somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আরিফ রুবেল
জীবন বৈচিত্রময়। জীবনের বিচিত্র সব গল্প বলতে পারাটা একটা গুন আর সবার সেই গুনটা থাকে না। গল্প বলার অদ্ভুত গুনটা অর্জনের জন্য সাধনার দরকার। যদিও সবার জীবন সাধনার অনুমতি দেয় না, তবুও সুযোগ পেলেই কেউ কেউ সাধনায় বসে যায়। আমিও সেই সব সাধকদের একজন হতে চাই।

দর্শক প্রতিক্রিয়া : নীতু তোমাকে ভালোবাসি

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস পড়েননি এমন বাঙালী হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে কিন্তু ওনার নাটক দেখেনি এরকম বাংলাদেশী খুঁজে পাওয়া কঠিন। সাদা কালো যুগ থেকে শুরু করে আমাদের মিলেনিয়াম প্রজন্ম, বেশ বড় একটা অংশ ওনার নাটক দেখে বড় হয়েছি। ওনার নাটকে হাস্যরস যেমন ছিল তেমনি ওনার নাটকের গল্প ছিল বেশ জীবন ঘনিষ্ট। ওনার উপন্যাসের মত নাটকগুলোর গল্প মধ্যবিত্ত সমাজকে ঘিরেই বেশি এসেছে। হয়ত তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করতেন বলেই। তবে তার সৃষ্টির এই গুনটিই তাকে জনপ্রিয় হতে সাহায্য করেছে বলে আমার মনে হয়।

গত বেশ কয়েক দিন ধরে হুমায়ূন আহমেদের পুরোনো নাটক দেখছিলাম ইউটিউবে। ইউটিউব এক অদ্ভুত বস্তু। অনেকটা আলাদিনের দৈত্যের মত। যা চাইবেন তাই নিয়ে এসে হাজির। যাই হোক, এই দর্শন পরিক্রমায় আজ দেখে ফেললাম হুমায়ূন আহমেদের টেলিফিল্ম
'নীতু তোমাকে ভালোবেসে'।

উচ্চবিত্ত পরিবারের ছোট মেয়ে শমী কায়সার (নীতু)। ভালোবাসে বেকার যুবক জাহিদ হাসানকে। কিন্তু পরিবার তার বিয়ে ঠিক করে আমেরিকা প্রবাসী ছেলে মাহফুজ আহমেদের সাথে। এই বিয়েকে ঘিরেই নাটকের গল্প এগিয়ে চলে। নীতুর বাবা আলী যাকের স্বনামধন্য লেখক, কিছুটা ক্ষ্যাপাটে। উদ্ভট সব কর্মকাণ্ডে বাড়ির সবাইকে পেরেশান রাখাই তার কাজ। নীতুর মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন দিলারা জামান আর দাদার চরিত্রে গোলাম মোস্তফা, যার নিয়ন্ত্রনে এক রকম জিম্মি হয়ে থাকতে হয় পুরো পরিবারকে, যার সিদ্ধান্তই আইন। এছারাও এই নাটকে অভিনয় করেছেন হুমায়ুন ফরিদী, আবদুল কাদের, শান্তা ইসলাম, ফারুক আহমেদ, ডা: এজাজ, শামীমা নাজনীন, সালেহ আহমেদ প্রমুখ।

উপমহাদেশের প্রেমের চিরায়ত সংকট, বেকার যুবকের সাথে ভালোবাসা এবং প্রেমে ব্যর্থতা এগুলোই মূলত আমাদের গল্প উপন্যাসে বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে। এখানেও এই বিষয়টির উপস্থাপন হয়েছে তবে হাস্যরসাত্মকভাবে, মিলনাত্মক ভঙ্গিতে। নাটকের প্রতিটা দৃশ্যের গল্প এবং সংলাপ ভালো লাগার মত।

নাটকে হাস্যরস কম বেশি থাকে। কিন্তু ঠিক কি কারণে এই নাটকটা নিয়েই আমার লিখতে ইচ্ছে হল? ভাবতে গিয়ে দেখলাম নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে প্রচারিত হওয়া এই নাটকটার উপর ভর করে আমি আসলে আমার শৈশবে চলে গিয়েছিলাম। ঠিক যে সময়টায় এই নাটকটা প্রচারিত হয় সেই সময়ে আমাদের বাসায় একটা সতের ইঞ্চি সাদা-কালো টেলিভিশন। নিপ্পন। তখন বাসায় ডিশ কানেকশন ছিল না। চারতলার ছাদে বাঁশে টানানো এন্টেনা, যা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাজে নেটওয়ার্ক দিত আর আমাকে ছাদের গিয়ে বিভিন্ন দিকে এন্টেনা ঘুড়িয়ে টিভির পরিষ্কার করতে হত। আমি জানি না আপনাদের কারো সাথে এমন হয়েছে কি না, চিল্লিয়ে জিজ্ঞেস করতাম 'হইছে ?' আর বাবা জবাব দিতেন 'না' । অদ্ভুত আমার শৈশব।

সাদা কালো নাটকটা রঙিন দেখেও হয়ত আমার সেই সাদাকালোর স্বাদ মনে পড়ে গেছে। নাটকের প্রথম দৃশ্যে ঢাকার একটি রাজপথ দেখানো হয় যেখানে দেখা যায় টু স্ট্রোক বেবি ট্যাক্সি, সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টন ট্রাক আর ঢাকার রাস্তায় সহসা জনপ্রিয় হয়ে হারিয়ে যানবাহন 'ম্যাক্সি'। টেম্পুর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল সেই যানবাহন।

আরেকটা কারণ সম্ভবত নাটকের চরিত্রগুলোর সরলতা। আসলে বড্ড জটিল একটা সময়ে আমরা বসবাস করছি। পুঁজি এবং প্রযুক্তির দাস এই আমরা আসলে সম্পর্কগুলো থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছি তবুও প্রেমপত্র আর ল্যান্ডলাইনের দিনগুলোতে ঘুরে আসতে খারাপ লাগবে না আশা করি। চরিত্রগুলোর পাগলামোও ভালো লাগবে। যেমন ধরেন, কাজের মেয়ে রহিমার হবু বর সাব্বির হাসানকে মরিচের সরবত খাওয়ানো কিংবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কাজের ছেলে মোবারকের আত্মহত্যা সংক্রান্ত জটিলতা। আবার ধরেন বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ের আগে পালিয়ে যাওয়া নিয়ে স্বামীর সাথে সৃষ্ট হওয়া দ্বন্দ্ব।

শমী কায়সারকে দেখে আমাদের সিনিয়রদের অনেকের বুকে একটা চিকন হাহাকার খেলা করত। ছোটবেলায় যদিও বুঝতে পারতাম কেন সেই হাহাকার। কেন তাদের বইয়ের চিপাচাপায় শমী কায়সারের ভিউ কার্ড পাওয়া যেত। তবে তার কিছুটা হলেও অনুভব করেছি এই নাটকে। গল্পের বিভিন্ন মোড়ে তার উপস্থিতি মন উদাস করে দেয়।

আপনারা যারা একটু মন উদাস করতে চান তারা নাটকটি দেখে ফেলতে পারেন। দুই ঘন্টার নাটক। নিচে লিংক দিয়ে দিলাম। যারা দেখেননি দেখে জানাবেন কেমন লাগল। আর যারা আগে দেখেছেন তারা তাদের অনুভূতি শেয়ার করতে পারেন আমার সাথে।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×