বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে আওয়ামীলীগবিরোধী লোকজনের একটা মন্তব্য রায় চোখে আসে সেটা হচ্ছে :
"বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কেউ কেন তখন প্রতিবাদ করে নি? কেন তার জানাজায় সামান্য কিছু মানুষ হয়েছিলো? "
একবিংশ শতাব্দীতে সেনা কারফিউ এর ব্যাপারে আমাদের খুব কমই দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি গত শতাব্দীর চেয়ে অনেক শিথিল এখন।
মূল কথায় আসা যাক। বঙ্গবন্ধুকে সেনা ক্যু এর দ্বারা স্বপরিবারে হত্যা করার সাথে সাথে দেশে ১৪৪ ধারা জারি হয়ে যায়। এবং পুরো দেশ সেনাবাহিনির কব্জায় চলে যায়। জাতির বেঈমান খন্দকার মোশতাক পরদিন নতুন পাঞ্জাবী পড়ে শপথবাক্য পাঠ করে ক্ষমতা নিজ হাতে নেন। পুরো দেশে তখন সেনা কারফিউ জারি। কোনো বিক্ষোভ মিছিল হলেই আনকন্ডিশনাল ফায়ারিং এর নির্দেশ। সেনা ট্যাংক ও অস্ত্র নামানো হইছিল সারা দেশে। পুলিশ না হয় আমরা এতোটা পাত্তা দেই না। আর্মির সামনে গিয়ে একটু গলা চড়া করে কথা বলতে সাহস লাগে। আর সেই সাহসের পরিণতি হল গুলি খাওয়া।
ঢাকা ও বঙ্গবন্ধুর দেশের বাড়ি ও আওয়ামী লীগের সকল ঘাঁটিতে সেনা মোতায়েন ছিল। একটু টু শব্দ করার মত পরিস্থিতি হলেও গুলি খাওয়া লাগত। বঙ্গবন্ধুর লাশ কড়া নজরদারিতে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে ১০ জন এর উপস্থিতিতে দাফন করা হয়। জানাযা পড়তেও বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় মুরুব্বিরা জানাযা ছাড়া মুসলিমের কবর দিতে নারাজ থাকায় কবরখোরদের নিয়েই জানাযা হয়।
অনেকের মনে হয় জিয়াউর রহমানের জানাযায় ৩ লাখ মানুষ ছিল। তাই তাকে অনেকেই জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক মনে করেন। আসলে জানাযার সংখ্যা বাড়া-কমাটা নির্ভর করে তদানীন্তন রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরে। এবং জানাযার সংখ্যার উপরে কোনো মুসলিমের পরকাল কোনো কালেই জাজমেন্ট হয় নাই, হবেও না। বরঞ্চ একজন আমাদের জাতির পিতা, আর অন্যজন বাংলদেশের দ্বিতীয় শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা। মর্যাদার বিশাল পার্থক্য।
প্রতিবাদ হয়ই নাই এমনটা বলা অবাঞ্চনীয়।
হত্যার পর প্রথম প্রতিবাদ হয় বরগুনায়। মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব মৃধা বরগুনা এসডিও সিরাজ উদ্দিন আহমেদের সহায়তায় ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির এর নেতৃত্বে ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মীর ঝটিকা মিছিল বের করেন। পরবর্তীতে এতে বরগুনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, খুলনা, যশোর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁওসহ বিভিন্ন জায়গায় ১৫ই আগস্ট সকালে প্রতিবাদ হয়।
পরবর্তীতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ১৭ হাজার মুজিব ভক্তকে ৭টি ফ্রন্টে ভাগ করে ২২ মাস প্রতিরোধ যুদ্ধ করেন। এতে ১০৪ জন যোদ্ধা নিহত এবং কয়েকশ আহত হয়। এর মাঝে শেরপুর সদর, শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলার ৫০০ তরুণের ‘শেরপুরের ৫০০ প্রতিবাদী’র বিদ্রোহ ও লড়াই আলোচিত ছিল।
মুফতি নূরুল্লাহ পরদিন জুমার নামাজের খুতবায় এর প্রতিবাদ করেন।
আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্ররা প্রতিবাদ করে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মৌলভী সৈয়দ, ছাত্রনেতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের নেতা এস.এম. ইউসুফ প্রতিরোধ করতে শুরু করেন।
১৮ই অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টার ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন। ২০ অক্টোবর প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
প্রতিবাদ করায় ১৯৭৬ সালের ১৮ আগস্ট মুক্তাগাছার প্রতিবাদী ৫ মুক্তিযোদ্ধা জাবেদ আলী, নিখিল দত্ত, সুবোধ ধর, দিপাল দাস, মফিজ উদ্দিনকে সেনা অভিযানে হত্যা করা হয়। বেঁচে যাওয়া বিশ্বজিৎ নন্দী নামে কিশোর যোদ্ধাকে আটক করে ১৯৭৭ সালের ১৮ মে সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয়। ইন্দিরা গান্ধীসহ প্রভাবশালী বিশ্বনেতার প্রভাবে তাকে যাবজ্জীবন দেয়া হয় এবং তিনি ১৯৮৯ সালে মুক্তি পান।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে আওয়ামীলীগবিরোধী লোকজনের একটা মন্তব্য রায় চোখে আসে সেটা হচ্ছে :
"বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কেউ কেন তখন প্রতিবাদ করে নি? কেন তার জানাজায় সামান্য কিছু মানুষ হয়েছিলো? "
একবিংশ শতাব্দীতে সেনা কারফিউ এর ব্যাপারে আমাদের খুব কমই দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি গত শতাব্দীর চেয়ে অনেক শিথিল এখন।
মূল কথায় আসা যাক। বঙ্গবন্ধুকে সেনা ক্যু এর দ্বারা স্বপরিবারে হত্যা করার সাথে সাথে দেশে ১৪৪ ধারা জারি হয়ে যায়। এবং পুরো দেশ সেনাবাহিনির কব্জায় চলে যায়। জাতির বেঈমান খন্দকার মোশতাক পরদিন নতুন পাঞ্জাবী পড়ে শপথবাক্য পাঠ করে ক্ষমতা নিজ হাতে নেন। পুরো দেশে তখন সেনা কারফিউ জারি। কোনো বিক্ষোভ মিছিল হলেই আনকন্ডিশনাল ফায়ারিং এর নির্দেশ। সেনা ট্যাংক ও অস্ত্র নামানো হইছিল সারা দেশে। পুলিশ না হয় আমরা এতোটা পাত্তা দেই না। আর্মির সামনে গিয়ে একটু গলা চড়া করে কথা বলতে সাহস লাগে। আর সেই সাহসের পরিণতি হল গুলি খাওয়া।
ঢাকা ও বঙ্গবন্ধুর দেশের বাড়ি ও আওয়ামী লীগের সকল ঘাঁটিতে সেনা মোতায়েন ছিল। একটু টু শব্দ করার মত পরিস্থিতি হলেও গুলি খাওয়া লাগত। বঙ্গবন্ধুর লাশ কড়া নজরদারিতে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে ১০ জন এর উপস্থিতিতে দাফন করা হয়। জানাযা পড়তেও বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় মুরুব্বিরা জানাযা ছাড়া মুসলিমের কবর দিতে নারাজ থাকায় কবরখোরদের নিয়েই জানাযা হয়।
অনেকের মনে হয় জিয়াউর রহমানের জানাযায় ৩ লাখ মানুষ ছিল। তাই তাকে অনেকেই জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক মনে করেন। আসলে জানাযার সংখ্যা বাড়া-কমাটা নির্ভর করে তদানীন্তন রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপরে। এবং জানাযার সংখ্যার উপরে কোনো মুসলিমের পরকাল কোনো কালেই জাজমেন্ট হয় নাই, হবেও না। বরঞ্চ একজন আমাদের জাতির পিতা, আর অন্যজন বাংলদেশের দ্বিতীয় শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা। মর্যাদার বিশাল পার্থক্য।
প্রতিবাদ হয়ই নাই এমনটা বলা অবাঞ্চনীয়।
হত্যার পর প্রথম প্রতিবাদ হয় বরগুনায়। মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব মৃধা বরগুনা এসডিও সিরাজ উদ্দিন আহমেদের সহায়তায় ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির এর নেতৃত্বে ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ কর্মীর ঝটিকা মিছিল বের করেন। পরবর্তীতে এতে বরগুনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, খুলনা, যশোর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁওসহ বিভিন্ন জায়গায় ১৫ই আগস্ট সকালে প্রতিবাদ হয়।
পরবর্তীতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ১৭ হাজার মুজিব ভক্তকে ৭টি ফ্রন্টে ভাগ করে ২২ মাস প্রতিরোধ যুদ্ধ করেন। এতে ১০৪ জন যোদ্ধা নিহত এবং কয়েকশ আহত হয়। এর মাঝে শেরপুর সদর, শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নকলা উপজেলার ৫০০ তরুণের ‘শেরপুরের ৫০০ প্রতিবাদী’র বিদ্রোহ ও লড়াই আলোচিত ছিল।
মুফতি নূরুল্লাহ পরদিন জুমার নামাজের খুতবায় এর প্রতিবাদ করেন।
আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ছাত্ররা প্রতিবাদ করে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মৌলভী সৈয়দ, ছাত্রনেতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের নেতা এস.এম. ইউসুফ প্রতিরোধ করতে শুরু করেন।
১৮ই অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টার ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন। ২০ অক্টোবর প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
প্রতিবাদ করায় ১৯৭৬ সালের ১৮ আগস্ট মুক্তাগাছার প্রতিবাদী ৫ মুক্তিযোদ্ধা জাবেদ আলী, নিখিল দত্ত, সুবোধ ধর, দিপাল দাস, মফিজ উদ্দিনকে সেনা অভিযানে হত্যা করা হয়। বেঁচে যাওয়া বিশ্বজিৎ নন্দী নামে কিশোর যোদ্ধাকে আটক করে ১৯৭৭ সালের ১৮ মে সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয়। ইন্দিরা গান্ধীসহ প্রভাবশালী বিশ্বনেতার প্রভাবে তাকে যাবজ্জীবন দেয়া হয় এবং তিনি ১৯৮৯ সালে মুক্তি পান।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৯:১৮