somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আরিফ রুবেল
জীবন বৈচিত্রময়। জীবনের বিচিত্র সব গল্প বলতে পারাটা একটা গুন আর সবার সেই গুনটা থাকে না। গল্প বলার অদ্ভুত গুনটা অর্জনের জন্য সাধনার দরকার। যদিও সবার জীবন সাধনার অনুমতি দেয় না, তবুও সুযোগ পেলেই কেউ কেউ সাধনায় বসে যায়। আমিও সেই সব সাধকদের একজন হতে চাই।

মুভি রিভিউ : ঢাকা অ্যাটাক

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটা সময় এমন ছিল যখন বাংলা সিনেমা দেখা আর ক্ষ্যাত উপাধি পাওয়া একই কথা ছিল। তার উপর যদি সিনেমা যদি দেখা হত হলে গিয়ে। সময় বদলেছে। মানুষ আবার হলে ফিরতে শুরু করেছে। বাণিজ্যিক ধারার ভেতরে বাইরে সমান তালে ভালো সিনেমা করার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। দর্শকের জোয়ারের পেছনে নির্মাতা প্রযোজক এবং কলাকুশলীদের যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি আছে ব্লগ ও ফেসবুক ভিত্তিক নানা মুভিখোর গ্রুপের অবদান। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভালো ছবির ভীড়ে আজ সারা দেশে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পুলিশ ক্রাইম থ্রিলার 'ঢাকা অ্যাটাক' (জানি না এরকম কোন জনরা আদৌ আছে কি না, আমি এটাকে ক্রাইম থিলার বলতে পারলে খুশি হব)। আরেফিন শুভর ভক্ত হওয়ার সুবাদে মুভির খবর পাওয়ামাত্রই দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর ট্রেলার দেখার পর তো তর সইছিল না। দেখে নেয়া যাক ট্রেলারটি।



কাহিনী সংক্ষেপ:
[যারা স্পয়লার ছাড়া সিনেমাটি দেখতে চাচ্ছেন তারা এই অংশটা স্কিপ করে যেতে পারেন]

ট্রেলার দেখে হয়ত কিছুটা আচ করতে পেরেছেন মুভিটা হচ্ছে দুর্দান্ত একশনে ঠাসা। আসলেই তাই। একদম শেষ অবধি টান টান উত্তেজনা আর একশন। গল্পের শুরু হয় একটা কেমিকেল ফ্যাক্টরিতে ডাকাতি আর খুনের ঘটনা থেকে। পুলিশের হাই রিস্ক ইউনিটের কর্মকর্তা আবিদ (আরিফিন শুভ) তদন্তের কাজ শুরু করেন। তদন্ত করতে গিয়ে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা। কিন্তু কোন কূল কিনারাই করতে পারে না পুলিশ। এর মধ্যে ঘটে একটি বোমা হামলার ঘটনা। বোমা হামলার সাথে পাওয়া যায় সেই কেমিকেল ফ্যাক্টরির ডাকাতির যোগসূত্র। শুরু হয় এর পেছনের কারিগরদের ধরতে পুলিশের গোয়েন্দা, হাই রিস্ক ইউনিট এবং সোয়াটের যৌথ অভিযান। একের পর এক ধরা পড়তে থাকে সন্দেহভাজন অপরাধীরা। কিন্তু আসল অপরাধী থেকে যায় ধরা ছোয়ার বাইরে।



এর মধ্যে শুরু হয় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বোমা সদৃশ বস্তুর খবর। পুলিশের যৌথ বাহিনীকে এক রকম নাকানি চুবানি খাইয়ে ছাড়ে পর্দার আড়ালে থাকা অপরাধী চক্র। গল্পে টুইস্ট আসে এক চিহ্নিত অপরাধীকে ধরার পর। তার দেয়া তথ্যমতে, পুলিশ মালয়েশিয়ায় তদন্ত শুরু করে। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে শুরু করে। বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সেই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আবার নতুন করে আগায়। এদিকে পর্দার আড়ালের সেই অপরাধী একের পর এক বোমা হামলা চালায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। এভাবে এগিয়ে চলে সিনেমার গল্প। বাকীটা না হয় সাসপেন্স থাক, হলে গিয়ে দেখে নেবেন।

এক

গল্প বিবেচনায় নিলে এই গল্প বলিউড এমনকি হলিউডের অনেক একশন সিনেমার থেকে কম যায় না। আর একশন বিবেচনায় নিলেও যেকোন বলিঊডের সিনেমার সাথে টক্কর দিতে পারবে। সিনেমাটোগ্রাফিতে পরিচালক, ক্যামেরাম্যান এবং এডিটর সবাই যে প্রচুর শ্রম দিয়েছেন তা সিনেমাটি যারাই দেখবেন তারাই স্বীকার করবেন। আসা যাক মুভির অভিনয় নিয়ে।

প্রথমেই আসি শতাব্দী ওয়াদুদকে নিয়ে। উনি এই সিনেমায় যৌথ টাস্কফোর্সের প্রধান হিসেবে অভিনয় করেছেন। ভদ্রলোকের অভিনয় নিয়ে আমার কখনই সন্দেহ ছিল না। বিশেষ করে গেরিলা সিনেমায় ওনার অভিনয় দেখে ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম। এতটা জীবন্ত ছিল। এই সিনেমাতেও উনি ওনার নামের সম্মান রেখেছেন।

এরপর আসা যাক এবিএম সুমনকে নিয়ে। সম্ভবত এই সময়ে সবচেয়ে আন্ডাররেটেড হিরো হচ্ছেন সুমন। লুক, অভিনয়, একশন যেকোন দিক দিয়েই তিনি সমসাময়িককালের সেরা। এর আগে তিনি দু'টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন 'অচেনা হৃদয়' আর রূদ্র দা গ্যাংস্টার'। এই সিনেমায় সোয়াট কমান্ডোর ভূমিকা অভিনয় করা এই হিরো ছবির মূল হিরো শুভর সাথে টক্কর দিয়েছেন সমানে সমান। শুভ পরীক্ষিত অভিনেতা এবং অভিজ্ঞ। সেটা বিবেচনায় নিলে সুমনকে শুভর চাইতে কিছুটা বেশি নম্বর দেয়া যায়। বাকীটা আপনারা বিবেচনা করবেন।

মাহিয়া মাহি এই সিনেমায় ক্রাইম রিপোর্টারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মাহিয়া মাহির মধ্যে একশন গার্ল আর রোমান্টিক হিরোইন উভয় বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান এবং সেটার সাক্ষর তিনি এখানেও রেখেছেন। কিন্তু যেহেতু নায়কপ্রধান সিনেমা তাই গল্পের প্রয়োজনেই তাকে কিছুটা ছাড় দিতে হয়েছে।


সিনেমার একমাত্র রোমান্টিক গান ;)


আরিফিন শুভকে বলা যায় সাম্প্রতিক সময়ে উদীয়মান হিরোদের একজন যে ইতিমধ্যে বাংলা সিনেমায় তার স্থান মোটামুটি শক্ত করে ফেলেছেন। বিশেষ করে তরুন বয়সীদের কাছে তার বেশ একটা আবেদন আছে। যদিও বলিউডের হিরোদের চাপে বাংলা সিনেমা থেকে ফিল্ম আইকন বের হয়ে আসা খুব সহজ কথা নয়। তবে সেই জায়গাতেও উনি অন্যদের চাইতে বেশ এগিয়ে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নোংরা রাজনীতি না থাকলে হয়ত আরো দ্রুতই এগিয়ে যাবেন। এই সিনেমায় উনি একই সাথে পুলিশের হাই রিস্ক ইউনিট এবং বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিটের প্রধান হিসেবে অভিনয় করেন। স্বভাবসুলভ চপলতা লুকিয়ে তিনি একজন সিরিয়াস পুলিশ কর্মকর্তার অভিনয় বেশ ভালোই করেছেন। বিশেষ করে বোম্ব ডিজপোজ করতে গিয়ে উনি বেশ প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন। আর স্বল্প পরিসরে মাহির সাথে ওনার কেমিস্ট্রিটাও জমেছিল বেশ।

তবে যার কথা না বললেই না এই সিনেমার মূল ভিলেন তাসকিন রহমান। ভদ্রলোক সম্ভবত বাংলা সিনেমায় নতুন। অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ। ক্রাইম থ্রিলারের মূখ্য ভিলেন হিসেবে উনি দশে সাত পাবেন নিঃসন্দেহে। আর বাংলাদেশ বিবেচনায় নিলে দশে বারো।

দুই
মুভিটি যদিও অনেক ভাল লেগেছে, কিন্তু এর মধ্যে কিছু ছোট খাটো খুত ছিল যা হয়ত চাইলে এড়ানো যেত। যেমন আরিফিন শুভর চুল। সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্যে শুভর বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের চুল দেখানো হয়েছে। একই ঘটনা ঘটে সুমন এবং মাহির ক্ষেত্রেও। যদিও মাহির চুল কার্লি এবং স্ট্রেইট করার ব্যাপারটা অত চোখে লাগেনি এবং ব্যাপারটা অস্বাভাবিকও নয় আর সুমনের এই চুলের দৈর্ঘ্যের অসামঞ্জস্যতাও খুব একটা চোখে লাগেনি তুলনামূলক স্বল্প উপস্থিতি এবং বেশির ভাগ সময় হেলমেট পরে থাকায়।

গল্পের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত এক প্লট থেকে আরেক প্লটে চলে গিয়েছেন পরিচালক। একটু সময় দিলে হয়ত অভিনয়টায় আরেকটু সময় দেয়া যেত। তাই সার্বিকভাবে সিনেমাটা ভালো লাগার অনুভূতি দিলেও কোন একটা দৃশ্য কিংবা ঘটনা দর্শকের স্মৃতিতে থাকার সম্ভাবনা কম। এমনকি দর্শক যে দ্বিতীয়বার যাবে এই সিনেমাটা দেখতে সেরকম কিছু নেই এই সিনেমায়। পরিচালক হয়ত তৃপ্তি পাবে এই ভেবে 'একবার দেখাইতে পারি না আবার দুইবার'।

সিনেমার শেষটায় একটু তড়িঘড়ি ভাব দেখা যায়। ইন ফ্যাক্ট ফিনিশিং না দেখিয়ে একটু ট্যুইস্ট রাখা যেতেই পারত, যেখানে ২০১৯ সালে 'ঢাকা অ্যাটাক এক্সট্রিম' রিলিজ দেয়ার ঘোষনা দিয়েই ফেলেছেন।

তিন

যাদের ধারনা সিনেমার শেষ দৃশ্যে 'আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না' এইটুকু ডায়লগ দেয়া পুলিশের কাজ তারা এই ধারনা ভাংতে দেখতে পারেন এই সিনেমা। যারা সিংহাম, দাবাং ইত্যাদি সিনেমা নিয়ে আফসোস করতেন আর বলতেন কেন বাংলাদেশে এই রকম সিনেমা হয় না, তারা দেখতে পারেন এই সিনেমা। যারা পরিবার নিয়ে একটু সামাজিক সিনেমা দেখতে চান তারাও দেখতে পারেন।



যারা ভাবেন আমাদের দেশের সব পুলিশই খারাপ, দুর্নীতিবাজ তাদের মনে কিছুটা হলেও ভিন্ন চিন্তার খোড়াক যোগাবে এই সিনেমা। পুলিশের সাথে সাধারণ জনতার অভিজ্ঞতা ভালো না এটা অনস্বীকার্য। কিন্তু কখনও ভেবেছেন যে পুলিশ ঈদের দিন পরিবার পরিজন ফেলে ঢাকার রাস্তায় আপনার নিরাপত্তা বিধান করে তার জায়গায় নিজেকে। নয়টা পাঁচটা অফিস করেই আমরা অনেকেই হাপিয়ে যাই সেখানে পুলিশদের কখনও কখনও টানা ৭২ ঘন্টাও ডিউটি করতে হয়। বাংলাদেশের পুলিশ এখনও চলে বৃটিশ আমলের পদ্ধতিতে। সরকার তার প্রয়োজনে পুলিশকে ব্যবহার করে অস্ত্র হিসেবে। এই অবস্থার বদল হওয়া দরকার। পুলিশ হোক জনতার বন্ধু।

আপনাকে ধন্যবাদ সময় নিয়ে আমার ব্লগর ব্লগর শোনার জন্য।

ও বলতে ভুলে গেছি এই সিনেমায় একটা আইটেম সং আছে। নাম 'টিকাটুলির মোড়'। গানটা ভালোই বানাইছে B-)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×