেনা। কিছু মানসিকতা বিশ্লেষণ করা যাক, তবে দয়া করে শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
অবিচ্ছিন্নভাবে ঘটা অনেক বিচ্ছিন্ন খুনের মধ্যে কিছু বিদেশী নাগরিকের হত্যা গুলশান হত্যাকান্ডের আগেও ঘটেছে। আইএস দায় স্বীকার করলেও, সরকার বলছে জামাত-জেএমবি। উত্তরোত্তর এমন অবহেলার পরিণতিতেই হয়ত গুলশানের গণহত্যাকান্ড ঘটিয়েছে আইএস যাতে সরকারের অবহেলার কোন পথ খোলা না থাকে। এসব পুরনো কথা। কিন্তু একটা বিষয় ভেবে দেখা দরকার, যে কাজটা আইএস এর মত উচ্চ পর্যায়ের গোষ্ঠী করে তা নিশ্চয় জামাত-জেএমবির কর্ম থেকে ভিন্ন। কেন? জামাত একটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতামুখী দল। আইএস আন্তর্জাতিক ক্ষমতামুখী দল। তাই এদের ধারা ভিন্ন, কাজ ভিন্ন। যে কাজটা আইএস কর্তৃক করা তা যদি জামাত-জেএমবির কাধে চাপানো হয়; তাহলে জামাত-জেএমবি ভাবতে পারে নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় অস্থিরতা সৃষ্টিতে এরা আইএসের সমতুল্য। আর আইএসকেত বড় বড় দেশও কিছু করতে পারছেনা। জামাত-জেএমবি যদি আইএস লেভেলের হয় তাহলে তারা কেন বাংলাদেশের মত একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের ব্যবস্থাকে ভয় পাবে? উপুর্যুপরি এরা আইএসের সাথে হাত মিলাতে পারে। কিন্তু মনে রাখা দরকার এমন পদক্ষেপের সূচনা হল, আইএসের বৃহৎকান্ড জামাত-জেএমবির মত ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কাধে চাপানো, যা ত্রাসের জগতে একটা সম্মাননার মতই বলা চলে। এ প্রসঙ্গ এখন থাকছে কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখনও বলছে- “হামলাকারী জামাত-জেএমবির সদস্য, এদের আন্তর্জাতিক কোন গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক নেই”।
বাক্যের অন্তরালে মানসিকতার আরেকটি দিক দেখা যাক। প্রধানমন্ত্রীঃ “গুলশানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা”, সূত্র- ৫জুলাই, মানবজমিন। আমার সমালোচনা করবার আগে কথাটা শুনুন। গুলশানে নিহতদের প্রতি কেন আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করব? শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবার কোন যুক্তিই আমি দেখিনা। আমরা বেদনা কিংবা সহমর্মিতা প্রকাশ করতে পারি। আমরা লজ্জিত হতে পারি। নাগরিক নিরাপত্তা দিতে পারিনি বলে অনুশোচনায় ভুগতে পারি, অনুতপ্ত হতে পারি। কিন্তু শ্রদ্ধা! তাদের কোন কর্মের জন্য? (তবে একজন সত্যিই শ্রদ্ধারযোগ্য, কে তা জানেন)। অনেকে ভাবতে পারেন আপত্তি কেন? আপত্তি যেখানে যা থাকবার কথা তা নেই বলে, যার যা পাওয়ার কথা তা পায়না বলে। তবে হ্যা শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের একটি যুক্তি আছে,। গুলশানে যারা নিহত হয়েছেন ওইদিন তারা হলি আর্টিসানে না থাকলে অন্যরা থাকত, আজকের নিহত ব্যক্তিরা এই অন্যদের বাচিয়েছেন বলে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা যায়। কিন্তু এই যুক্তি যে কতটা উদ্ভট আর চিন্তাশূন্য তা বুঝতে নিশ্চয় আপনাদের কষ্ট হচ্ছেনা। এতকথা বলছি কারণ এমন ঘটনার পরও উচু শ্রেণীর মানুষের মস্তিষ্ক সক্রিয় হয়না। তাদের বক্তব্য শুনলেই বুঝা যায়- বলা দরকার বলেই বলছেন, ভাববার প্রয়োজনও বোধ করেননা। আর বলবার জন্য শ্রদ্ধার চেয়ে বড় কি হতে পারে? শ্রাদ্ধা জ্ঞাপন করে মহৎ হতে চাইছেন। তারা আসলে আমাদের নিয়ে ভাবেননা। আমাদের প্রতি কোন আবেগ কিংবা সহমর্মিতাত নয়ই বরং তাদের মস্তিষ্ক অনেকটা বিকল হয়ে গেছে। স্রোতে গা ভাসিয়ে নীতি নির্ধারণ করলে দেশ চলেনা।
আবার দেখবেন, দেশে কোন নাশকতা হলে সরকারের উচুশ্রেণীর মানুষেরা বলবে এটা বিরোধীদলের কাজ। আর বিরধীদল বলবে এটা সরকারের কৃতকর্ম ষড়যন্ত্র হিসেবে। কিন্তু কথাটা হল আপনি সঠিক তথ্য না জেনে এমন অপবাদ দেন কি করে? আর তথ্য সঠিক হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়না কেন? আপনাদের ভুলে গেলে চল্বেনা যে চায়ের দোকানে বসে করা সাধারণের মন্তব্য আপনারা করতে পারেননা। সরকার/বিরোধীদল, আপনারা নীতিনির্ধারক, আপনাদের কথা আর আমজনতার কথার মধ্যে গুরুত্বের তারতম্য আছে। অনেক রাজনীতিবিদ আবার বলেন, এসব রাজনৈতিক বক্তব্য, এগুলো ধরবেননা। তাহলে কি রাজনৈতিক বক্তব্য বলতে মিথ্যা বুঝায়? আর তাই যদি হয় রাজনীতিও মিথ্যা হয়ে যায়। আর রাজনীতির আশ্রয়ে তৈরী আইনও মিথ্যা। পুরো দেশইত তাহলে মিথ্যার বুনিয়াদ। কবে এদের common sense এর স্নায়ুটি সক্রিয় হবে?
নীতিনির্ধারকদের তৈরী আইনেই দেশ তথা নাগরিক চলে। আর তারা যদি বিকারগ্রস্ত হয় তাহলে নাগরিক সমাজ বিকারগ্রস্ত হতে কতটুকুইবা দেরী হবে? বলি, আপনাদের মানসিকতাটা কি স্বদেশীয় নাকি ভাড়া করা?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:১৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×