somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাত পোহানোর আগে

১০ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত মনে হয় আটটা পার হয়ে গেছে । তবে এখানে থেকে বোঝার উপায় নেই কয়টা বাজে । কারণ আশে পাশে কোন আলো নাই । চারদিকে অন্ধকার, চুপচাপ । সাড়াশব্দ নেই কোথাও । দরজাটা লাগানো । একদম নিথর একটা পরিবেশ । আমার একটু ভয় করতে থাকে । তবে কেন সে ভয় করতে থাকে তা আমি বলতে পারব না ।

অনেকক্ষণ ধরে ভাবলাম কেন আমার ভয় পাচ্ছে ? কোন কারণ খুজে পেলাম না । এখানে আমার মত আরো প্রায় ত্রিশ জনের মত আছে – তাইলে ভয় পাব কেন ? না ,ভয় আর পাব না ।

কেহই কথা বলছে না । কারণ মানুষ জেগে থাকলে আমাদের কথা বলা নিষেধ । তাই আমরা অপেক্ষা করি কখন সবাই চলে যায় । হঠাত পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম । আমরা আরো সতর্ক হয়ে গেলাম । যেন বুঝতে না পারে আমরা জেগে আছি । বাইরে থেকে তালা খুলে দুজন লোক ঢুকলো । হাতে টর্চ । আমি চোখ খুলে একবার দেখলাম কি করে তারা । দেখলাম আমাদের মত আরো তিনটাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসছে তারা । ছুঁড়ে ফেলে দিল ভেতরের দিকে, আর তারা এসে তিন দিকে ছিটকে পড়ল ।

তারপর এদিক ওদিক লাইট মেরে চলে গেল লোক দুইটা । দরজায় আবার তালা লাগিয়ে দিয়ে গেল । আমি দরজার নিচ দিয়ে তাকিয়ে থাকলাম আলো মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ।

আলোটা নিভিয়ে গেলেই আমি চোখ খুললাম । আশেপাশে তাকালাম । আমার মতই সবাই । ছেলে মেয়ে সবাই আছে । তবে বোঝার উপায় নেই কোণ পাশে ছেলে আর কোন পাশে মেয়ে কারণ সবাইকে স্তুপাকারে রাখা হয়েছে । কারো হাত নাই, কারো পা । কারো মাথা উল্টা করে ঘোরানো , আবার কারো মাথাই নেই । কারো কবজি নেই , আবার কারো পায়ের পাতা । তবে সবার মাঝে এখন যে মিলটা আমি দেখছি তা সত্যি খুব লজ্জার । আমাদের কারো গায়েই কোন পোশাক নেই , আমরা সবাই উলংগ । অথচ আমরাই একসময় দেশের সবচেয়ে দামিদামি কাপড় পরতাম ।

আমি উঠে বসার চেষ্টা করলাম । পারলাম না । মনে পড়ল আমার তো বাম পা নিচের অংশে ভেঙ্গে গেছে আর সেজন্যই তো আমাকে আনা হয়েছে । আমি মেঝেতে ভর দিয়ে কোনমতে উঠে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলাম । বাকি সবাই কেউ কেউ আমার আগেই উঠে বসেছে , বাকিরা ওঠার চেষ্টা করছে । মেয়েদের জন্য আমি যায়গা ঠিক করে দিয়েছি আমার ডান দিকের কোনায় । আমার আবার একটু মেয়েদের প্রতি একটু দুর্বলতা আছে কিনা !

মেয়েরা তাদের জায়গায় আসতে শুরু করেছে । আমি খেয়াল করলাম একটা মেয়ে আসতে পারছে না । একটা পা নড়বড়ে মনে হচ্ছে ।খুড়ে খুড়ে হাটছে । আমার কাছাকাছি এসে পড়ে যেতে লাগছিল , এমন সময় আমি ধরে ফেলি । ভেবেছিলাম মেয়েমানুষ বলে হাতটা নরম হবে হয়ত । কিন্তু হতাশ হতে হল আমাকে । আমাদের মতই শক্ত হাত । তবে চেহারায় কিছু একটা আছে যা আমাকে খুব মুগ্ধ করল । আমি খেয়াল করলাম ভাল করে । গোলাপি গালে হালকা টোল, লাল ঠোট আর লালচে চুল । সে না বসা পর্যন্ত আমি তাকে এগিয়ে দিলাম ।

কিছুক্ষণের মাঝেই সবাই বসে পড়ল । আমি দেয়াল ধরে দাড়ালাম । খুক খুক কাশি দিয়ে সবার নজর কাড়ার চেষ্টা করে বললাম, ‘বন্ধুরা, সবাইকে শুভ সন্ধ্যা । কেমন আছ সবাই ? জানি ভাল না । তারপরেও জিজ্ঞেস করলাম । তোমারা তো সবাই জান আমাদেরকে এখানে কেন আনা হয়েছে?”
পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল , ‘কেন’?

আমি বুঝতে পারলাম না সে কি আসলেই জানেনা নাকি আমার সাথে ফাজলামি করছে!

“আমাদেরকে এখানে আনা হয়েছে কারন আমাদের সবারই কোন না কোন সমস্যা আছে । আমাদের ঠিক করার জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে একত্র করা হয়েছে । কাল সকালে আমাদেরকে পাঠানো হবে । তারপর ঠিক হলে আমাদেরকে আবার আগের জায়গায় পাঠানো হবে । তাই বলছিলাম কি আমরা যেহেতু এখানে একত্রিত হতে পেরেছি তাই আমারা এক কাজ করতে পারি । আমরা আমাদের এতদিনের কাজের অভিজ্ঞতা, ভাল লাগা খারাপ লাগাগুলো এখানে সবার সাথে শেয়ার করতে পারি” ।

পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠল , ‘উত্তম প্রস্তাব । আমিও সেরকম কিছু ভাবছিলাম’।
তাইলে শুরু করা যাক আমি বললাম।

“হুমম তা করা যাক । তবে তুমি এত মাতব্বরি করতেছ কেন হে “? আমি দেখলাম দুইহাত ভাঙ্গা একব্যাটা দাঁড়িয়ে আমাকে কথাটা বলল । বিশাল দেহ । কপালে লেখা ইংরেজিতে, “ও.এম.” । বুঝলাম হালায় দামি ব্র্যান্ডের, তাই ভাব মারতেছে ।

আমি বললাম, “আমি ভাব মারতেছি কে বলল ? আমি তো শুধু একটা প্রস্তাব দিলাম, আর কিছু না”।

“ফের কথা বলিস ! আর একটা কথা বলিস তো দেব একটা থাবড়া “। কথাটা শুনে আমার খুব হাসি এল । তবে হাসলাম না ব্যাটায় যদি লাথি মারে!
কেউ একজন বলে উঠল, “আরে ভাই মারামারি করে লাভ কি ? তার চেয়ে যেটা করতে চাচ্ছিলেন তাই শুরু করেন । আমরা শুনতে চাই” ।
“প্রথমে কে শুরু করবে”? আমি সবার দিকে তাকিয়ে কথা বললাম । কথা বলেই তাকালাম মেয়েদের দিকে । সেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, “লেডি দিয়েই শুরু হোক,কি বলেন”?

“হ্যা হ্যা,তাইলে তো ভালই হয়” । কয়েকজন মুখ দিয়ে শিষ বাজালো ।
আমি সেই মেয়েটিকে প্রথমে বলতে বললাম । সে তো বলবেই না । দাঁড়াতেই চায় না । কে যেন বলল, “আরে আমরা তো সবসময় দাড়িয়েই কাজ করি তাইলে আজ না হয় বসেই বললাম”।

সবাই সায় দিল ।

দেখলাম মেয়েটা মাথা উচু করে দিল । বলা শুরু করল, “আমি আসছি এলিফ্যান্ট রোড থেকে । ভাললাগা খারাপ লাগা দুটই আছে । কিন্তু প্রথমেই খারাপ লাগাটা বলতে চাই না , মজা দিয়েই শুরু করি । একদিন হয়েছে কি-আমি দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় এক লোক আসল । ছেলে মানুষ, সম্ভবত আগে কখনো আমাদেরকে দেখেনি । আমাকে দেখে তো সে অবাক । একটা মানুষ কিভাবে এত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ! সে আমাকে টোকা দিল , আমার হাত ধরল , আমার কাধে হাত রাখল । এমনকি সে আমার কানে কানে এসে বলেও গেল যে আমি নাকি খুব সুন্দর! যাবার সময় বলে গেল যে সে যদি আগে বিবাহিত না হত তাইলে নাকি আমাকে সে বিয়ে করত ।হা হা হা ”, কথা শেষ হতেই হো হো করে হাসতে লাগল । আমি দেখলাম গালের টোল আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ।

এরপর এক ছেলের পালা । সে শুরু করল, “আরে লজ্জার কথা আর বলবেন না । মান সম্মান আর কিছু রাখল না । একদিন সকালে মোহাম্মদপুরের কাহিনী । কেবল দোকান খোলা হয়েছে । আমাকে তখনো কোন প্যান্ট পরানো হয়নি । পরিস্কার করানোর জন্য রাস্তার পাশে রাখছে । এমন সময় এক পিচ্চি তার মায়ের সাথে স্কুলে যাচ্ছিল । আমাকে দেখে সে তার মাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করে, “আম্মু, এই আঙ্কেল হিসু করে কিভাবে?” জবাবে তার মা বলে যে আঙ্কেলদের হিসু করার কথা বলে হয় না বাবা ।

এরপর শুরু করল এক মেয়ে । “আমি বেইলী রোডে ছিলাম । আমাদের অনেকে একসাথে লাইনে দাড় করিয়ে রাখা হত । এক দুপুরে আমাকে নতুন শাড়ি পরানোর জন্য পুরোনোটা খুলে ফেলা হয় । আমি তখন একেবারে কাপড়ছাড়া । লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম । এমন সময় দুই জন মানুষ আসে সেখানে । আমাকে এ অবস্থায় দেখে তারা এগিয়ে আসে । আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম । একজন বলল, দোস্ত তুই বাইরে দেখ আর আমি দেখি শক্ত কিনা ! কথা শুনে তো আমি শেষ । একজন দেখতে গেল আর বাকি জন আমার একদম সামনে । লোকটা তার হাত আস্তে আস্তে আমার দিকে আনছে আর আমার বুক কেপে কেপে উঠছে । আমি নিঃশাস বন্ধ করে ফেললাম । পরের টুকু আর মনে নেই । যখন জেগে উঠলাম দেখি মেঝেতে পড়ে আছি” ।

পাশের আরেকটা মেয়ে বলল, “তোমার টা দেখি ভয়ঙ্কর , আর আমারটা বেশ মজার । বসুন্ধরায় সেদিন আমাকে শুধু সালোয়ার পরিয়ে রাখা হয়েছিল । এক মা এসেছে তার ছেলেকে নিয়ে । মা কাপড় দেখছে আর ছেলে আমাকে দেখছে চুপিচুপি । মা পাশের দোকানে গেল কিন্তু ছেলে সে সুজোগে আমার খুব কাছে আসল । অবাক হয়ে আমাকে দেখতে লাগল । চোখের পলক যেন পরেই না । কিছুক্ষণ পর তার মা এসে দেখে যে সে আমাকে দেখছে । আর যায় কই!কান টেনে ধরে দুই গালে দিল আচ্ছামত”।

এরপর আমি শুরু করলাম।তবে নিজের কোন অভিজ্ঞতা নয়, আমাদের সবার কিছু কমন এক্সপেরিয়েন্স। যেমন- “মাঝে মাঝেই আমাদেরকে খালি গায়ে রাখা হয়।তখন আমাদের খুব লজ্জা লাগে।বিশেষ করে যখন কেউ আড়চোখে তাকায়।আবার দেখা যায় অনেক সময় আমাদেরকে ব্যাপক ভাবে রাখা হয়।চোখে সানগ্লাস,মাথায় ক্যাপ, হাতে ঘড়ি, দামী জিন্স, ব্র্যান্ডের টী-শার্ট, ব্রেসলেট, পায়ে স্নিকার।তখন মনে হয় রাস্তার সব মেয়েকে গিয়ে প্রপোজ করি।”কথা বলার পর আমি সেই মেয়েটার দিকে তাকালাম।

সবশেষে আমার মজার একটা ঘটনা বললাম।“একদিন বিকেল বেলায় এক ছেলে তার গার্ল ফ্রেন্ডকে নিয়ে প্যান্ট কিনতে আসছে।তারা প্যাণ্ট দেখতে দেখতে আমার কাছাকাছি এসে পড়েছিল।এমন সময় কারেন্ট চলে যায়।আমি যে দেখতে পারি তা তো আর তারা জানে না।ছেলেটা মেয়েটাকে চেপে ধরে আমার পিঠের সাথে।আমি নিজেকে খুব কষ্টে সংবরণ করলাম সেদিন”।

এভাবে সবাই যার যার মত অভজ্ঞতা বর্ণনা করলাম আমরা । কাল সকালে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে । আমাদেরকে আবার ঠিক করা হব । তারপর সবাইকে আগের যায়গায় পাঠানো হবে ।

আবার শুরু হবে আমাদের দাঁড়িয়ে থাকার কাজ, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×