Click This Link (বক্তব্যের লিংক)
কোন আঘাত নিবেন না, এইটুকু অনুরোধ রইল। যদি কোন ভুল হয় তবে ভুলটা ধরিয়ে দিবেন যেন শিখতে পারি।
আমি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ব্যথার পরিমাণ ঢেড় কম আপনার (ডা নুজহাত চৌধুরী) থেকে। কারণ আপনি পিতা হারিয়েছেন যুদ্ধের সময়, আমাকে এই হারানোর ব্যথা সইতে হয়নি। যে বক্তব্য আপনি দিয়েছেন তার জন্য কোন অভিবাদনই সমতুল্য মনে হয় না। কিন্তু আন্তরিক কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি।
তবুও দুটি বিষয় বলতে চাই, তিনি ডা নুজহাত চৌধুরী বলেছেন, “ যদি আপনারা সোনার বাংলার, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগের লোক হোন, তবে মুক্তিযোদ্ধার গায়ে কি করে রডের বাড়ি পড়ে?” পড়া উচিত নয়, নিঃসন্দেহে। কিন্তু আওয়ামী লীগ কি করে বঙ্গবন্ধুর হয়? আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ হয়, তখন বঙ্গবন্ধু দলের একদম শীর্ষ নেতাও ছিলেন না। পরবর্তীতে আদর্শ ও যোগ্যতা বলে তিনি শীর্ষনেতা হোন। আর তাছাড়া দল মানে ত সংঘবদ্ধতা, দল কখনো একজনের হয় না। ভাবছেন এসব কথা কেন আসছে। আসছে রডের বাড়ির উৎস খুজতে। একটি দলকে যখন আমরা নিজস্ব সম্পত্তি মনে করি, এই যখন দলের সদস্যদের মানসিকতা তখনই মুক্তিযোদ্দার গায়ে রডের বাড়ি পড়তে পারে। হয়ত তিনি দলকে ব্যক্তিগত বোঝাতে চান নি, কিন্তু এটা একটা মানসিকতা যা ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে তৈরী হয়েছে, আর ফলাফল খারাপ থেকে খারপতর।
তিনি বলেন, “ কেন আজকে গ্রেনেড হামলা হয় নেত্রীর উপর? কারণ, তিনি যতক্ষণ আছেন, আমরা নিরাপত্তার উপর আছি, মাথা উচু করে অহংকারেরর সাথে শহীদের সন্তানরা চলছি, যোদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, আমরা মুক্তি যুদ্ধের আদর্শের পথে ফিরে আসছি,...”। সব কিছু ঠিক আছে, ঘোল বাদল ওই “কারণ” শব্দটিতে। নেত্রীর উপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল সম্পূর্ণ একটি রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশের জন্য, যতদূর আমি বুঝতে পারি। কারণ আমরা কি আদৌ নিরাপদ আছি? নেই, বিগত বছর গুলোতে যত মানুষ মারা গেছে, আর আমাদের মধ্যে যে ভীষণ ভয় ছিল তাই তার প্রমাণ। আর মতিঝিল ঘটন’র কথা মনে করুন। একটা কবিতায় শুনেছিলাম- “ আপনি সন্ত্রাসী মারুন, বিদ্রোহী মারুন, নাগরিক মারুন, খুনীকে বিচারহীনভাবে মারুন, ইতিহাস লিখবে মানুষ মরেছে।” যোদ্ধাপরাধীর বিচারের ঘটনা গ্রেনেড হামলার কারণ হতে পারে না, পারে না সময়ের ক্রমের জন্য, গ্রেনেড হামলা অনেক আগেই ঘটেছে। তবে নিঃসন্দেহে কাজগুলো সরকারের ভালো কাজের মধ্যে অন্যতম। তাই বলে এক কাজের উদ্দেশ্য অন্য কাজের কারণ হিসেবে বলা যায় না। বললে, মানসিকাতার ব্যত্যয় ঘটে, সূচনা হয় মানুষকে ভুল বোঝার।
তিনি বলেন, “ আমি অনুরোধ করছি, আপনার কলম দিয়ে, আপনার হাত দিয়ে কোন রাজাকারের পক্ষে যেন কোন কাজ না হয় (ভাল কথা), আপনি যেন সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থাকেন (আরও ভালো কথা), অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাংলাদেশের পক্ষে থাকেন (খুব ভালো কথা), বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগের কোন বদনাম যেন আপনার হাত দিয়ে না হয়।” যদি শেষ কথাটা আওয়ামী লীগের সদস্যদের উদ্দেশ্যে হয় তাহলে তার অনুরোধ পালনের শুভ বুদ্ধির উদয়ের জন্যই জাতি অপেক্ষা করছে।
জানি, নুজহাত আপা, বক্তব্যের সময় যে ব্যথা আপনার মনে থাকে, তাতে আবেগ ও যৌক্তিকতার সমন্বয় খুব দুরূহ। কিন্তু যারা বক্তব্য শুনছেন, তারা বিষয়টি মাথায় রাখলে বক্তব্যের আসল অর্থ বুঝতে পারবেন মনে করেই এই লেখা। সময় খুব দুঃসময় হয়ে উঠছে, দুঃসময়ে মানুষকে আবেগের চাইতে বেশি হতে হয় যৌক্তিক।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১৯