somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া অধ্যায়ের কি সমাপ্তি হতে চলেছে ???

০৮ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য অবস্থায় আছেন। ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি বেশ ধুম্রজালেরই সৃষ্টি করেছে। অসুস্থ হবার প্রাথমিক অবস্থায় তারা বলেছিলো খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত হলেও তার শরীরে কোনো উপসর্গ নেই , তার ফুসফুসে কোনো সংক্রমণ নেই , কিন্তু শেষতক আমরা দেখলাম খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নিতে হলো এবং শেষ পর্যন্ত তার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক টিম এবং বিএনপি নেতৃবৃন্দ স্বীকার করে নিলো যে খালেদা জিয়া বেশ অসুস্থ , এবং তার ফুসফুসে ক্রমাগতভাবে পানি জমছে , এছাড়া তার হৃৎযন্ত্রের অবস্থাও ভালো নয়। সম্ভবত খালেদা জিয়া "Post COVID Lung Fibrosis" এ আক্রান্ত এবং তিনি বেশ ভালো অসুস্থ। সার্বিক অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সরকারও উনাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে পজিটিভ।

কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে খালেদা জিয়ার বিদেশ গমন কি সাময়িক নাকি উনি চিরস্থায়ী ভাবে দেশ ত্যাগ করছেন ??? বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি , আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার দেশত্যাগ কিংবা রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ অবসর বাংলাদেশের জনগণের মনে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। ক্ষমতার রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু থেকে বিএনপি দূরে হাটতে হাটতে এতো বেশি দূরে চলে এসেছে যে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে বিএনপি কিংবা খালেদা জিয়া আর সেভাবে বিচরণ করে না। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে দিয়েই বিএনপির অবস্থান অনেকটাই ম্রিয়মান হয়ে গেছে । এই দুর্মূল্যের বাজারে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে গিয়ে মানুষ এমনিতেই ভোট এবং রাজনীতি বিমুখ। সেখানে খালেদা জিয়ার থাকা না থাকা তাদের উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলে না।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এক সামরিক অভ্যুথানে নিহত হবার পর খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আগমন। যদিও খালেদা জিয়ার কোনোরূপ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছিলোনা, উনি কোনোভাবেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না কিংবা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেন নি। রাজনীতিতে আসার আগে ফার্স্ট লেডি হিসেবে কিছু রাজনৈতিক আচার পালন ছাড়া উনার আর কোনো ধরণের অভিজ্ঞতা ছিলোনা। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপিকে হাইকমান্ড তাকে সামনে নিয়ে আসে এবং চেয়ারপারসনের আসনে বসান। এরপর মূলত এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। এরশাদের অধীনে কোনো নির্বাচন না করার ঘোষণা , কোনো নির্বাচন না করা এবং কয়েকবার কারাবরণের উদহারণ টেনে বিএনপি নেতৃবৃন্দ তাকে আপোষহীন নেত্রী হিসেবে মানুষের সামনে তুলে ধরে এবং তারা সফল ও হয়। যার ফলশ্রুতিতে বিএনপি তার নেতৃত্বে একক ভাবে ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসে। রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার বড় সফলতা মূলত এটাই।

এরপর আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন , ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এর নির্বাচন , সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা পাশ এবং আবার ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অল্প ব্যাবধানে হেরে শক্তিশালী বিরোধীদল হিসেবে অবতীর্ণ হওয়া, এবং আন্দোলনের ফলে ১৯৯৬ সালের নির্বচনে পরাজয়ের পরেও বিপর্যয় কাটিয়ে বিএনপিকে বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিরোধী পক্ষে অবস্থান করে নেয়াকে রাজনৈতিক সফলতা হিসেবেই ধরে নেয়া যায়।

খালেদা জিয়া তথা বিএনপির ভুলের শুরু মূলত ১৯৯৯ সালে জামাতে ইসলামীকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করার মাধ্যমে। একথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে জামাত স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধী পক্ষে ছিল , যা জামাত নেতারা নিজেও স্বীকার করেছে। তাদের সাথে নিয়ে জোট গঠনের মাধ্যমে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও রাজনীতিতে তাদের অবস্থান স্বাধীনতা বিরোধীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নত হয়ে যায়। এরপর খালেদা জিয়ার সবচাইতে বড় ভুল ছিল ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা। ন্যাক্কারজনক ভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা বাংলাদেশের রাজনীতি , রাজনৈতিক ঐক্যমতের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছে। বিএনপি একটি আততায়ী দল হিসেবে তখন মানুষের কাছে চিহ্নিত হয়েছে এবং তারা নিজেদের অবস্থানও কখনো পরিষ্কার করেনি। এরপর প্রয়াত নেতা মওদুদ আহমেদের পরামর্শে বিচারপতিদের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বিতর্কিত অবস্থানে নিয়ে যাওয়া , বিএনপির একগুঁয়েমি যার ফলে ১/১১ এর সৃষ্টি সবকিছুই খালেদা জিয়ার ভুল রাজনীতির ফসল। ২০০৭ সালে বিএনপির দুর্দশা আর দুঃসময় সৃষ্টি হবার দীর্ঘ একযুগের বেশি সময় পরেও বিএনপি তাদের দুর্দশা থেকে বেরুতে পারেনি। দলটির অবস্থান ক্রমাগতভাবে খারাপ খারাপ হয়েছে। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট , ২০১৮ সালে আবারো জামাতকে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, এবং এতো বিতর্কের পরেও তারেক রহমানকে বিএনপির শীর্ষ নীতিনির্ধারণী পদে রাখা বিএনপিকে রাজনীতিতে অপাংতেয় করে ফেলেছে। এসবকিছুই খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভুলের ফসল।

এক রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই ভুল নিয়েছেন, এর দায় বিএনপির অন্য শীর্ষ নেতারাও এড়াতে পারেন না। তারাও সঠিক বুদ্ধি খালেদা জিয়াকে দিতে পারেন নাই। অবশ্য এ ছিল জানা কথা , বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বেশিরভাগের ব্যাকগ্রাউন্ড অবসরপ্রাপ্ত আমলা , ব্যাবসায়ী আর অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তা। তারা কেউ আন্দোলন সংগ্রামের মাদ্ধমে বিএনপিতে প্রতিষ্ঠা পান নাই। রাজনীতিতে যোগদান করেই ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন , তাই বর্তমান প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলার কৌশল তাদের না থাকারই কথা।

পরিশেষে এটাই বলা যায় , বিএনপির রাজনীতিতে খালেদা জিয়া এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি কিন্ত অপরিহার্য কেউ নন , তার রাজনৈতিক বিদায় কিংবা পার্মানেন্ট দেশত্যাগ বিএনপিতে আর বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। বরং , এখন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উচিত দলকে অমূলভাবে সংস্কার করে পরিবর্তিত জাতীয় রাজনীতি এবং বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দলকে ঢেলে সাজানো। একথা ভুলে গেলে চলবে না , বিএনপির ভোটব্যাংক হচ্ছে মূলত আওয়ামীবিরোধী ভোট। বাংলাদেশের ভোটার রাজনীতি দুইভাগে বিভিক্ত , আওয়ামীলীগ এবং আওয়ামীলীগ বিরোধী। বিএনপি হয়তো এই আওয়ামীলীগ বিরোধী প্লাটফর্মের প্রতিনিধিত্ব করেছে। আজ বিএনপি না থাকলে কাল অন্যদল সেই জায়গা দখল করবে। তাই খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে সর্বদা সক্রিয়ও থাকতেই হবে এমন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। বিএনপির উচিত এখন খালেদা পরবর্তী রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণ ও কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৩১
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×