আমি অপেক্ষায় থাকি আজন্মকাল ভাল থাকার জন্য
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ভুলে যাই
আমি অপেক্ষাতেই ভাল থাকি
মনে পড়ে তসলিমা নাসরিনের চিঠির কথা
কি উদ্বেগহীন ভাষায় বলেছিল-
‘অপেক্ষাতে আনন্দ আছে’
তোমাদেরওকি তাই মনে হয়?
মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে যায়,
কোন এক কবি বলেছিল, বৈচিত্র্যই আনন্দ
তবে চিরকালের মাধুর্যবিহীন অপেক্ষা আনন্দ হয় কেন?
কবিদের এখন ভন্ড ও প্রতারক মনে হয়
তোমাদেরওকি এমন হয়?
এখনওকি বল ছোট ছোট ঘটনার মাঝে আনন্দ খুজতে
তবে কি ভাল থাকা আমার একার উপর নির্ভর করে?
তবে ঈশ্বর বেচে আছে কোন উপহাসে?
তোমরা কি বলতে চাও ঈশ্বর আমাদের পরীক্ষা নেয়
তোমরা কি তবে পরীক্ষার মাঝে ঈশ্বর দেখ?
আমি’ত ঈশ্বর দেখি বঞ্চিত মানুষের মধ্যে
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে
ঈশ্বর নিজেইকি সুখে আছেন?
তোমাদেরওকি এমন হয়?
আমাদের নিয়েই’ত ঈশ্বরের সংসার
আমরা অসুখী হলে ঈশ্বর কিভাবে সুখে হয়?
তোমাদের মনে কি জাগে এমন ভয়?
তোমাদের শহরে কি ঈশ্বরের সাথে দেখা হয়?
দেখা হয় শোষকের রক্তাক্ত চোখে জাহান্নামের আগুন?
ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে ঈশ্বরের দেখা মিলে তোমাদের শহরে?
আমি’ত সমস্ত যন্ত্রনার মাঝে ঈশ্বর দেখি
ঈশ্বর আর কিছুই না, আপাদ-মস্তক দুঃখ ছাড়া
তোমাদের কি এমন মনে হয়?
নাকি- আমের বকুল ও শিউলির গন্ধে তোমরা ঈশ্বর দেখতে পাও
তোমাদের শহরে কি ক্যাকটাস পাওয়া যায়?
এর কাটাকেও আমার ঈশ্বর মনে হয়।
আমি আজন্মকাল অপেক্ষায় আছি ভাল থাকার জন্য
অথচ ভাল থাকা কাকে বলে জানিনা।
মানুষ মল্লিককে মনে আছে তোমার?
বোর্ড স্ট্যান্ড করা ছেলে
আমাদের শহরে থাকে ফুটপাতের ধার ঘেষে
দেশ বদলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে ডিগ্রি পায়নি
আমার এখন মানুষকেও ঈশ্বর মনে হয়।
একসময় মানুষকে উন্মাদ ভাবতাম,
আমার অনুতপ্ত অনুভূতি বিনা অপেক্ষায় ঝড়ের বেগে ছুটতে চায়
কিন্তু যোগাযোগের কোন সেতু খুজে পায়না
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে
তোমাদের শহরে কি মানুষ মল্লিক থাকে?
নাকি চাপা পড়েছে শোষকের ভারি নিঃশ্বাসে?
তোমদেরওকি রাতের ঘুম ভেঙ্গে, হঠাৎ
মানুষ মল্লিকের কথা মনে পড়ে?
মনে পড়ে আগের জন্মে তুমিও পাপিষ্ঠ ছিলে?
তোমাদের সভ্যতাকে মনে হয় জল্লাদের মুখোশ
কিন্তু আর আমি অপেক্ষায় থাকতে চাই না
লিখতে চাই না ক্ষুধা ও যন্ত্রনার কথা
ইস্পাত শীতল বিপ্লব হবে জল্লাদের উষ্ণ রক্তে.
শুনেছি তোমাদের শহরে ধর্ম ও রাজনীতির যুদ্ধে
শাহবাগে হাজার মানুষ মরেছে
তোমরা কি একবারও ওদের মাঝে ঈশ্বর দেখোনি?
তোমাদের শহরে পার্কে ও বেঞ্চিতে প্রেম দেখেছি
ক্যান্টনমেন্টের মৃত লাশ, তনুর মাঝে
তোমরা কি দুর্গাকে দেখোনা!
এমন ভালোবাসাহীন হৃদয় কেন তোমাদের?
তোমাদের ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে
বুনো ঝোপ-ঝাড়ের কথা
নগ্নদেহে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে
তোমাদের যুদ্ধ হত পশুর সাথে
তোমরা কি এখন মানুষের মাঝেই পশু দেখ?
একবারওকি ঈশ্বর দেখো না?
অন্তর্বাসের রং মিলাতে মিলাতে বিরক্ত হয়েওকি
রানা প্লাজার লাল রঙের কথা মনে পড়ে না!
তোমাদের ঈশ্বরের পূজায় কি এখন আর
রক্তজবা কিংবা লাল গোলাপের দরকার হয় না?
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে
তাজরিনের শ্রমজীবী মানুষের চাপ চাপ রক্তের দাগ
তোমাদের অন্তর্বাসে কি টের পাও?
এত অনুভূতিহীন কবে থেকে হলে?
এর চেয়ে ঢেড় ভাল ছিলে
আদিম অসভ্য নাগরিক হিসেবে।
খবরের কাগজ হাতে ভোরের চায়ে চুমুক দিলে
উষ্ণ তরল স্রোতকে আমার কুলির রক্ত মনে হয়
খুব জানতে ইচ্ছে করে
তোমাদেরওকি এমন হয়?
নাকি সিলেটের সবুজ চা বাগানে
বাংলোর রিভলভিং চেয়ারে দুলতে দুলতে বিবেক অন্ধ হয়
চায়ের মাটিতে সারের বদলে চাপা পড়ে
শ্রেণীহীন মানুষের রক্তে ভেজা স্বপ্ন আর মানবিক পরিচয়
লাল চায়ে দুধ মিশালেই কি সব মিথ্যে হয়?
খুব জানতে ইচ্ছে করে
জল্লাদের কালো কুৎসিত মুখোশে
ওই বেগবান হৃদয়কে কি চিরকালের জন্য চাপা দিলে?
আমি আজন্মকাল অপেক্ষায় আছি ভাল থাকার জন্য
তোমাদের নৃশংস সভ্যতার জন্য পারি না
দশ বছরের কিশোর রাজনকে মারতে মারতে যখন লাশ বানাও
আমার তখন রাজনকে ঈশ্বর মনে হয়
খুব জানতে ইচ্ছে করে
তোমাদেরওকি এমন হয়?
কোনদিন কি তোমার পিতাকে খুনী মনে হয়নি?
বিষাক্ত সংসারকে একবারও ঈশ্বর মনে হয়নি?
তোমাদের শহরে কি শুধু ফুলের সুবাস মিলে
ভাতের টেবিলে কৃষকের ঘামের গন্ধ পাওনা?
রক্তাক্ত রিশাকে তোমাদের স্কুল অবহেলা করে
শিক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি,
কোন শ্মশানে তোমাদের বিবেক চিরতরে পুড়িয়ে মারলে?
আমার’ত ইচ্ছে করে
মাথার খুলি থেকে তোমাদের মগজ বের করে
স্যুপের মত শেয়াল কুকুরে খাইয়ে দিই।
শহর-বন্দর, গ্রামে-গঞ্জে, পদ্মার জলে
সেতুর পর সেতু গড়ে উঠছে
তোমাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি
মানুষের সাথে মানবতার সেতু কেন হয়নি?
নারায়ণগঞ্জে তোমাদের শিক্ষাগুরু কানে ধরে উঠবস করে
একসমাজ মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা লুটলে?
তোমাদের শরীরে কি টিকটিকির রক্ত বয়?
তোমাদের জন্মদাতা কি মানুষ না টিকটিকি?
মানুষের রক্ত এত শীতল হয় কিভাবে?
খুব জানতে ইচ্ছে করে
তোমাদের হাতগুলো কেন শামীম উসমানের টুটি চেপে ধরেনি
কেন বিবেকের থাবায় জানায়নি-
বাংলার মাটিতে একমাত্র শওকতরাই ওসমান।
পিতৃ পরিচয়হীন মেরীর সন্তান যীশু খ্রিষ্ট
ক্রুশ চিহ্নের আদলে ভগবান হয়
তোমাদের চোখ কি ক্রুশবিদ্ধ আর কোন এতিম দেখে না?
আমি’ত এদেরকেই যীশু ভাবি।
সমস্ত বঞ্চনা ও যন্ত্রনাকেই আমার ঈশ্বর মনে হয়
তোমরা’ত সুখ নিয়েই ব্যস্ত রইলে
জগতের সমস্ত দুঃখ নিতে নিতে ঈশ্বর বিষাক্ত হয়ে উঠছে
ঈশ্বর আর কিছুই না, আপাদ-মস্তক দুঃখ ছাড়া
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে
তোমাদের কি একবারও মনে হয় না
ঈশ্বর যদি দুঃখের অস্র দিয়ে আঘাত হানে
নরকেও তোমাদের আশ্রয় হবে না।।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৮