মঞ্চ নাটকের অনেক গল্প শুনেছি জীবনে। মুভিতে অহরহ বলা হয়, তারা শুধু ভালোবাসার টানে ক্যামেরা ছেড়ে এই মঞ্চে অভিনয় করে। কথাগুলো শুনতে ভাল মনে হলেও, কখনো অনুভব করা হয় না আমাদের। কখনো কখনো মনে হয়, দূর তাই কখনো হয়? কিন্তু ভাতের অভাব থাকলেও আসলে এদের অনেকেই শুধু নেশার মত মঞ্চে উঠে। অভিনয় করে, আনন্দ দেয়, সুখ পায়। কোনদিন যদি দেখে দর্শক গ্যালারি পরিপূর্ণ তাহলে যে সুখ তাদের চোখে ফুটে উঠে তা অগোচর হয় না। আমরা যারা দর্শক তারা এমন প্রাণবন্ত অভিনয় কেন উপভোগ করি না, তা এক জিজ্ঞাসা হয়ে উঠছে ইদানিং আমার কাছে। মঞ্চে অভিনয় করাটা খুব কঠিন বিষয়, নাট্যকর্মীরা শুধু একটাই সুযোগ পায় নিজের দক্ষতাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার। তবুও কিন্তু অনেকেই নির্ভুল অভিনয় করে যায়। সরাসরি চোখের সামনে নাটকটা পর্দায় দেখা নাটকের চেয়ে বেশি প্রাণবন্ত হয়। আমার’ত মনে হয়, শুধু নাট্যকর্মী নয় যারা দর্শক তারাও যদি জীবনে একবার মঞ্চ নাটক দেখে তবে গভীর অনুভূতি থেকে যে সুখ পাবে তা পর্দার অভিনয়ে কখনো পাবে না। যদি কেউ সত্যিই কখনো মঞ্চ নাটক না দেখে থাকেন, তাহলে আমার কথাটা সত্যি কিনা অন্তত তা বিচার করবার জন্য একবার দেখবেন। আর মঞ্চ নাটকের পরিচালককেও কসরত করতে হয় অনেক, মঞ্চে’ত আর চাইলেই সব দেখানো যায়না, তাই এরা কথোপকোথন ও অনুভূতি নির্ভর হয়। মঞ্চ নাটকের সীমাবদ্ধতাই একে আরও বেশি প্রাণবন্ত, মানুষের হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছে। আগেও দেখেছি আমি মঞ্চ নাটক। গত ৪ নভেম্বর এরই ধারাবাহিকতায়, শিল্পকলা একাডেমিতে, থিয়েটার গ্রুপের, সৈয়দ শামসুল হক রচিত “যুদ্ধ এবং যুদ্ধ” নাটকটি দেখলাম। বলা বাহুল্য, একটা অন্যরকম ভাল লাগা ছিল। দাম কি খুব বেশি? না’ত মাত্র এক শত টাক সর্বোচ্চ। কিন্তু সিনেপ্লেক্সে ৪০০/৬০০ টাকার মুভিও দেখেছি, সত্যিই আমার এতটা ভাল লাগেনি যতটা ১০০ টাকায় পেয়েছি। আমার’ত মনে হয় পৃথিবীতে টিকে থাকা একমাত্র জীবন্ত শিল্প হল মঞ্চ নাটক। জনা পঞ্চাশেক দর্শক ছিল গ্যালারিতে। কিন্তু এর মধ্যে ১০ জনের মত গ্রুপের লোক। বাকি ৪০ জন থেকে আয় ৪০*১০০=৪০০০ টাকা। আমি জানি না, অন্তত ৫০০ টাকাও যদি অডিটরিয়ামের চার্জ হয়, তাহলে বাকি থাকে ৩৫০০ টাকা। মঞ্চে অভিনয় করেছিল আটজন, বাহিরে পর্দার আড়ালে আরও কিছু লোক থাকে। ৫০০ টাকাও পায় কি একজন? কিন্তু এদের মাঝে পর্দার পভিনেত্রী শিড়িন বকুলও ছিলেন। ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোন কারণে তার এত সময় এইখানে ব্যয় করার কারণ মনে পড়ছে না।
তারা শিল্পটাকে বাচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে ১০/১৫ জনের জন্যও অভিনয় করে। এমন প্রাণবন্ত ও জীবন্ত একটা শিল্প হারিয়ে যাক এইটা তারা চায় না, কিন্তু শিল্পের একটা আশ্রয় দরকার হয়। আমরা হলাম সেই আশ্রয়, থিয়েটার এর নট্যকর্মীরা একা এই শিল্প বাচাতে পারবে না। এর কিছুটা দায় আমাদের উপরও বর্তায়, বর্তায় আমাদের নিজেদের সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্যই। পৃথিবীর একমাত্র জীবন্ত শিল্প, মঞ্চ নাটককে বাচাতে এগিয়ে আসুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২১