somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষ্ণচূড়া শিমুলের ডালে ফাগুনের আগুন ডাক দিয়েছে বাংলা বসন্তের

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিগত কয়েকবছরের অসমাপ্ত কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে পেরেছি এবার। তাই দুমদাম এক এক করে দুটো বই বের হয়ে গেছে এই বই মেলাতে। তৃতীয়টির কাজের কারণেই ব্লগে-ফেসবুকে আসিইনা বললে চলে। পত্রিকার লেখালেখি থেকেও অনেকটা দূরে সরে আছি। অনেকটাই ঘর-কম্পুটার কুনো অবস্থায় দিনাতিপাত করছি। হয়তো দুই একদিন পরপর প্রেসে কিংবা স্যারের বাসায় যাই। আবার ঐ একই চিত্র, বাসার সাড়ে আট ফুট রুম, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বইগুলোর মাঝে এখন নিজের দুটো বই। আর আমার কম্পুটার। এদের সাথে একরকম ঝড়ের গতিতে ছুটে চলছে জীবন।
প্রেস থেকে ফেরার পথে বাসের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম একটি শিমুল গাছ আর মাদার গাছ পাশাপাশি দাড়িয়ে। মনে পড়ে গেলো শীতের শেষে পেপার মিলস স্কুল থেকে ফেরার সময় স্যারদের শত নিষেধ আর বাধা উপেক্ষা করেও চুপি চুপি কৃষ্ণচূড়া ফুল পাড়তাম গাছ থেকে। দুর্নিবার ঐ লাল রঙা ফুলটির প্রতি কেনো যেনো অন্যরকম আকর্ষণ ছিল সে সময়। আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে, সেই পেপার মিলস হাই স্কুল ছেড়ে কুষ্টিয়া কলেজ। তারপর জাবিও ছাড়তে হল যেখানেও কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। হয়তো সেখানে এখন লেগেছে ফাগুনের আগুন। কিন্তু আজ আমি ওগুলো থেকে অনেক দূরে, দিনের সিংহভাগ সময় পার হয়ে যায় কম্পুটারের সামনে বসে।
তিনটাকা দিয়ে কেনা পত্রিকাটার উপরের দিকে তাকাই। দেখি মাঘ প্রায় শেষ। বসন্ত অনেকটা দরজায় কড়া নাড়ছে। অর্থাৎ মহুয়া তলায় বসন্ত বরণের উৎসব


শুরু হলো বলে। গাড়ী মোড় নিলো অন্যদিকে.....
শাহবাগে আন্দোলন চলছে বলে.
বসন্তের সেই ফুলের স্মৃতি যতটুকু বেদনা দিয়েছিল হটাৎ ভুলে গেলাম। শাহবাগের পাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় দেখি এখানে হাজারো ফুল দিয়ে একদল তরুণ সাজিয়ে তুলেছে প্রিয় বাংলা বর্ণমালা। এই অক্ষরগুলোই কিভাবে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে মূর্ত হয়েছিলো সেই ৫২, ৬২, ৬৯, ৭১, আর ৯০ এ তা আমরা সবাই জানি। তাইতো ২০১৩ তে জনতার সংগ্রামের প্রতীক এই অক্ষরগুলোই।


গাছে গাছে শিমুল কৃষ্ণচূড়া যেমন বসন্তকে অভিবাদন জানাতে ব্যস্ত তেমনি বুঝি এই অক্ষরবিন্যাসে বিনা সুতায় গাঁথা ফুলগুলোও অভিবাদন জানাচ্ছে তারুণ্যের এই জাগরণকে। সময় বাড়ে হয়তো আরও ফুল আসবে, আর ভরে উঠবে প্রজন্ম চত্তর। নতুন করে বিন্যাস্ত হয়ে হয়তো দেখা যাবে বাংলাদেশের মানচিত্র।


এভাবে অবিরাম ষষ্ঠ দিনেও প্রতিমুহূর্তে নতুন নতুন পথ খুজে নিচ্ছে আন্দোলন। প্রতিবাদের ভাষা যেনো কালক্রমে আরো শাণিত হচ্ছে। ফাগুনের আগুন ঝরা প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে নতুন আগুনে জ্বলে উঠেছে প্রজন্ম চত্বর। হয়তো বিকেলে এই চত্তর আবারও মহাসমাবেশের জনস্রোতে রূপ নেবে। প্রতিবাদী মানুষের ঢল নামবে আবারো যা ছাড়িয়ে যাবে রূপসী বাংলার মোড় থেকে টিএসসি, শাহবাগ থেকে কাঁটাবন।


তাই এখনকার প্রতিটি বিকেলই জমে ওঠে প্রজন্ম চত্বরের এই জাগ্রত জনতা। তারপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই দীপাবলীর মতো শত শত মোমবাতির আলো। চোখ ধাঁধানো সৌম্যতায় চলতে থাকে মশাল মিছিল আর ঐ উদ্দীপ্ত শ্লেগান। সময় গড়িয়ে যায় প্রতিবাদীরা ক্ষান্ত নয়। তারা এবার তাদের দাবিতে অনড়। এবার আর কান্না নয়, চোখের পানিতে অবগাহন নয়। এবার আমরা কাঁদতে আসিনি, ফাসির দাবি নিয়ে এসেছি। সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। আলবদর, আল শামস আর রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ে ব্যাকুল আজ বাংলাদেশের হৃদয়।


দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর আন্দোলন সত্যি শেষ হওয়অর নয়। দীর্ঘ প্রতিবাদের পরেও কারো চোখে-মুখে ক্লান্তি নেই, অস্বস্তি নেই। স্বাধীনতার উদ্দীপনা সবাইকে করেছে অনুপ্রাণিত। তার আজ আবার পরাজিত হয়েছে ক্লান্তি, ক্ষুধা, রৌদ্রদাহ আর রাত জাগার শত যাতনা। বসন্তের প্রাক্কালে এই আন্দোলন সূচনা করেছে বাংলা বসন্তের। একজন বওকুজিজির মৃত্যু যেমন পুরো তিউনিশিয়ারে আন্দোলিত করেছিল। তার নশ্বর দেহ জ্বলে ছারখার হলেও ঐ আগুণের উত্তাপ ছাড়িয়েছিল পুরো বিশ্বে আজ বাংলা বসন্তের এই বাণী ছড়িয়ে পড়ুক শাহবাগ থেকে পুরো দেশে।


যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে ভোটভিক্ষার তীব্র আশাবাদ কিংবা ঐ মিছে আশ্বাসের বাণী আর নয়, এবার বাংলার মানুষ সত্যিকারের বিচার চায়। প্রমাণিত অপরাধীদের বিচারের নামে শাস্তিতে বিলম্ব কেনো? বাংলা বসন্তের এই আহ্বান আবার নাড়িয়ে দিক স্বৈরতান্ত্রিকতার সিংহাসন। নরপিশাচ খুনীরা যে দলের, যে ধর্মের, যে মতাদর্শের হোকনা কেনো তাদের বিচারের আওতায় আসতেই হবে। এবার আর কান্না নয়, বুকের যন্ত্রণা হয়ে উঠুক দ্রোহের আগুন। এই আগুন পুড়িয়ে ছাই করুক রাজনৈতিক উন্মত্ততা। তারুণ্যের দীপ্ত জয়টীকায় উদ্ভাসিত হোক প্রিয় বাংলাদেশ।
তোমাকে সেলাম বাংলাদেশের তারুণ্য,
তোমাদের এই আন্দোলন চিরভাস্বর হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২২
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×